ব্যক্তিগত লাইব্রেরি সাজানোর উপায়

প্রচন্ড খরতাপ হোক অথবা বৃষ্টি অথবা খুব মন খারাপের ঘুমহীন রাত- সাথে যদি থাকে পছন্দের বই আর এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা তবে আর কি চাই? কারো কারো হয়তো কফি পছন্দ, সেটিও মন্দ না।

কিন্তু বই পড়ার পরিবেশ তো লাগবে। একটা শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ। আর নিজের বাসাতেই যদি একটা লাইব্রেরি থাকে তবে তো সোনায় সোহাগা। বই সংগ্রহ করাও হবে, পড়াও হবে।

অনেকেরই শখ থাকে বই সংগ্রহের, অনেকেরই আবার গবেষনার কাজের জন্য বা পেশাদার কারনে ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর প্রয়োজন পড়ে। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো নিজের বাসায় লাইব্রেরিটা কেমন হতে পারে তা নিয়ে।

চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই নিজের ঘরের লাইব্রেরির প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সম্পর্কে।

আলাদা ঘর

আমাদের মাঝে অনেকের একটা স্বপ্ন থাকে নিজের একটা লাইব্রেরি থাকবে। হতে পারে তা সবার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু এত বড় পরিসরে সবসময় নিজের একটা লাইব্রেরি পাওয়া সম্ভব হয় না।

যেখানে কয়েক হাজার বই থাকবে এবং যা মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে নিজের বাসায় একটা রুমে নিজের জন্য লাইব্রেরি হতেই পারে। কয়েক হাজার বই না হোক, অল্প কিছু বই দিয়েই আপনি আপনার নিজের জন্য লাইব্রেরি করতে পারেন।

তাই প্রথমে বাসার এমন একটি রুম নির্বাচন করুন যেটি অন্যসব রুমের তুলনায় কোলাহল মুক্ত এবং অন্যসব রুমের তুলনায় যে রুমে একটু বেশি আলো আসে। সেক্ষেত্রে বেলকনি আছে এমন একটি রুম নির্বাচন করাই শ্রেয়।

বুক শেলফ

book shelf

আপনার নিজের লাইব্রেরির জন্য প্রথমেই একটি বড় বুকশেলফ পছন্দ করুন। ভালো হয় যদি বুকশেলফটি রুমের এক পাশের দেয়াল সমান দীর্ঘ হয়। আর উচ্চতা ছয় ফিট থেকে সাত ফিট হতে পারে।

এটি হবে আপনার সব বই ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখার প্রধান সমাধান। এই বুকশেলফে আপনি আপনার পছন্দের কবি সাহিত্যিকের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা ভাগ করে রাখতে পারেন। শুধু একটা কলামে থাকবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল অথবা শরৎচন্দ্র।

বইয়ের সংখ্যা বেশি হলে এটি করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, এতে বই খুজে পেতে সুবিধা হয়। আর একদম নিচের তাকে রাখুন কিছু শিশুতোষ বই। যা আপনার পরিবারের ছোট সদস্যের নাগালে থাকবে আর গড়ে তুলবে পড়ার অভ্যাস।

ডেকোরেশন

এবার বই পড়ার জন্য রুমটায় বই পড়ার পরিবেশ তৈরি করে তুলতে হবে। রুমের ডেকোরেশন কেমন হতে পারে তাই ভাবছেন তো? আচ্ছা, ভেবে দেখুনতো আমরা বই কিভাবে পড়ি? কেউ গল্পের বই নিজের টেবিলে বসে পড়ে, আবার কেউ অলস সময় কাটাতে শুয়ে শুয়ে বই পড়ে।

রুমের একপাশে ফ্লোরে একটা সিঙ্গেল মেট্রেস ফেলে তাতে পছন্দ অনুযায়ী কুশন দিয়ে সাজিয়ে নিন। এতে আপনি অলস সময়ে শুয়ে শুয়ে আপনার পছন্দের বইটি পড়তে পারবেন।

পুরো রুমে না হলেও রুমের মাঝের অংশটুকু কার্পেটে সাজিয়ে নিন। এতে যেমন আভিজাত্য ফুটে উঠবে তেমনি শীতের সময় খালি পায়ে ফ্লোরে পা পড়লেও শিউরে উঠার কোন চান্স থাকবে না।

বাজেট এবং রুচি অনুযায়ী আপনি আপনার নিজের লাইব্রেরির ফ্লোরের জন্য কার্পেট নির্বাচন করুন।

ডেস্ক এবং চেয়ার

Easy Chair

নিজের লাইব্রেরিতে একটা পড়ার জন্য ডেস্ক এবং চেয়ার রাখতে পারেন। এতে পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ কোন টপিক পেলে আপনি তা হাইলাইট করে রাখতে পারবেন। অথবা পড়তে পড়তে নিজের জন্য অথবা আপনজনের উদ্দেশ্যে কিছু লিখতে চাইলে আপনি লিখতে পারবেন।

সেই ডেস্কেও আপনি কিছু বই সাজিয়ে রাখতে পারবেন। ডেস্কে থাকুক পেপারওয়েট আর কালার পেন এবং পেন্সিল। আর চেয়ারটা যেন আরামদায়ক হয় সে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। আরগোনোমিক চেয়ার কেনার চেষ্টা করবেন।

অনেকেই আছেন এক বসায় ১০০ পৃষ্ঠা পড়ে ফেলেন, তাদের জন্য আরগনোমিক চেয়ার বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয়।

অন্যান্য

আমরা মাঝে মাঝেই বই পড়ে ভুলে যাই, কত পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়েছিলাম। হয়তো বই পড়ার মাঝে কিছু অফিশিয়াল বা সাংসারিক কাজে ব্যস্ততার ভীড়ে বেশ কয়েক দিনের একটা বিরতি পড়ে যায় বই পড়ায়। তাই কতটুকু পড়েছিলাম তা মনে রাখার জন্য যদি কিছু বুকমার্ক পাওয়া যায় মন্দ হবে না।

বইয়ের পাতা ভাজ করা অনেকেরই পছন্দ না, তাছাড়া এতে দাগ পড়ে যায়, সেজন্য বুকমার্ক ব্যবহার করাই শ্রেয়। আজকাল বই পড়ার জন্য বাজারে বিভিন্ন ডিজাইনের এমনকি ধাতব বুকমার্ক কিনতে পাওয়া যায়। আপনি পছন্দ মতো কিছু বুকমার্ক সংগ্রহে রাখতেই পারেন একজন বই প্রেমী হিসেবে।

রুমের এক কোণায় একটা কর্ণারে শোপিস হিসেবে রাখুন রবীন্দ্রনাথ বা লালনের মুখের প্রতিকৃতি। এতে আপনার পরিবারের ছোট সদস্যটি শৈশবেই পাবে বাংলা সাহিত্যিকদের পরিচিতি।

রুমের মাঝে রাখুন একটা সেন্টার টেবিল আর সাথে তিন/চারটা টুল। এতে আপনি যখন বই পড়বেন, আপনার সাথে বসে আপনার পরিবারের অন্য সদস্যরাও বই পড়তে পারবে। আবার আপনার বাসায় বই প্রেমী একজন অতিথি এসেছেন, আপনি তার সাথে এই লাইব্রেরির সেন্টার টেবিলে চায়ের সাথে গল্পের ঝড় তুলতে পারেন।

রুমের রঙটা খুব হালকা রঙের হলেই ভালো হয়। দেয়ালে কিছু পেইন্টিং রাখতে পারেন। জানালার পর্দা এমন হোক যেন ঘরে আলো আসে।

বেলকনিতে একটা ইজিচেয়ার রাখতে পারেন। বিকেলের অবসরে অথবা খুব সকালে আপনি এই ইজিচেয়ারে বসেই গল্পের বই পড়তে পারেন।

বেলকনিতে বেশ কিছু গাছের ব্যবস্থা করতে পারেন। যেমন মাধবীলতা বা অপরাজিতা ফুল গাছ, এক পাশের গ্রিলে তুলে দিন। ওরা নিজেদের মতো ছেয়ে যাবে। আর ছোট ছোট কিছু ফুলের টব রাখুন বেলকনিতে। গ্রিলের সাথে দুটো পাত্র বেধে দিতে পারেন।

তবে বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন, বইয়ের ঘরে ভেতরে গাছ না রাখাই ভালো। এক্ষেত্রে আরো মনে রাখবেন যে যখন বুক শেলফ কিনছেন তখন কাচের পাল্লাযুক্ত বুকশেলফ কেনার চেষ্টা করবেন।

পাল্লা না থাকলেও সমস্যা নেই তবে পাল্লা থাকলে সেটি বইগুলোকে ধুলাবালি এবং অতিরিক্ত আদ্রতা থেকে রক্ষা করবে। ঠিক একারনেই বইয়ের ঘরের ভেতরে গাছ না রাখাই উত্তম।

বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। তাই বই কিনুন নিজের জন্য, আপনজনের জন্য। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর পড়ার জন্য পরিবেশ বানিয়ে নিতে একটু চিন্তা করে ঘর সাজান। চিন্তা কি? HATIL তো আছেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।