কে না চায় নিজের লিভিং রুমকে নান্দিকতার সহিত সাজতে? আর তার উপর আপনি যদি হন একজন শৌখিন মানুষ তাহলে তো কথাই নেই। শুধু আপনি কেন প্রতিটি মানুষের একটি বিশেষ অনুভূতির স্থান হচ্ছে তার বাড়ি। কেননা আপনার বাড়ি ছোট হোক কিংবা বড়, এই বাড়িই আপনার সুখের ঠিকানা।
হাজার ব্যস্ততার পর এই বাড়ি আর বাড়ির লোকজন আপনাকে দিবে প্রশান্তি। আর একটি বাড়ির কমন স্থান হচ্ছে লিভিং রুম। পারিবারিক আড্ডা হোক কিংবা অতিথিদের সমারোহ লিভিং রুম কিন্তু এর কেন্দ্রবিন্দু।
তাই লিভিং রুমকে আরো বেশি শোভনীয় করে তুলতে কোন রকম অনীহা করবেন না। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী সেরা আসবাব দিয়ে সাজান আপনার আধুনিক লিভিং রুমকে। আর সকলের কাছ থেকে আপনার পছন্দের প্রশংসা কুড়ান।
একজন অতিথি কিন্তু আপনার বাসায় এসে প্রথমেই লিভিং রুমে বসবে। আর আপনার লিভিং রুম দিয়েই আপনার রুচি ও পরিবেশকে প্রথমে বিচার করবে। কিন্তু কেমন হবে যদি সবার চোখে আপনার লিভিং রুমটি পছন্দসই না হয়? তাই এখনই সময় আপনার আধুনিক লিভিং রুমকে নানন্দিক রূপ দিন।
তবে অনেকেই জানেন না কি করে একটি আধুনিক লিভিং রুমকে আরো বেশি শোভনীয় করে তুলতে পারেন। এর কারন আমরা অনেকেই লিভিং রুমের ওপর তেমন নজর দেই না। সারাদিন রান্নাঘর, বেডরুম আর ডাইনিং স্পেসেই সময় কেটে যায়। লিভিং রুমে আলাদা করে বসা হয় না। তবে গেস্ট আসলেই বাধে যত বিপত্তি।
হুট করে চলে আসা অতিথি যদি দেখে আপনার বাসার এলোমেলো লিভিং রুম আর কোনো পরিকল্পনা নেই, রুচিসম্মত আসবাব নেই, তখন আপনার কাছেই খারাপ লাগবে। তাই অতি দ্রুত আপনার লিভিং রুম নিয়ে কাজ করুন।
লিভিং রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কেন জরুরী?
আধুনিক জীবনযাত্রায় ইন্টেরিয়র ডিজাইন একটি নতুন মাত্রা। প্রত্যেকেই তার নিজের বাসার ভেতরের রং থেকে আসবাব সব কিছুতেই আধুনিকতা রাখতে চায়। আর কে না চায় সামর্থ্যের মধ্যে নিজের ভালবাসার ঘরকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে। তাই যুগের সাথো তাল মিলিয়ে চলতে হলে আপনাকে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
গতানুগতিক ধারার আসবাব ব্যবহার করা পরিহার করতে হবে। লিভিং রুমকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে আসবাবের দিকে নজর দিতে হবে। কারন আমার বাড়ির প্রথম শোভাবর্ধক রুম হচ্ছে আপনার লিভিং রুম।
সব গেস্ট কিন্তু আপনার বেডরুম কিংবা ডাইনিং পর্যন্ত যাবেও না। লিভিং রুমে থেকেই বিদায় নেবে। তাই এত সব কথা মাথায় রেখে আধুনিক লিভিং রুমেকে সাজান নান্দনিক আসবাবে।
একটা জিনিস আপনার মনে প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে। যে লিভিং রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কেন আসবাবপত্রের উপর এত নজর দিতে হবে। আসুন সেই প্রশ্নের জবাব ও আমরা দিচ্ছি। আপনি কি জানেন একটি রুমের বেশিরভাগ সৌন্দর্য নির্ভর করে ওই রুমের আসবাবের উপরে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
এখন আর সেই আগের যুগ নেই যে ঘরে আসা অতিথিকে মাদুর বিছিয়ে বসতে দিবেন। শীতলপাটিতে ঘুমুতে দিবেন। যুগ আমাদের চিন্তার তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে আছে। আর যুগের সাথে তাল মিলিয়েই বেড়েছে আসবাবের ব্যবহার। বাড়ি ছোট হোক কিংবা বড় হোক আসবাব কিন্তু থাকবেই।
আর ছোট্ট একটি লিভিং রুম কিন্তু মানুষ খুবই সৌখিনতার সহিত সাজায়। তাহলে আপনি কেন বাদ যাবেন? আপনার আধুনিক লিভিং রুমকে আরো বেশি শোভনীয় করে তুলুন। এটা তো আপনারই কাজ। দিনশেষে আপনারই প্রশান্তি আসবে যখন নিজের শখের বাড়িকে এমন সাজানো গোছানো অবস্থায় দেখবেন।
তাই অবশ্যই আপনার আধুনিক লিভিং রুমকে সাজান নান্দনিক আসবাবে। আমাদের দেয়া দিকনির্দেশনা গুলো পড়ে দেখুন। আপনার জন্য উপযুক্ত গাইডলাইন নিয়েই আজকে আমরা হাজির হয়েছি। এখন আমরা আপনাকে বলব কিভাবে আধুনিক লিভিং রুমের জন্য আসবাব বাছাই করবেন।
কিভাবে আধুনিক লিভিং রুমের জন্য আসবাব বাছাই করবেন তা জানার আগে একটি বিষয় আপনার জানা জরুরি। কেন আমরা আসবাবের উপরে এত নজর দিচ্ছি। আধুনিক লিভিং রুমকে নানন্দিক আসবাব দিয়ে সাজানোর দরকারটা কি?চলুন এ প্রশ্নের জবাব আগে জেনে আসি-
আধুনিক লিভিং রুমকে কেন নান্দনিক আসবাবে সাজাবেন?
আপনি একটি জিনিস লক্ষ করে থাকবেন, শুধু লিভিং রুম নয়, যেকোনো রুমের শোভা বাড়িয়ে তোলার কাজ করে মূলত আসবাবপত্র। তা রুম ছোট হোক কিংবা বড়। একটি রুমকে পরিপূর্ণ করে ওই রুমের আসবাব গুলো।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই একটি লিভিং রুমের আসবাবও সেই রুমটির শোভা বাড়িয়ে তোলার কাজ করে। আর যেকোনো আসবাব দিয়ে রুম ভরিয়ে রাখলেই কিন্তু হয়ে গেলে না। সবকিছুই মার্জিত ও পরিপাটি করে রাখলে বেশি ভাললাগে। তাই রুমের সাথে মানানসই না এমন কোনো জিনিসই কেনা উচিত না।
এখন আপনার বাড়িটিকে যদি আধুনিক সাজসজ্জা দিতে চান তাহলে প্রথমেই আসে লিভিং রুম। লিভিং রুমের প্রতিটি জিনিসের উপরে তাহলে আপনার কাজ করতে হবে। আর যেহেতু লিভিং রুমের মূখ্য হচ্ছে তার আসবাবপত্র। তাই আধুনিক লিভিং রুমকে সাজাতে রুচিসম্মত ও নান্দনিক আসবাবের কোনো বিকল্প নেই। তাই আজই আপনার লিভিং রুমকে একটি অভিজাত লিভিং রুমে পরিণত করুন। কিভাবে করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সেই সমাধান আমরা নিয়ে এসেছি।
কিভাবে আধুনিক লিভিং রুমের জন্য আসবাব বাছাই করবেন-
১. বাজেট ফ্রেন্ডলি আসবাব কিনুন:
আপনার বাজেট কম হোক কিংবা বেশি সেটা বড় কথা না। কথা হচ্ছে আপনার ঘরের আসবাব যেন আপনার বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে। কারন অনেক সময়ে সৌখিনতার বসে আমরা একটা জিনিস কিনে ফেলি বেশি দাম দিয়ে। পরে কিন্তু পস্তাতে হয়। অন্য একটি প্রয়োজনীয় জিনিস তখন বাদ পড়ে যায়।
আবার আপনার বাজেট বেশি থাকার পড়েও একটি কমদামি আসবাব কিনে পুরো লিভিং রুমের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। তাই যে আর্থিক অবস্থার মধ্যে থাকবেন না কেন, অবশ্যই একটি বাজেট করে নিবেন। তাহলে আর কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ পড়ে যাবে না। কিংবা আপনার স্ট্যাটাস এর তুলনায় ম্লান কিছুও কেনা হবে না।
২. ঘরের জায়গা অনুযায়ী আসবাব বাছাই করুন:
লিভিং রুম খুব ছোট হলে বড় বড় আসবাব দিয়ে ভরিয়ে রাখবেন না। এতে করে খুবই দৃষ্টিকটু লাগবে। এমনকি রুমে হাঁটাচলা করার মত জায়গাও থাকবে না। এতে করে উল্টো আপদ ডেকে আনা হবে।
টাকাও জলে যাবে। আর রুম যদি বড় হয় তাহলে খুব ছোট ফার্নিচার আনবেন না। পুরো রুমটা তখন ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। আকর্ষণীয় লাগবে না আর।
৩. দেয়ালের রং কিংবা টাইলসের সাথে সামঞ্জস্য রাখুন:
আপনার লিভিং রুমকে আধুনিক লুক দিতে চাইলে অবশ্যই এসব সুক্ষ্ম জিনিস মাথায় রাখবেন। এই ছোট ছোট স্মার্টনেসই কিন্তু আধুনিকতার পরিচয় দেয়।
আপনার লিভিং রুমের দেয়ালের রং আর আসবাবের রং এর সামঞ্জস্যতা পুরো রুমের চেহারাই পাল্টে দিতে পারে। তাই রুমের দেয়ালের রং এবং টাইলসের রং এর সাথে মিল রেখে বা ভারসাম্য রেখে আসবাব ক্রয় করুন।
৪. একাধিক কাজ করবে এমন আসবাব কিনুন:
এমন অনেক ফার্নিচার আছে যা একের ভেতর দুই কাজ করে। এসব ফার্নিচার এখন খুবই আধুনিক ও সময়োপযোগী। আর অনেকেরই আজকাল ছোট ফ্ল্যাট। কিন্তু তারপরও মানুষ অল্পের মধ্যেই আধুনিক ভাবে সবকিছু মানিয়ে নিচ্ছে।
তাই আপনিও চাইলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। এতে করে ঘরের জায়গা বাঁচাতে পারবেন। আবার একাধিক আসবাবের খরচও বাচাতে পারবেন। একের ভেতর দুই কাজ সেরে নিতে পারবেন। এরকম কিছু ফার্নিচার হচ্ছে , চেয়ার কাম ল্যাডার, সোফা কাম বেড ইত্যাদি।
৫. ইউনিক ডিজাইন পছন্দ করুন:
সকলেই আজকের ইউনিক জিনিসের প্রতি ঝোঁক অনুভব করে। গতানুগতিক ধারার ফার্নিচার আর ব্যবহার করতে চায় না। আরও বেশি যুগোপযোগী জিনিস ব্যবহার করতে চায়। তাদের কথা মাথায় রেখে বাজারে অনেক নতুনত্ব দেখা যায়। সেখান থেকে আপনিও বাছাই করুন আপনার পছন্দের আসবাবটি।
৬. কিছু শোভাবর্ধক আসবাব কিনুন:
আপনার লিভিং রুমকে আরো আকর্ষণীয় করতে চান? তাহলে শুধু কিছু প্রয়োজনীয় আসবাব রেখে দিলেই হবে না। শোভাবর্ধক আরো কিছু আসবাব ব্যবহার করতে হবে। এসব আসবাবের দামও কিন্তু অনেক বেশি না। আর এসব জিনিস মুহুর্তেই আপনার লিভিং রুমকে আরো বেশি সুন্দর করে তুলবে।
এমন কিছু আসবাব হল কর্নার, বুক সেলফ, লবি চেয়ার, উডেন ফ্লাউয়ার শেলফ ইত্যাদি। একটি কর্নার কিন্তু আপনার লিভিং রুমের শোভা বাড়াতে অনেক বেশি ভুমিকা রাখবে। এতে আপনি বিভিন্ন ধরনের শোপিস সাজিয়ে রাখতে পারবেন। কিংবা ইনডোর প্লান্ট রাখার জন্যও আজকাল সুন্দর সুন্দর শেলফ পাওয়া যায়। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
৭. পার্ফেক্টলি ফিনিশড আসবাব কিনুন:
আপনি দাম দিয়ে একটি ফার্নিচার কিনে আনলেন। আনার পর দেখলেন ফিনিশিং মোটেও ভাল না। তখন আপনার কি পরিমাণ আফসোস হবে ভাবতে পারেন? তাই আগে ভেবে তারপর কাজ করুন।
ফার্নিচার কেনার সময়ে খুব ভাল করে প্রতিটি পার্টস এর ফিনিশিং খুবই ভাল করে চেক করুন। কারন আপনার অনেক কষ্টে অর্জিত টাকা দিয়ে আপনি এই আসবাবপত্র গুলো কিনছেন। তাই একটি পয়সাও যাতে বৃথা না যায় সে খেয়াল রাখবেন।
৮. মানসম্মত ও টেকসই ম্যাটেরিয়াল দেখে নিন:
টেকসই ও মানসম্মত ফার্নিচার ক্রয় করার কোনো বিকল্প নেই। কারন এই ফার্নিচার গুলো আপনি ব্যবহার করবেন আপনার লিভিং রুমে। তাই কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করতে যাবেন না। টাকা বেশি খরচ হলেও চেষ্টা করবেন মানসম্মত ফার্নিচার ক্রয় করতে।
আর একটি ফার্নিচার কিন্তু অল্প দিনের ব্যবহারের জন্য কেউ কিনে না। মানুষ ১০-১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি ফার্নিচার ব্যবহার করে। তাই কেনার আগে বারবার দেখে ও যাচাই করে কিনুন।
৯. লিভিং রুমে অপ্রয়োজনীয় আসবাব কম রাখুন:
খুব দরকার না হলে লিভিং রুমে প্রয়োজনের বেশি আসবাব রাখবেন না। রাখলেও যেন রুমের শোভা কোনো অংশে কমিয়ে না দেয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
চাইলে দুই একটা শোভা বাড়িয়ে তোলে এমন আসবাব রাখতে পারেন। তবে অনেক বেশি আসবাব দিয়ে গাদাগাদি করে ফেলবেন না। তাহলে আপনার লিভিং রুম আর আধুনিক থাকবে না। উল্টো বাজে দেখাবে।
১০. আপনার রুচি অনুযায়ী আসবাব কিনুন:
খুব বেশি কালারফুল কিংবা কারুকাজ করা আসবাব কি আপনার সাথে যায়? আপনার লিভিং রুমে কোন ধরনের মানুষের আনাগোনা?আপনি কি একজন আর্ট প্রেমী মানুষ? তাহলে এই প্রতিটি জিনিস মাথায় রেখে আসবাব ক্রয় করুন। আপনি যদি শিল্প প্রেমী হন, তাহলে সেই থিমে সাজান আপনার লিভিং রুম। এটাই কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে বড় আধুনিকতার পরিচয়।
আপনি কি চান না আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠুক আপনার আশেপাশের প্রতিটি জায়গায়? নিশ্চয়ই চান। এজন্যই আজকাল প্রতিটি মানুষ সবার আগে গুরুত্ব দেয় নিজের বাড়িকে।
আপনার বাড়ির ডেকোরেশন, আসবাব এসবের উপরে আপনার রুচিবোধ অনেকটাই নির্ভর করে। তাই আধুনিক চিন্তা ধারার পরিচয় দিতে চাইলে অবশ্যই আপনার লিভিং রুমকে নানন্দিক আসবাবে সাজান।
লিভিং রুম হল যেকোনো বাড়ির মূখ্য স্থান যা দ্বারা আপনার বাড়ির সামগ্রিক অবস্থা মানুষ বিচার করে। তাই একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসেবে আপনিও চান আপনার লিভিং রুমকে সাজাতে। আর সেটি সম্ভব যেকোনো সামর্থ্য সম্পন্ন মানুষের পক্ষে।
কারন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সব ম্যানেজ করাও কিন্তু একটি স্মার্টনেস। তাই একজন স্মার্ট ও আধুনিক মানুষ হিসেবে আপনিও নিজের লিভিং রুমকে নানন্দিক আসবাবে সাজান।
আশা করি, আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পেরেছেন, কিভাবে আধুনিক লিভিং রুমের জন্য আসবাব বাছাই করবেন। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।