বাড়ির প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তুলতে ফার্ণিচার কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রিয় মানুষগুলোর কিছুটা স্বস্তির জীবন নিশ্চিতে ঘরের জরুরি প্রয়োজনের বাইরেও ফার্নিচার রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শোপিস কর্নার, চেস্ট অব ড্রয়ার বা ডিভান সোফার মত ফার্নিচারগুলো ঘরের কোণেই সহজেই প্লেসমেন্ট করা যায়। আজকের লেখায় ঘরের কোণে কোন ফার্ণিচারগুলো মানানসই হবে এবং কোন ফার্ণিচারগুলো আমাদের ছোটখাটো প্রয়োজন মেটাবে তার কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
ঘরের কোণে ফাঁকা জায়গা ডেকোরেশনের টিপস
ঘরের মূল রুম হলো লিভিং রুম, বেডরুম, বাচ্চাদের রুম, ডাইনিং ও রুমের কর্ণার। চলুন দেখে নিই কোন কোন উপায়ে সবগুলো রুম নিত্যনতুন উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে ফেলতে পারেনঃ
১/ লিভিং রুমের ভাবনা
লিভিং রুম একটা বাড়ির রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে। অতিথি বরণ হোক কিংবা পারিবারিক আয়োজন সবক্ষেত্রেই বাড়ির মহাব্যস্ত এক রুম যেন লিভিং রুমটা। লিভিং রুমের সাজসজ্জা নিয়ে তাই বাড়তি চিন্তা, যত্ন আর সৃজনশীলতার পরিচয় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা থাকে সকলেরই। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে লিভিং রুমের কোণগুলোকে ফাঁকা না রেখে রাখতে পারেন কিছু মানানসই ফার্ণিচার। রাখতে পারেন ওপেন সেলফ। এতে শোপিস কর্ণারের শোপিস থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সাজিয়ে রাখতে পারবেন তেমনি গুছিয়ে রাখতে পারেন বইও।
লিভিং রুমের ফাঁকা কোণে চাইলে ফুলের টবও রাখতে পারেন। গাছের সজীবতা লিভিং রুমের পরিবেশে স্নিগ্ধতা ছড়াবে। গুমোট বাতাস দূর করতেও দারুণ সহায়ক হয়ে উঠবে প্রাকৃতিক এই উদ্ভিদ।লিভিং রুম যদি বড় আকারের এবং খোলামেলা হয় সেক্ষেত্রে রুমের এক কোণে দোলনাও রাখতে পারেন৷ দোলনা যেমন রুমের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তুলবে তেমনি এটি অতিথিদের কাছে আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠবে সহজেই।
আপনার লিভিং রুমের কোনো এক কোণায় কি জানালা আছে? সেই জানালায় উঁকি দিয়ে কি এক চিলতে আকাশ দেখা যায়? সেই আকাশ দেখার সাথে সাথে এক কাপ চা হাতে লবি চেয়ারে বসে প্রিয় মানুষের সাথে আড্ডায় মশগুল হয়ে যেতে পারেন। তখন এটি এক অমূল্য স্মৃতি কাতর মুহূর্ত হয়ে উঠবে৷
২/ বেডরুমের কোণে ফাঁকা জায়গা কী দিয়ে সাজানো যায়?
বেডরুমের কোণে সাধারণত ফাঁকা জায়গা খুব একটা দেখা যায় না। এরপরও যদি ফাঁকা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে জরুরি ফার্ণিচারগুলোর ভীড়ে রুমের সৌন্দর্য্য এবং নিজের প্রয়োজন মেটাবে এমন ফার্ণিচার দিয়েই সাজিয়ে নিতে পারেন স্থানটি।
এক্ষেত্রে ঘরটির কোণে ছোট্ট ফাঁকা জায়গায় ড্রেস স্ট্যান্ড রাখতে পারেন। এসব স্ট্যান্ডের আকার ছোট হওয়ায় ঘরের কোণে অনায়াসেই এটে যায়। এসব স্ট্যান্ডে কাপড়ের পাশাপাশি টাই, ব্যাগ ইত্যাদি ঝুলিয়ে রাখতে পারবেন।
লিভিং রুমের মতো বেডরুমের কোনো এক কোণে গাছের টব লাগাতে পারেন। গাছের স্নিগ্ধতা আপনার মনকে ভালো করে দেবে, বাড়াবে ঘরের সৌন্দর্য্যও।
বেড রুমের এক কোণে ফিট হবে এমন আরেকটি ছোট কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় ফার্ণিচার হচ্ছে চেস্ট অফ ড্রয়ার। এই ড্রয়ারে আপনি আপনার জরুরি ডকুমেন্টসগুলো যত্নের সাথে রাখতে পারবেন। হাতিল এর এমন একটি চেস্ট অফ ড্রয়ার রয়েছে যাতে আয়নারও ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ড্রেসিং টেবিলের চাহিদাও মেটাতে সক্ষম এই চেস্ট অফ ড্রয়ারটি।
৩/ ডাইনিংয়ে সতেজতার ছোঁয়া
ডাইনিং রুমে খুব একটা ফার্ণিচারের আধিক্য সাধারণত দেখা যায় না। তবু জরুরি দরকার যেসব ফার্ণিচার, সেসব তো থাকেই। শোকেসও তেমনই জরুরি একটি ফার্ণিচার। এটিকে ডাইনিং রুমের এক কোণে সহজেই প্লেসমেন্ট করা যায়। শোকেসে আপনি ডিনার সেট রাখতে পারেন, রাখতে পারেন আনুষঙ্গিক জিনিসও।
৪/ বাচ্চাদের রুমও বাদ যাবে কেন?
বাচ্চাদের রুমে প্রয়োজনীয় ফার্ণিচার ছাড়াও তাদের বই পড়াতে আগ্রহী করে তোলার জন্য ঘরের এক কোণে কিছুটা ভিন্ন ডিজাইনের ফাইল রেক বা বুক সেলফ রাখতে পারেন।
ফাইল রেক বা বুক সেলফে বিভিন্ন তাকে বই কিংবা ম্যাগাজিন সাজিয়ে রাখতে পারেন। তাদের সেসব বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়তে উৎসাহিত করুন।
৫/ কিছু স্মৃতির এক ক্যানভাস হোক
ঘরের কোণে সবসময় যে ফার্ণিচার বা স্টোরেজ স্পেসই রাখতে হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ঘরের কোণের দেয়ালে ঘড়ি লাগাতে পারেন। পুরোনো ছবি ফ্রেমের মাধ্যমে সাজিয়ে রাখতে পারেন। ঘরের কোণের ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন শতরঞ্জি।
ঘরের কোণে রাখা যেতে পারে বিনোদনের আয়োজনও। একটা গিটার সাজিয়ে রাখতে পারেন। ফ্লোরে একটি তোষক বিছিয়ে দিয়ে সেখানে গানের আয়োজন বসতে পারে। বই নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন জ্ঞানের রাজ্যে৷
কেন ফাঁকা জায়গা পূরণে শোপিস কর্ণার এত জনপ্রিয়?
শোপিস কর্ণার ঘরের ফাঁকা জায়গা পূরণের অন্যতম জনপ্রিয় সমাধান, কারণ এটি নান্দনিকতা ও কার্যকারিতার চমৎকার সমন্বয় ঘটায়। ফাঁকা কোণ কিংবা অব্যবহৃত দেয়াল অংশকে শোপিস কর্ণারে রূপান্তরিত করলে ঘর আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত দেখায়। দৃষ্টিনন্দন শোপিস যেমন শিল্পকর্ম, মূর্তি, ফুলদানী, বই, কিংবা ব্যক্তিগত সংগ্রহ ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং অতিথিদের নজর কাড়ে। এটি শুধু শৈল্পিক সজ্জার জন্য নয়, বরং ব্যক্তিত্ব ও রুচির প্রতিফলন হিসেবেও কাজ করে।
তাছাড়া, ফেংশুই ও বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, শোপিস কর্ণার ঘরে ইতিবাচক শক্তি আনতে সাহায্য করে, যা মানসিক প্রশান্তি ও সৌভাগ্য বয়ে আনে। আধুনিক অভ্যন্তরীণ নকশায় শোপিস কর্ণার ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে, কারণ এটি স্বল্প জায়গায় অভিনব ডিজাইন তৈরি করতে সহায়তা করে। ছোট ফ্ল্যাট কিংবা বাড়িতে জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্যও এটি কার্যকর।
আবার অনেকেই শোপিস কর্ণারে LED লাইটিং ব্যবহার করেন, যা সন্ধ্যার সময় ঘরের পরিবেশকে আরও উজ্জ্বল ও আরামদায়ক করে তোলে। সহজেই পরিবর্তনযোগ্য হওয়ায় শোপিস কর্ণার সাজানো নতুনত্ব আনতে পারে, যা ঘরের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য দারুণ উপযোগী। এ কারণেই শোপিস কর্ণার আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনে একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে।
ঘরের কোণে ফাঁকা জায়গা রাখলে কি কি অসুবিধা হয়?
অসুবিধা যা যা হতে পারে—
ঘরের কোণে ফাঁকা জায়গা থাকলে কিছু বাস্তব ও মনস্তাত্ত্বিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল—
১. ধুলাবালি ও ময়লা জমে যায়ঃ ফাঁকা জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ধুলা, মাকড়সার জাল ও ময়লা জমে থাকতে পারে, যা ঘরের পরিবেশ নোংরা করে ফেলে এবং অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
২. নেগেটিভ এনার্জি তৈরি হতে পারেঃ বাস্তুশাস্ত্র ও ফেংশুই মতে, ঘরের কোণ যদি ফাঁকা থাকে, তাহলে সেখানে নেগেটিভ এনার্জি জমা হতে পারে, যা বাসার শান্তি ও সমৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. জায়গার অপ্রয়োজনীয় অপচয়ঃ একটি ঘরের কোণ ফাঁকা থাকলে সেটি ব্যবহার উপযোগী হয় না, যা স্থান ব্যবহারের ক্ষেত্রে অপচয় হিসেবে ধরা যায়। সেখানে শেলফ, গাছপালা বা ডেকোরেটিভ আইটেম রেখে জায়গাটিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।
৪. অব্যবহৃত জায়গা অস্বস্তিকর দেখাতে পারেঃ যদি ঘরের একটি কোণ একেবারেই ফাঁকা রাখা হয়, তাহলে ঘর অসম্পূর্ণ বা খালি খালি দেখাতে পারে, যা ঘরের নান্দনিকতার ওপর প্রভাব ফেলে।
৫. ঠান্ডা ও অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারেঃ ফাঁকা জায়গাগুলো বিশেষ করে শীতকালে ঠান্ডা অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে, কারণ সেখানে আসবাব বা কার্পেট না থাকায় তাপ ধরে রাখার উপায় কমে যায়।
সমাধান কী হতে পারে?
- ফাঁকা কোণে ছোটখাট আসবাবপত্র (যেমন—কোনার টেবিল, বুকশেলফ) রাখা যেতে পারে।
- ইন door প্ল্যান্ট বা ফ্লোর ল্যাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে।
- আর্টওয়ার্ক বা ওয়াল ডেকর দিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
ঘরের ফাঁকা কোণ সাজানো কিছু বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তরঃ
কোন ধরণের শোপিস কর্ণার সবচেয়ে ভালো?
ব্যক্তিত্ব প্রকাশকারী শোপিস কর্ণার যেমন ট্রাভেল সুভেনির, আর্ট পিস, বা পারিবারিক ছবি দিয়ে সাজানো সবচেয়ে ভালো। এগুলো সৌন্দর্যের পাশাপাশি আবেগঘন অনুভূতি দেয়। তবে এখানে আইটেমের ভেরিয়েশন থাকলেও এলোমেলো রং ও প্রোডাক্ট নির্বাচন করা যাবে না।
ঘরের কোনা সাজানোর সময় কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
খুব বেশি আইটেম রাখা, এলোমেলো রঙ নির্বাচন, অতিরিক্ত বড় আসবাব ব্যবহার, ও অপ্রাসঙ্গিক জিনিসপত্র রাখা এড়িয়ে চলা উচিত, যাতে কোণটি ভারসাম্যপূর্ণ দেখায়। আবার এমনকিছু রাখা যাবে না যা বেশি ময়লা তৈরি করে, কারণ ঘরের কোণ ঝাড়ু দেওয়াও একটা ঝামেলা।