রান্নাঘরের যত কথা

তুলতুলদের বাসায় বেশ চিৎকার-চেঁচামেচি চলছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুরো বাসা। তুলতুলরা নিজেদের বাসায় উঠছে। বাসাবোতে ফ্ল্যাট কিনেছে তুলতুলের বাবা। বাসা পাল্টাতে সাহায্য করতে ঢাকায় এসেছে ছোট চাচা।

তুলতুলের বড় দুই ভাই, চাচা ও বাবা মিলে গোছাচ্ছে পুরো বাসা। নতুন বাসা তুলতুলের খুব একটা পছন্দ হয়নি। ফ্ল্যাট তৈরি হয়ে যাওয়ার পর কিনেছে বাবা। তাই নকশা বেছে নেওয়ার সুযোগও পায়নি তারা। আচ্ছা, মা কী করছে? দৌড়ে রান্নাঘরে ঢুকল তুলতুল।

মা রান্নাঘর গোছাতে ব্যস্ত। তবে মাকে বেশ বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। তুলতুলের মা আফরোজা নতুন রান্নাঘরের অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। আগের বাসায় প্রায় ২০ বছর একই রান্নাঘর ব্যবহার করেছেন তিনি।

নতুন ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের অনেক কিছুই তার পছন্দের হয়নি। রান্নাঘরে জায়গা হচ্ছে না প্রয়োজনীয় জিনিসের। ক্যাবিনেটের জায়গা কিংবা সিংক কোনোটাই মনমতো হয়নি আফরোজার। ছুটির দিনগুলোতে তুলতুলের বাবা রান্না করলেও অন্যান্য দিনের বেশির ভাগ সময় রান্নাঘরেই কাটে আফরোজার। অতএব রান্নাঘরের এই দশা দেখে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন তিনি। 

নতুন ফ্ল্যাটের রান্নাঘর নিজের মনমতো করে তৈরি করলে হয়তো এই ঝামেলায় পড়তে হতো না আফরোজাকে। আগের বাসার রান্নাঘরটা আফরোজার কাছে কিছুটা ছোট মনে হতো।

নতুন ফ্ল্যাটের রান্নাঘরটা বড়, কিন্তু ডিজাইন ও ক্যাবিনেটের অবস্থান বেশ অদ্ভুত লেগেছে আফরোজার। আদর্শ রান্নাঘর আসলে কেমন? কোন ধরনের রান্নাঘর আসলে প্রতিদিনের রান্নার কাজকে সহজ করবে? নতুন রান্নাঘর গোছানো বাদ দিয়ে আফরোজার মাথায় এখন ঘুরছে এমন সব প্রশ্ন।

রান্নাঘর : বাড়ির সবচেয়ে জরুরি ঘর

আফরোজার প্রশ্নের উত্তরগুলো আমরা নিশ্চয়ই খুঁজব। তবে যে রান্নাঘর নিয়ে এত হইচই তার গুরুত্ব কতটা?

রান্নাঘরকে সবচেয়ে জরুরি ঘর বলার কারণ অনেক। পরিবারের যে সদস্যের কাছে রান্নাঘরের দায়িত্ব থাকে, সেই কেবল খুব বেশি গুরুত্ব দেয় রান্নাঘরকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাকি সদস্যরা অন্যান্য ঘরের মতো গুরুত্ব দেয় না রান্নাঘরকে।

যার কারণে রান্নাঘরের স্ট্রাকচারাল ও অন্যান্য বিষয়ের গুরুত্ব উপেক্ষিতই থেকে যায়। ঠিকমতো চুলোয় আগুন না জ্বললে যে কত ভোগান্তি পোহাতে হয়, তা তো সবারই কমবেশি জানা। অতএব, চাই আধুনিক ও সুন্দর রান্নাঘর।

আধুনিক ও সুন্দর রান্নাঘরের সংজ্ঞা অনেক রকমই হতে পারে। তবে আধুনিক নকশায় তৈরি ও আপনার রান্নার কাজকে সহজ করবে, এমন রান্নাঘরকে সুন্দর রান্নাঘর বলা যায়।আফরোজার সমাধান খোঁজার পালা এবার।

আরো পড়ুন: কাঠের কিচেন রেক: সাশ্রয়ী মূল্যে HATIL এর কিচেন রেক কিনুন

নানা ঢঙের রান্নাঘর : মডিউলার কিচেন ও ওপেন কিচেন

নকশা ও গঠনগত দিক থেকে রান্নাঘরের ক্ষেত্রেও আছে অনেক রকমফের। এই রকমফেরটা মূলত দেখা যায় মডিউলার কিচেনের ক্ষেত্রে। মডিউলার কিচেন কী? রান্নাঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের আরেক নাম বলা যায় মডিউলার কিচেন। বিভিন্ন ধরনের মডিউলার কিচেনের ডিজাইন রয়েছে। চাইলে আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন আপনার মডিউলার

কিচেনের ডিজাইন। তবে মডিউলার কিচেনের কয়েকটি আকার জনপ্রিয়। ইউ শেপড, স্ট্রেট লাইন, এল শেপড ও আইল্যান্ড। নাম পড়েই হয়তো কিছুটা বুঝতে পারছেন মডিউলার কিচেনের নকশাগুলোর আকার। মডিউলার কিচেনের আকার ও আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন ‘মডিউলার কিচেন : এ সময়ের রান্নাঘর’ লেখাটিতে। হাতিলের মডিউলার কিচেন সেবা নিয়েও জানতে পারবেন সেখানে।

নকশা ও গঠনগত দিক থেকে রান্নাঘরের ক্ষেত্রেও আছে অনেক রকমফের

‘ওপেন কিচেন’ বা খোলা রান্নাঘর ব্যাপারটাও বেশ দারুণ। আমাদের দেশে রান্নাঘর সাধারণত বাড়ির এক পাশে বা আলাদাই থাকে। সময় বদলেছে। বর্তমানে আলাদা বা দূরের রান্নাঘরের পাশাপাশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ওপেন কিচেন। খোলা রান্নাঘর আলাদাভাবে কোনো ঘরে থাকে না। ডাইনিং টেবিল ও রান্নাঘরসহ খোলামেলা রান্নার জায়গাই মূলত ওপেন কিচেন।

আমাদের দেশে ওপেন কিচেন খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও পাশ্চাত্যে এর ধারণা বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও এই ধারণা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। কম জায়গা খরচ ও আধুনিক ধারণার কারণে ওপেন কিচেন গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে আমাদের দেশে।

ওপেন কিচেন খোলামেলা জায়গাতে থাকে বলে এটি ব্যবহারে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ব্যাপার জানা প্রয়োজন। ওপেন কিচেন ব্যবহারের অতি জরুরি কিছু বিষয় জেনে নিই চলুন।

  • ওপেন কিচেনে চিমনি ব্যবহার আবশ্যক। তা না হলে রান্নার সময়ের পুরো বাড়ি হয়ে যাবে ধোঁয়াচ্ছন্ন। কেবল ধোঁয়াই না, রান্নাঘর তেলচিটচিটে হয়ে যাবে খুব দ্রুতই।
  • কাজ শেষেই গুছিয়ে ফেলতে হবে পুরো রান্নাঘর।
  • ওপেন কিচেনে খোলা তাক যত কম রাখা যায়, ততই ভালো। তাকের পরিবর্তে হালকা ওয়াল ক্যাবিনেট ব্যবহারটা হবে দারুণ সিদ্ধান্ত।
  • ওপেন কিচেনের সব আসবাবই দৃষ্টিনন্দন হওয়া চাই।
  • সাদা রঙের আসবাব এড়িয়ে যেতে হবে। গাঢ় রঙের ব্যবহারে ময়লা হবে কম।
  • ওপেন কিচেনে হালকা রান্না করাটাই ভালো। মসলাদার খাবার রান্নার ফলে সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়তে পারে তেল-মসলার ঝাঁজ।

রান্নাঘরে আধুনিকতা

একসময় বাড়িতে সব মসলাই শিলপাটায় বাটা হতো। এখন মসলার জায়গা হয় মিক্সার ব্লেন্ডারে। আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অনেক কিছু সহজ হয়ে যাচ্ছে। আপনার রান্নার কাজটাও সহজ করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারটা প্রয়োজনীয়।

রান্নাঘরের প্রত্যেকটি কাজকে সহজ করতে এখন অনেক গ্যাজেট রয়েছে বাজারে। ওভেন কিংবা রাইস কুকার আমাদের পরিচিত হলেও আছে আরও অনেক রকম গ্যাজেট। রান্নার কাজে গ্যাজেটের ব্যবহার আপনার জীবনযাপনকে আরও স্মার্ট করে তুলবে। রান্নাঘরের নিত্যনতুন গ্যাজেট সম্পর্কে আপডেটেড থাকলে গ্যাজেটের ব্যবহার বাঁচাবে আপনার সময় ও শ্রম দুটোই। 

রান্নাঘরকে সুন্দর বা পরিপাটি রাখাটাও কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং

রান্নাঘরকে সুন্দর ও পরিপাটি রাখতে

রান্নাঘরের নকশা আর গ্যাজেট তো হলো। দুটোই সহজ করবে আপনার রান্নার কাজ। এত কিছুর পর রান্নাঘর সুন্দর রাখাটাও তো জরুরি। মজার ব্যাপার হলো, পরিষ্কার ও পরিপাটির রান্নাঘর আপনার মন-মর্জি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন দিক যেমন কাজ করার মানসিকতা তৈরি করে, রান্না করার ব্যাপারটাও তেমনই।

তবে রান্নাঘরকে সুন্দর বা পরিপাটি রাখাটাও কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং। বাড়ির সব রান্নার পর রান্নাঘরকে তকতকে-ঝকঝকে পরিষ্কার করাটা খুব একটা সহজ না। কয়েকটি দিক সামলে রাখলে আপনার রান্নাঘর থাকবে অনেকটাই পরিপাটি।

  • সিঙ্ক ময়লামুক্ত রাখতে ও সিঙ্কের পাইপে ময়লা আটকে পানি জমে যাওয়া থেকে ঠেকাতে প্রতিদিন রান্না শেষে কুসুম গরম পানির সঙ্গে অল্প ডিটারজেন্ট মিশিয়ে সিঙ্ক পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। সিঙ্কের ওপরের অংশ ও পাইপের ময়লা দুটোই পরিষ্কার হবে এতে। তবে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করলে প্লাস্টিকের পাইপের ক্ষতি হতে পারে।
  • প্রতিদিন রান্না শেষ হওয়ার পরই চুলার নিচের জায়গাটা স্ক্রাবার দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলাটা জরুরি। তা না হলে সেখানে ময়লা জমে যায় ও তেল পড়ে চিটচিটে হয়ে যায়। পরে সে জায়গা পরিষ্কার করতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।
  • শুধু চুলার নিচেই না, পুরো রান্নাঘরের সব জায়গায়ই তেল বা তৈলাক্ত পদার্থ পড়লে সাথে সাথে পরিষ্কার করে ফেলবেন। এতে রান্নাঘর চিটচিটে হবে না।
  • রান্নার উপকরণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কাজ শেষে গুছিয়ে রাখলে রান্নাঘর পরিষ্কারের অনেকটা কাজই হয়ে যায়। সরঞ্জাম কাজ শেষে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলে খুঁজে পাওয়াটাও বেশ সহজ হয়।

রান্নাঘরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তো গল্প হলো। এত কিছু বাইরেও কিন্তু আপনার রান্নাঘরের আরও অনেক গল্প নিশ্চয়ই আছে। তবু একবার মিলিয়ে দেখুন তো, আপনার রান্নাঘরে আরও কী কী দরকার?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।