ড্রয়িং রুম অথবা বসার ঘর যে কোন বাসার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখান থেকে মানুষ পায় আপনার রুচির প্রমাণ। তাই তো বসার ঘরটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য সবারই থাকে কিছু প্ল্যানিং আর এক্সট্রা ইফোর্ট। আধুনিক ফ্ল্যাটগুলোতে স্পেস কম থাকায় অনেকেই বসার ঘরটি সাজান মাল্টি ফাংশনাল স্টাইলে, যাতে একসাথে মেটায় অনেক প্রয়োজন। একটু কৌশলী হলে নান্দনিকতার সাথে আপনার ড্রয়িং রুমটি হয়ে উঠতে পারে বড় প্রয়োজনের সহজ সঙ্গী।
সোফা
ড্রয়িং রুমের সজ্জায় সোফা একটি গুরুত্বপূর্ণ আসবাব। তবে সোফা ঘরের একটি বড় স্পেস নিয়ে থাকে। এই সোফাটি যদি হয় মাল্টিফাংশনাল, তাহলে একই স্থানের বিভিন্ন ব্যবহারে এটি কাজে আসতে পারে। আধুনিক সময়ে ড্রয়িং রুমের সোফার ব্যবহার হচ্ছে মাল্টি পারপাজে। যাদের পরিবারে বাড়তি সদস্যদের জন্য নির্ধারিত বেডরুম নেই, সোফার ভাঁজ খুলে দিলে সেটিই হয়ে যাচ্ছে আরামদায়ক বিছানা। অতিথিদের বসার জন্য যেটি সোফা, দুপুরে সেটিই হয়ে যেতে পারে আরামে অবসর কাটানোর ডিভান। রাতের বেলা বেড়াতে আসা বন্ধু অথবা পরিজনের ঘুমের জন্য সেটি হয়ে যাবে বিছানা। তাই ঘর ছোট হলেও অতিথি সমাদরে হবে না কোন সমস্যা!
সেন্টার টেবিল
সময়ের সাথে বদলেছে মানুষের রুচি, সেই সাথে বদলেছে আভিজাত্য ও নান্দনিকতার সংজ্ঞা। আধুনিক মানুষ এখন অনেক বেশি আগ্রহী মিনিমালিস্টিক ফার্নিচারের প্রতি। ঘরকে পরিপাটি করে রাখার পাশাপাশি বর্তমান যুগের ছোট ঘরগুলোতে যেন বদ্ধভাব না হয়, সেজন্য এমন ফার্নিচার সবাই চায়, যেগুলো ছোট, কিন্তু বহুমুখী। ড্রয়িং রুমের এমন একটি প্রয়োজনীয় আসবাব হচ্ছে সেন্টার টেবিল। ঘরের ইন্টেরিওরের থিম অনুযায়ী নিয়ে নিতে পারেন একটি সেন্টার টেবিল, যেখানে আপ্যায়নের সরঞ্জামের পাশাপাশি হিডেন ড্রয়ারে রাখতে পারেন ম্যাগাজিনসহ অন্যান্য টুকিটাকি প্রয়োজনীয় জিনিস।
ফোর সিটার টেবিল
একটি ছোট ঘরের ড্রয়িং রুমে প্রচুর পরিমাণে আসবাবপত্র থাকলে সেটি একটি দমবদ্ধকর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তাই অপ্রয়োজনীয় আসবাব সরিয়ে কেবল মাত্র দরকারি আসবাবগুলোই রাখুন। অনেক সময় প্রচুর অতিথি আসলে তাদের আপ্যায়নসহ নানাবিধ আনুষাঙ্গিক কাজে অনেক সময় আসবাবপত্রের প্রয়োজন হয়। ড্রয়িং রুমে আধুনিকতার স্পর্শ অনুভব করতে টি টেবিলের পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে ফোর সিটার টেবিল। এই টেবিলে খুব অল্প পরিসরেই অতিথি, বন্ধুবান্ধব নিয়ে চা খেতে খেতে গল্প করা যেতে পারে। আবার অন্য সময়গুলোতে সুন্দর করে গুছিয়ে সীমিত স্থানেই নান্দনিকভাবে সাজিয়ে রাখা যায়।
শেলফ
ছোট ড্রয়িং রুমের জন্য শেলফ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেলফে রাখা বিভিন্ন শো-পিস আপনার রুচির পরিচয় দেয়, সেই সাথে ঘরকেও করে তোলে মার্জিত, সুন্দর। ছোট ড্রয়িং রুমের স্পেসের ব্যবহার সঠিকভাবে করতে বড় শেলফের পরিবর্তে কর্ণার শেলফ ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের কর্ণার চোখের আড়ালে থাকলে এমনিতেই সেটি বড় বলে মনে হয়। এছাড়া, কর্ণার শেলফের ব্যবহারের কারণে ঘরের ভেতরে যে বাড়তি স্পেসটুকু থাকে, সেটাকে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়।
শু-র্যাক
একটি ড্রয়িং রুমের জরুরী আসবাবপত্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জুতার রাখার শেলফ। একটি ঘরের নিয়মিত সদস্য, নিমন্ত্রিত অতিথি সবারই বাহির থেকে এসে জুতা গুছিয়ে রাখার একটি নির্দিষ্ট স্থানের প্রয়োজন হয়। তা না হলে, সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে একদিকে যেমন ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করে, অপরদিকে বাহিরের ধুলোবালি ঘর ময়লা করে ফেলে। তাই জুতা রাখার শেলফ বর্তমান যুগে ছোট-বড় সব ড্রয়িং রুমেরই একটি জরুরী আসবাব। তবে, বর্তমানে স্পেস ম্যানেজমেন্টের জন্য জুতার শেলফটি মূল দরজার বাহিরের করিডোরে প্লেস করা হয়। এতে বাহির থেকে জুতা ঘর পর্যন্ত আসার সম্ভাবনাও থাকে না, আবার সহজেই জুতা গুছিয়ে রাখা সম্ভব হয়। জুতার শেলফ যদি দরজার বাইরে প্লেস করা হয়, ভেতরের ঘরের অনেকখানি জায়গাই তাহলে বেঁচে যায়। যেহেতু সবার আগে জুতার শেলফটিই মানুষের দৃষ্টিতে পড়ে, তাই নান্দনিক ডিজাইনের জুতার শেলফ আপনার বাসার জন্য নির্বাচন করুন। অন্যান্য আসবাবপত্রের সাথে মিল রেখে জুতার শেলফটি বাছাই করতে হবে, যাতে সাজানোর থিমটা হয় ইউনিক। সেই সাথে শুরু থেকেই সবার মনে একটা ভালো ইম্প্রেশন তৈরি হয়।
প্রতিটি ঘর মানুষের জীবনের গল্প বলে। আর ড্রয়িং রুম হলো সেই গল্পের সূচনা। তাই প্রতিটি মানুষই চায় তার বাসার ড্রয়িং রুমটাকে একটা নান্দনিক রূপ দিতে, যেটি নজর কাড়বে সবার। আধুনিক যুগের এপার্টমেন্টগুলো ছোট হবার কারনে অনেকেই হয়তো ভাবেন স্বপ্নের মতো করে ঘর সাজানোর বাসনা হয়তো সেভাবে পূর্ণ হবে না। কিন্তু, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়, তাই কৌশলী মনের কুশলী গুণে আপনার ছোট্ট ড্রয়িং রুম সাজাতে পারবেন আপনার স্বপ্নের মতো করে। প্রয়োজন শুধু সঠিক স্থানের জন্য সঠিক আসবাবটি নির্বাচন করা এবং সেগুলোকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া। তাহলেই আপনার ছোট ড্রয়িং রুমটি সবার কাছে হয়ে উঠবে নান্দনিক ও আরামদায়ক।