আমাদের দেশের বাসাবাড়িতে বেশির ভাগ কাঠের আসবাবই দেখা যায়। কাঠের খাট, কাঠের আলমারি, কাঠের টেবিল। তবে কেমন হয় তার মাঝে যদি একটি টুকটুকে লাল সোফা থাকে হরেক রঙের কুশনে সাজানো! লাল সোফার কথায় একটু নড়েচড়ে বসলেন নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, কুশনিং আসবাবের কথাই বলছি। বর্তমানে ঘর সাজাতে কাপড়ের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এর ব্যবহার যেমন সহজ তেমনি সাশ্রয়ী। ঘরের দেয়াল, মেঝে, দরজা, জানালা, আসবাব সবকিছুতেই ভিন্ন ভিন্ন কাপড় ও নকশার ব্যবহারে ঘর পায় অন্য রকম একটি আবহ ও ঘরকে দেখায় বেশ চমৎকার। আসবাবে কাপড়ের ব্যবহার আসবাবকে ভিন্ন রূপ দেয় ও একঘেয়েমি দূর করে। কদিন পরপরই যারা ঘরের রূপ বদলে ফেলতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এটি উপযুক্ত একটি উপায়। তবে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে ঘরের ধরন অনুযায়ী কাপড় ও নকশা বাছাই করাটা জরুরি। ঘর সাজাতে কোথায় কোন ধরনের কাপড় ও নকশা ব্যবহার করা যায়, তেমনই কিছু পরামর্শ জেনে নেওয়া যাক।
আসবাবে কাপড়ের ব্যবহার
হাতিলের কুশনিং আসবাবগুলো ঘরের স্টেটমেন্ট পিস হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
টেবিল ক্লথ, চেয়ার কভার, কুশন কভার ইত্যাদি ছাড়া কাপড় ব্যবহার করে আসবাব সাজানোর উপায় আগে খুব একটা ছিল না। কিন্তু এখন পুরো আসবাবটাই হয়ে যাচ্ছে কাপড়ের। কুশনিং আসবাবের প্রচলন অন্যান্য দেশে অনেক আগে থেকে হলেও আমাদের দেশে এর ব্যবহার খুব বেশি পুরোনো নয়। হাতিলের হাত ধরেই বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু। বিশেষ করে সোফা, ডিভান, চেয়ার, দোলনা ইত্যাদিতে কাপড়ের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। হাতিলের ভিন্ন ধরনের আরামদায়ক কুশনিং আসবাব ঘরে স্টেটমেন্ট পিস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এগুলোতে আলাদা কোনো কভার ব্যবহার করতে হয় না। এই ধরনের আসবাবের কাপড়গুলো যেহেতু বদলের সুযোগ থাকে না, তাই কেনার আগেই ঘরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিনতে হবে। তা ছাড়া ঘরে ভিন্ন রঙের ও ভিন্ন ধাঁচের আসবাব থাকলে সেগুলোকে নির্দিষ্ট রং বা নকশার কাপড় ব্যবহার করে সাজিয়ে একটা সামঞ্জস্য তৈরি করা যেতে পারে। সাজসজ্জা ছাড়াও কাপড় আসবাবকে করে তোলে আরামদায়ক। সোফা বা চেয়ারের কভারের ক্ষেত্রে ওলেফিন বা অ্যাক্রেলিক কাপড় সবচেয়ে ভালো। এগুলোতে সহজে ময়লা আটকায় না, কুঁচকে যায় না বা ভাঁজ পড়ে না। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। আবার, ঘরের কোণে নকশি শতরঞ্জি ও রংবেরঙের কয়েকটি কুশনের মাধ্যমে তৈরি করতে পারেন আপনার আরামদায়ক স্থান।
বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন
বিছানাকে আরামদায়ক করে তুলতে একাধিক বালিশ রাখা যেতে পারে
শোবার ঘর সাজাতে সবার আগে আমরা নজর দিই আমাদের বিছানার দিকে। বিছানার চাদরের ক্ষেত্রে হালকা ও বড় নকশা এবং হালকা রং ব্যবহার করলে ভালো দেখায়। বিছানা এবং বালিশের ব্যবহার যেহেতু বেশি হয় তাই এতে আরামদায়ক ও সহজে পরিষ্কার করা যায় এমন কাপড় ব্যবহার করা উচিত। ছাপা নকশার সুতি, লিনেন কাপড়গুলো বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার হিসেবে মানানসই। বিভিন্ন উৎসবে ঘরের আমেজ ধরে রাখতে সুতি ভেলভেটের চাদর কিংবা সুতার কাজ করা সুতি চাদর ব্যবহার করা যেতে পারে। বিছানাকে আরামদায়ক করে তুলতে তোশক বা ম্যাট্রেসের পাশাপাশি রাখা যেতে পারে ভিন্ন আকৃতির একাধিক বালিশ।
সোফার কুশনের ক্ষেত্রে আবার নকশা করা সিল্ক বা পলিয়েস্টার ধরনের কাপড় ব্যবহার করা আরামদায়ক ও সুবিধাজনক৷ সোফা এমবোসড কাপড়ের হলে কুশনেও এমবোসড নকশা ব্যবহারে মানানসই দেখাবে। এক কালারের কুশনিং সোফা, ডিভান কিংবা দোলনায় আঁকাবাঁকা জ্যামিতিক নকশার কুশন সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
দরজা ও জানালার পর্দা
পর্দায় একটু উজ্জ্বল ও চকচকে কাপড় ব্যবহার করাই ভালো
জানালার পর্দা ছেঁকে যখন সূর্যের আলো ঘরে পড়ে তখন ঘরকে দেখায় স্বর্গীয়। ঘরে এমন আবহ পেতে চাইলে জানালায় ব্যবহার করতে হবে উপযুক্ত কাপড়ের পর্দা। সুতার কাজ করা সিনথেটিক পর্দা জানালায় ব্যবহারে ঘরকে দেখায় বেশ সুন্দর। তা ছাড়া জানালা ছোট হলে হালকা রঙের বড় নকশার পর্দা ব্যবহারে জানালাকে বড় দেখায়। পর্দার ক্ষেত্রে ম্যাট কাপড় ব্যবহার করলে সেটি সব আলো শুষে নিয়ে ঘরকে অন্ধকার করে ফেলে। তাই পর্দায় একটু উজ্জ্বল ও চকচকে কাপড় ব্যবহার করাই ভালো। উজ্জ্বল কাপড় আলো প্রতিফলন করে। সে ক্ষেত্রে রেশমি সিল্কের পর্দা হতে পারে একটি বিকল্প। জানালায় সঠিক পর্দা ঘরের পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করে ঘরকে করে তোলে আরামদায়ক।
ঘর সাজাতে কাপড় কেনার ক্ষেত্রে আগে দোকান থেকে স্যাম্পল এনে আসবাব ও ঘরের অন্যান্য জিনিসের সাথে মিলিয়ে নেওয়া ভালো। এতে বোঝা যাবে বাছাইকৃত কাপড়টি ঘরে মানানসই ও আরামদায়ক হবে কি না। একসাথে অনেক কাপড় কিনে আনার পর ঘরের সাথে না মানালে হবে হিতে বিপরীত। ঘর সাজাতে কাপড় ও নকশার এই ব্যবহার আপনার কতটুকু কার্যকরী মনে হলো, তা কমেন্টে জানাতে পারেন।