আপনার বাসার ছাদটি কি খালি পড়ে আছে? আপনার কি ফ্যামিলি নিয়ে একটি সুন্দর বিকাল কাটানোর জন্য একটা স্পেস দরকার? কখনো কি ভেবে দেখছেন যে আপনার বাসার ব্যালকনি বা ছাদই হতে পারে আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত স্পেস!
আপনার বাসার ছাদটি ছোট হোক কিংবা বড়, ছোটখাট কিছু ডিজাইন চেঞ্জ এবং অল্প কিছু ফার্নিচার দিয়েই তৈরী করে ফেলতে পারেন মনোরম একটি পরিবেশ যেটি কিনা যেকোনো নামিদামী রুফটপ রেস্টুরেন্টকেও হার মানাতে পারে।
এবং এর জন্য বাংলাদেশী ফার্নিচারের কোনো জুড়ি নেই। আমাদের দেশের দক্ষ কাঠ-শ্রমিকরা খুবই অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে দারুণ দারুণ ডিজানের ডিউরেবল ফার্নিচার তৈরী করতে পারেন।
এছাড়াও হাতিল এর মতো প্রথম সারির বাংলাদেশী ফার্নিচার ব্রান্ডগুলো এখন প্রতিনিয়তই ছাদ এবং বারান্দায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ফার্নিচার নিয়ে আসছে। এই ফার্নিচার গুলোই আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত স্পেস তৈরী করার জন্য মোর দেন এনাফ!
তো চলুন, শুরু করা যাক।
বাংলাদেশী ফার্নিচার দিয়ে ছাদের ডিজাইন
আপনার ছাদকে বিশ্রামাগার টাইপ এর একটা ভাইব দিতে আপনার তিনটি এলিমেন্ট প্রয়োজন। একটি ছোট ছাদ-বাগান, আরামদায়ক একটা বসার জায়গা, এবং সুন্দর একটি দৃশ্য। সমস্যা হচ্ছে, এই তিনটি জিনিসের মিশেল ঘটানো খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার, স্পেশালি বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে। একটি না একটি জিনিসের অভাব আসলে থেকেই যায়।
বিশেষ করে যখন সঠিক ফার্নিচার বেছে নেওয়ার কথা আসে তখন বাংলাদেশের মতো একটি এলাকায় এই ধরনের জায়গা তৈরি করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
আশার কথা হচ্ছে, সম্প্রতি আসবাবপত্র উত্পাদনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে, হাতিলের মতো বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিজাইন ও স্টাইলের ফার্নিচার লঞ্চ করছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
কিভাবে আপনার বেলকনি এবং ছাদের জন্য ফার্নিচার সিলেক্ট করবেন?
আউটডোর স্পেসের জন্য ফার্নিচার নির্বাচনের সময় আপনার স্পেসিফিক কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবেঃ
প্রথমেই আপনার খালি জায়গার পরিমাপ নিন এবং প্ল্যানিং করুন
আপনি আপনার ছাদ-বারান্দার জন্য আসবাবপত্র কেনা শুরু করার আগে, আপনাকে প্রথমে আপনার স্থানটি বুঝতে হবে।
আপনাকে আপনার বেলকনির আকার পরিমাপ করতে হবে এবং আপনি কীভাবে আপনার আসবাবপত্র সাজাতে চান তার একটি মোটামুটি লেআউট তৈরি করতে হবে। এটি আপনাকে আপনার স্থান এবং শৈলীর সাথে মেলে এমন আসবাবের সঠিক আকার এবং আকৃতি চয়ন করতে সহায়তা করবে।
আপনার ছাদটি কি বেশি ছোট? চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনাকে আরাম বা কার্যকারিতার সাথে আপস করতে হবে না। আপনি হাতিল থেকে স্মার্ট-ফিট আসবাবপত্র খুজে দেখতে পারেন, যেগুলি আঁটসাঁট জায়গায় ফিট করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং একাধিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি ফোল্ডেবল টেবিল ব্যবহার করতে পারেন যা ব্যবহার না করার সময় সহজেই সংরক্ষণ করা যায়, বা একটি সেন্টার টেবিলটি যা স্টোরেজ বক্স হিসেবেও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় এই ধরনের স্মার্ট-ফিট ফার্নিচার দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ট্রেডিশন ফলো করুন
আপনার ছাদকে সাজানোর জন্য বিদেশী কোনো ফার্নিচার এর আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। দেশী ফার্নিচার দিয়েই আপনি একটি সুন্দর রুফটপ লিভিং স্পেস তৈরী করে নিতে পারেন। আমাদের শিল্প, নৈপুণ্য এবং নকশার একটি দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময় ইতিহাস রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, কাঠের নকশা করা সোফা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে প্রচলিত। আপনি আপনার ছাদেও এই ধরনের ফার্নিচার অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারেন। আধুনিকতার সাথে ঐতিহ্যকে মিশ্রিত করে, আপনি একটি শৈল্পিক স্থান তৈরি করতে পারেন যা আপনার ব্যক্তিগত শৈলী প্রকাশ করার সাথে সাথে এর সাংস্কৃতিক শিকড় ধরে রাখে।
ফার্নিচার এর পাশাপাশি মেটাল, কাচ, বা প্লাস্টিকের মতো কিছু সমসাময়িক উপাদান ব্যবহার করতে পারেন যা ঐতিহ্যগত উপাদানগুলির সাথে ম্যাচ করে একটি ব্যালেন্সড ব্যাপার তৈরী করে।
কালার এবং লাইটিং এর দিকে নজর দিন
বাংলাদেশী ফার্নিচার দিয়ে আপনার টেরেস ডিজাইন করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আপনার স্থানের রং এবং আলো বিবেচনা করা। রঙ এবং আলো আপনার শৈলী এবং পছন্দ অনুসারে একটি মনোরম পরিবেশ তৈরী করতে সাহায্য করবে।
চেষ্টা করুন যতটুক সম্ভব ন্যাচারাল লাইট অর্থাৎ সূর্যের আলো ব্যবহার করতে। যদি সেটা সম্ভব না হয়, আর্টিফিশিয়াল লাইটিং ও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চেষ্টা করবেন বাল্ব বা টিউবলাইট এর বদলে স্ট্রিপ-লাইট ব্যবহার করতে। এই ধরনের লাইটগুলো বিভিন্ন ধরনের আলো শো করতে পারে, যা একটি রিমোট দিয়ে আপনি কন্ট্রোল করতে পারবেন। এছাড়া মোমবাতি বা হারিকেন টাইপ এর জিনিস দিয়েও এক্সপেরিমেন্ট চালাতে পারেন যা আপনাকে নস্টালজিক করে দেবে।
আপনি আপনার বারান্দার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা এলাকাগুলিকে হাইলাইট করতে স্পটলাইট বা ওয়াল লাইট ব্যবহার করতে পারেন। আপনি বিদ্যুৎ খরচ কমাতে এবং পরিবেশ বান্ধব হতে সোলার লাইট বা LED লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
সাস্টেনেবিলিটি
বর্তমানযুগে সাস্টেনেবিলিটি একটি বাজ-ওয়ার্ড। আপনার ছাদ ডিজাইনের সময় পরিবেশ-বান্ধব থাকার চেষ্টা করুন। কম কাপড় এবং বেশি কাঠের আসবাবপত্র বেছে নিন। এটি ধুলাবালি এবং আবহাওয়ার পরিস্থিতি আরও ভালভাবে সহ্য করতে পারে।
কাঠ একটি প্রাকৃতিক এবং টেকসই উপাদান যা আর্দ্রতা, পোকামাকড় এবং ক্ষয় প্রতিরোধ করতে পারে। এটি আপনার বারান্দায় উষ্ণতা এবং টেক্সচার যোগ করে, একটি আরামদায়ক অনুভূতি তৈরি করে। আপনি আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের কাঠ যেমন সেগুন, মেহগনি বা বাঁশ থেকে বেছে নিতে পারেন।
আপনি আপনার আসবাবপত্র এবং আনুষাঙ্গিক যেমন ধাতু, বেত, বা পাট হিসাবে অন্যান্য কিছু টেকসই উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।ধাতু একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী উপাদান যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
বেত বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দ্রুত এবং প্রচুর পরিমাণে জন্মে। লাইটওয়েট এবং নমনীয় আসবাব তৈরি করতে এটি বিভিন্ন আকার এবং আকারে বোনা যেতে পারে। পাট হল এক ধরনের ফাইবার যা থেকে সুতো বা দড়ি তৈরী হয়। এটি আপনার ছাদের জন্য রাগ, মাদুর, ঝুড়ি বা অন্যান্য সজ্জা তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডাইনিং কর্ণার
আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য একসাথে ফ্যামিলির সাথে বসে খাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কালচার। আর সেটা যদি সম্ভব হয় নিজের বাসার ছাদে মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই!
পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে আপনার বারান্দায়ও একটি ডাইনিং টেবিল এবং চেয়ার যোগ করার কথা বিবেচনা করুন। হাতিল কাঠ, ধাতু, বেত, বা বাঁশের মতো বিভিন্ন টেরেস ডাইনিং আসবাবপত্রের বিকল্পগুলি অফার করে। আপনার যাই বাজেট থাকুক, হাতিলের কাছে সবকিছুই আছে।
একটি মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যার পরিবেশ তৈরি করতে, পরী লাইট, লণ্ঠন, মোমবাতি বা বাল্ব ব্যবহার করুন। রঙিন বা প্যাটার্নযুক্ত টেবিলক্লথ যোগ করে আপনি নিজের পারসোনালিটির জানান দিতে পারেন।
স্টোরেজ অপ্টিমাইজ করুন
একটি টেরেস ডিজাইন করার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এটিকে ক্লাটার মুক্ত রাখা। খেয়াল রাখুন যাতে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থাকে। জিনিসপত্র অরগানাইজ করে রাখার জন্য একটি আউটডোর স্টোরেজ সেভিং ড্রয়ার ব্যবহার করতে পারেন যেখানে বই, ম্যগাজিন, কুশন, সহ অন্যান্য আসবাপত্র গুলো স্টোর করে রাখা যাবে।
দিনশেষে এই স্থানটি আপনার এবং আপনার পরিবারের। সো, এটিকে আপনার মনমতো সাজান এন্ড এঞ্জয় করুন!