হুট করে যখন প্রিয় মানুষেরা ডাক দিয়ে ওঠে, তখনই মনে পড়ে যায়, “এই তো আমার বাসা!” ঠিক তেমনি একটুখানি নিজের ব্যক্তিত্বের ছোঁয়ায় বাসার ঘরগুলো হয়ে ওঠে একান্ত আপন। অল্পের মাঝে তুষ্টি খুঁজে নেয়ার এই যুগে অবশ্য পুরো ঘরকে নিজের ইচ্ছেতে সাজানো কিছুটা কঠিন। তবে তাতে কি মনের সাধ থেমে থাকে? চলুন, বরং আপনার ঘরের একটা কর্নারকে সাজিয়ে ফেলি একদম আপনার মনের মতো করে!
মনে মনে বিশাল লিস্ট বানাতে বসলেন বুঝি? প্রয়োজন নেই; ছোট্ট দুয়েকটা চেইঞ্জ আনলেই আপনার ঘরের কর্নারটা পালটে দিবে পুরো ঘরের আদল। তবে তার আগে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।
কোন কর্নার?
অধিকাংশ ঘরে চারটি কর্নার থাকে। পুরনো আমলের বাসায় পাঁচ কিংবা ছয় কর্নারও থাকে অনেকসময়। অন্যান্য ফার্নিচার কোথায় কীভাবে রাখলে সুবিধা হবে তার ওপরই মূলত নির্ভর করে আপনি নিজের জন্য কোন কর্নারটা সাজাবেন। তবে আপনার কাছে যদি যেকোনো কর্নার বেছে নেয়ার স্বাধীনতা থাকে, তাহলে জানালার পাশের কোনাটি বেছে নেয়াই ভালো হবে। আলো-বাতাস যাতায়াত করবে বেশি আর চোখ তুলে তাকালেই ঘরের বাইরেটা দেখা যাবে। বাসার আশেপাশে খোলা জায়গা থাকুক আর না থাকুক, দেয়ালের ওপার দেখতে পেলেই মনটা অনেকখানি ফুরফুরে হয়ে যায়।
কর্নার সিলেকশন তো হলো, এখন সেখানে নিজের ছাপটা ফেলবেন কীভাবে? চলুন দেখি-
১। নিজেকে একটু এক্সপ্রেস করুন
বইগুলো কেমন শেলফে রাখা হয়েছে কিংবা জানালার পর্দাগুলোর ডিজাইন কেমন তা দেখেই ঘরে বসতকারী ব্যক্তির সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। তা অতিথিরা যখন দেখবেই, আপনার আসল রূপটাই দেখুক! বইপত্র কেনার ঝোঁকটা কখনোই পুরনো হয় না। সুতরাং আপনি বইপোকা হলে ঘরের কর্নারে আনুন সাদামাটা একটা শেলফ আর ভরিয়ে তুলুন আপনার বইয়ের কালেকশনে। সাদামাটা কেন? থরে থরে সাজানো গোছানো বইয়ের এক অনবদ্য আভিজাত্য আছে। সেখানে শেলফটাও গর্জিয়াস হলে কে কাকে ওভারপাওয়ার করবে তা নিয়ে একটা নান্দনিক দ্বন্দ্ব থেকে যায়।
আবার ধরুন, আপনার শখগুলো সেকেলে নয়। বরং নতুন নতুন সব হট হুইলস মডেল কালেক্ট করাটাই আপনার নেশা। তাহলে শেলফ আর টেবিলটপের মিশেলে ঘরের পুরো কর্নারজুড়ে ছড়িয়ে দিন আপনার গাড়ির কালেকশন। সেক্ষেত্রে কর্নার ওয়ালের রঙটাও হতে পারে উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত। অথবা যদি আপনার ভালো লাগে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে, তাহলে কর্নারে রাখা চেয়ারের সামনে ফ্লোরম্যাটটা কিনে ফেলুন গাড়ি কিংবা ওয়ার্ল্ড ম্যাপের শেইপে। অতিথিরাও জানুক, কার ডেরায় হানা দিয়েছে!
২। স্মৃতিগুলো থাকুক চোখের সামনেই
একটুখানি নস্টালজিয়া ছাড়া আমাদের ‘ফ্রি টাইমগুলো’ ঠিক যেন ‘মি টাইমে’ পরিণত হয় না। ঘরের যে কর্নারটাকে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হিসেবে সাজাতে চাইছেন, সেখানেই তো মানায় জীবনের প্রিয় স্মৃতিগুলোকে! কর্নারের একপাশের দেয়ালে শোভা পাক আপনার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি। ছিমছাম, গর্জিয়াস, আধুনিক, পুরনো ইত্যাদি বিভিন্ন স্টাইলের ফ্রেম দিয়ে কম্বিনেশন করেন অনেকে। আবার অনেকে রুমের বাকি ডেকরের সাথে মানানসই ফ্রেমের সেট কিনে আনেন। হুট করে যখন চোখ চলে যাবে দেয়ালের কোণে, অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটতে পারে আপনার ঠোঁটের কোণে।
কর্নারের আরেকপাশে পকেট বা ছোটো ছোটো কার্ট বসিয়ে তৈরি করে ফেলুন খোপ। কোনো খোপে থাকবে আপনার জীবনের যত ভ্রমণ টিকেট, হোক তা ফ্লাইট কিংবা বাস-ট্রেন। আরেক খোপে জমা পড়ুক বন্ধুদের পাঠানো কার্ডগুলো। কাছেরই অন্য আরেক খোপে তোলা থাকুক ছোটোবেলার প্রিয় পুতুল কিংবা টেনিস বলটা। স্মৃতিবিজড়িত এই কর্নারে মন তো ফুরফুরে হবেই!
৩। আয়েশ করে বসুন
ঘরে নিজের প্রিয় কর্নারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বসার ব্যবস্থা। আরাম করে দীর্ঘ সময় যদি বসতেই না পারলেন, তাহলে আর অবকাশ হলো কীভাবে! ইদানিং ছোটো-বড় সবাই নিচু জায়গায় বসতে আরাম পান না। আবার একদম সোজা হয়ে বসে কাজ করার জন্য তো স্টাডি টেবিল আছেই। কর্নারে বরং হাত-পা ছড়িয়ে বসার ব্যবস্থা থাকা দরকার। হাতিল-এর ইজি চেয়ার কালেকশন এসব চাহিদার কথা ভেবেই ডিজাইন করা হয়েছে। ল্যাকার ফিনিশ আর অ্যান্টিক বার্নিশবিশিষ্ট এই চেয়ারগুলো অভিজাত আর টেকসই। দীর্ঘসময় বসে থাকলেও কোমর ব্যথা হবার সম্ভাবনা নেই। আর চাইলে গা এলিয়ে চোখ বুজে বিশ্রাম নেয়ার জন্যও পারফেক্ট এই ইজি চেয়ারগুলো।
যেই কর্নারে বসে নিজের ভালোলাগার জগতে হারিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে কিছুক্ষণ বসার পর যদি কোমর কিংবা ঘাড় ব্যথ হয়, তাহলে কি আর ভালোলাগা থাকে? তাই কর্নারের সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টে আর্গোনমিক চেয়ার থাকা উচিৎ। সোফা কিংবা বেড একটু নরম পছন্দ করলেও ঘরের কর্নারের চেয়ারটা অনেকেই হালকা ফোম কিংবা একেবারেই ফোম ছাড়া পছন্দ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছুটা শক্ত সারফেস মেরুদণ্ড আর পিঠের জন্য ভালো। আর ডিজাইনটা জমকালো না হয়ে একটু মিনিমাল হলে হাওয়া বাতাস চলাচল করে। ফলে গরমের দিন শরীর ঘেমে ওঠে না, অস্বস্তিও কাজ করে না। চাইলে ছোটো একটি কুশন আর একটি পাতলা রাগ (rug) রেখে দিতে পারেন। আয়েশটা তাতে আরও জমবে বৈকি!
৪। এ সময় প্রয়োজন ন্যাচারাল এয়ার পিওরিফায়ার
আবহাওয়ার কারণে ইদানিং অনেকেই ঘরে এয়ার পিওরিফায়ার কেনেন। তবে জানেন কি? খুব সামান্য খরচে বাতাসকে ন্যাচারালি বিশুদ্ধ করা যায়? ঘরের প্রিয় কর্নারে স্নেক প্ল্যান্ট কিংবা স্পাইডার প্ল্যান্টের মতো কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রেখে দিন। গাছপালা নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তারা জানেন স্নেক প্ল্যান্ট এক ধরনের উন্নত জাতের ন্যাচারাল এয়ার পিওরিফায়ার। স্ট্যান্ডার্ড সাইজের একটি রুমের বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখার জন্য ৪-৫টি স্নেক প্ল্যান্টই যথেষ্ট। নার্সারিতেই এখন সিরামিকের সুন্দর সুন্দর টব পাওয়া যায়। পরিমাণমতো পানি দিলে টবের নিচে পানি জমে থাকে না। আর স্নেক ইনডোর প্ল্যান্টের যত্নও লাগে খুব কম। সুন্দর কিছু টবে ইনডোর প্ল্যান্ট এনে রেখে দিন আপনার ঘরের প্রিয় কর্নারটিতে। বিশুদ্ধ বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নিন আর উপভোগ করুন একান্ত সময়টুকু। ব্যস্ততার এই যুগে ক’জনই বা এমন সুযোগ পায়!
মোদ্দা কথা
আমাদের একেকজনের ব্যক্তিত্ব যেমন একেকরকম, তেমনই নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী ঘরের কর্নার সাজানোর কৌশলেরও কোনো শেষ নেই। ঠিক যেভাবে সাজালে আপনার কাছে কর্নারটা হয়ে উঠবে পুরো বাসার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা, সেভাবেই সাজিয়ে ফেলুন। অন্য কেউ কী ভাবলো, সে নিয়ে চিন্তা করার জন্য বাসার বাকি জায়গাগুলো তো থাকলোই! আপনার ব্যস্তদিনের সমস্ত ক্লান্তি মুছে গিয়ে খুব সামান্য চেষ্টাতেই নিজেকে যদি আবার খুঁজে পান, তবেই সমস্ত প্রচেষ্টা সার্থক হবে।