আর কত জমিয়ে রাখা?

ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে আসি মায়েদের জমানোর স্বভাব। দেখতে দেখতে আমাদেরও অভ্যাস হয়ে গেছে জমানোর। পুরোনো জামাকাপড়, বাক্স, আসবাব ঘরের কোণে পড়ে থেকে ধুলো জমায় বছরের পর বছর ধরে, তা-ও ঠিক ফেলে দিতে মন চায় না। এই অব্যবহৃত জিনিসপত্র  ফেলে দেওয়ার অনীহা থেকেই জন্ম হয় বিশৃঙ্খলার। অপ্রয়োজনীয় জমানো জিনিসের প্রাচুর্যে ঘরের জঞ্জাল বাড়ে, সমস্যা হয় হাঁটাচলায়। এসবের পাশাপাশি অপ্রয়োজনের ভিড়ে অনেক সময় প্রয়োজনীয় জিনিসটাই খোঁজা মুশকিল হয়ে পড়ে। বাড়তি জিনিস পরিষ্কারের কাজটা ক্লান্তিকর মনে হলেও আসলে কাজগুলো ঠিকমতো ভাগ করতে পারলে এটা খুবই সোজা। সবকিছু জমানোর অভ্যাস ত্যাগ করে ‘মিনিমাল’ জীবনধারায় ধাবিত হওয়াটা আজ সময়ের প্রয়োজন। তাই ঘর থেকে জমানো অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলা বের করে আনার সহজ কয়েকটি কৌশল আমরা খুঁজে বের করেছি আপনার সুবিধার জন্য। 

সবকিছুর জন্য আলাদা জায়গা

ঘরের প্রতিটি আসবাবের নিজেদের স্থায়ী একটা জায়গা প্রয়োজন। জামাকাপড়ের জায়গায় জামাকাপড়, শোপিসের জায়গায় শোপিস, আবর্জনার জায়গায় আবর্জনাএভাবে কয়েকটা স্থান নির্ধারিত করে দিলে এক জায়গার জিনিস আরেক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেই বেশ কিছু জিনিস আমরা এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখি, এই সব রাখার জন্য যদি ঢুকতেই নির্দিষ্ট ঝুড়ি বা বাক্সের ব্যবস্থা করা যায় তবে অগোছালো হওয়ার সুযোগটা কমে যায়। একই সঙ্গে জুতা রাখার আলাদা র‍্যাক, চাবি ও মাস্ক রাখার জন্য আংটা, ঘরে ঢুকেই স্যানিটাইজ করার জন্য ছোট্ট একটা স্টেশন ইত্যাদি যোগ করলে ঘরের বিশৃঙ্খলা অনেকটাই কমে আসবে। এই জায়গা নির্ধারণের অনুসন্ধানে দেখব যেসব জিনিস রাখার পর্যাপ্ত স্থান নেই, সেগুলো বাতিলের  খাতায় ফেলে দিলেই ভালো। বাসায় ছোট বাচ্চাকাচ্চা থাকা নিখুঁতভাবে সাজিয়ে  রাখার পথে একটা বিশাল বাধা। শিশু বয়সের পাগলামির কাছে আমাদের সব প্ল্যানই হার মেনে যায়। এ ক্ষেত্রে ঘরকে চাইল্ড প্রুফ করার পাশাপাশি সোনামণিদের খেলনার জন্য আলাদা বাক্সের ব্যবস্থা করা এবং অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন। 

বিছানার নিচে বাড়তি স্টোরেজ

স্টোরেজ বলতেই আমরা সব সময় আলমারি, কেবিনেট, ড্রয়ার ইত্যাদির কথা চিন্তা করি। বর্তমানে শহরের অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে স্টোররুম পাওয়া যায় না, ফলে স্টোরেজ খুব বড় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা যদি স্টোরেজ নিয়ে একটু সৃজনশীলভাবে চিন্তা করি তাহলেই পেয়ে যেতে পারি ঘরের আনাচকানাচে অনেক জায়গা। বিছানার নিচের জায়গাটিতে অনায়াসেই রেখে দেওয়া যায় বিভিন্ন জিনিস। পুরোনো কাঁথা-বালিশ, অপ্রয়োজনীয় কাগজ বা রিসিপ্ট, ভাঙা অলংকার, পুরোনো হ্যাঙ্গার, অব্যবহৃত গ্যাজেট ও তারএগুলো প্রতিটি বেডরুমেই কমবেশি জমানো পাওয়া যায়। এগুলো জমিয়ে রাখার থেকে দান করে দিলে তা অন্য কারো কাজে লাগতে পারে। তা ছাড়া পুরোনো কাপড় পুনর্ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন সৃজনশীল উপায়ে। পুরোনো শাড়ি দিয়ে কাঁথা বানানো ছাড়াও, অন্যান্য কাপড় দিয়ে বানানো যায় ঘরের নানা প্রয়োজনীয় জিনিস। 

রান্নাঘরের গোলমাল

গবেষণা করে দেখা যায়, মানুষ রান্নাঘর আর খাওয়ার ঘর অন্য সব ঘরের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহার করে। কারণটা বোধগম্য হওয়া খুব একটা কঠিন নয়, বাঁচার জন্য খাওয়া এবং খাওয়ার জন্য বাচা। বাঙালি হিসেবে আমরা জাতিটাই ভোজনরসিক, তাই রান্না আর খাওয়াতে চলে যায় দিনের বড় একটা অংশ। রান্নাঘরে নিত্যনতুন ডিশ বানানোর খাতিরে জন্ম হয় রান্নাঘরের গোলমালের। রান্না করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায় ভাঙা পাত্র বা একই রকমের একাধিক পাত্র জমানো আছে কেবিনেটে। এগুলো ফেলে দিলে তা নতুন জিনিসপত্র রাখার জন্য জায়গা করে দেবে। ডাইনিংরুমে কার্ট যোগ করলে সেখানেও রাখা যাবে কিছু বাড়তি জিনিসপাতি। কফি মেকার, ব্লেন্ডার, মিক্সার, ফুড প্রসেসর ইত্যাদি সব যদি একই জায়গায় রাখা যায় তবেও ঝামেলা অনেকটা কমে। সাথে সাথে  লেবেলিং করে মসলাপাতি, রান্নার সরঞ্জাম রাখলে কেবিনেটগুলোও বেশ নির্ঝঞ্ঝাট থাকবে। 

গোছানো রান্নাঘর পুরো ঘরকেই দেয় পরিপূর্ণ চেহারা

কাপড়চোপড়ের সঠিক জায়গা

বছরে দু-একবার এমন সময় বের করা উচিত , যখন কাপড়ের আলমারিটা আবার সাজানো যায় । যত সুন্দর করেই রাখা হোক না কেন, কাপড়গুলোর যেন নিজেদের বাতিক আছে, তারা এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে চায় না। গোছানোর কদিন পরেই শাড়ির মাঝে রুমাল, পাঞ্জাবির ভাঁজে ফতুয়া, প্যান্টের তাকে কামিজ ইত্যাদি অদ্ভুত পুনর্বিন্যাস খুঁজে পাওয়া যায়। যথেষ্ট সতর্ক থাকার পরও এ ক্ষেত্রে বারবার ভুল হওয়া অনিবার্য, তাই কয়েক মাস পরপর সময় নিয়ে কাপড়ের আলমারিটা ভালোভাবে গুছিয়ে রাখা উচিত। গোছানোর পাশাপাশি পুরোনো কাপড় দান করা যায় বা ফেলে দেওয়া যায়। আমাদের কাছে যা অবাঞ্ছনীয়, তা অনেকের কাছেই পরম প্রয়োজনীয় কিছু হতে পারে। কাপড় রাখার জন্য রং-বেরঙের স্টোরেজ কনটেইনার ব্যবহার করা যায়, যা একই সাথে কার্যকর ও সুন্দর। ফার্নিচারের ক্ষেত্রে খাটের পায়ের কাছে স্টোরেজ যুক্ত অটোম্যানও কাপড় গুছিয়ে রাখার একটি সহজ উপায়। হাতিলের কিংস্পোর্ট-১০৬ এদিক দিয়ে উপযুক্ত আসবাব। 

কিংস্পোর্ট-১০৬

বসার ঘরের সরল সাজ

মেহমানে এলে প্রথমে ড্রয়িংরুম বা লিভিংরুমেই বসতে দেওয়া হয়। সব বাসাতেই দেখা যায় লিভিংরুমটা সাজানো হয় একটু  বিশেষ বিবেচনায়। বাকি ঘরগুলো সাধারণভাবে সাজানো থাকলেও বসার ঘরটায় কিছুটা আভিজাত্যের ছোঁয়া থাকা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে ডেকোরেশনের জিনিসগুলো সংখ্যায় কমিয়ে আনা, পুরোনো খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন ইত্যাদি ফেলে দেওয়া, কোনো ফার্নিচার ভাঙা বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা সরিয়ে ফেলা ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে ঘরের চেহারাটাই বদলে ফেলা সম্ভব। শোপিসের  ক্ষেত্রে কেবল মানানসই শোপিসগুলোকেই প্রদর্শন করা যথেষ্ট। বেশি আড়ম্বরপূর্ণ সাজগোজ কোনো ঘরের সজ্জার ক্ষেত্রেই উপযুক্ত নয়। তবে বেশি আসবাব যদি সাজিয়ে রাখতেই হয়, তবে তা ওয়াল শেলফের ব্যবহারের মাধ্যমে করা উচিত। হাতিলের   সিবিল-১৩৩ এ ক্ষেত্রে কার্যকরই একটি শেলফ। পুরোনো সিডি, ডিভিডি ইত্যাদি অনেক সুন্দর স্মৃতিতে জড়ানো থাকলেও বর্তমানে খুব একটা কাজে লাগে না। অকেজো সিডি ও অন্যান্য মেশিনও ড্রয়িংরুমের সাজ থেকে বাদ দেওয়া দরকার। 

সিবিল-১৩৩

দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার মাঝে ছোট বিশৃঙ্খলাগুলো খেয়াল করার সময় হয় না। কিন্তু এই ছোট বিশৃঙ্খলাগুলোই নিতে পারে ভয়ংকর রূপ। ছোট সমস্যাগুলো যাতে বড় না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে অনুসরণ করতে পারেন এই মূল্যবান টিপসগুলো।  

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।