গানের শখ তো অনেকেরই থাকে, আবার অনেকেই এটাকে এতটাই ভালোবেসে ফেলে যে মিউজিককেই প্রফেশন হিসেবে নেয়। আজকাল অনেকেই শখ করে বাসায় একটা মিউজিক স্টুডিও করে। হোক তা শখের বশে বা প্রোফেশনাল কারণে। কারণ, অনেক সময় স্টুডিও তে ২৪ ঘণ্টাই থাকা আর সম্ভব হয় না।
আবার ২৪ ঘণ্টা থাকলেও হয়তো মাথায় সবসময় ক্রিয়েটিভ সুর কাজ করে না। তার জন্য নিজের ঘরের বিকল্প নেই। নিজের ঘরেই যদি একটা নিজস্ব মিউজিক স্টুডিও থাকে আর রাত তিনটায় যদি আপনার মাথায় নতুন একটা মিউজিক আসে, তা রেকর্ড করতে অবশ্যই তখন আপনার স্টুডিওতে দৌড়াতে হবে না।
বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আপনি নিজের তৈরি করা স্টুডিওতেই রেকর্ড করতে পারবেন। ঠিক সে জন্যই আপনি যদি একজন প্রোফেশনাল সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকেন তবে অল্প কিছু বিনিয়োগেই করতে পারেন নিজের বাসায় নিজের একটা স্টুডিও। এরজন্য দুটো রুম হলেই হবে। যদিও একটা রুম অতটা জরুরি না। তবুও তা আপনার ড্রয়িং রুম দিয়েই হয়ে যাবে।
তো চলুন দেখে নেয়া যাক নিজের স্টুডিও করতে কিভাবে শুরু করবেন আর বেসিক কি কি জিনিস লাগবে-
সোফা সেট
এই ড্রয়িংরুমের শোভাবর্ধক হিসেবে আপনার লাগবে সোফা সেট আর সেন্টার টেবিল। ইন্টেরিয়র ডিজাইনারকে আপনার ড্রয়িংরুমের বাজেট বললেই ওরা সোফাসেট আর সেন্টার টেবিল দিয়ে আপনার ড্রয়িংরুম সাজিয়ে দিবে।
অথবা আপনি নিজেই ঘুরে আসতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে, এখানে রয়েছে সুবিশাল এক কালেকশন। আশা করি পেয়ে যাবেন মনের মত একখানা সেট। এতে যেমন আপনার অতিথির চোখ জুড়াবে তেমনি বসার জন্য একটা আরামদায়ক অনুভূতি পাবে।
আবার আপনি যখন কোন ক্লায়েন্টের সাথে কোন ডাবিং বা মিউজিক নিয়ে ডিল করবেন তখন এই ড্রয়িংরুম হবে আপনার অফিস-রুমেরই অংশ।
কার্পেট এবং ফুলদানি
কার্পেট এবং ফুলদানি আপনার ড্রয়িংরুমের শোভাবর্ধক হিসেবেই কাজ করে আর সেই সাথে এনে দেয় আভিজাত্যের ছোঁয়া। আর আপনার রুচি অতিথি বা ক্লায়েন্টের কাছে বাড়িয়ে তুলতে আপনি আপনার ড্রয়িংরুমের দেয়াল সাজাতে ব্যবহার করতে পারবেন কিছু পেইন্টিং অথবা আপনার পরিবারের প্রিয়জনের ছবি।
আর একটা কর্ণারে শো পিচ আর নিজের কাজের পুরস্কার হিসেবে প্রাপ্ত পদকগুলো সাজিয়ে রাখার মতো একটা কর্ণার হলে ড্রয়িংরুম হবে পরিপূর্ণ। এজন্য ব্যবহার করতে পারেন শো কেস।
শোভাবর্ধনের পাশাপাশি কার্পেটের আরো একটি কাজ আছে, হাটার সময় বা মেঝের ওপর দিয়ে কোন কিছু টেনে নেয়ার সময় শব্দ অনেক কমিয়ে দেবে, স্টুডিয়োতে যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার।
সাউন্ডপ্রুফ রুম
এবার সাউন্ডপ্রুফ রুমের জন্য এমন একটা রুম নির্বাচন করুন যেই রুমের সাথেই লাগানো একটা ওয়াসরুম আছে। এতে আপনার কাজের জন্য বাসার অন্য রুমে বারবার যেতে হবে না।
বার বার এভাবে দোড়াদোড়ি করা ভীষণভাবে ডিস্ট্রাক্টিং হয়, যেটি আপনার কাজে প্রভাব ফেলবে। কারণ, আমরা জানি গান, আবৃত্তি বা ভয়েসওভারের জন্য একটা সাউন্ডপ্রুফ রুম কতটা প্রয়োজনীয়।
কিছু কিছু কাজ নিজের হাতে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা , এতি এমনই একটি কাজ, সাউন্ডপ্রুফের জন্য আপনার ইন্টেরিয়রের কাজ করে এমন কারো সাথে পরামর্শ করতে হবে।
আর আপনার ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনার সেই রুমটি তখন সাউন্ডপ্রুফ করে দিবে।
ডেস্ক
সাউন্ডপ্রুফ রুমের জন্য একটা ডেস্ক লাগবে যেখানে দুটো বা একটি কম্পিউটার মনিটর, একটা মিউজিক কিবোর্ড রাখা যায়, সাথে ইউপিএস সিস্টেম। ব্যাস, এতেই মোটামুটি আপনার মিউজিক স্টুডিও পরিপূর্ণ।
কারণ, আপনার মূল কাজ সংরক্ষণ করতে হবে এই কম্পিউটারে। ডেস্ক ছাড়া আমরা কেমন যেন আমাদের অফিস রুম কল্পনাই করতে পারি না। ঘরের ভিতর সম্পূর্ণ অফিস রুমের অনুভব দিতে ডেস্কের বিকল্প নেই।
ডেস্কের ক্ষেত্রে কি ধরনের ডেস্ক আপনার কাজে সুবিধা হবে সেটি আপনিই ভালো বলতে পারবেন। কম্পিউটার ডেস্কের যেমন সুবিধা আছে তেমনি ছোট্ট ছোট্ট কিছু আসুবিধাও আছে।
সেগুলি বিবেচনা করে আমাদের কালকশন থেকে বেছে নিতে পারেন মনের মত একটি ডেস্ক।
অর্গনোমিক চেয়ার
একটা আরামদায়ক চেয়ার আপনার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ স্টুডিওতে আপনার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করতে হবে, তাই যদি আপনি আরামদায়ক ও স্বস্তির চেয়ার না পান আপনার ব্যাকপেইন সহ নিজেকে রেস্টলেস লাগতে শুরু করবে।
ক্রিয়েটিভ কাজগুলো এমনিতেই বেশ ক্লান্তিকর হয়, কারন মানসিক ক্লান্তি একই সাথে শরীর ও মনে প্রভাব ফেলে, সেজন্য আরামদায়ক চেয়ার খুবই জরুরী। এজন্য অর্গনোমিক চেয়ারের বিকল্প হবে না।
আমরা একটা কথা পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাস করি, একটা আরামদায়ক চেয়ার আপনার আরামের পাশাপাশি কাজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে দিবে বহুগুণ।
মাইক্রোফোন এবং হেডফোন
আপনার সুরেলা এবং ভরাট কন্ঠ ভীষণ রকম সুন্দর এবং পরিষ্কার যেন শোনা যায়, তার জন্য মাইক্রোফোন এবং হেডফোন বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। তাই আপনার বাজেটের ভিতর সেরা মাইক্রোফোন এবং হেডফোন খুজে নিতে হবে।
মনে রাখবেন, স্টুডিওর প্রধান এক্সেক্সরিজ এর ভেতর অন্যতম হচ্ছে এই মাইক্রোফোন-হেডফোন এর জুড়ি।
টুল বা বেঞ্চ
স্টুডিওতে যেন ভয়েস আর্টিস্ট, বা ডিরেক্টর বসতে পারেন সেজন্য তিনটি বা দুটি সিটের ব্যবস্থা করতে হবে। চেয়ার হয়তো রাখতে পারেন তবে স্টুডিওর ভেতরে সেটি অনেক জায়গা খেয়ে নেবে, এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে টুল বা বেঞ্চ স্থাপন করা।
আমাদের কালকশনে টুল রয়েছে কিছু, পাশাপাশি রয়েছে সুন্দর কিছু বেঞ্চ। একে আরামদায়ক, তার উপর আধুনিক ডিজাইন। কিছুটা ভিন্নতাও আসবে এতে।
এসি
আপনি যখন একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন তখন আপনি ভালো করেই জানেন সাউন্ডপ্রুফ রুমে আপনি সাধারন ফ্যান ব্যবহার করতে পারবেন না, ফ্যানের শব্দে আপনার প্রোজেক্টই মাটি হয়ে যাবে। আপনার জন্য যা লাগবে তা হচ্ছে এসি।
লাইটিং
ক্রিয়েটিভ কাজ করার জন্য ডিম লাইটের জুড়ি নেই। এতে যেমন আপনার জন্য আবছা আলোয় একটা কল্পনার জগৎ তৈরি হচ্ছে তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কোন সুর। আবার এর সাথে লাগবে সাধারণ ফিলিং লাইট। কারণ সাউন্ডপ্রুফ রুম আপনাকে দিনের কড়া রোদেও রাখবে অন্ধকারে। তাই এখানে উজ্জ্বল লাইটের বিকল্প নেই।
এসব সাজিয়ে রাখার পর যদি আপনার স্টুডিওর এক কোণায় আপনার ব্যবহৃত গিটার সাজিয়ে রাখেন সেটিতেই এই স্টুডিও হবে পরিপূর্ণ। সাথে জুড়ে দিতে পারেন কিছুটা একসেন্ট লাইটের ছোঁয়া, একই সাথে ডেকোরেশনও হয়ে যাবে।
অন্যান্য
আপনার স্টুডিও রুমের বেলকনিতে আপনি কিছু পাতাবাহার এবং ফুলের টব দিয়ে সহজেই সাজিয়ে নিতে পারবেন। এতে যেমন আপনার বেলকনিতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে তেমনি আপনার কাছে কাজ করতে আসা মানুষটা আপনাকে প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবেই মেনে নিবে। বেলকনিতে যদি দুটো টুল বসিয়ে নেন তবে আপনার জন্য তা একরকম সুবিধারই হবে।
গান আর সুর নিয়ে যদি আপনার কাজ হয় তাহলে যেন নিজের ব্যক্তিগত একটা স্টুডিও না হলে চলেই না। তো সাধারন বিষয়গুলো তো আলোচনা করা হলো, এবার একটু চিন্তা করে পরিকল্পনা করে নিন কিভাবে শুরু করবেন। আর আসবাবের জন্য আপনার পাশে আমরা তো আছিই।