একটি সুন্দরভাবে সজ্জিত বাগান এবং সেখানে বসে সময় কাটানোর জন্য আরামদায়ক আসবাবপত্র আপনার বাড়ির কেবল সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করেনা, বরং আপনার জীবনে আরো আভিজাত্য এবং নান্দনিকতা নিয়ে আসে। ঘরের পাশাপাশি বাগানেও যদি আপনি কাঠের তৈরি ফার্নিচার রাখেন, সেটা নিঃসন্দেহে প্লাস্টিক, ফাইবার কিংবা রডের তৈরি ফার্নিচার থেকে বেশি আকর্ষনীয় লাগবে। যেহেতু,বাংলাদেশ একটি ষড়ঋতুর দেশ , তাই বাসার বাগানে কাঠের আসসবাবত্র রাখলে সেটা আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনে ড্যামেজ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আগেকার দিনে বাড়িতে বাড়িতে সেগুন , গর্জন কিংবা বার্মাটিক কাঠের ব্যবহার বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার্ড উড বা এমডিএফ উড-এর আসবাবেি সকলের ঘর এবং বাহির ভরে উঠছে।
যেহেতু কাঠের ফার্নিচার এর জনপ্রিয়তা বেশি, তাই আপনার বারান্দা কিংবা বাড়ির উঠানের বাগানে কাঠের ফার্নিচার রাখলে তার যথাযথ যত্ন করতলে সেটা অনেক বছর ধরে নতুনের মত করেই সার্ভিস দিবে। আজকের ব্লগে আমরা জানবো কিভাবে রেগুলার ও সিজনাল ক্লিনিং এর মাধ্যমে আপনার গার্ডেন ফার্নিচার দীর্ঘদিন ধরে ভাল রাখবেন। নিম্নে উল্লেখিত টিপসগুলো ফলো করলে আপনি নতুনের মতই ফার্নিচারের চমক ধরে রাখতে পারবেন।
গার্ডেন ফার্নিচারের প্রকারভেদ
ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশ সবুজ শ্যামলে পরিপুর্ন। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য মানুষ প্রকৃতির মাঝেই নিজেকে আবিষ্ট রাখতে পছন্দ করে। গ্রামীন সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষন প্রাকৃতিক পরিবেশ হলেও, শহরে প্রকৃতির দেখা পাওয়া মোটেই সহজ না। তাই মানুষ বাসার ছাদে, বারান্দায় কিংবা বাড়ির সামনে ছোট উঠানে বাগান তৈরি করে সেখানেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার চেস্টা করে। উল্লেখিত আউটডোর প্লেসগুলোতে বসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার রয়েছে, যেগুলো কম্ফোর্টেবলও বটে।
কাঠের ফার্নিচার
বাগানের জন্য কাঠের আসবাবপত্র বাংলাদেশী বাড়ির মালিকদের ব্যপক জনপ্রিয়। সেগুন, মেহগনি বা ইউক্যালিপটাসের মতো মজবুত এবং টেকসই শক্ত কাঠ থেকে তৈরি ফার্নিচার যে কোনও বাগানে বিশেষ আকর্ষণ যোগ করে। বাগানের জন্য তৈরি কাঠের আসবাবপত্রের মধ্যে সাধারণত বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল এবং দোলনা অন্যতম।
বাংলাদেশে কাঠের আসবাবপত্রগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন এবং নান্দনিক। এর পাশাপাশি এই ফার্নিচারগুলো বাগানের সামগ্রিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো উদ্ভাসিত করে। সাধারনত কাঠের ফার্নিচারের মধ্যে একটি সার্বজনীন ভাব রয়েছে যা যেকোন ধরনের বাগানের সাথে নির্বিঘ্নে মিলিয়ে যায়।
এছারাও কাঠের তৈরি ফার্নিচারগুলো দীর্ঘসময় ধরে সার্ভিস দিতে পারে। বিশেষ করে হাই কোয়ালিটির কাঠগুলো সাধারনত ওয়েদার রেজিস্ট্যান্ট হয়, অর্থাৎ এই কাঠগুলো এদেশের ট্রপিক্যাল ক্লাইমেটের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম। ফলে এই ফার্নিচারগুলো আরামদায়ক, ফলে মনোরম পরিবেশে একটু রিলাক্স করার জন্য কাঠের ফার্নিচার বেশ জুতসই একটি অপশন।
বেতের ফার্নিচার
সাধারনত হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য হবার কারনে বেতের ফার্নিচারগুলো অনেকেই পছন্দ করে। সম্পুর্ন প্রাকৃতিক মাধ্যম থেকে সোর্স করা ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি বলে, বেতের ফার্নিচারগুলো আপনার বারান্দায় কিংবা বাড়ির উঠানে আলাদা সৌন্দর্য যোগ করতে সক্ষম এবং বেশ আরামদায়কও বটে। বাজারে বিভিন্ন রকমের সুন্দর ডিজাইনের বেতের চেয়ার টেবিল, ও দোলনার পাশাপাশি সোফা সেটও পাওয়া যায়। এগুলোতে সাধারনত মরিচা ধরেনা, ফলে ঘরের বাগানে রাখার জন্য আইডিয়াল একটি ফার্নিচার। বাসার পাশাপাশি অনেক অভিজাত রেস্তোরাতেও বেতের চেয়ার টেবিল দেখা যায়। এটি নান্দনিক এবং কম্ফোর্টেবল হবার পাশাপাশি, সহজে পরিষ্কার ও রক্ষনাবেক্ষন করা যায়। হালকা পলিশিং এবং ছায়া পেলে এগুলো যুগের পর যুগ আপনাকে সার্ভিস প্রদান করতে সক্ষম।
মেটাল ফার্নিচার
বাগান কিংবা বারান্দার জন্য সাধারনত লোহা বা এল্যুমিনিয়ামের তৈরি ফার্নিচার ব্যবহার করা হয় কারন এগুলো মজবুত এবং টেকসই হবার পাশাপাশি আভিজাত্যর বহিপ্রকাশ ঘটায়। যারা তাদের গার্ডেনের জন্য ক্লাসিক এবং রুচিসম্মত ফার্নিচার খুজেন, তাদের জন্য মেটাল ফার্নিচার একটি আইডিয়াল চয়েস হতে পারে। কারন এই ফার্নিচার গুলোর একাধিক বেনিফিট রয়েছে। মেটাল ফার্নিচার শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী, ফলে নুন্যতম রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমেই দীর্ঘদিন এই ফার্নিচার ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়াও, মেটাল ফার্নিচার ইচ্ছামত ডিজাইন করা যায়। সর্বশেষ, গ্যালভানাইজিংয়ের মাধ্যমে লোহাকে মরিচা ও ক্ষয় রোধি হিসেবে প্রস্তুত করা সম্ভব, ফলে দিনের পর দিন ব্যবহার করলেও এর বাহ্যিক সৌন্দর্য থাকে একই রকম।
প্লাস্টিক ফার্নিচার
সাধারন তাপমাত্রায় প্লাস্টিক যে দীর্ঘদিন ভাল থাকে এটা সবাই জানে। ভারী বৃষ্টি, কিংবা কনকনে শীত অথবা প্রখর রোদ – কোন ধরনের তাপমাত্রাতেই প্লাস্টিকের বিনাশ নেই যেন। তবে এর জন্য প্লাস্টিকের কোয়ালিটিও ভাল হতে হয়। তাই বাগানের বসার স্পেসে রাখার জন্য হিসেবে প্লাস্টিকের তৈরি ফার্নিচার অন্যতম একটি চয়েস। প্লাস্টিক ফার্নিচার ইচ্ছামত ক্রাফট করা যায় এবং এর পলিশিং বেশ মসৃণ হবার কারনে বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই আঘাতপ্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা নেই। প্লাস্টিক ফার্নিচারের অন্যতম গুনগুলোর মধ্যে আছে – এটির স্বল্পমুল্য এবং কালার ভ্যারিয়েশন। এছাড়াও, প্লাস্টিক দিয়ে যে কোন ধরনের গার্ডেন ফার্নিচার তৈরি করা যায় যেমন – দোলনা, রকার, টেবিল, চেয়ার, লাউঞ্জ, বেঞ্চ ইত্যাদি।
কিভাবে গার্ডেন ফার্নিচারের পরিচর্যা করবেন?
সঠিকভাবে যত্ন নেয়ার মাধ্যমে আপনার গার্ডেন ফার্নিচারকে নতুনের মত করেই দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন। যেহেতু, ভিন্ন ভিন্ন ম্যাটেরিয়ালের তৈরি ফার্নিচারের পরিচর্যাতেও ভিন্নতা রয়েছে, তাই নিচে বিস্তারিতভাবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো –
কাঠের ফার্নিচারের যত্ন
কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার জন্য আপনি এটাকে ভালভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। ধোয়ার জন্য হালকা সাবান এবং পানি মিশ্রিত পানি ব্যবহার করুন এবং কটন অথবা নেট কাপড় দিয়ে কাঠের বিভিন্ন অংশ ভালভাবে ঘষে নিন। এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পুনরায় মুছে নিন। কাঠের গুনাগুন বজায় রাখার জন্য বছরে একবার অন্তত প্রটেক্টিভ উড ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আর্দ্রতা এবং সুর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে ফার্নিচার সুরক্ষিত থাকবে। এছাড়াও, ষান্মাষিক স্যান্ডিং এবং পোলিশিং করতে পারেন, এতে করে ফার্নিচার দীর্ঘদিন একই রকম থাকবে।
মেটাল ফার্নিচারের যত্ন
মেটালের তৈরি ফার্নিচার পরিষ্কারের জন্যও কাঠের মত নরম কটন কাপড় এবং হালকা সাবান মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে পারেন। তবে লোহাতে যেহেতু মরিচা ধরার সম্ভাবনা আছে, তাই কেনার সময় গ্যালভানাইড ম্যাটেরিয়ারের তৈরি ফার্নিচার কেনায় উত্তম। তবে, যদি মরিচা ধরেই যায়, তাহলে পানি এবং ভিনেগারের মিক্সচার অথবা মেটাল ক্লিনিং সলিউশ্যন ব্যবহার করে কঠিন মরিচার দাগও তুলে ফেলা সম্ভব। মেটাল ফার্নিচার গার্ডেনে ব্যবহারে ক্ষেত্রে চেস্টা করুন ছায়া আছে এমন স্থানে রাখতে, এতে করে ফার্নিচার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। যেহেতু মেটাল ফার্নিচারের জন্য মরিচাই সবচেয়ে বড় সমস্যা, তাই নিয়মিত রাস্ট-ট্রিটমেন্ট সলিউশ্যন ব্যবহার করুন এবং দীর্ঘদিন নতুনের মত ব্যবহার করতে চাইলে নির্দিষ্ট সময় পর পর ফাইলিং ও রঙ করুন।
প্লাস্টিক ফার্নিচারের যত্ন
প্লাস্টিকের আসবাবপত্র পরিষ্কার করা বেশ সহজ একটি কাজ। প্লাস্টিক ফার্নিচারকে সাধারনত হালকা ডিটারজেন্ট এবং জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চেস্টা করুন ব্লিচ বা অ্যামোনিয়া-ভিত্তিক ক্লিনারগুলো ব্যবহার না করতে, কারন এগুলো প্লাস্টিক ম্যাটেরিয়াল ক্ষয় করে।
প্লাস্টিকের অন্যতম সমস্যা হল, সময়ের সাথে সাথে, সূর্যালোক এবং আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসার কারণে প্লাস্টিক তার রঙ এবং চাকচিক্য হারাতে পারে। কিছু প্লাস্টিক অন্যদের তুলনায় বেশি টেকসই এবং UV-প্রতিরোধী, কিন্তু প্রাকৃতিক কারনে প্লাস্টিকের বিবর্ণতা চোখে ধরা পড়বেই। তাই, এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে প্লাস্টিকের পলিশ বা মোম ব্যবহার করতে পারেন। আবার যদি দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার না করেন তাহলে কাপড় দিয়ে ফার্নিচার ঢেকে রাখুন। এতে করে ফার্নিচারের রঙ অক্ষুন্ন থাকবে।
বেতের ফার্নিচারের যত্ন
বেতের ফার্নিচার সাধারনত দ্রুত ময়লা হয়। এগুলোতে ধুলোবালি বেশি আটকে যায়। তাই রেগুলার পরিষ্কার না করলে ধুলোর কারনে বেতের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। বেতের ফার্ঞ্চিয়ার পরিষ্কারের জন্য প্রতিদিন শলার ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়তে হবে এবং তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। যদি আপনার বাগান কিংবা বারান্দায় ধুলো বেশি জমা হয়, তাহলে ভেজা কাপড় দিয়ে প্রথমে ফার্নিচার মুছে, তাপর শুকনো কাপড় দিতে পুনরায় মুছতে হবে। এতে করে বেতের ফার্নিচার দীর্ঘদিন ভাল থাকবে।
গার্ডেন ফার্নিচার মেরামত করার টিপস
আপনি যদি আপনার গার্ডেন ফার্নিচারের সঠিকভাবে মেরামত করতে পারেন, তাহলে আপনি আরো দীর্ঘসময় ধরে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
গার্ডেন ফার্নিচারগুলো র্যান্ডম ব্যবহার করা হয় বিধায় এগুলোর জয়েন্ট আলগা হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, বসার স্থানে যদি চামড়া বা কাপড়ের কোন সেকশন থাকে, সেটি ছিড়ে যেতে পারে যা ফিক্স করা উচিত। এছাড়াও যদি ফার্নিচারের রঙ নষ্ট হয়ে যায়, সেটাও মেরামত করতে হবে।
ফার্নিচার রিপেয়ারিংয়ের কাজে সঠিক ম্যাটেরিয়াল যেমন – আঠা, সঠিক সাইজের স্ক্রু এবং পেরেক, স্যান্ড পেপ্যার, এবং ইপোক্সি ব্যবহার করুন। অনেক সময় কাঠের ফার্নিচারের পায়া ভেঙ্গে যেতে পারে, সেগুলো সঠিক ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করেই প্রতিস্থাপন করা উচিত, তা নাহলে ফার্নিচারে অসামঞ্জস্যতা চলে আসবে যা এর সৌন্দর্যে ব্যঘাত ঘটাবে।
ফার্নিচার রিপেয়ারিং এর জন্য সবসময় একজন দক্ষ কারিগরের সহায়তা নিন। এতে করে সঠিক ট্রিটমেন্টে আপনার ফার্নিচার দীর্ঘদিন ভাল থাকবে।