যখন নতুন ফার্নিচার কেনার কথা আসে, শুরুতেই আমারা চিন্তা করি যে – এই জিনিসটি আসলে কতদিন টিকবে? যেহেতু, ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে আপনি একটি বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করছে, সুতরাং আপনি অবশ্যই চাইবেন না যে আপনার একদম নতুন খাটটি কয়েক বছর পরে ভেঙ্গেচুরে পড়ুক।
বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিল তাদের ৩৪ বছরের ফার্নিচার বেচাকেনার অভিজ্ঞতা থেকে ফার্নিচারের স্থায়ীত্ব নিয়ে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে।
সোফা এবং চেয়ারের মতো গৃহসজ্জার ফার্নিচার সাধারণত ৭-১৫ বছর এবং একটি খাট ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকে। কাঠের ফার্নিচারগুলো আবার তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ী হয়। সঠিকভাবে যত্ন নিলে কাঠের যেকোনো ফার্নিচার ১০-২০ বছর পর্যন্ত অনায়াসেই টিকে যায়।
অবশ্য, এই সময়কালগুলো সাধারণত গড়ে কেমন টিকতে পারে সেটার উপর ভিত্তি করে বলা। আপনার ফার্নিচারের জীবনকাল আরও অনেক কারণের উপর নির্ভর করে। যেমন নির্মাণের গুণমান, ব্যবহারের মাত্রা এবং বছরের পর বছর ধরে নেওয়া যত্ন ইত্যাদি ব্যাপারের উপরে তা নির্ভরশীল।
ফার্নিচারের টাইপ অনুযায়ী তার স্থায়ীত্ব
কাঠের ফার্নিচার
সঠিকভাবে যত্ন নেয়া হলে কাঠের ফার্নিচারগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মও ঠিকে যায়। আমি বলছি সেসব বংশ পরম্পরায় পেয়ে আসা ফার্নিচারগুলোর কথা। যেগুলো সাধারণত আমরা আমাদের দাদা-নানা দের বাড়িতে গেলে দেখি। এগুলো নতুন করে বার্নিশ করলে আপনি সারা জীবন এগুলো দিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবেন।
ওক, সেগুন, ম্যাপেল, মেহগনি, টাক এবং অন্যান্য কাঠের তৈরি সলিড ফার্নিচারগুলো সাধারণত যত্ন নিয়ে ব্যবহার করলে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়।
আমাদের একজন কাস্টমারের একটি ওক ডেস্ক আছে যেটা তিনি তার প্রপিতামহের কাছ থেকে পেয়েছেন এবং সেটি প্রায় ৭০ বছরের উপর ব্যবহারের পরেও এখনও পাথরের মতো শক্ত আছে।
এমনকি পাইন, পপলার এবং অন্যান্য সফটউড থেকে তৈরি সস্তা কাঠের ফার্নিচার সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে ১৫-৩০ বছরও টিকতে পারে। এর ক্ষেত্রে হয়তো পরের প্রজন্ম পর্যন্ত টিকে যাওয়ার আশা করা ঠিক হবেনা, তবে এগুলো দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।
গৃহসজ্জার ফার্নিচার
এই ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু কৌশলগত। কারন ফার্নিচারে ব্যবহৃত ফ্যাব্রিক এবং কুশনিং এর স্থায়িত্বকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। তবুও, নিয়মিত যত্ন সহকারে ব্যবহার করলে, একটি কাউচ বা চেয়ার ৮-১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। চামড়ার সোফা আরও ভালো কারন তা ১০-১৫ বছরও টিকে যায়।
আমার কাছে পরিচিত একজনের দেয়া একটি কাপড়ের সোফা ছিল যা প্রায় ব্যবহারের ১৫ বছর পর পুরোনো হওয়া শুরু করে। এদিকে, আমার ভাইয়ের বন্ডেড লেদারের একটি কাউচ মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই ছিড়ে ফেটে যায়। মূলত ফলাফল নির্ভর করে আপনি যেমন খরচ করবেন তার উপর।
হাতিলের কাস্টোমারদের রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি সোফার গড় আয়ু ১০ বছর, একটি ফ্যাব্রিক চেয়ারের ৮ বছর এবং চামড়ার ফার্নিচারের ১৫-২০ বছর বা তার বেশিদিনও হতে পারে। সঠিকভাবে দৈনিক ব্যবহার করা, যত্ন নেয়া, এবং রক্ষণাবেক্ষণ করাই স্থায়ীত্বের মূল চাবিকাঠি।
আউটডোর ফার্নিচার
রোদ, বৃষ্টি, কুয়াশা ইত্যাদি ফার্নিচারের জীবনকাল কমিয়ে দেয়। তবে আবহাওয়া-প্রতিরোধী উপকরণ দিয়ে তৈরি ছাদ এবং বারান্দার ভালো মানের ফার্নিচার ৫-৭ বছর চলে যায়।
আমরা বেশ দাম দিয়ে পুরু কুশন এবং অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমিং সহ একটি সুন্দর সেকশনাল কাউচ কিনেছিলাম। আমরা শীতকালে এটিকে ঢেকে রেখে ব্যবহার করি। এরপর ৬টি গ্রীষ্মকাল পার হয়ে গেলো তবুও এটি প্রায় নতুনের মতই আছে।
সস্তা প্লাস্টিক বা বেতের আউটডোর ফার্নিচার সাধারণত ২ বছর বা তারও কম সময় টিকে। দর কষাকষি করে কেনা জিনিসপত্রের থেকে যদিও এর থেকে বেশি আশা করা ঠিক নয়।
বাড়ির ফার্নিচারের জন্য স্থায়ীত্বের সময়কালের অনুমান
আর্টিকেলটি সংক্ষিপ্ত রাখতে, এখানে সাধারণ বাঙালি বাড়ির ফার্নিচারের গড় স্থায়ীত্বের সময়কালের অনুমানের সারসংক্ষেপ দেওয়া হল:
ফার্নিচার | গড় স্থায়ীত্ব | বিবরণ |
সোফা | ৭-১৫ বছর | নিম্নমানের সোফা মাত্র ৫ বছর টিকতে পারে যেখানে উচ্চমানের চামড়ার সোফা ১৫+ বছর টিকতে পারে। |
গৃহসজ্জার চেয়ার | ৭-১০ বছর | ফ্যাব্রিকের স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারের মাত্রার উপর নির্ভর করে। |
কাঠের চেয়ার | ১০-১৫ বছর | শক্ত কাঠের চেয়ার আনুমানিক কয়েক দশক ধরে টিকতে পারে। |
খাবার টেবিল | ১৫-২০ বছর | শক্ত কাঠের টেবিল প্রায়ই পরবর্তি প্রজন্ম পর্যন্ত টিকে যায়। |
কফি, ও বিভিন্ন সাইড টেবিল | ১০-২০ বছর | শক্ত কাঠের তুলনায় গ্লাস-টপড টেবিল কম টেকসই। |
ডেস্ক | ১৫-২০+ বছর | শক্ত কাঠের অফিস ডেস্ক সাধারণত কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত টিকে যায়। |
অফিসের চেয়ার | ৭-১৫ বছর | দৈনন্দিন ব্যবহারে অফিস চেয়ার পুরোনো হয়ে যায়। |
গদি/ম্যাট্রেস | ৭-১০ বছর | সস্তা কয়েল ম্যাট্রেস ৫-৭ বছর পর ঝুলে যায়। |
বেড ফ্রেম | ১০-১৫ বছর | লোহার এবং কাঠের তৈরী বিছানার ফ্রেম সবচেয়ে টেকসই হয়। |
বেতের ফার্নিচার | ৩-৫ বছর | বাইরের আবহাওয়ার প্রতি সংবেদনশীল। |
চামড়ার ফার্নিচার | ১৫-২০+ বছর | সঠিক যত্ন নিলে, চামড়া কয়েক দশক পর্যন্ত টিকে। |
ফ্যাব্রিক ফার্নিচার | ৭-১৫ বছর | ফ্যাব্রিকের গুণমান এবং স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে। |
আউটডোর ফার্নিচার | ৩-৭ বছর | শীত ও বর্ষায় ঢেকে রাখা হলে দীর্ঘস্থায়ী হয়। |
শক্ত কাঠের ফার্নিচার | ২৫-১০০+ বছর | যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম টিকে যায়। |
কিভাবে ফার্নিচারের স্থায়ীত্ব বাড়াবেন?
- মানসম্পন্ন জিনিস কিনুন – ভালভাবে তৈরি শক্ত কাঠ, চামড়া এবং টেকসই কাপড় সময়ের ব্যবধানে সস্তা বিকল্পগুলিকে ছাড়িয়ে যাবে৷
- সঠিকভাবে ব্যবহার করুন – ফার্নিচার অপব্যবহার করবেন না! অতিরিক্ত ব্যবহার, কিছু ছিটকে পড়া, বিভিন্ন দাগ, সূর্যের আলো ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করুন – ধুলো পরিষ্কার, পলিশ, লেদার কন্ডিশন করা, ইত্যাদি অভ্যাস গড়ে তুলুন। ছোট সমস্যাগুলি বড় সমস্যায় পরিণত হওয়ার আগে অবিলম্বে মেরামত করুন।
- স্থায়ীত্ব বাড়ানোর জন্য DIY ফিক্সগুলি ফলো করুন – রিফিনিশিং, রিআপহোলস্টারিং, খুচরা হার্ডওয়্যার বদলানো, এবং কুশন বদলানো ইত্যাদি আপনার ফার্নিচারকে একটি নতুন রূপ দিতে পারে।
ফার্নিচারের দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করার জন্য এখানে আরও কিছু দুর্দান্ত টিপস রয়েছে যা ফার্নিচারগুলোকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভাল রাখতে পারে। নিজের টাকার মায়া থাকলে আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।
পরের বার যখন আপনি কাউচ, টেবিল বা চেয়ারের জন্য কেনাকাটা করবেন – স্থায়িত্বকে প্রাধান্য দিন। আন্তরিকভাবে যত্ন নিলে, ভাল ফার্নিচার দিয়ে সহজেই ৫-১০ বছর কাটিয়ে দেয়া যায়, ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি। মানসম্পন্ন জিনিসে এবং কারুশিল্পের পেছনে খরচ করুন। আপনার বাচ্চাকাচ্চারাও বড় হয়ে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এই জিনিসগুলি শুধুমাত্র ঋতু নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম চালিয়ে দেয়া যায়।
হাতিলের টেকসই মানসম্পন্ন ফার্নিচারে বিনিয়োগ করুন
এই আর্টিকেলে বিভিন্ন কারন খুঁজতে গিয়ে বোঝা গেছে যে, স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে সমস্ত ফার্নিচার সমানভাবে তৈরি হয় না। যদিও কিছু লোকাল দোকানের ও খুচরা বিক্রেতার ফার্নিচার প্রাথমিকভাবে দেখতে সুন্দর লাগতে পারে, তবুও সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে এসব ফার্নিচার তৈরীতে মানসম্পন্ন উপকরণ এবং নির্মাণশিল্পের অভাব থাকে।
সেগুন, শীষম, আম এবং বাবলা-এর মতো শক্ত কাঠ থেকে তৈরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম টিকে থাকার মতো ফার্নিচারের জন্য হাতিলের কোন জুড়ি নেই।
হাতিল বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার ব্র্যান্ড যাদের রয়েছে অসংখ্য ক্যাটাগরির ফার্নিচার যেগুলো উৎকৃষ্ট কাঁচামাল ও নিপুণ কারিগরি কারুশিল্প ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।। শক্ত কাঠের ফার্নিচার তৈরিতে আমাদের দক্ষতা সেগুলোর স্থায়িত্বের উদাহরনেই প্রতিফলিত হয়।
১৯৬৩ সালের শিকড় থেকে পরিণত হাতিল তার ফার্নিচার তৈরির কারুকাজ নিখুঁত করতে গিয়ে কয়েক দশক কাটিয়েছে। পরিবেশের দিকে খেয়াল রেখেই আমরা অত্যাধুনিক উৎপাদন কৌশলগুলি ব্যবহার করি।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপট এবং বহুমুখী, মার্জিত ডিজাইনের জন্য পরিচিত এই হাতিলের ফার্নিচারগুলি বাড়ির নান্দনিকতা পরিসরের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত। এছাড়াও গুণমান এবং উপকরণের প্রতি আমাদের টিম যথেষ্ট মনোযোগী হওয়াতে, প্রতিটি কাঠের টুকরো সাবধানে বাছাই করে ফার্নিচার তৈরি করা সম্ভব হয় যেগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।
ফার্নিচারে বিনিয়োগ করার সময়, হাতিলের মতো ব্র্যান্ডেকে আমলে রাখা উচিৎ যারা শৈল্পিকতা এবং স্থায়িত্বের কদর করে। এখনই দেখে আসুন আমাদের টেকসই ফার্নিচারের কালেকশান যেগুলো সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকার উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়।