বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধশালী একটি দেশ এবং ফার্নিচার ডিজাইনিংয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস বেশ চমৎকার। প্রাচীন কাঠের আসবাবপত্র ডিজাইন থেকে শুরু করে আধুনিক কনটেম্পরারি ডিজাইন পর্যন্ত – যুগ যুগ ধরে এদেশের ফার্নিচারের ডিজাইন করার ধরণ দেশি ও বিদেশি সংস্কৃতির সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং এই পরিবর্তন বেশ লক্ষ্যনীয়ও বটে। বাংলাদেশে আসবাবপত্র নকশার সাথে মিশে আছে ঔপনিবেশিক অতীত, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং সমসাময়িক নকশার ল্যান্ডস্কেপের প্রতিফলন। বাংলাদেশে আধুনিক আসবাবপত্রের উত্থান সেই ১৯ শতকের শেষের দিকে লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশ রাজত্বের সময়কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফার্নিচার ডিজাইনিংয়ে ফুটে উঠেছে ভিক্টোরিয়ান ডিজাইন, এসেছে নতুন বৈচিত্র এবং বিস্তৃত হয়েছে এর উপকরণ। এছাড়াও, আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষ নিত্য নতুন নান্দনিক ফার্নিচার তৈরি করছে, এগুলো জীবনের আরাম আয়েশের পাশাপাশি গৃহের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনন্য ভুমিকা রাখছে। আজকে আমরা বাংলাদেশের ফার্নিচার ডিজাইনিংয়ের ইতিহাস, এই ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ক্রমবর্ধমান বিকাশ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিয়ে কথা বলব।
বাংলাদেশী ফার্নিচার ডিজাইনিং এর শুরুর কথা
বাংলাদেশে ফার্নিচার ডিজাইনিংয়ের শুরু আরো কয়েক শতাব্দি আগে। তৎকালীন সময় অর্থাৎ মধ্যযুগে, বাংলাদেশের আসবাবপত্রের নকশাতে স্থানীয় উপকরণের দ্বারা তৈরি কারুশিল্পের প্রভাব ছিল। সেই সময়কার বিভিন্ন ফার্নিচারে পোড়ামাটির শিল্প, দেব দেবীর প্রতিকৃতি, মন্দিরের চিত্রকর্ম, কাঠ এবং পশুপাখির দাতের দ্বারা তৈরিকৃত নকশা দেখা যায়।মূলত, মুঘল আমলে এই ধরনের ফার্নিচারের দেখা পাওয়া যেত। এছাড়াও সেসময়ে, বিছানা হিসেবে ব্যবহার হওয়া কাঠের তক্তোপোশ, রাজ ঘরানার মানুষদের কাছে একটি জনপ্রিয় আইটেম ছিল। এর পাশাপাশি, বেত এবং বাঁশ দিয়ে তৈরি মোড়া, মোটা কাপড়ের তৈরি ডোরাকাটা শতরঞ্জি, সুতি কাপড়ে তৈরি লম্বা ফরাস, বসার জলচৌকি, হাতে বোনা উন্নত ও তুলনামূলক নিম্নমানের পাটি, বিভিন্ন ধরনের মোটা মাদুর, কাঠের তৈরি পিঁড়ি, পাট দিয়ে তৈরি ছালা, কুশা নামক ঘাসের তৈরি কুশন ইত্যাদি ছিল তৎকালীন সময় বসা এবং শোবার কাজে বহুল ব্যবহৃত আসবাবপত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম, তবে বর্তমানে এগুলো আর দেখা যায়না।
পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনামলে, ব্রিটিশ কর্মকর্তা এবং ধনী স্থানীয়রা আসবাবপত্র প্রস্তুতকারকদেরকে ব্রিটিশ ডিজাইন অনুসরন করে বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরির জন্য আদেশ দেয়। যার কারনে, এই উপমহাদেশের আসবাবপত্রের নকশাতে ব্রিটিশ কলোনিয়াল এস্থেটিকের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে , যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কারুকার্য মন্ডিত খোদাইয়ের কাজ এবং ভারী কাঠের ব্যবহার। এসকল ঐতিহ্যগত উপকরন এবং ইউনিক ডিজাইন প্যাটার্নের কারনে এদেশের ফার্নিচার ডিজাইনিংয়ে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। নানা উদ্ভাবনী শৈলীর কারনে এই অঞ্চলে কারিগরদের বেশ সুনাম ছিল এবং স্থানীয় কারিগরেরা প্রায়ই তাদের আসবাবপত্রের নকশায় বেত এবং বাঁশের মতো উপাদানগুলিকে কাজে লাগিয়ে নতুনত্ব নিয়ে আসতেন। এই উপকরনগুলো শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেই সহজলভ্য থাকার কারনে এইসব ফার্নিচার ব্রিটিশদের তথা সারা বিশ্বেই বেশ জনপ্রিয় ছিল। এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন হলো – এগুলো দামী কাঠের তুলনায় বেশ হালকা ও সহজে বহনযোগ্য ছিল।
বাংলাদেশী ফার্নিচার ডিজাইনের উন্নয়ন
ব্রিটিশ শাষন আমল থেকেই বাংলাদেশে আধুনিক ফার্নিচার ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। সমাজের উচু স্তরের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা তখন থেকেই বিছানা-চেয়ার-টেবিল ছাড়াও ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্র ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেই সময়ে, ভারতীয় উপমহাদেশে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সংস্কৃতি ও শিল্প এবং এর নকশা সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হত। সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনিং এক্সপার্টরা নতুন নতুন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে কিভাবে ডিজাইনিং স্কিল আরো উন্নত করা যায় তা শেখাতেন, যা ট্রাডিশনাল ফার্নিচারের সাথে মডার্ন ডিজাইনিংয়ের সংমিশ্রন ঘটায়। এছাড়াও আধুনিক বাংলাদেশী ফার্নিচার ডিজাইনের বিকাশের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এবং ইউরোপীয় ডিজাইনের প্রবণতার প্রভাব। তবে, ১৯৮০ এর দশক থেকে, কাঠ এবং বাঁশের সাথে স্টিলের আসবাবপত্রের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় এবং কয়েক বছরের মধ্যে এগুলো অফিস এবং কর্মক্ষেত্রে অন্যান্য আসবাবপত্রের পাশাপাশি ব্যবহৃত হতে শুরু করে। আবার, ভারত বিভাগের পর অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের দিকে গৃহস্থালীর আসবাবপত্র তৈরিতে ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার করা শুরু হয়। বিহারি কারিগরদের দ্বারা নতুন পদ্ধতিতে তৈরি করা স্টিলের শোকেস, আলমারি, কাপবোর্ড, শেলফ ইত্যাদি আসবাব পত্র বেশ মজবুত হরার কারনে এগুলোর ব্যবহারও খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশী ফার্নিচার ডিজাইনিং এ মডার্ন ইভ্যুলুশনের পিছনে আরো একটি গুরুত্বপুর্ন কারন হচ্ছে এর দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশ বান্ধব ম্যাটেরিয়ালস। পরিবেশের অবক্ষয় জনিত নানাবিধ কারনে বিশ্বজুড়েই এনভায়রোমেন্টাল এওয়ারনেস ইস্যু চলছে এবং বাংলাদেশী ফার্নিচার ম্যানুফ্যাকচারাররা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বাঁশ, পাট এবং রিসাইকেলড কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ফার্নিচার বানানোর দিকে মনোনিবেশ করছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় অর্থনিতির দুরাবস্থাও কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। উপরন্তু, মডার্ন টেকনোলজির কারনেও ফার্নিচার ডিজাইন ফ্যাক্টরে বড়সর পরিবর্তন এসেছে। আইটি ইন্ডাস্ট্রির সম্প্রসারণের কারনে, বর্তমানে এডভান্সড টুলস এবং টেকনিক ব্যবহার করে কারিগরেরা নতুন নতুন ডিজাইন করতে পারছে, যা আগে অসম্ভব ছিল। নতুন এসকল নান্দনিক ডিজাইন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেন্ড ফলো করে তৈরি করা হচ্ছে যার কারনে ফার্নিচারগুলো মাল্টিফাংশনাল হয়ে উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ফার্নিচার শিল্পে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও এনে দিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, নরওয়ে, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কাতার এবং যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশে আসবাবপত্র রপ্তানি করে থাকে।
দেশীয় ফার্নিচার ডিজাইনিংয়ে আধুনিকতার ছোয়া
ফার্নিচার ডিজাইনিংয়ে কন্টেম্পরারি স্টাইলের ব্যবহার নতুন না হলেও, বিগত দশতে ভারী কারুকার্য মন্ডিত ডিজাইন করা ফার্নিচার কেনার কনসেপ্ট থেকে সর্বস্তরের মানুষজন বের হয়ে এসেছে এবং এখন তাদের প্রধান পছন্দ – সিম্পল ডিজাইনের মধ্যে পাতলা কিন্তু মজবুত ফার্নিচার। এর পাশাপাশি ফার্নিচার ম্যাটেরিয়ালের ইকো-ফ্রেন্ডলিনেস, সাস্টেইনেবলিটি এবং নান্দনিকতা এনশিউর করাও জরুরি। এসব কথা মাথায় রেখে কারিগরেরা ইদানিং যে সব ফার্নিচার তৈরি করছেন, তা সর্বস্তরের জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং ফার্নিচার মার্কেটে লোকাল মেইড ফার্নিচারের চাহিদা দিন দিন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি হাতিল, কারন তারা বাংলাদেশী ফার্নিচার ডিজাইনের মান উন্নত করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানীটি, তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, স্টাইলিশ ডিজাইন, হাই ভ্যালু ম্যাটেরিয়াল এবং দক্ষ কারুশিল্পের জন্য দেশব্যাপি সুনাম র্জন করেছে । হাতিল তার প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটিকে আধুনিকীকরণের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করেছে এবং ফার্নিচারের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে প্রোডাকশন লাইনে নানা ধরনের উন্নত টেকনোলজির ইন্টিগ্রেশন ঘটিয়েছে। তারা মজবুত এবং টেকসই ফার্নিচার তৈরির পাশাপাশি তাদের ফার্নিচারগুলো যেন সক্রিয়ভাবে ইকো-ফ্রেন্ডলি ঙ্করা যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে। বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফইএ) ১৬ সদস্যের মধ্যে হাতিল ফার্নিচার একটি প্রধান সদস্য যারা বিভিন্ন দেশে আসবাবপত্র রপ্তানি করে। তাই হাতিল শুধুমাত্র স্থানীয় মার্কেটই নয়, বিদেশের বড় শহরে আউটলেট খোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারেও ফার্নিচার এক্সপোর্ট করছে।
বাংলাদেশী ফার্নিচার ডিজাইনিং এ হাতিলের অবদান
শুরু থেকেই বাংলাদেশী ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছিলো, যার মধ্য অন্যতম ছিল প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব, মডার্ন টেকনোলজির সীমাবদ্ধতা এক্সেস এবং কমদামি ম্যাটেরিয়ালে তৈরি পন্যের জন্য হাই কম্পিটিশন। ইন্টারন্যাশনাল স্কেলে দেশীয় কারিগরদের সুনাম বৃদ্ধি করার পথে এই চ্যালেঞ্জগুলো বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল। তবে, শুরু থেকেই হাতিল এইসব চ্যালেঞ্জগুলো ওভারকাম করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হাতিল সক্রিয়ভাবে মডার্ন টেকনোলজিতে ইনভেস্ট করার মাধ্যমে একটি ডিজাইন স্টুডিও তৈরি করেছে যার দ্বারা লোকাল ডিজাইনাররা উপকৃত হচ্ছে। এছাড়াও, লোকাল ডিজাইনারদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য তারা বিভিন্ন ট্রেইনিং প্রোগ্রামও পরিচালনা করছে।
তাছাড়াও, আগে ট্রাডিশনাল উপায়ে কাজ করার সময় কারিগরেরা দ্রুত এবং ইফিশিয়েন্টলি ফার্নিচার ম্যানুফ্যাকচারিং করতে পারত না। তবে আধুনিক টেকনোলজির ইমপ্লিমেন্টেশনের কারনে এখন অটোমেশনের মাধ্যমে সঠিক গুনগত মান বজায় রেখে হাতিল প্রমাণ করেছে যে কম সময়ে অনেক বেশি ফার্নিচার তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও, আগে ইম্পোর্টেড সস্তা ম্যাটেরিয়ালের মাধ্যমে যারা ফার্নিচার তৈরি করত, তাদের দৌরাত্বের কারনে মানসম্পন্ন ফার্নিচারের দিকে মানুষের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে, হাতিল সুলভ মুল্যে হাই কোয়ালিটি ফার্নিচার বাজারে ছাড়ার কারনে মানুষজন আবারো প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট-মুখী হয়েছে। লোকাল মার্কেট ছাড়াও, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটেও এই প্রিমিয়াম কোয়ালিটির প্রডাক্টের ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে, ফলে দেশের বাজার ছাপিয়ে বিদেশেও হাতিল ফার্নিচার এক্সপোর্ট করে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
শেষ কথা
ট্রাডিশনাল ডিজাইনিংয়ের ফার্নিচারগুলো অনেক লম্বা একটা সময় দেশীয় মার্কেটে ক্রেতাদের চাহিদার মুল বিন্দু থাকলেও, নতুন জেনারেশনের কাছে মডার্ন ফার্নিচারের চাহিদা তৈরি হয়েছে। মডার্ন মিনিমালিস্টিক এই ডিজাইনগুলো লোকাল ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করার কারনে এগুলো ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। এর পাশাপাশি, এই ফার্নিচারগুলো ইকো-ফ্রেন্ডলি হবার কারনে পরিবেশের জন্যও হুমকি হুমলি স্বরুপ না হবার কারনে মানুষজন এখন এসব ফার্নিচারের দিকে ঝুকছে। এছাড়াও, ডিজাইন প্যাটার্নের এই পরিবর্তনের কারনে গ্লোবাল মার্কেটে এক্সপোর্ট থেকে আয় এবং স্থানীয় লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু অর্থনৈতিক সুফলও বয়ে আনছে। যেহেতু, এই ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে, সেহেতু বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তনের আরও সুযোগ রয়েছে।