stain free fabric stain free fabric

আপনার বাসার জন্য কিভাবে সঠিক ফার্নিচার কালার সিলেক্ট করবেন?

আপনি যদি কম খরচে নিজের বাসাকে আরো সুন্দর করে আপনার বাসাকে অতিথিদের জন্য আকর্ষনীয় করে তুলতে চান, তাহলে সবার প্রথমে ঘরের ফার্নিচার দিয়েই এই পরিবর্তন শুরু করা উচিত। আর এই কাজে ঘর ও ফার্নিচার কালার-এর মধ্যে যোগসুত্র বজায় রাখলে সেরা উপায়ে সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও বলা বাহুল্য যে ভালো ফার্নিচার আপনার মন মানসিকতা ভালো রাখতেও সাহায্য করে। তাহলে আপনার বাসার জন্য সঠিক রঙ্গের ফার্নিচার কিভাবে বেছে নিবেন? এই নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব। 

ফার্নিচার কালার কেন ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ভূমিকা রাখে?

ফার্নিচারের রঙ ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শুধু ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং ঘরের পরিবেশ, আবহ ও মানসিক অনুভূতিতেও প্রভাব ফেলে। নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরা হলো—

  • ফার্নিচারের রঙ ঘরের আবহ তৈরি করতে সাহায্য করে। যেমন— হালকা রঙ (সাদা, বেজ, প্যাস্টেল) ঘরকে প্রশান্তিময় ও প্রশস্ত দেখায়। আবার গাঢ় রঙ (মেহগনি, নেভি ব্লু, ডার্ক গ্রে) ঘরে কেতাদুরস্ত ও রাজকীয় অনুভূতি যোগ করে।
  • উজ্জ্বল রঙের ফার্নিচার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম আলো প্রতিফলিত করে, ফলে ঘর আরও আলোকিত দেখায়। গাঢ় রঙ আলো শোষণ করে, যা ঘরে উষ্ণতা ও গভীরতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  • ফার্নিচারের রঙ মানুষের ব্যক্তিত্ব ও পছন্দ প্রতিফলিত করে। যেমন—নিউট্রাল বা মোনোক্রোমেটিক রঙ আধুনিক ও মিনিমালিস্ট লুক দেয়। আপরদিকে উজ্জ্বল ও কনট্রাস্টেড রঙ (লাল, নীল, সবুজ) ডায়নামিক ও চনমনে পরিবেশ তৈরি করে।
  • ফ্লোরিং, ওয়ালপেইন্ট, কার্পেট ও অন্যান্য ডেকরের সাথে মিল রেখে ফার্নিচারের রঙ নির্বাচন করলে সমন্বিত ও পরিপূর্ণ লুক পাওয়া যায়।
  • নিরপেক্ষ রঙের ফার্নিচার (সাদা, ধূসর, কাঠের প্রাকৃতিক রঙ) দীর্ঘস্থায়ী এবং সব ধরনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে মানানসই হয়। ট্রেন্ডি রঙ (টিল, টেরাকোটা, ডিপ ব্লু) সময়ের সাথে বদলাতে পারে, তাই সেগুলো ব্যবহারে সচেতন হতে হয়।

সুতরাং, ফার্নিচারের রঙ শুধু ডিজাইনের অংশ নয়, এটি ঘরের সম্পূর্ণ লুক ও অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

সঠিক ফার্নিচার কালার খুঁজে পাবার ৬টি প্রফেশনাল টিপস!

১. বাসার আর্কিটেকচারাল কাঠামো দেখা

আপনার ফার্নিচার এর জন্য পারফেক্ট কালার টোনটা খুজে বের করার জন্য প্রথমেই আপনাকে যা করতে হবে, সেটা হলো আপনার ঘরের ডিজাইন এবং এক্সিস্টিং এলিমেন্ট গুলোকে বুঝা। খেয়াল করুন যে আপনার দেয়ালগুলো কোন রঙের, আপনার ফ্লোর এর টাইলস বা মোজাইক এর সাথে কোন ধরনের কালার ম্যাচ করে, বা আপনার ঘরের পর্দাগুলোর কালার কি দেয়ালের সাথে কি সত্যিই মানাচ্ছে? 

এই জিনিসগুলো নোট করার পর ভেবে দেখুন যে আপনি কি আপনার ঘরের সামগ্রিক এনভায়রোমেন্ট কি শান্ত এবং সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হবে এমন নাকি। যদি আপনার উত্তর না-বোধক হয় তাহলে আপনাকে ঘরের সাথে মানানসই ফার্নিচার কেনাতে ইনভেস্ট করা উচিত। 

২. আপনার ঘরের সাইজ এবং লে-আউট বিবেচনা করুন

সাইজ মেটারস! হ্যা, আপনার ঘরের আকারের সাথে ফার্নিচার কালারের খুব গভীর সম্পর্ক রয়েছে। 

আপনার ঘরটি যদি আকারে খুব ছোট হয় (ধরেন ৮০০ স্কয়ার ফিট এর কম), তাহলে আপনার উচিত হালকা রঙয়ের ফার্নিচার ব্যবহার করা। এতে করে আপনার ঘরটি কঞ্জেস্টেড লাগবে না বা খুব বেশি অন্ধকার হয়ে থাকবে না। এরকম কিছু হাল্কা কালার হতে পারে সাদা, গ্রে, সবুজ, বা হালকা নীল। এই রঙ্গগুলি প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম আলো প্রতিফলিত করে একটি তাজা এবং শীতল পরিবেশ তৈরি করে। 

অন্যদিকে, আপনার ঘরটি যদি আকারে বেশ বড় হয় (ধরেন ১০০০-১২০০ স্কয়ার ফিট বা এর বেশি), আপনার উচিত একটু ডার্ক বা বোল্ড (ট্রেডিশনাল) টাইপের কালারের ফার্নিচার খোঁজা। যেমনঃ লাল, বেগুনি, নেভি, বারগান্ডি, বা চকলেট কালারের ফার্নিচার। এই রংগুলো আপনার ঘরকে একটি ইনভাইটিং এবং রিচ ভাইব দিবে। 

hatil sofa

৩. কালার কম্বিনেশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন

সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাসার দেয়ালের রঙয়ের সাথে ম্যাচিং করে ফার্নিচার কিনতে চেস্টা করুন।  সাজসজ্জার সাথে মিশ্রিত আসবাবপত্রের রং নির্বাচন করে সাদৃশ্য অর্জন করুন। বাসায় ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে ৬০-৩০-১০ রুল অনুসরণ করতে পারেন, যেখানে দেয়ালের রঙয়ের সাথে মিলিয়ে ৬০ শতাংশ, দেয়ালের রঙয়ের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন কালারের ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য রঙয়ের ১০ শতাংশ ফার্নিচার রাখতে পারেন। 

কালার এর উপর বাসার থিম অনেকটাই নির্ভর করে, এমন ওয়ার্ম টোনের বাসা ফ্রেন্ডলি এবং ওয়েলকামিং, ব্লু টোনের বাসা রিলাক্সিং এবং গ্রে টোনের বাসা আভিজাত্যসুলভ ভাব প্রকাশ করে। পুরো বাসাতে উপরে উল্লেখিত রুল মেনে ফার্নিচার দিয়ে সাজালে সেটা ঘরের একঘেয়েমি দূর করার পাশাপাশি ভার্সেটালিটি নির্দেশ করে।

hatil furniture

৪. লাইটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর

লাইটিং জিনিসটাকে আমরা অনেকেই আন্ডারস্টিমেট করে থাকি। কিন্তু এই একটা জিনিসই আপনার ঘরের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে বা বিঘ্রে দিতে পারে। আপনার ঘর যদি খোলামেলা হয়, অর্থাৎ ন্যাচারাল লাইটের কোনো অভাব যদি না থাকে, তাহলে আপনি যে কোনও ফার্নিচার রঙ বেছে নিতে পারেন। তবে, এক্ষেত্রে খুব ব্রাইট বা খুব ডার্ক কালার এড়িয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়। এই কালারগুলো ন্যাচারাল লাইটকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে পারে না। 

অন্যদিকে, আপনার ঘর যদি একটু বদ্ধ টাইপের হয়, অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল লাইটের পরিমান বেশি থাকে (দিনের বেলায়ও লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়), তাহলে আপনি একটু মিউটেড টাইপ এর কালার এর ফার্নিচার চুজ করতে পারেন। এই ধরনের কালার কৃত্রিম আলোতে দেখতে বেশি ভালো লাগে। 

৫. বাসায় ফার্নিচার নিয়ে আসার আগে টেস্ট করে দেখুন

আপনি যদি এখনও শিউর না হয়ে থাকেন যে আপনার কোন রঙয়ের ফার্নিচার ব্যবহার করা উচিত, আপনার উচিত বিভিন্ন ধরনের আলোতে আপনি যেই ফার্নিচারটি কিনতে চান সেটি পরীক্ষা করে দেখা। এটা আপনাকে একটি রিয়ালিস্টিক আইডিয়া দিবে যা আপনার কোন ধরনের ফার্নিচার কেনা উচিত।

কীভাবে পরীক্ষা করবেন?

  • আপনার ফার্নিচার রঙ্গের কিছু কাপড় বা পেইন্ট নমুনা হিসেবে ঘরে আনুন এবং বিভিন্ন স্থানে রাখুন। 
  • দিনের বিভিন্ন সময় এবং রাতে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম আলোকে আপনার ফার্নিচার রঙ্ কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা লক্ষ্য করুন।

এটা আপনাকে একটি রিয়ালিস্টিক আইডিয়া দিবে যা আপনার কোন ধরনের ফার্নিচার কেনা উচিত।

hatil bed

৬. প্রফেশনালদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন

কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছেন না? প্রোফেশনালদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে কখনোই দ্বিধাবোধ করবেন না। যারা ফার্নিচার বিক্রি বা ডিজাইন রিলেটেড কাজে জড়িত আছে, তারাই সবচেয়ে ভালো  বলতে পারবেন যে আপনার কোন রঙয়ের ফার্নিচার ব্যবহার করা উচিত। 

এছাড়াও বিভিন্ন হোম ডেকোর ব্লগ ওয়েবসাইট, ম্যাগাজিন, বা পিন্টারেস্ট থেকে আইডিয়া ও ইন্সপিরেশন নিতে পারেন।

আপনার ফার্নিচারের রং আসলে কতদিন টিকবে?

ফার্নিচার শুধুমাত্র একটি রুচির বিষয় নয়, বরং একটি প্রয়োজনীয়তার বিষয়ও। ট্রেন্ডি রঙ আপনাকে আকৃষ্ট করতে পারে, কিন্তু সেগুলো অনেকসময় খুব একটা দীর্ঘমেয়াদী হয় না। দেখা যাইয় কিছুদিন যেতে না যেতেই আপনার ফার্নিচার দেখতে পুরনো লাগা শুরু হবে। 

বেজ, গ্রে, এবং ক্রিম এর মতো ট্রেডিশনাল রঙয়ের ফার্নিচার এ আপনি সবসময় নিশ্চিন্তে ইনভেস্ট করতে পারেন কোনো চিন্তা ছাড়ায়। এছাড়াও, এই পসিবিলিটি অনেক বেশি যে আপনার ঘরে অলরেডি এই ধরনের রঙয়ের কিছু কাঠের ফার্নিচার আছে। সো, আপনার পুরোপুরি সবকিছুই বদলেও ফেলতে হবে না! 

জাস্ট একটু পলিশ করলেই আবার অনেকদিন এর জন্য আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে যেতে পারেন। 

শেষ কথা

আপনার ঘরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে সুন্দর ফার্নিচার কালার-এর আসলে কোনো বিকল্প নেই। কারণ ফার্নিচার আপনার ঘরের সবচাইতে বড় একটা পার্ট। আমরা এতক্ষণ যেই জিনিসগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম, আপনি যদি এই ফ্যাক্ট্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে ফার্নিচার কিনলে পরবর্তীতে আফশোস করার সম্ভাবনা থাকবেই না। দিনশেষে আপনি নিজের ইন্টেরিয়র নিয়ে খুশি থাকেন এইটা আমাদের চাওয়া।

গাঢ় রঙের ফার্নিচার কি ঘরকে ছোট দেখায়?

গাঢ় রঙের ফার্নিচার কি ঘরকে ছোট দেখায়?

হ্যাঁ, গাঢ় রঙের ফার্নিচার আলো শোষণ করে, যা ঘরকে ছোট ও সংকীর্ণ দেখাতে পারে। তবে ভালো লাইটিং ও সঠিক কনট্রাস্ট ব্যবহার করলে এটি দৃষ্টিনন্দন লাগতে পারে। সাধারণত বিলাসবহুল বাসাতে অতিরিক্ত বড় রুম হলেই কেবল গাঢ় রঙ ব্যবহার করা হয়।

কাঠের ফার্নিচারের জন্য কোন রঙের ল্যাকার বা ফিনিশ ভালো?

মেহগনি, ওয়ালনাট, টিক, বা ওক কাঠের জন্য ম্যাট, গ্লসি বা সাটিন ফিনিশ ভালো দেখায়। লাইট ও ডার্ক উড টোন দুটোই ট্রেন্ডিং। পুরোনো ফার্নিচারকেও এধরনের রঙে রিফিনিশ করলে ঘরের পরিবেশ সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে।

ফার্নিচারের রঙ পরিবর্তন করলে কি ঘরের লুক বদলানো সম্ভব?

অবশ্যই! পুরোনো ফার্নিচার নতুন রঙে রিফিনিশ করলে ঘরের পরিবেশ সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। সামান্য রঙের পরিবর্তনেই মনে হবে নতুন কোনো রুমে এসেছেন। কারণ রযের কম্বিনেশন অবচেতনে আমাদেরকে রুমের মধ্যের ফাকা স্পেস সম্পর্কে পজিটিভ আইডিয়া দেয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।