Benefits of Buying Locally Made Furniture in Bangladesh Feature Image Benefits of Buying Locally Made Furniture in Bangladesh Feature Image

বাংলাদেশে লোকালি মেইড ফার্নিচার কেন কিনবেন?

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি বেশ গ্রো করেছে এবং দেশের মানুষের মধ্যে বিদেশি নামী দামী ব্র্যান্ডের আসবাবপত্র বাদ দিয়ে লোকালি মেইড ফার্নিচারের দিকে আকর্ষনের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করার পেছনে অন্যতম কারন হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি বজায় রেখে মডার্ন টেকনোলজি যেমন – কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন সফটওয়্যার, সি এন সি মেশিন, অটোমেটেড ফিনিশিং এবং উন্নত কোয়ালিটি কন্ট্রোল মেজারস ব্যবহার করে প্রোডাকশন প্রসেসকে আরো উন্নত করা। 

ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের তথ্যসুত্রে, বর্তমানে বাংলাদেশের ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রির সাইজ বর্তমানে ৩০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন টাকা এবং প্রায় ৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ এই ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িত। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি ফার্নিচারের বাজার বেশ প্রতিযোগিতামুলক, কারনে এই খাতে প্রচুর পরিমান ক্ষুদ্র এবং মাঝারী কোম্পানী কাজ করছে। বর্তমানে ফার্নিচার মার্কেটের প্লেয়ারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – হাতিল, আখতার, পারটেক্স, নাভানা, ইত্যাদি। এই সকল ম্যানুফ্যাকচারাররা কাস্টমারের বৈচিত্রময় চাহিদা পুরন করা ছাড়াও বেসিক হোম ফার্নিশিং থেকে শুরু করে হাই এন্ড ডিজাইনার ফার্নিচার পর্যন্ত ডেলিভারি করে। কিন্তু কেন বাংলাদেশে লোকালি মেইড ফার্নিচারগুলো মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাড়িয়েছে এবং এইসমস্ত ফার্নিচার ক্রয়ের সুফল কি, সেটা নিয়েই আমরা আজকে কথা বলব। 

অর্থনৈতিক লাভ

ফার্নিচার কেনাকাটা করার সময় বড় স্টোর কিংবা ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডগুলোর ডিজাইনার ফার্নিচার দেখে যে কারো স্বাধ জাগবে নিজের বাসা এগুলো দিয়ে সাজানোর জন্য। তবে এইসকল আসবাবপত্রের দাম আকাশছোয়া হবার কারনে যারা একটু বাজেটের মধ্যে নান্দনিক ফার্নিচার কেনার কথা চিন্তা করেন, তাদের জন্য লোকালি মেইড ফার্নিচারগুলো আকর্ষনীয় চয়েস হতে পারে। এইসকল ফার্নিচার ক্রয়ের মাধ্যমে কাস্টমাররা কেবল তাদের গৃহের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করছে না, বরং ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং এইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কারিগরদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নেও অংশ নেয়ার মাধ্যমে এই ইন্ডাস্ট্রির ইকোনমিক্যাল গ্রোথ কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও, দেশিও ফার্নিচার বিক্রি বাড়ছে বলে প্রচুর উদ্যোক্তা এবং কর্মচারিরা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোকেই সংহত করছে।

গুনগত মান এবং কাস্টমাইজেশন

বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি আসবাবপত্রগুলোতে বেশ হাই কোয়ালিটি ডিজাইন করা থাকে, যে ডিজাইনগুলোর বেশিরভাগই খুব ডিটেইলড হয়। স্থানীয় কারিগরেরা এইসকল ডিজাইন তৈরিতে বিভিন্ন স্পেশালাইজড টুলস এবং টেকনিক ব্যবহার করে থাকে। বলা বাহুল্য যে, এ সকল ডিজাইন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করেই করা হয়ে থাকে। 

 

এছাড়াও, ফার্নিচার ম্যানুফ্যাকচারাররা বহুদিন ধরে এইসকল ডিজাইনিং প্র্যাকটিসগুলো অনুসরণ করে আসছে , তাই একদিকে যেমন তাদের কাজ বেশ সুনিপুন হয়, তেমনি কাস্টমাররাও এসব ডিজাইন বেশ পছন্দ করে। এছাড়াও, কাস্টমারের রিকোয়ারমেন্ট অনুসারে কাস্টমাইজড ফার্নিচার তৈরি করে দেওয়া হয় বলে এসকল ফার্নিচার বর্তমানে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। ডিজাইন ফ্যাক্টর ছাড়াও, গঠনগত দিক থেকে এসকল ফার্নিচার বেশ মজবুত এবং টেকসই হয়ে থাকে। সাইজ এবং ডিজাইন নির্বিশেষে যে কোন ধরনের ফার্নিচার তৈরির যে দক্ষতা বাংলাদেশি কারিগরদের রয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। সুতরাং বলা যায় যে, গুনগত মান এবং কাস্টমাইজেশনের দিক থেকে, দেশীয় ফার্নিচার তৈরিতে ভাল পন্যে সরবরাহের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি, গ্রাহকের ব্যক্তিগত রুচি ও চাহিদাকে প্রতিফলিত করে

পরিবেশগত উপকার

পরিবেশগত প্রভাবের কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি আসবাবপত্র ক্রয় করা যুগোপযোগি এবং পরিবেশ বান্ধব সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমে আসা। আমদানিকৃত আসবাবপত্রের বিপরীতে, স্থানীয়ভাবে তৈরি আসবাবপত্রকে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় না, যার কারনে ট্রান্সপোর্টেশন চলাকালিন যানবাহন থেকে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। উপরন্তু, অনেক স্থানীয় আসবাবপত্র নির্মাতারা টেকসই উপকরণ এবং পরিবেশ বান্ধব ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস ব্যবহার করে, যা তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমান আরো কমে আসে। এছাড়াও আরেকটি পরিবেশগত সুবিধা হল বর্জ্য এবং দূষণ হ্রাস। লোকালি মেড ফার্নিচারগুলোর বেশিরভাগই ম্যানুয়ালি তৈরি করা হয় এবং যা তৈরিতে ইকো-ফ্রেন্ডলি ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয় এবং ওয়েস্টেজগুলো রি-ইউজ করা হয় অন্যান্য কাজে। ফলে লোকাল ফার্নিচার ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি পরোক্ষভাবে আসবাবপত্র শিল্পের বর্জ্য এবং দূষণের পরিমাণ কমিয়ে আনতেও ভুমিকা পালন করছেন। আবার, স্থানীয় আসবাবপত্র নির্মাতারা প্রায়ই প্রাকৃতিক এবং রি-ইউজেবল উপকরণ ব্যবহার করে, যেমন বাঁশ, পাট বা কাঠ, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি আসবাবপত্র কেনা শুধু স্থানীয় অর্থনীতিকেই সমর্থন করে না বরং পরিবেশের উপর আসবাব শিল্পের নেতিবাচক প্রভাব কমাতেও সাহায্য করে।

বাংলাদেশে লোকালি মেইড ফার্নিচার 1

সামাজিক সুবিধা

বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি আসবাবপত্র কেনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল দেশিয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং কারুশিল্পের প্রচার। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাঠের কাজের কৌশল এবং দক্ষ কারিগরদের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে যারা কারিগরদের অনন্য এবং সুন্দর আসবাবপত্র তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে। স্থানীয়ভাবে তৈরি আসবাবপত্র কেনার মাধ্যমে, আপনি এই কারিগরদের কাজের নৈপুণ্যকে সংরক্ষণ করছেন এবং আপনার বাসাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রকাশের একটি মাধ্যেম হিসেবে তুলে ধরছেন। উপরন্তু, প্রায়ই দেখা যায় যে, আমদানি করা আসবাবপত্র তৈরির কারখানায় কাজের পরিবেশ লেবার ফ্রেন্ডলি নয়। কিন্তু আমাদের দেশের শ্রম আইন সুসংহত হবার কারনে দেশিয় আসবাবপত্র কেনার মাধ্যমে আপনি আরও ন্যায়সঙ্গত উৎপাদন ব্যবস্থায় অবদান রাখতে পারছেন। আবার, লোকাল ফার্নিচার ক্রয় করার জন্য আপনি যে অর্থ বিনিয়োগ করছেন, তার মাধ্যমে লোকাল ম্যানুফ্যাকচারারদের উন্নয়নকে সমর্থন করছেন। এতে করে, আপনার সামাজিক গ্রহনযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাশ্রয়ী পছন্দ

ফার্নিচার কেনার সময় মানুষ সাধারণত ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই কেনা-কাটার করার পক্ষপাতি হয়ে থাকে। সৌভাগ্যবশত, লোকালি মেইড ফার্নিচার ক্রয় করা লোকাল কমিউনিটিতে সাপোর্ট করার পাশাপাশি, বেশ সাশ্রয়ীও বটে। ইম্পোর্টেড ফার্নিচারের মত, লোকালি ম্যানুফ্যাকচারড ফার্নিচারে শিপিং ফী, ইম্পোর্ট ট্যাক্স এর মত কোন হিডেন চার্জ থাকেনা। বাংলাদেশের দক্ষ কারিগররা তাদের কাজের জন্য অত্যন্ত গর্ববোধ করে, কারন তারা ফার্নিচার ম্যানিফ্যাকচারিংয়ে সেরা উপকরণ ব্যবহার করে আসবাবপত্র তৈরি করে, যা দৃষ্টিনন্দন এবং দীর্ঘস্থায়ীও হয়। পাশাপাশি, স্বল্প মূল্যে পার্সোনালাইজড প্রোডাক্ট তৈরির সুযোগও করেছে, যা অন্যদের থেকে আপনার ঘরকে করে তুলবে আলাদা এবং অনন্য। তাই পরেরবার যখন ফার্নিচার কেনার কথা ভাববেন, অবশ্যই লোকালি মেইড ফার্নিচার ক্রয় করে নিজে লাভবান হবেন, দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলবেন।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।