নাতাশা একজন কর্পোরেট লয়ার। বিগত ছয় বছর ধরে বেশ সুনামের সাথেই কাজ করেছেন নানা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সাথে। ঢাকায় একাই থাকেন, তাই ফ্ল্যাটটাও ছোটো। ব্যস্ত দিনশেষে ডিনার সেরে হয় নতুন কোনো বই নিয়ে নয়তো ক্ল্যাসিক কোনো সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। কোনো কোনো উইকেন্ডে বন্ধুবান্ধব এলে, তাদের সাথেই জমে ওঠে মুভি নাইট!
বাসাটা ছোটো হবার কারণেই আলাদা করে কোনো লিভিংরুম সেটআপ দেননি নাতাশা। দেড় রুমের ছোটো বাসায় ঢুকতেই যে ছোট্ট রুমটা পড়ে, সেটাকেই একদম নিজের সুবিধামতো সাজিয়ে নিয়েছেন। হোম থিয়েটার, বুকশেলফ আর নান্দনিক একটা সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট। সত্যি কথা বলতে, এই কর্নারটাই পুরো বাসায় তার সবচেয়ে ফেভারিট জায়গা। হোম থিয়েটার আর বুকশেলফ ছাড়া আর কী কী আছে সেখানে?
পুরো কর্নারটার সবচেয়ে স্পেশাল ব্যাপার হলো, এই জায়গাটুকু জুড়ে রয়েছে নাতাশার ব্যক্তিত্বের ছাপ। প্রথমে তিনি চেয়েছিলেন হাতিল-এর Scorplus-110 টেবিলের সাথে Menander-118 এর মতো মডার্ন আর মিনিমাল ডিজাইনের লবি চেয়ার দিয়ে একটা আধুনিক সেটআপ তৈরি করবেন। পরে আবার ভাবলেন যেহেতু আলাদা করে লিভিং রুম কিংবা কাউচ নেই, তাই বসার জায়গাটা একটুখানি গ্ল্যামারাস তো হওয়া চাই। যেই ভাবা, সেই কাজ! আর সাথে নিলেন Brooklyn-124’এর জোড়া চেয়ার। Leo-122’এর নাদুসনুদুস ডিজাইনটাও তার পছন্দের লিস্টে ছিল। আবার, Hummingbird-121’এর মতো ছিমছাম সিম্পল চেয়ারের কথাও ভেবেছেন কয়েকবার। হাতিল-এর লবি টেবিলগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এগুলোর ডিজাইন এমন যে, অধিকাংশ লবি চেয়ারের সাথে ন্যাচারালি মানিয়ে যায়।
সিনেমা দেখে দেখে কালার প্যালেটের ব্যাপারে বেশ একটা আইডিয়া গড়ে উঠেছে নাতাশার। মডার্ন ইন্টেরিয়রে কালার কনট্রাস্টের ভূমিকা কতখানি সেটা পুরনো যুগের মানুষ নাতাশার মা-ও পরিষ্কার বোঝেন। তাই মায়ের চয়েসের ওপরই বিষয়টা ছেড়ে দিয়েছিলেন নাতাশা। তার ছোট্ট হাফ রুমের এন্ট্রি স্পেসটায় ওয়ালের কালার হলো স্কাই ব্লু। আর চেয়ারের ফ্যাব্রিক গ্রে টোনের। সুতরাং, কুশন কালার হওয়া চাই ব্রাইট। হাতিল-এ কুশন কাভারের ডিজাইন দেখে মায়ের সে কী খুশি! কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবেন – এমন এক অবস্থা!। অতঃপর Harmony-185, Harmony-188, আর Harmony-174’কে হারিয়ে জয়ী হলো Optimus-105! শপিং থেকে ফেরার পথে মা বলছিলেন যদি ওয়ালের কালার অফ-হোয়াইট কিংবা সি গ্রিন হতো, তাহলে অবশ্য কুশনের চয়েসও ভিন্ন হতো। নাতাশা অবশ্য এত কালার বোঝেন না। তিনি শুধু বোঝেন রুমটা কীভাবে সাজালে তার ব্রেইন অটো রিল্যাক্সিং সিগন্যাল দিবে।
চেয়ারগুলো ব্যবহার করা শুরু করার পর নিজেকে মনে মনে সাবাস বলেছেন বহুবার। কারণ, এই চেয়ারগুলো একদম অথেনটিক এর্গোনমিক ডিজাইনে বানানো, আর কাঠগুলোও যে বিশ্বমানের, সেটা ব্যবহার করলেই বোঝা যায়। ফলে দিনশেষের ক্লান্তি স্বত্বেও নাতাশার কোমর ব্যথা হয়ে যায় না বরং বেশ আরামেই কাটে একান্ত সময়টা।
ফার্নিচার আর কালার ঠিক হয়ে যাওয়ার পর বাকি জিনিসগুলো একটু একটু করে কালেক্ট করেছেন নাতাশা। গাছপালার শখ বহুদিনের। ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় হোস্টেলের বারান্দায় বেশ কিছু ছোটো ছোটো টব ছিল তার। হোস্টেল ছাড়ার সময় সেগুলো উত্তরাধিকারসূত্রে জুনিয়রদেরকে দিয়ে এসেছেন। এবার খানিকটা রিসার্চ করে কিছু ইনডোর প্লান্ট খুঁজে বের করলেন তিনি। এই প্লান্টগুলোর জায়গা হলো তার ফেভারিট কর্নারের চারপাশে। সিরামিকের সুন্দর কিছু টবে গাছগুলো শুধু শোভাই পায় না, বাতাসে অক্সিজেনও ছড়ায়। আর চোখের জন্য দেয় আরামদায়ক সবুজের সমারোহ। বই থেকে প্রিয় কোনো লাইন লিখে রাখার জন্য নোটপ্যাড আর কলম থাকে টেবিলের ওপর। একটা টেবিল ল্যাম্পও আছে বইপত্র পড়ার সুবিধার্থে। বন্ধুদের কাউকে কাউকে দেখে ভাবছেন সামনের মাসে পিএস ফাইভ কিনবেন। কিন্তু এত জিনিস রাখবেন কোথায়? হাতিল থেকে Espresso-105 কিংবা Hallway-103 কিনে ফেললে হয়। এগুলোতে স্পেস অনেক বেশি। কোনোকিছু নেওয়ার জন্য কষ্ট করে আর উঠতে হবে না। এক বসাতেই রাত পার!
নাতাশার ফেভারিট কর্নার দেখলে গেস্টরা প্রশংসা করার আরেকটা বড় কারণ হলো তার স্যুভেনিয়ার কালেকশনটা। বুকশেলফের একটা অংশজুড়ে শোভা পায় বিভিন্ন ট্যুর থেকে আনা এবং বিভিন্ন বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে গিফট পাওয়া ছোটোবড় নানা ধরনের স্যুভেনিয়ার সেট। পুরো কর্নারে এই জিনিসগুলোই তার সবচেয়ে আপন কারণ এই জিনিসিগুলো তার ব্যক্তিত্বকে উপস্থাপন করে। মায়ের সাথে ছবির ফ্রেমটা অবশ্য টেবিলের ওপরেই থাকে সবসময়। এরকম খুঁটিনাটি জিনিস দিয়েই তো একটা স্পেস একান্ত আপন হয়ে ওঠে।