বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হবার কারনে এখানকার অ্যাপার্টমেন্টগুলো আকারে বেশ ছোট হয়। বাংলাদেশে অ্যাপার্টমেন্টের গড় আয়তন প্রায় 1,000 বর্গফুট, যা বিশ্বব্যাপী গড় 1,600 বর্গফুট থেকে অনেক কম। ফলে এমন আঁটসাঁট জায়গায় বাস করা অনেকের জন্য হতাশাজনক। ছোট স্থান হবার কারনে, অনেকক্ষেত্রেই পছন্দমত ফার্নিচার ফার্নিচার ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। এই কারণেই আমরা আপনার সাথে কিছু টিপস এবং কৌশল শেয়ার করতে চাই যার ফলে আপনার ছোট জায়গাটি মাল্টিপারপাস ফার্নিচার ব্যবহার করে বাসার প্রতিটি ইঞ্চির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন।
মাল্টিপারপাস ফার্নিচার কি?
মাল্টিপারপাস ফার্নিচার বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট ফার্নিচারকে বোঝায় না । যে কোনো ধরনের ফার্নিচার যা একাধিক কাজে ব্যবহার করা যায়, সেটাকেই মাল্টিপারপাস ফার্নিচার বলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সোফা কাম বেডকে আপনি আরামদায়ক বসা এবং শোবার কাজে লিভিং রুমে ব্যবহার করতে পারেন। আবার একটি কফি টেবিলকে মুহুর্তেই ডাইনিং টেবিলে রুপান্তর করতে পারেন যা আপনাকে আলাদা করে ডাইনিং টেবিল কেনা এবং সেটার জন্য এক্সট্রা স্পেস খরচ করার ঝামেলা থেকে বাচাতে পারে। এছাড়াও। বুকশেলফ কাম ডেস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি স্বল্প স্থানের মধ্যেই একটি কনভিনিয়েন্ট ওয়ার্কস্পেস তৈরি করে নিতে পারেন।
মাল্টিপারপাস ফার্নিচারগুলো আপনার বাসার স্বল্প স্থানের মধ্যে ভার্সেটাইল কাজের জন্য ফার্নিচার ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি আলাদা আলাদা কাজের জন্য ডেডিকেটেড ফার্নিচার কেনার খরচ থেকে মুক্তি দেয়। পাশাপাশি, এই ফার্নিচারগুলো স্টাইলিং এবং ইনোভেটিভ হবার কারনে প্রাত্যহিক জীবনে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসে।
বিভিন্ন ডিজাইন এবং কালারের মাল্টিপারপাস ফার্নিচার রয়েছে যেগুলো নানা মানুষের প্রিফারেন্সের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন আলার, রঙ, ম্যাটেরিয়াল, এবং ফিচার সংবলিত মাল্টিপারপাস ফার্নিচার রয়েছে যেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দ এবং প্রয়োজন অনুসারে ফার্নিচার সিলেক্ট করতে পারেন। নানাবিধ ফিচারের মধ্যে হিডেন স্টোরেজ কম্পার্টমেন্ট, বিল্ট ইন লাইটিং সহ নানা স্মার্ট ফিচার ইন্টিগ্রেট করা আছে।
আপনি যদি মাল্টিপারপাস ফার্নিচার কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে হাতিলের স্মার্টফিট ফার্নিচার থেকে অসাধারন কিছু ফার্নিচার রয়েছে যা, দেখতে পারেন।
কিভাবে মাল্টিপারপাস ফার্নিচার ব্যবহার করে ছোট বাসা সাজাবেন?
আপনার বাসার ছোট জায়গায় মাল্টিপারপাস ফার্নিচার ব্যবহার করে অনেকাংশে স্থান স্বল্পতার সমস্যা কমিয়ে আনতে পারেন।
সোফা-বেড ব্যবহার করা
সোফা কাম বেড ব্যবহার করার মাধ্যমে দিনের বেলায় বসা এবং রাতের বেলায় শোয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এই ফার্নিচারগুলো একাধিক কাজে ব্যবহৃত হলেও কোয়ালিটির দিক থেকে এগুলো অনন্য এবং ব্যবহারের জন্য বেশ আরামদায়ক।
হাতিলের ওয়েবসাইটে ডিফারেন্ট সাইজ, কালার এবং ডিজাইনের বেশ কিছু সোফা কাম বেড ফার্নিচার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে আলাদা করে স্টোরেজ কম্পার্টমেন্টও রয়েছে যেগুলোতে বেডিং, বালিশ এবং অন্যান্য আইটেম সংরক্ষন করতে পারবেন।
বেড-টেবিল ব্যবহার করা
বেড কাম টেবিল আর দশটা রেগুলার বেডের মত নয়। আপনি এটাকে ফোল্ড করে এর সাথে এটাচড টেবিলের মধ্যে ঘুছিয়ে রাখতে পারবেন। পাশাপাশি, এর ফোল্ডেবল বেডের নিচে আলাদা স্টোরেজ কম্পার্টমেন্টও রয়েছে যেখানে বিভিন্ন জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারবেন। এছাড়াও টেবিলটি ওয়ার্কস্টেশন কিংবা ডাইনিং টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
এই অংশটি স্টুডেন্টদের জন্য, বিশেষ করে যারা শহরাঞ্চলের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে বা ব্যাচেলর কোয়ার্টারে থাকে তাদের জন্য দারুণ একটি ফার্নিচার। বেড কাম টেবিল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি একাধিক ফার্নিচার না কিনে একটি ফার্নিচার থেকেই একাধিক সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
ভার্টিক্যাল স্পেস ব্যবহার করা
আপনার বাসাইয় কি স্থান স্বল্পতা থাকলেও বাসার সিলিং বেশ উচু? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি একটি DIY ফার্নিচার তৈরি করে সেই স্থানটি ভার্টিক্যালি ব্যবহার করতে পারেন। একটি ভার্টিক্যাল স্পেস ব্যবহার করা বলতে বোঝায় এমন ফার্নিচার যা ব্যবহার করার জন্য আপনাকে একটি সিড়ি ইউজ করতে হবে। আপনি আপনার ঘুমের জায়গা হিসাবে আপনার বেডটিকে উচু স্থানে সেট করে সেটাকে বাঙ্ক বেডে পরিনত করতে পারেন যার নিচের অংশটি আপনি ওয়ার্কস্পেস/রিডিং টেবিল কিংবা স্টোরেজ হিসেবে কাজে লাগাবেন। হাতিলে বেশ কিছু বাঙ্ক বেড রয়েছে যা আপনার সন্তানের শোবার জন্য আদর্শ ফার্নিচার হতে পারে।
একটি ভার্টিক্যাল স্পেস তৈরি করতে, আপনার একটি শক্ত এবং মজবুত মাচা সংবলিত বিছানা ফ্রেম প্রয়োজন যা আপনার এবং আপনার ম্যাট্রেসের ওজন বহন করতে সক্ষম। বিছানাটিকে আপনি পর্দা দ্বারা আবৃত করে রাখতে পারেন, এক্সট্রা লাইট ইউজ করতে পারেন এবং সেই উচ্চতায় আলাদা করে সুইচ বোর্ড এবং শেলফ সেট করে আপনার শোবার স্থানটিকে আরো কম্ফোর্টেবল করে তুলতে পারেন।
মড্যিউলার সেন্ট্রাল টেবিল ব্যবহার করা
মডিউলার সেন্টার টেবিল হলো একাধিক মডিউল বা ইউনিট নিয়ে গঠিত এমন একটা টেবিল যেটির আকার আকৃতি প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করা যায় এবং ব্যবহার শেষে অল্প জায়গার মধ্যেই গুছিয়ে রাখা যায়। প্রয়োজন অনুসারে এর আকৃতি পরিবর্তন করা যায় বলে এটি খুব বেশি স্থান দখল করে না, এবং বাসার সামগ্রিক সৌন্দর্য বজায় রাখে। এই টেবিলগুলো নানা ফাংশনালিটি অফার করে যার মধ্যে বসার জন্য টূল গুছিয়ে রাখা এবং প্রয়োজন অনুসারে টেবিল এক্সটেন্ড করা অন্যতম। বাসায় আগত গেস্টদের আপ্যায়ন করার জন্য কিংবা ডাইনিং এর জন্য আপনি এই টেবিল ব্যবহার করতে পারেন, এবং ব্যবহার শেষে আবার গুছিয়েও রাখতে পারেন।
মডিউল্যার সেন্ট্রাল টেবিলের একটি চমৎকার উদাহারণ হলো – হাতিলের Pigeon -167 মডেলটি। এই টেবিলের মধ্যে বিল্ট ইন স্টোরেজ মডিউল রয়েছে যা তৈরিতে ইম্পোর্টেড বিচ উড এবং ভিনিয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারড উড ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও এই টেবিলে ইটালিয়ান আল্ট্রাভায়োলেট (UV) এবং পলিউরেথেন (PU) বার্ণিশ রয়েছে যা বেশ হাই কোয়ালিটির এবং পরিবেশ বান্ধব একটি বার্নিশ। পাশাপাশি ইম্পোর্টেড হার্ডওয়ার ফিটিংসের কারনে এটি মজবুত এবং দীর্ঘস্থায়ী ও বটে।
এটি মুলত একটি স্টোরেজ বেজড মডিউলার সেন্ট্রাল টেবিল, যেখানে চারটি আলাদা স্টোরেজ মডিউল আছে। এই সোরেজ কম্পার্টমেন্টগুলোতে আপনার বই, ম্যাগাজিন, রিমোট কন্ট্রোল বা অন্যান্য আইটেম রাখতে পারেন। এছাড়াও, এটি বেশ মজবুত হবার কারনে আপনি এটা বসার টুল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
ফোল্ডিং বুকশেলফ ব্যবহার করা
এটি এমনে এক ধরনের বুকশেলফ যার আকার এবং আকৃতি পরিবর্তন করে ইচ্ছামত ব্যবহার করা যায়। আপনি যদি আপনার বই, হাউজ প্লান্ট, বা হোম ডেকোরেশনের আইটেমগুলি গুছিয়ে রাখতে চান তখন আপনি এটিকে একটি রেগুলার বুকশেলফ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে এটাকে পড়াশোর জন্য রিডিং টেবিল কিংবা ওয়ার্কস্টেশন টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
ছোট স্পেসে কিভাবে মাল্টিপারপাস ফার্নিচার ব্যবহার করবেন?
আপনার ছোট জায়গার জন্য মাল্টিপারপাস ফার্নিচার সিলেক্ট করা কঠিন মনে হতে পারে, কারণ আপনাকে আপনার বাজেট, এভেইলেবল স্পেস, আপনার লাইফস্টাইল এবং ব্যক্তিগত প্রিফারেন্সের মতো অনেকগুলি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। এছাড়াও, খুব কম সংখ্যক বাংলাদেশি ফার্নিচার ব্র্যান্ড রয়েছে যেগুলো বাসার জন্য স্মার্ট এবং মডার্ন ফার্নিচার তৈরি করে। আপনার বাসায় ছোট জায়গার জন্য সঠিক মাল্টিপারপাস ফার্নিচার বেছে নিতে কিছু হেল্পফুল টিপস এখানে দেয়া হলো –
বাসার স্পেস পরিমাপ করুন
যে কোন ধরনের ফার্নিচার কেনার আগে সেটি যেখানে রাখতে চাচ্ছেন, সেই স্থানটি সঠিকভাবে পরিমাপ করুন। ফার্নিচারটি ঘরের মেঝেতে কি পরিমান জায়গা দখন করবে এবং সেটার জন্য দরজা অথবা জানালা ব্লক হয়ে চালাফেরায় সমস্যা হবে নাকি সেই বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। আগে থেকে পরিমাপ করে নিলে সেই ডাইমেনশন অনুযায়ী ফার্নিচার কিনলে ঘরের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে।
লে আউট প্ল্যানিং
মেজারমেন্ট শেষে ফার্নিচার সাজানো নিয়ে ভাবতে হবে। যেমন, আপনি যদি রিমোট জব করে থাকেন, তাহলে নিঃসন্দেহে একটি বেড কাম টেবিল আপনার জন্য কার্যকরী ফার্নিচার হবে কারন এতে আপনি টেবিলে কাজ করার পাশাপাশি রাতে সেটাকে এক্সপান্ড করে ঘুমাতেও পারবেন। এতে করে বাড়তি ফার্নিচার কেনার ঝামেলা থেকে আপনি নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন।
সঠিক ফার্নিচার সিলেকশন
মাল্টিপারপাস ফার্নিচার কেনার সময় এমন সব ফার্নিচার সিলেক্ট করতে চেস্টা করুন যা প্রয়োজন অনুসারে মিনিমাইজ করে রাখা যায়। কারন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে স্বল্প স্থানে কিভাবে বেশি ফাংশনালিটি সম্পন্ন সার্ভিস অফার করতে পারে। যেমন একটি সোফা যা বেড হিসেবে বা একটি টেবিল যার মধ্যে বসার টুল এবং স্টোরেজ ফাংশন আছে – এধরনের যত বেশি এক্সট্রা ফিচার অফার করতে পারবে ততটাই আপনার জন্য ভাল। পাশাপাশি ফার্নিচারগুলোকে মডার্ন এবং স্টাইলিশ হওয়ার জরুরি যাতে আপনার বাসার সৌন্দর্য কমে না গিয়ে বরং বৃদ্ধি পায়।
ফার্নিচার কোয়ালিটি
ফার্নিচার কোয়ালিটি অনেক গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয় কারন বাংলাদেশিরা সাধারনত একটি ফার্নিচার কেনার পর দীর্ঘসময় ধরে সেটা ব্যবহার করতে পছন্দ করে, অর্থাৎ সচরাচর পরিবর্তন করতে চায়না। তাই প্রডাক্টটি মজবুত এবং দীর্ঘস্থায়ি হওয়াটা বেশ জরুরি। চেস্টা করবেন, ফার্নিচারের ম্যানুফ্যাকচারিং ম্যাটেরিয়াল, এবং ফার্নিশিং যেন ভাল হয়। আবার যেহেতু মাল্টিপারপাস কাজে ফার্নিচারগুলো ব্যবহৃত হবে, সেহেতু এটা পরিষ্কার করার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
কেন মাল্টিপারপাস ফার্নিচারের জন্য হাতিল সেরা?
হাতিল একটি গ্লোবাল ফার্নিচার ব্র্যান্ড যা মডার্ন এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ফার্নিচার অফার করে। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে ব্র্যান্ডটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে কান্ডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, রাশিয়া, মিশর, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপাল এবং ভুটানেও নিজেদের বিজনেস অপারেট করছে। ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিতে অনন্য অবদানের জন্য সম্প্রতি ব্র্যান্ডটি “সুপারব্র্যান্ড বাংলাদেশ এওয়ার্ড ২০২৩-২৪” অর্জন করেছে। সোফা বেড, ডাইনিং টেবিল, মডিউল্যার টেবিল কিংবা ওয়ার ড্রোব, বাংক বেড – যে ধরনের মাল্টিপারপোস ফার্নিচারই হোক না কেন, হাতিলের কাছে সকল ধরনের ফার্নিচারের একাধিক মডেল রয়েছে , যেখান থেকে আপনি দেখে শুনে নিজের প্রয়োজন অনুসারে পছন্দসই ফার্নিচার কিনতে পারবেন। প্রিমিয়াম কোয়ালিটীর ম্যাটেরিয়াল এবং সম্পুর্ন এনভায়রোমেন্ট ফ্রেন্ডলি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসের কারনে, হাতিল প্রতিনিয়তই আরো বেশি মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে।