শোবার ঘর সাজানো শোবার ঘর সাজানো

পরিপাটি হোক শোবার ঘর : ৫টি সহজ উপায়ে শোবার ঘর সাজানো

বেডরুম থেকেই শুরু হয় আমাদের দিন। আবার ক্লান্তির রেশ কাটাতে আমরা দিন শেষে ফিরিও সেখানে। বাইরের নানা রকম কাজ সেরে নিজের বেডরুমে ঢোকার আগপর্যন্ত যেন ক্লান্তি ছাড়েই না। কিন্তু সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ঢুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জামাকাপড়, কাগজপত্র দেখলে কারোই ভালো লাগে না নিশ্চয়ই। আবার ঘরে ঢুকে তোয়ালে বা চিরুনি খুঁজে না পেলে কিংবা বাইরে বেরোনোর সময় হাতের ঘড়িটা খুঁজে পেতে দেরি হলে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে যাওয়াটাও স্বাভাবিক। ঘরে-বাইরে হাজারো কাজের ভিড়ে আমাদের আর বেডরুমের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ হয় না। আবার আমরা অনেকে হয়তো ঘর সাজিয়ে রাখার সহজ উপায়গুলো জানিই না। আজ জেনে নেওয়া যাক ,পরিপাটি, ছিমছাম করে তোলার ৫টি সহজ উপায়ে শোবার ঘর সাজানো। যে উপায়গুলো আপনার ঘর গোছানোর কাজকে করে তুলবে আরো বেশি সহজ।

জীবনে বদলে দিবে একটা সাজানো শোবার ঘর

শোবার ঘর থেকে শুরু হওয়া আমাদের দিনের শেষটাও হয় শোবার ঘরে এসেই। আনন্দময় ঘরকন্নার কেন্দ্রবিন্দুই হোক অথবা হোক ক্লান্ত, শ্রান্ত এবং অসবন্ন শরীরের শেষ আশ্রয়, একটি পরিপাটি করে সাজানো শোবার ঘর জীবনের অর্থবহতায় নতুন মাত্রা যোগ করে। তবে আমাদের জীবনযাপনের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কিত এই ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্নে মাঝে মাঝে আমরা উদাসীনতার পরিচয় দেই। যার ফলাফল কখনোই ভালো হয় না। একটি সাজানো শোবার ঘর কিভাবে আমাদের জীবনকেও সাজিয়ে দিতে পারে, চলুন বিস্তারিত জানি সেই বিষয়েঃ

প্রশান্তিময় আমেজে বাড়তি চাপ ঝেড়ে ফেলা

ঘরের অশান্তি কর্মক্ষেত্রে বয়ে নিতে না পারলেও, কর্মমুখর দিনের বাড়তি চাপ আর অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনি ফিরে আসেন শোবার ঘরেই। সারা দিনের ব্যস্ততায় পূর্ণতার অনুভূতি আসে ঘরে এসে যদি একটি সাজানো ছিম ছাম পরিবেশ পাওয়া যায়। অবচেতনেই আপনার অনুভূত হয় একটা গোছানো জীবনের। আপনার অবসন্ন দেহ পায় সুসজ্জিত ঘরের কোণে আরামের ওম, আর মন উজ্জীবিত হয় ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার প্রয়াসে। অন্যদিকে, একটি বিশৃংখলাপূর্ণ শোবার ঘর আপনার অবচেতন মনে একে দেয় অনিরাপত্তার অনিশ্চয়তা। যা আপনাকে মানসিক ভাবে আরো অস্থির করে তোলে।

আরামদায়ক ঘুমে শ্রান্তির বিদায়

এলো-মেলো, অপরিষ্কার শোবার ঘর বিশ্রামের অন্তরায়। অবিন্যস্ত আসবাব, কেওটিক কালারিং, ছড়ানো-ছিটানো অদরকারি উপকরণ মনের স্বাভাবিক শৃংখলায় ব্যাঘাত ঘটায়। এমন অবস্থায় রাতে ঠিক ভাবে ঘুমানো সম্ভব হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিচ্ছন্ন এবং সুষমভাবে সাজানো ঘরে ঘুমের গুণগত মান অনেক বেশি হয়। তাই প্রতিদিনের পরিশ্রমের শেষে শোবার ঘরের পরিবেশ যদি হয় নিরবচ্ছিন্ন আরামদায়ক, তবে ঘুম আসে সহজে, আর শরীর-মন পায় পরিপূর্ণ বিশ্রাম।

একান্ত ঘরে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন

আপনার ঘরের শোভা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি আপনার স্বভাব, পছন্দ এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলারও প্রতিফলন। নিখুঁতভাবে গুছানো শোবার ঘর আপনার রুচি ও যত্নবান মনোভাবের জানান দেয়। রঙের বিন্যাস, আলো-ছায়ার খেলা, বিছানার ছাঁদ কিংবা জানালার পর্দা, সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে একধরনের নিঃশব্দ ভাষা, যা আপনার সম্পর্কে বলে দেয় অনেক কিছু। ফলে আপনি যেমন আরাম পান, তেমনি আপনার ঘরে আসা অতিথিরাও অনুভব করেন এক প্রশান্তিময় আতিথেয়তার আমেজ।

সহজ উপায়ে শোবার ঘর সাজানো

খাটের নিচে স্টোরেজ

আমাদের বেডরুমে সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে থাকে আমাদের খাটটিই। কিন্তু ফাঁকা থেকে যায় খাটের নিচের জায়গাটুকু। তবে একটু বুদ্ধি করে আমরা খাটের নিচের জায়গাটা ব্যবহার করতে পারি সহজেই। যাদের ঘরে সেমি-বক্স খাট রয়েছে তারা চাইলে ছোট ছোট বাক্সে করে স্বল্প ব্যবহৃত জিনিসগুলো খাটের নিচেই রাখতে পারেন। লন্ড্রি বাস্কেট বা ধোয়ার জন্য যে ঝুড়িতে কাপড় জমিয়ে রাখেন, সেটি খাটের নিচে রাখতে পারেন। আবার ড্রয়ারওয়ালা খাটে সুবিধা আরো বেশি। সেই ড্রয়ারগুলোয় রেখে দেওয়া যায় অতিরিক্ত কাঁথা-বালিশগুলো। এ ছাড়া বিভিন্ন খাটে রয়েছে স্মার্ট স্টোরেজ ব্যবস্থা। হাইড্রোলিক ও ম্যানুয়াল দুই ধরনের স্টোরেজ অপশনই এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।

পোশাক গোছগাছের সহজ উপায়

Bedroom Hatil
পোশাকের ধরন ও ব্যবহার বুঝে আলাদা আলাদাভাবে গুছিয়ে রাখা জরুরি

বেডরুমের অতিপ্রয়োজনীয় আসবাবের মধ্যে রয়েছে আলমারি। মূলত পোশাক রাখার জন্যই আলমারি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু রোজকার ব্যস্ততায় নিজের আলমারিটা ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে রাখার সুযোগ হয়ে ওঠে না সবার। এর ফলে সঠিক সময়ে সঠিক পোশাক খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়। এই সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনর তাকবিশিষ্ট আলমারি কেনা। আলাদা তাকে বা ড্রয়ারে প্রয়োজন ও ধরন অনুযায়ী পোশাক ভাঁজ করে রাখা জরুরি। মৌসুমি পোশাকগুলো অন্য পোশাক থেকে আলাদা রাখলে খুঁজে পেতে যেমন সুবিধা হবে তেমনি পোশাকও দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। এ ছাড়া প্রতিদিনের পরনের পোশাক বা তোয়ালে রাখার জায়গাটা হতে পারে আলমারির পাশে একটি হ্যাংগার স্ট্যান্ড। এতে ঝট করেই হাতের কাছে পাওয়া যাবে সেগুলো। আলমারির অন্যান্য কাপড়ের সঙ্গে মিলে যাবে না।

পরিপাটি ড্রেসিং টেবিল

Dressing table hatil
আলাদা ড্রয়ারে ছোট ছোট বাক্সে করে প্রসাধনসামগ্রী বিন্যস্ত করলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে

শোবার ঘরে ড্রেসিং টেবিল বেশ প্রয়োজনীয়। তৈরি হওয়ার রোজকারের তাড়াহুড়োয় সঙ্গী হয় এটি। আবার নিত্যব্যবহার্য প্রসাধনসামগ্রী, যেমন౼ক্রিম, লোশন, পারফিউম ইত্যাদি রাখার স্থানও ড্রেসিং টেবিল। বাইরে থেকে ফিরে হাতের ঘড়ি বা চুড়িটা খুলে এটির ওপরেই রাখা হয়। তাই এমন উচ্চতার ড্রেসিং টেবিল ব্যবহার করতে হবে যেন দাঁড়িয়ে কিংবা বসে উভয়ভাবেই সেটি ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া আলাদা ড্রয়ারে ছোট ছোট বাক্সে করে প্রসাধনসামগ্রী সাজিয়ে রাখলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রতিদিন ব্যবহারের প্রসাধন টেবিলের ওপর ছোট ছোট বাক্সে রাখলে এলোমেলো হওয়া বা হাত লেগে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। দেখতেও বেশ পরিপাটি লাগে।

স্বল্প জায়গায় পড়ার টেবিল

শোবার ঘরের জন্য খুব প্রয়োজন না হলেও যারা নিয়মিত পড়াশোনা করে কিংবা যাদের অফিসের কাজের জন্য ল্যাপটপ, কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসতে হয় তাদের ঘরে একটি পড়ার টেবিল দরকার হয়ই। কিন্তু অন্যান্য আসবাব রাখার পর দেখা যায় জায়গা-স্বল্পতার কারণে পড়ার টেবিলের জায়গা শোবার ঘরে হয় না। সে ক্ষেত্রে একটি ফোল্ডিং পড়ার টেবিল হতে পারে সহজ সমাধান। বিভিন্ন ফোল্ডিং টেবিলগুলোর সাথে রয়েছে শেলফও। যাতে গুছিয়ে রাখা যায় বই-খাতা বা কাগজপত্রও। ফোল্ডিং টেবিলগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া সহজ ও রাখতেও অল্প জায়গা লাগে। পড়া শেষে টেবিলটি ভাঁজ করে রাখলেই ঘর দেখতে পরিপাটি মনে হবে। যদিও বর্তমানে অত্যাধুনিক সব ডিজাইনের সাথে পড়ার টেবিল ডিজাইন গুলো পাওয়া যায় এবং তাদের দাম গুলোও বেশিরভাবগ সময় আপনার বাজেটের মধ্যেই থাকে।

হাতের কাছে শেলফ

যারা নিয়মিত বই পড়ে তারা বইগুলো নিজেদের হাতের কাছে রাখতেই পছন্দ করে। যেখানে-সেখানে বই রাখা নিয়ে তারা একটু খুঁতখুঁতে হয়। ঘরে সুন্দর ছোটখাটো একটি ওয়াল শেলফ থাকলে আর কোনো ঝামেলাই থাকে না। নিজের খাটের পাশে এমন একটি শেলফ থাকলে শুধু বইপড়ুয়াদের না, সুবিধা হয় সকলেরই। কিন্তু শোবার ঘরে বইয়ের তাক রাখার মতো জায়গা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না। অন্যান্য আসবাবের পর বইয়ের তাক রাখলেও রুমের পরিবেশ বেশি ঘিঞ্জি হয়ে যায়। তবে দেয়ালে লাগানো ছোট তাক বা ফ্লোটিং শেলফ হতে পারে এর সমাধান। সেগুলোয় বইসহ রাখা যেতে পারে ছোট ছোট খেলনা কিংবা ঘরের শোভাবর্ধক কোনো সামগ্রী। জরুরি জিনিস যেমন প্রয়োজনীয় ওষুধ বা প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, টিভি বা এসি রিমোট, চশমা ইত্যাদি এমন শেলফে গুছিয়ে রাখতে পারবেন। আবার পরে খুঁজে পেতেও অসুবিধা হবে না।

বেডরুম মানেই দিনের শুরু এবং শেষে প্রশান্তির ছোঁয়া। বেডরুম পরিপাটি রাখার এই উপায়গুলো আপনাদের জন্য কতটা কার্যকরী, তা জানাতে ভুলবেন না। এ ধরনের আরো সহজ উপায় জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

শোবার ঘর সাজানো সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর

শুধুমাত্র সুন্দর দেখানোর জন্যেই কি বেডরুম সাজানো উচিৎ?

নিয়মিত বেডরুমের পরিচর্যায় শোবার ঘরে শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত স্টোরেজ, শেল্ফ, ড্রেসিং টেবিল ইত্যাদি আসবাবের ব্যবহারে আপনি অতিরিক্ত, অদরকারি, কিংবা সিজনাল কাপড়-চোপড়, বই, ব্যক্তিগত ব্যবহারের সঞ্জামাদি গুছিয়ে রাখতে পারেন। এতে আপনার শোবার ঘরটি যেমন দেখতে সুন্দর হয়, তেমনি পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম পরিবেশ সৃষ্টি করে আপনার শারীরিক এবং মানসিক সুস্বাস্থ্যেও অবদান রাখে।

ছোটবেডরুম সাজানোর কোন ভিন্ন পদ্ধতি আছে কি?

হ্যা। ছোটবেডরুমগুলোতে স্বভাবতঃই বেশী আসবাব রাখা যায় না। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে বাসিন্দারা গুমোট অনুভব করেন এবং সরঞ্জামাদি গুছিয়ে রাখতে পারেন না। সমাধান হিসেবে বহুমূখী কার্যকারিতাসম্পন্ন আসবাপত্র, বিশেষ করে যেগুলোতে আয়নার ব্যবহার করা হয়, যেমন ড্রেসিং টেবিল,  ওয়ার্ডরোবস উইথ মিরর ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিৎ। আয়না যেমন ঘরকে একটি বিমূর্ত বিস্তৃত ভাব দেয়, একের অধিক কার্যকারিতার আসবাবগুলিও স্টোরেজ সমস্যার সমাধান দেয়।

কম বাজেটে বেডরুম সাজানোর উপায় কি?

কম বাজেটে বেডরুম সাজাতে চাইলে প্রথমেই ফোকাস করুন প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর। রঙ বা ওয়ালপেপার পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘরের পরিবেশে বড় পরিবর্তন আনা যায়। সাশ্রয়ী মূল্যের বিছানার চাদর, কুশন কাভার, কিংবা পর্দার মাধ্যমে ঘরে একটি উষ্ণ ও ব্যক্তিত্বময় অনুভূতি আনা সম্ভব।

বেডরুম সাজানোতে কোন রুটিন অনুসরণ করতে হয় কি?

হ্যাঁ, একটি সুসংগঠিত বেডরুম ধরে রাখতে হলে কিছু নিয়মিত রুটিন অনুসরণ করা জরুরি। প্রতিদিন বিছানা গুছিয়ে রাখা, ব্যবহার শেষে জিনিস নির্দিষ্ট স্থানে ফেরত রাখা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর ধুলাবালি পরিষ্কার করা এবং মাসে একবার অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা—এই অভ্যাসগুলো বেডরুমকে সবসময় পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক রাখে। এছাড়া সিজনাল পরিবর্তনের সময় পর্দা, কভার বা হালকা সাজে ভিন্নতা আনা হলে ঘরেও নতুনত্ব আসে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।