আধুনিক ফার্নিচারের চমৎকার ডিজাইন দিয়ে আপনার বাসার আভিজাত্য বেশ কয়েকগুণ বাড়িয়ে নিতে পারেন। এ ধরনের ফার্নিচার আলাদা কম্বিনেশন অনুযায়ী সেট করা যায়। তাই আপনার স্টাইল ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে বড়সড় ভূমিকা রাখতে পারে এসব ফার্নিচার।
কোন ধরনের আধুনিক ফার্নিচার কিনে ঘর সাজাতে পারবেন সেই অভিজ্ঞতা না থাকলে আমাদের এই গাইডটি আপনার জন্য। চলুন ছবিসহ ৫০টিরও বেশি আধুনিক ফার্নিচার ডিজাইন আইডিয়া দেখে নিই।
বাসা-বাড়ির সব রুমের জন্য আধুনিক ফার্নিচার ডিজাইন
১. লিভিং রুমের ফার্নিচার ডিজাইন
লিভিং রুম একটা বাসার প্রাণ বলা যায়। পরিবারের মানুষজনের বাইরে অতিথিরা এখানে এসে বসবে, তাই লিভিং রুমের ফার্নিচার ডিজাইন রুচিশীল হওয়া আবশ্যক। এখানে বসার জন্য প্রথমেই সোফার প্রয়োজন হবে। রুমের স্টাইল বাড়াতে ফেব্রিক, রেক্সিন, ডিভান ও মডুলার সোফা ভালো হবে। এরপরেই চা, কফি ও কাগজপত্র রাখতে দরকার হবে সেন্টার টেবিল। মডুলার ও স্টোরেজ সেন্টার টেবিলগুলোতে স্মার্টলি অনেক কিছু রাখা যায়।
আর শো পিস-বই এসব থাকলে সেগুলো ওপেন শেলফে রাখতে হবে। এজন্য বড় রুমের জন্য বুক শেলফ ও ছোট রুমের জন্য কর্ণার শেলফ সুন্দর দেখায়। সবশেষে একটা টিভি কেবিনেট থাকলে কমপ্লিট লিভিং রুম বলা যায়।
২. বেড রুমের ফার্নিচার ডিজাইন
যেকোনো পরিবারে সবকিছুর প্রথমে বেডরুম ফার্নিচার দরকার হয়। বেডরুম দেখতে সুন্দর হবে যদি বেড, ওয়ারড্রোব, বেডসাইড টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, রিডিং টেবিল ইত্যাদি একসাথে ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে সব ফার্নিচার মিলিয়ে বেডরুম ফার্নিচার সেট পাওয়া যায়, আবার আলাদা করেও কেনা যায়। আধুনিক ডিজাইনের বেড কেনার ক্ষেত্রে সেমি ডাবল, স্টোরেজ ও লো হাইট বেড বেশি মানাসই হবে।
বেডের পাশেই স্লাইডিং ডোর আছে এরকম ওয়ারড্রোব রাখলে সহজে বেশি জিনিস রাখতে পারবেন। আর বই, চশমা, সানগ্লাস এসবের মত ছোটখাট জিনিস রাখতে ফিউচারিস্টিক ডিজাইনের লো হাইট টেবিল নিতে পারেন। ছেলেদের জন্য স্টোরেজ ড্রেসিং টেবিল আর মেয়েদের মেকআপ করার জন্য সিটারসহ ড্রেসিং টেবিল বেশি সুবিধা দেবে। আর পড়াশোনা ও অফিসিয়াল কাজের জন্য ফোল্ডিং রিডিং টেবিলগুলো অনেক সুন্দর হবে।
৩. ডাইনিং রুমের ফার্নিচার ডিজাইন
ডাইনিং রুমের প্রধান উপকরণ টেবিল চেয়ার হলেও, বিভিন্ন প্রকার আইটেম রাখার জন্য আরো কিছু আধুনিক ডাইনিং ফার্নিচার লাগে। যেমনঃ প্লেট রাখার জন্য বড় ডিনার ওয়াগন অথবা শোকেস প্রয়োজন হয়। এছাড়া বিভিন্নরকম কারি আইটেম রাখার জন্য মিনি কেবিনেট দরকার হয়।
আর অতিথিদের সামনে ছোটখাটো আপ্যায়ন আইটেম নিতে মিনি ট্রলির দরকার হবে। এগুলো থাকলেই একটা রুচিশীল ডাইনিং রুম পরিপূর্ণতা পায়। বসার জন্য ক্যাফেটেরিয়া স্টাইলের ছোটখাট অনেক চেয়ার পাবেন।
৪. কিচেনের ফার্নিচার ডিজাইন
রান্নার সময় হাতের কাছে সবধরনের উপকরণ ও সরঞ্জামের দরকার হয়। কিন্তু ট্রাডিশনাল কিচেনে এক জায়গাতে এত কিছু রাখা সম্ভব হয় না। আধুনিক মডুলার কিচেন সেট এর সমাধান হতে পারে। এতে আলাদা আলাদা বক্সের মত কমপার্টমেন্টে স্টোভ প্লাটফর্ম, ওপেন শেলফ, কেবিনেট, সিংক, ডিসপোজাল, ওভেন এসবকিছু রাখার সুবিধা পাবেন। মজার বিষয় এতে খুব অল্প জায়গাতেও ভিড় না করে অনেক কিছু রাখার মত জায়গা হয়ে যাবে। তার উপর এসব কিচেন সেটে রান্নার সময় সব উপকরণ হাতের নাগালেই রাখা যায়।
৫. রেস্টুরেন্টের স্মার্ট ফার্নিচার ডিজাইন
আজকাল ভাল মানের সব হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বারটেন্ডিং এরিয়া থাকে। আপনি যদি নিজের ফ্যান্সি রেস্টুরেন্টের জন্য ফার্নিচার খুঁজে না পান, তাহলে ছোট টুল ও সান লাউঞ্জার কিনে ফেলতে পারেন। হোটেলে সান লাউঞ্জার থাকলে অতিথিরা আরামে বসে স্ন্যাকস ও বেভারেজ খাবার পাশাপাশি পুলে সানবাথ নিতে পারবে।
ছোট টুলগুলো লম্বা হবার জন্য সববয়সী মানুষ এতে বসতে পারে। আবার এর আধুনিক গঠনপ্রণালীর কারণে চেয়ারের মত খুব বেশি জায়গা নষ্ট করেনা।
৬. বাচ্চাদের ফার্নিচার ডিজাইন
নতুন বাবা-মায়েরা অনেক সময় ঘুমের মধ্যে বাচ্চাকে খেয়াল করে না। আবার ৪/৫ বছর বয়সী বাচ্চারা মাঝে মধ্যে বাবা-মায়ের সাথে থাকতে চায়না। হাতিলের স্টোর থেকে বাচ্চাদের বাংকার বেড কিনে সহজেই এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
বাচ্চাদের আধুনিক ফার্নিচারের ডিজাইন আসল ফার্নিচারের মত মজবুত ও টেকসই হয়। বাচ্চার রুমকে আরো আকর্ষণীয় করতে ইকো-ফ্রেন্ডলি উপাদানে তৈরি জন্য মিনি স্টাডি টেবিল কিনতে পারেন। স্টাডি টেবিলে বই, রঙ পেন্সিল থেকে শুরু করে খাবার প্লেট সবকিছু রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে।
৭. আধুনিক দরজার ডিজাইন
আধুনিক বাসায় দরজার ডিজাইন ও নান্দনিক হওয়া বাঞ্চনীয়। তাই নিজের ব্যক্তিত্ব ও ভাবনার সাথে মিলে এরকম ডিজাইনের দরজা কিনতে পারেন। কিছু দরজা ট্রাডিশনাল দরজার মত একেবারে সলিড ডিজাইনের হয়ে থাকে। কম সাজসজ্জা পছন্দ করলে এরকম দরজা নেওয়া যায়। অপরদিকে কিছু দরজায় স্টাইলিশ গ্লাসের কাট-আউট দেওয়া থাকে।
আর আপনি যদি বড় আকারের ম্যানসনে থাকেন, তাহলে এগুলো না কিনে ডাবল লীফ ডোর কিনতে পারেন। এসব দরজায় দুটো পাল্লা লাগানো থাকে। আর ছোটখাট ফ্ল্যাটে থাকলে প্লেইন ডিজাইনের ভিনিয়ার্ড দরজাগুলো দেখতে পারেন। অনেকে মাঝের রুমগুলোতে দরজা লাগানোর বদলে শুধুমাত্র আধুনিক দরজার ফ্রেম কিনে কিছু খরচ বাঁচিয়ে রাখে।
৮. অফিসের ফার্নিচার ডিজাইন
দিনের বেশিরভাগ সময় কর্মজীবিদের অফিসে থাকা লাগে। তাই বর্তমানে কাজের মান ও পরিবেশ ভাল করতে সৃজনশীলভাবে অফিসের আধুনিক ফার্নিচার ডিজাইন করা হয়। এখানে সাধারণত বসার জন্য আধুনিক সোফা, সুইভেল চেয়ার, কনফারেন্স টেবিল, মিটিং টেবিলের সেট রাখা হয়। আবার বিভিন্ন পজিশনের কর্মকর্তাদের জন্য ডিরেক্টর টেবিল, রিসেপশন টেবিল, এক্সিকিউটিভ টেবিল থাকে।
কর্মচারীরা বিভিন্ন মাপের আধুনিক কম্পিউটার টেবিল ও রিসেপশনিস্ট টেবিলে কাজ করে। অপরদিকে অফিসের অ্যাসেট গুছিয়ে রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি সাইড র্যাক, আলমারি, শেলফ, স্টোরেজ র্যাক ও ফাইল কেবিনেট আছে। তাই অনায়াসে সব ধরনের জিনিস রাখতে পারেন।
৯. রিডিং রুমের ফার্নিচার ডিজাইন
শিক্ষার্থী ও বই-পড়ুয়াদের জন্য রিডিং টেবিল একটা আলাদা জগতের মত কাজ করে। প্রয়োজনীয় বইগুলো কাছে রাখার জন্য ভালো রিডিং টেবিলের বিকল্প নেই। আধুনিক রিডিং টেবিলের ডিজাইনে শেলফ ও ড্রয়ারসহ বেশ কিছু কমপার্টমেন্ট থাকে। বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের জন্য চাইলে চেয়ারের সাথে সেট মিলিয়ে বড় রিডিং টেবিল কিনতে পারেন। আবার কিছু টেবিলের সাথেই চেয়ার লাগানো থাকে। ছোটখাটো বাসায় ব্যবহারের জন্য এরকম পোর্টেবল রিডিং টেবিল বেশ কাজে দেয়।
কেন হাতিল থেকে আধুনিক ফার্নিচার কেনা উচিৎ?
সম্পূর্ণ অটোমেটেড ফ্যাক্টরিতে ইমপোর্টেড কাঠ ব্যবহার করে হাতিলের আধুনিক ফার্নিচার তৈরি করা হয়। এসব ফার্নিচারের উপরে ইকো ফ্রেন্ডলি কোটিং ও কালার দেওয়া থাকে, তাই পরিবেশ ও শরীরের কোনোরকম ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। সব ফার্নিচারই ওয়ারেন্টির আওতাভুক্ত। আপনি কেনার আগে ওয়েবসাইট ভিজিট করে সব প্রোডাক্টের থ্রিডি মডেল ও বিল্ড ম্যাটেরিয়েল দেখে নিতে পারেন।
আধুনিক ফার্নিচার ডিজাইন আইডিয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন-উত্তরঃ
আধুনিক ডিজাইনের ফার্নিচার কেমন হয়?
আধুনিক ডিজাইনের ফার্নিচারে খুব জাকজকম নকশা থাকে না। এগুলো সাধারণ চতুর্ভুজাকার বা আয়তাকার গড়নের হয়ে থাকে। কিন্তু সব ফার্নিচারে বিভিন্নরকম অতিরিক্ত ফাংশনালিটি দেওয়া থাকে। এগুলো খুব হালকা ও উজ্জ্বল হয়। তাই সহজে যেকোনো জায়গাতে আনা নেওয়া করা যায়। আধুনিক ফার্নিচার মিনিমালিজম লাভার ও ডুপ্লেক্স লাভার সবরকমের মানুষ পছন্দ করে থাকে।
আধুনিক ফার্নিচারের প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আধুনিক ফার্নিচার বেশ জনপ্রিয় হয়। তখন অল্প সময়ে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ঘর ও ফার্নিচার বানানো শুরু হয়। পরে দেখতে সুন্দর লাগে বলে বিশ্বব্যাপী ফার্নিচারগুলো সমাদৃত হয়। বর্তমানে সবচেয়ে ভাল ইনটেরিয়র ডিজাইন পেতে হলে আধুনিক ফার্নিচার ডিজাইনের কোনো বিকল্প নেই।
আধুনিক ফার্নিচার কিভাবে চিনবেন?
আধুনিক ফার্নিচারের ডিজাইন সোজা লাইনে হয়ে থাকে। যেকোনো ফার্নিচারে সম্ভব হলে ড্রয়ার, শেলফ, কেবিনেট, ইত্যাদি অতিরিক্ত ফাংশনালিটি দেওয়া থাকে। এগুলো কোনোরকম বিশেষ যন্ত্রপাতি ছাড়াই সেট করা যায়। কিছু ফার্নিচার মডুলার হবার কারণে খুলে রাখার ব্যবস্থা থাকবে।