পোষা প্রাণীর উপযোগী ঘর

পোষা প্রাণীর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে তাদের উপযোগী নিবাস গড়ে তুলুন 

তোহা ও তামিম দুই ভাই-বোন। ছোটবেলা থেকেই প্রাণীদের প্রতি অসীম ভালোবাসা তাদের। স্কুল থেকে ফেরার সময় পাড়ার কুকুরদের টিফিনটুকু খাওয়াতে ভোলে না। ছাদে পাখিদের জন্য একটি বাটিতে পানি দিয়ে রাখে যেন উড়তে উড়তে তেষ্টা পেলে পাখিরা পানি খেয়ে নিতে পারে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে একটি বিড়ালছানাকে কাঁদতে দেখে দুজনে মিলে তাকে নিয়ে এল বাড়িতে। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো, আগে যেহেতু তাদের কোনো পোষা প্রাণী ছিল না, তাই তাদের বাসাও তো পোষা প্রাণীর উপযোগী না। তবে তোহা ও তামিম ভীষণ বুদ্ধিমান। এখন তারা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে নিজেদের বাসাকে পোষা বিড়ালের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছে।

আপনাদের বাসায়ও যদি পোষা প্রাণী থাকে কিংবা পোষা প্রাণী আনার পরিকল্পনা থাকে তাহলে দ্রুতই বাসাকে পোষা প্রাণীর উপযোগী করে নিন। তোহা ও তামিম যেসব উপায়ে তাদের বাসাকে পোষা প্রাণীর উপযোগী করে তুলল, তা-ই বলছি আজ। 

দরজা-জানালায় নিরাপত্তা

পোষা প্রাণী ঘরে আনার আগে দরজা ও জানালার নিরাপত্তা প্রয়োজন। জানালা দিয়ে যেন তারা অসাবধানতাবশত পড়ে না যায়, তাই জানালায় বিশেষ নেট লাগাতে হবে। এ ছাড়া সদর দরজা দিয়ে তারা যেন কখনো বেরিয়ে যেতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন।


বৈদ্যুতিক তার নিরাপদে

বৈদ্যুতিক তার থেকে পোষা প্রাণীকে নিরাপদ রাখতে হবে

ঘরে অনিরাপদ বৈদ্যুতিক তার থাকলে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। পোষা প্রাণীর নাগালের ভেতর সব বৈদ্যুতিক সকেট ঢেকে দিতে হবে। বৈদ্যুতিক তার নিরাপদে স্থাপন করতে হবে। অনেক সময় পোষা প্রাণীরা খেলার ছলে বিভিন্ন জিনিস কামড়ায়। বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে থাকলে তা থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ভঙ্গুর বস্তু সাবধানে

ঘরে পোষা প্রাণী থাকলে তারা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করে। অনেক সময় খেলতে গিয়ে অনেক কিছু নষ্ট করে ফেলে। আবার অনেক সময় নিজেরাও ব্যথা পায়। তাই সব ধরনের ভঙ্গুর বস্তু পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখতে হবে। দামি যন্ত্রপাতিও রাখতে হবে যথাযথ স্থানে।

বাথরুম ও রান্নাঘরে সতর্কতা

ঘরে পোষা প্রাণী থাকলে তাদের নিয়ে বাথরুম ও রান্নাঘরেই বেশি ভয় থাকে। রান্নাঘরে ছুরি, বঁটি ইত্যাদির মতো বিপজ্জনক বস্তু থাকে। পোষা প্রাণীকে রান্নাঘর থেকে নিরাপদে রাখতে রান্নাঘরের দরজা সব সময় বন্ধ রাখতে হবে। রান্নাঘরের দরজা না থাকলে সব কেবিনেট তালাবদ্ধ রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পোষা প্রাণী যেন সহজেই রান্নাঘরে ঢুকতে না পারে। বাথরুমও পোষা প্রাণীর জন্য অনিরাপদ। বাথরুমের দরজাও খেয়াল করে বন্ধ করে রাখতে হবে।

পোষা প্রাণীর নিজস্ব স্থান

প্রিয় পোষা প্রাণীকে বানিয়ে দিতে পারেন চমৎকার একটি পেট হাউস

বাসায় পোষা প্রাণী আনার পর তাদের সব কাজের জন্য আলাদা স্থান তৈরি করে দেওয়া প্রয়োজন। তাদের ঘুমানোর জন্য একটি আরামদায়ক জায়গা তৈরি করে দিন। চাইলে সুবিধামতো একটা ছোট পেট হাউস রাখতে পারেন ঘরে। তা ছাড়া একটা বক্সে নরম কাপড় দিয়ে আরামদায়ক স্থান তৈরি করে দিতে পারেন।  তাদের খাওয়ার জন্য আলাদা বাটি বা পাত্রের ব্যবস্থা করুন। পোষা প্রাণীর খেলার জন্য আলাদা খেলনা কিনে দিন যেন সে ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে খেলে নষ্ট না করে ফেলে। তাদের লিটার বক্সটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন যেন তারা শুধু সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ করে। এ রকম নিজস্ব পরিবেশ পেলে পোষা প্রাণী সুস্থ থাকে ও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

ঘরে পোষা প্রাণী থাকলে নানাভাবে ঘর নোংরা হয়। অনেক পোষা প্রাণী ঘরের বাইরেও মাঝে মাঝে ঘোরাঘুরি করে। তারা ঘরে এলে ঘর নোংরা হয়। তাই পোষা প্রাণী বাইরে থেকে এলে ঘরে ঢোকার আগে তাদের পরিষ্কার করে নিতে হবে। অথবা তাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দিতে হবে। ঘরের ভেতর ঢাকনাওয়ালা ময়লার ঝুড়ি ব্যবহার করতে হবে, যেন তারা ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘর অপরিষ্কার করতে না পারে। তা ছাড়া পোষা প্রাণীর গায়ের লোমের কারণেও ঘর নোংরা হয়। তাই নিয়মিত তাদের গা আঁচড়ে বাড়তি লোম পরিষ্কার করতে হবে। বিছানা, সোফা, কার্পেটে লোম লেগে থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে।

বাড়তি সতর্কতা

পোষা প্রাণীকে একেবারে একা বাসায় রেখে দূরে কোথাও যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। পোষা প্রাণীকে নিয়মিত খাবার দিতে হবে। তাদের খাবার শেষ হওয়ার আগেই এনে রাখতে হবে। তারা যদি বিশেষ কোনো খাবার খায় তাহলে সেগুলো কোথায় কোথায় পাওয়া যায়, তা আগেই জেনে রাখতে হবে। 

মাঝে মাঝে পোষা প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ তাই পশুচিকিৎসকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখতে হবে, যেন দ্রুত যোগাযোগ করা যায়। নিজ এলাকার আশপাশে কোথায় পশু হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলোর ঠিকানা জেনে রাখতে হবে।

 

ঘরকে পোষা প্রাণীর উপযোগী করে তোলার এই উপায়গুলো আপনার ঘরের জন্য কার্যকরী কি না, তা জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।