Reading Nook Price Reading Nook Price

ঘরেই যখন বুক কর্নার

ঘটনা-১: রাইসার নতুন বাসায় বেড়াতে গেছে ওর বন্ধু ফারিহা। বাসাটা বেশ ছিমছাম করে সাজিয়েছে রাইসা। তবে ফারিহার সবচেয়ে ভালো লেগেছে যেই জিনিসটা সেটা হচ্ছে বারান্দার পাশে ছোট্ট একটা বই পড়ার জায়গা বানিয়েছে রাইসা।

আর যেহেতু ঠিক বারান্দার পাশে, তাই বেশ আলো-হাওয়া আসে জায়গাটায়। দেখেই কেমন শান্তি শান্তি লাগে।

ঘটনা-২: ইয়াশার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ওর নানুর বাসা। কারণ, ওই বাসায় একটা আলাদা ঘরই আছে বই পড়ার জন্য।

বিশাল একটা ঘরে রাজ্যের বই, আরামে শুয়ে-বসে বই পড়া যায় এমন বড় সোফা আর সেই সাথে চা কিংবা কফি বানিয়ে খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা। এই ঘরটাতে ঢুকলেই মনে হয় অন্য কোনো একটা রাজ্যে হারিয়ে গেল।

ঘটনা-৩: আব্দুল্লাহ আর রওশন ওদের বাবুকে নিয়ে খুব চিন্তিত থাকত। সারা দিন মোবাইলে হয় ভিডিও না হয় গেম নিয়ে পড়ে থাকে। এমন সময় রওশন মাথা খাটিয়ে ওদের বাবুর ঘরের একটা কোনায় একটা ছোট্ট বুকশেলফ বসিয়ে দিল।

আর ঘরে থাকা পুরোনো কিছু জিনিস ব্যবহার করে জায়গাটার চেহারা বদলে দিল একদম। এতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হলো। বাবুকে এখন বই হাতে এই ছোট্ট কর্নারটাতেই বেশি বসে থাকতে দেখা যায়। আব্দুল্লাহ আর রওশন-ও যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।

যাঁরা বই পড়তে পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে বইয়ের দোকান কিংবা লাইব্রেরি যেন স্বর্গরাজ্য। কিন্তু কেমন হয় যদি ঘরেই বানিয়ে ফেলা যায় বই পড়ার জন্য ছোট্ট একটা কর্নার? চলুন দেখে আসি।

থাকতে হবে আলো-বাতাসের অবাধ আনাগোনা

বই পড়ার কর্নারটিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকলে শান্তিতে বই পড়া যাবে না কিছুতেই। আর কম আলোতে বই পড়লে চোখে ভীষণ চাপ পড়ে। ফলে চোখ ব্যথা করা, চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ার মতো অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

আর যারা আগে থেকেই চশমা পরেন, তাদের কিন্তু ডাক্তারের নির্দেশ থাকে যেন কখনোই কম আলোতে বই না পড়া হয়।

এই সবকিছু মাথায় রেখে, বই পড়ার জায়গাটিতে প্রাকৃতিক আলো আসার ব্যবস্থা যেমন থাকতে হবে, তেমনি থাকতে হবে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি।

যাতে রাতের বেলা পড়ার অভ্যাস যদি কারো থাকে, তাহলে যেন অসুবিধা না হয়। আর সেই সাথে বই পড়ার জায়গায় যদি ঠিকমরতা বাতাস খেলা না করে, তাহলে কিন্তু বেশ অস্বস্তিকর অবস্থা হতে পারে।

তাই মাথায় রাখতে হবে এই দিকটি-ও। ঘটনা-১-এর রাইসা এই দিকগুলো মাথায় রেখে বই পড়ার কর্নার সাজিয়েছিল, তাই ছোট্ট জায়গাটি হয়ে উঠেছিল বেশ আকর্ষণীয়।

বইয়ের কর্নারে শেলফ

বইয়ের কর্নারে যদি একটা শেলফ এনে দিতে পারে একটা ভিন্নমাত্রা। অনেক সময় বইয়ের শেলফ আকারে বড় হলে কিংবা ঘরের অন্য আসবাবের কারণে বই পড়ার কর্নারে রাখা সম্ভব হয় না।

সে ক্ষেত্রে রাখতে পারেন ওপেন শেলফ (open shelf) জাতীয় কোনো আসবাব। তাতে ঘরও বেশ পরিপাটি দেখাবে। তবে যদি একটু কম আসবাব রাখতে চান, তবে বুকশেলফের বদলে দিতে পারেন ছোট কোন টেবিল-ও।

আরামদায়ক বসার জায়গা

বুক কর্নারে বসার জায়গা থাকতে হবে তো বটেই। তবে এ ক্ষেত্রে যেকোনো চেয়ার না রেখে রাখতে পারেন ইজিচেয়ার কিংবা ছোট কোনো সোফা। এতে বসার জায়গা যেমন খানিকটা আরামদায়ক হবে সেই সাথে বই পড়ার সময়টা কাটবে আনন্দে।

Reading Nook Furniture
বুক কর্নারে রাখতে পারেন ইজিচেয়ার

দিতে পারেন আলাদা কোনো ঘর

যদি বাসায় বাড়তি ঘর থাকে, তবে সেই ঘরটাকে খুব সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন বইয়ের স্বর্গরাজ্য। সে ক্ষেত্রে বড় শেলফ রাখতেও সুবিধা হয়। আর ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে রাখতে পারেন একটু বড় সাইজের সোফা অথবা ডিভান

আর যদি ঘটনা-২-এর ইয়াশার নানু বাসার মতো চা-কফি বানিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তো একদম সোনায় সোহাগা। তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে চা-কফি রাখার টেবিল এমন হতে হবে যেন বইয়ে পড়ে বই নষ্ট হওয়ার সুযোগ না থাকে।

যদি পড়ার জন্য কেউ আলাদা ঘর করতে চায়, তবে সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ঘরে যেন সূর্যের আলো এবং প্রাকৃতিক বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে।

না হয় বইয়ে ছত্রাক পড়া, বইয়ের পাতা হলদেটে হয়ে যাওয়া, বই থেকে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পুরোনো জিনিসের পুনর্ব্যবহার

এই বই পড়ার জায়গা বা reading nook-এর জন্য যে একদম আনকোরা আসবাব লাগবে, এমন কিন্তু নয়। ঘটনা-৩-এর রওশন যেমন ব্যবহার করেছিল ঘরের অব্যবহৃত পুরোনো কিছু জিনিস।

তেমনি পুরোনো একটা তোশককে ভাঁজ করে, সেখানে চাদর আর কিছু কুশন বিছিয়ে দিলেই কিন্তু বেশ চমৎকার একটা পড়ার জায়গা হয়ে যায়।

আর সাথে দিতে পারেন পুরোনো কোনো ল্যাম্প। এতেই বেশ সাধারণ একটা জায়গা হয়ে উঠতে পারে আপনার ঘরের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা।

ছোটদের জন্য পড়ার জায়গা

ঘটনা-৩-এর আব্দুল্লাহ এবং রওশনের মতো এমন অনেক মা-বাবাই আছেন যারা চান তাদের সোনামণি ছোটবেলা থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুক কিন্তু এ নিয়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন।

এসব ক্ষেত্রে যদি শিশুদের জন্য তাদের নিজেদের ঘরে কিংবা যদি আলাদা করে পড়ার ঘর থাকে, সেখানে ছোট্ট একটা জায়গা সাজিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কিন্তু বাচ্চারা নিজে থেকেই আগ্রহ দেখায়।

এ ক্ষেত্রে জায়গাটা ভরিয়ে তুলতে পারেন রঙিন ছবি দিয়ে, বসে পড়ার জন্য চেয়ার-টেবিল যেমন দিতে পারেন, তেমনি দিতে পারেন শিশুদের বসার উপযোগী আরামদায়ক কোনো চেয়ার কিংবা দোলনা, আর রাখতে পারেন সহজেই নাগাল পাবে এমন কোনো বুকশেলফ।

Reading Nook for Kids
শিশুদের জন্য বানিয়ে দিতে পারেন ছোট্ট একটা বুক কর্নার

বই পড়ার নিজের ছোট্ট একটা কর্নার আপনাকে সারা দিনের ক্লান্তির পর দিতে পারে খানিকটা স্বস্তি। অথবা আপনার বিকেলের চা-কে করতে পারে আরো একটুখানি শান্তির।

আর তাই বাইরের দেশগুলোতে এমন কনসেপ্ট আগে থেকে থাকলেও, এখন আমাদের দেশেও এর চল শুরু হয়ে গেছে। আর আপনার বাসায় যদি এমন কোনো রিডিং কর্নার থাকে, তবে তার ছবি কিন্তু এখনই পাঠাতে পারেন কমেন্টে!

লেখক: জাইমা হামিদ জোয়া

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।