প্রিয় চরিত্রের ঘরের মতো ঘর!

ছোটবেলা থেকেই আফিয়ার শখ ছিল নিজের একটা ঘরের। সেই ঘর সাজাবে একদম নিজের মনের মতো করে। পছন্দের সবকিছু থাকবে সেই ঘরে। বইয়ের পোকা আফিয়া প্রতিবার নতুন কোনো বই পড়লেই সেই বইয়ের কোনো চরিত্রের মতো নিজের ঘর সাজানো যায় কি না, এই চিন্তায় মশগুল হয়ে যেত। ছোটবেলায় যদিও মা যেভাবে ঘর সাজিয়ে দিতেন, সেটা নিয়েই খুশি থাকতে হতো। কিন্তু প্রায়ই দেখা যেত আফিয়া কোনো একটা বই হাতে করে নিয়ে মায়ের পিছে পিছে ঘুরতে ঘুরতে বলে চলেছে সে বড় হলে কেমন করে ঘর সাজাবে। তাই আফিয়া যখন ইউনিভার্সিটিতে উঠল, তখন সে নিজের মনের মতো করে ঘর সাজানোর অনুমতি পেল। আর তখনই আফিয়া ঠিক করে ফেলল ঘর সাজাবে কোনো একটা থিমের ওপর ভিত্তি করে। এই থিম ডেকোরেশন জিনিসটা ভারি মজার একটা ব্যাপার। এর মানে হলো যেকোনো একটা থিম অর্থাৎ বিষয়কে ভিত্তি করে সম্পূর্ণভাবে সেইমতো ঘর সাজিয়ে গুছিয়ে তোলা। কিন্তু এত প্রিয় বই, চলচ্চিত্র আর সিরিজের মাঝে পছন্দের কোন চরিত্রটি বেছে নেবে, তাই নিয়ে আফিয়া বিপাকে পড়ে গেল। আর তাই সে বানিয়ে ফেলল তার সবচাইতে পছন্দের চরিত্রগুলোর একটা লিস্ট। চলুন তাহলে দেখে আসা যাক আফিয়ার সেই লিস্টে কী কী ছিল। 

হ্যারি পটার

’৯০-এর দশক থেকে শুরু করে ২০০০-এর দশক পর্যন্ত প্রায় সবারই শৈশবের একটা বড় অংশজুড়ে ছিল এই হ্যারি পটার। আর তাই হ্যারি পটারের বোর্ডিং স্কুল হগওয়ার্টসের আদলে তৈরি ঘর মনেপ্রাণে সব শিশুই চাইত। আর সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো, হ্যারি পটার অনুপ্রাণিত ঘর ছোটদের সাথে সাথে কিশোর কিংবা তরুণদের জন্যও ভীষণ উপযোগী। 

হগওয়ার্টসের চারটি হাউসের রঙের যেকোনো একটির সাথে মিলিয়ে ঘরের সাজসজ্জা হতে পারে লাল, নীল, সবুজ কিংবা হলুদ রঙের প্রাধান্যে। কিংবা থাকতে পারে চার রঙের মিশেল। আফিয়া যেমন নিজের সাথে রেভেনক্ল হাউসের মিল পায় এবং এই হাউসের জন্য নির্দিষ্ট রং নীল, যা তার প্রিয় রংগুলোর মধ্যে একটা। সে ক্ষেত্রে তার ঘরের দেয়াল নীল রঙের করে নিতে পারে। অথবা দেয়াল সাদা রেখেই একটি দেয়ালে টাঙিয়ে দিতে পারে হাউসের জন্য নির্দিষ্ট করা পতাকা। সে ক্ষেত্রে জানালার পর্দা হতে পারে নীল। আর যেহেতু আফিয়া বইয়ের পোকা, তাই ঘরের এক কোণে  দিতে পারে ছোট্ট একটি বুকশেলফ। আর ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে দিতে পারে এক সিটারের কোনো নীল গদির সোফা। তাতে বই আফিয়ার একটি ছোট্ট বইয়ের কর্নার তৈরি হয়ে যাবে। আর ঘরের মেঝেতে দিতে পারে নীল আর তামাটে রঙের কম্বিনেশনের কোনো কার্পেট। ঘরে পড়ার টেবিল-চেয়ার রাখার জায়গা থাকলে তা হতে পারে একটু কালচে রঙের। আর টেবিলে প্রাধান্য পেতে পারে নীল রঙের স্টেশনারি। সেই সাথে ঘরের সিলিংয়ে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে রেডিয়ামের চাঁদ-তারা। ঘরে আয়না কিংবা ড্রেসিং টেবিল থাকলে তাতে ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে মরিচবাতি কিংবা স্ট্রিপ লাইটস। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল আফিয়ার রেভেনক্ল অনুপ্রাণিত ঘর! 

হ্যারি পটারের রেভেনক্ল হাউসের মতো নীল থিমের ঘর

ফেলুদা

ছোটবেলা থেকেই আফিয়া ফেলুদার বিশেষ ভক্ত। ফেলুদার সব গল্প যেন একদম তার ঠোঁটের ডগায় থাকে। আর তাই ফেলুদা ছাড়া তার লিস্ট অসম্পূর্ণ রয়ে যেত। তবে ফেলুদার মতো করে ঘর সাজানোর জন্য আসলে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই। এ ক্ষেত্রে ঘরের দেয়াল হতে পারে সাদা কিংবা অফ হোওয়াইট রঙের। আর জানালায় দেওয়া যেতে পারে হালকা কোনো পর্দা। এক দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া যেতে পারে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ফেলুদার ছবির কিছু পোস্টার। ফেলুদার চলচ্চিত্রগুলোর পোস্টারও টাঙানো যেতে পারে। ঘরের এক কোনায় থাকতে পারে একটু ভারী ধরনের কাঁচ দেওয়া বুকশেলফ। পড়ার টেবিলে রাখা যেতে পারে একটু ভিন্টেজ একটি টেবিল ল্যাম্প। আর ঘরে এক সিটারের হালকা ধরনের কোনো সোফা। মেঝেতে কার্পেট দেওয়া যেতে পারে হালকা খয়েরি রঙের। এভাবে ঘর হয়ে উঠবে ছিমছাম ফেলুদার ঘর।  

ফেলুদার কাজের ঘর আমরা যেমন কল্পনা করি

ফ্রেন্ডস-এর ফিবির ঘর

যদিও ফ্রেন্ডস সিরিজটিতে অনেক জনপ্রিয় চরিত্র আছে, তবু আফিয়ার কেন যেন ফিবিকেই বেশি ভালো লাগে। আর অমন পাগলাটে, হাসিখুশি চরিত্রটার মাঝে আফিয়া খানিকটা নিজেকেই যেন দেখতে পায়। এ ক্ষেত্রে আফিয়া ঘরের দেয়াল করতে পারে উজ্জ্বল কোনো হলুদ রঙের। আর যদি দেয়াল সাদা রাখতে চায়, তাহলে পর্দায় ব্যবহার করতে পারে হলুদ রং। এর পাশাপাশি একটু লালচে ধরনের যেকোনো রং-ও মানাবে ভালো। একটি দেয়ালের একদিকে টাঙিয়ে দিতে পারে সিরিজের ছয় চরিত্র কিংবা সিরিজের পছন্দের কিছু দৃশ্যের পোস্টার। অন্য দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারে ড্রিমক্যাচার। সাথে মণিকার বাসার দরজায় যেই হলুদ রঙের ফ্রেমটি লাগানো আছে তেমন একটি ফ্রেম।  ঘর সাজানো যেতে পারে কৃত্রিম সূর্যমুখী ফুল দিয়ে। আর এক কোনায় রাখতে পারে শখের গিটার। মেঝের জন্য ব্যবহার করতে পারে বাহারি রঙের একটি কার্পেট। এই তো হয়ে গেল ফিবির ঘর। 

 ফিবির ঘর কেমন হবে, এটা চিন্তা করলেই কেন যেন মনের মাঝে একটা সুন্দর হলুদ রঙের ঘর ভেসে ওঠে

শুভ্র

আফিয়ার বেশির ভাগ বন্ধুর হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি করা চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচাইতে পছন্দের হিমু। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ওর কেন যেন সব সময় শুভ্রর প্রতি একটা মায়া কাজ করে। আর তাই সে সব সময় চেয়েছে শুভ্রর নামের মতো শুভ্র সাদা একটি ঘর। এর জন্য ঘরের দেয়াল করা যেতে পারে অফ হোয়াইট আর ঘরের সিলিংয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে শরতের আকাশের মতো আসমানি রং। জানালার পর্দা দেওয়া যেতে পারে সাদা রঙের। এ ক্ষেত্রে ঘরে দেওয়া যেতে পারে সাদা রঙের গদির একটি সোফা। মেঝেতে বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে সাদা মেঘের মতো তুলতুলে একটি কার্পেট। আর পড়ার টেবিল-চেয়ারের ক্ষেত্রে হালকা রঙের কাঠের তৈরি কিছু নির্বাচন করা যেতে পারে। পড়ার টেবিলে দেওয়া যেতে পারে ছোট আকারের কোনো ল্যাম্প। আর ঘরের এক কোনায় পড়ার টেবিলের সাথে মিলিয়ে ছোট্ট একটি বুকশেলফ। ব্যস, হয়ে গেল শুভ্রর ঘর। 

শুভ্রর ঘরটা আমরা কেন যেন একদম ছিমছাম কল্পনা করি

আ লিটল প্রিন্সেস-এর সারা ক্রু-এর মতো ঘর

খুব ছোটবেলায় কোনো একটা জন্মদিনে আফিয়া আ লিটল প্রিন্সেস বইটা উপহারে পেয়েছিল। আর এই বইটা ওর সামনে খুলে দিয়েছিল এক নতুন দুনিয়া। জীবনে যতবার কোনো খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে আফিয়া, ততবার এই বইটা ওকে সাহস জুগিয়েছে। এর পাশাপাশি আফিয়া আবার ডার্ক একাডেমিয়ার বিশাল ভক্ত। আর তাই তো আফিয়ার লিস্টে স্থান করে নিয়েছিল এই বইয়ের মূল চরিত্র সারা ক্রু।

এই ক্ষেত্রে ঘরের দেয়ালের রং ধবধবে সাদা কিংবা অফ হোয়াইট করা যেতে পারে। আর জানালায় দেওয়া যেতে পারে ভিন্টেজ প্রিন্টের কোনো পর্দা। কিংবা করা যেতে পারে এর উল্টোটাও। অর্থাৎ ঘরের দেয়ালে ভিন্টেজ ফ্লোরাল মোটিফের কোনো ওয়ালপেপার দিয়ে পর্দার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে একটু গাঢ় রঙের একরঙা পর্দা। ঘরের খাট, পড়ার টেবিল, বুকশেলফের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে গাঢ় অথবা কালচে রঙের আসবাবপত্র। অর্থাৎ ঘরের আসবাবপত্রগুলোর মাঝে রঙের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। আর বুকশেলফটি একটু বড়, ভারী ধরনের হলে মানাবে ভালো। সেই সাথে দেওয়া যেতে পারে এক সিটারের একটু ভারী ধরনের কোনো সোফা। এই ক্ষেত্রে দুই ধরনের ল্যাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে। স্ট্যান্ডসহ কোনো ল্যাম্প সোফার পাশে দেওয়া যেতে পারে, তাতে আরাম করে সোফায় বসে বই পড়া যাবে। অথবা একটু ছোট আকারের কোনো ল্যাম্প পড়ার টেবিলে রাখা যেতে পারে। পড়ার টেবিলে রাখা যেতে পারে ছোট ক্যাকটাসজাতীয় গাছ। আর মেঝেতে রাখা যেতে পারে একটু ভারী ডিজাইনের কোনো কার্পেট। বিছানায় বালিশের সাথে রাখা যেতে পারে কিছু কুশন। আর যদি পুতুল কিংবা কোনো খেলনা থাকে, তাহলে ওগুলো সাজিয়ে রাখা যেতে পারে বিছানায় কিংবা ঘরের এক কোনায়। ব্যস! একদম মনে হবে বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা সারা ক্রু’র ঘর। 

সারা ক্রুর ঘর ডার্ক একাডেমিয়ার চমৎকার একটা উদাহরণ

আফিয়ার লিস্ট তো দেখলেন। কমেন্টে এবার তাহলে জানিয়ে দিন আপনার পছন্দের কোন চরিত্রটির মতো আপনি নিজের ঘর সাজাতে চান। 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।