Modern Furniture Style Modern Furniture Style

মডার্ন ফার্নিচার বলতে কি বুঝায় এবং তার বৈশিষ্ট্যসমুহ

অনেকে জিজ্ঞাসা করেন মডার্ন ফার্নিচার কি এবং মডার্ন ফার্নিচারের রং, ধরণ ও ফাংশনালিটির সাথে ট্রাডিশনাল ফার্নিচারের তফাৎ কি। বিশেষ করে তরুণদের মডার্ন ফার্নিচারের প্রতি আগ্রহ দেখে প্রবীণেরা বেশ অবাক হন।

কিন্তু মডার্ন ফার্নিচার এত কঠিন কোনো বিষয়বস্তু না। আপনি অনায়াসে হাতিল স্টোরের মডার্ন ফার্নিচার দিয়ে ঘর সাজিয়ে ফেলতে পারেন। যাই হোক, সবকিছু সহজে বুঝতে আমরা আজকের গাইডে মডার্ন ফার্নিচারের সংজ্ঞা, তাদের ধরণ আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো।

মডার্ন ফার্নিচার কি?

উনবিংশ শতাব্দীর পর থেকে শুরু হওয়া সহজ ও মডুলার ডিজাইনের ফার্নিচারকে মডার্ন ফার্নিচার বলে। এধরনের ফার্নিচারের ডিজাইন খুব সাধারণ হলেও দেখতে বেশি আকর্ষণীয় লাগে। পুরনো ধারার রাজকীয় সাজসজ্জা না থাকায় ফার্নিচারগুলো সবরকমের বাড়িতে মানানসই হয়।

এছাড়া মডার্ন ফার্নিচারে অনেকরকম ফাংশনালিটি দেওয়া যায় যা দিয়ে আপনি একাধিক কাজে একই ফার্নিচার ব্যবহার করতে পারবেন অথবা সহজে সরাতে পারবেন।

মডার্ন ফার্নিচার কি কি ধরণের হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সহজে ঘরবাড়ি পুণঃনির্মাণের জন্য মডার্ন হাউজ ও ফার্নিচার তৈরি শুরু হয়েছিল। কম খরচে ডিজাইন করে বাড়ির শোভা বৃদ্ধির কারণে উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সব শ্রেণীর মানুষ এধরণের ফার্নিচার পছন্দ করে। বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহারের জন্য তিন ধরনের ফার্নিচার জনপ্রিয় হয়ঃ ফাংশনাল, ট্রান্জিশনাল ও কমার্শিয়াল মডার্ন ফার্নিচার।

  • ফাংশনাল মডার্ন ফার্নিচারঃ এধরণের ফার্নিচারে দৈনন্দিন জীবনের কাজ সহজ করার জন্য ফাংশনালিটি দেওয়া থাকে। বিভিন্ন অংশ খোলার পর অনেকগুলো ‘এক্সটেন্ডেড পার্ট’ দেখতে পাবেন। সাধারণত কাঠ, প্লাস্টিক ও স্টিল দিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়।
  • ট্রান্জিশনাল মডার্ন ফার্নিচারঃ পুরনো রাজকীয় ডিজাইনের সাথে নতুন ধারণা যোগ করে এরকম ফার্নিচার তৈরি করা হয়। অর্থাৎ সোজা ‘লাইন বেইজড ডিজাইন’-এর পাশাপাশি এতে বাঁকানো ডিজাইনের পা ও রাস্টিক আর্ট দেখা যায়। বাংলোর মত খুব বিলাসবহুল বাসা-বাড়িতে এ ধরনের ফার্নিচার ব্যবহার করা যায়।
  • কমার্শিয়াল মডার্ন ফার্নিচারঃ এই ফার্নিচারগুলো অফিস, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, দোকান ইত্যাদি জায়াগাতে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ফার্নিচারে চকচকে গ্লাস ও প্লাস্টিক সারফেসের ডিজাইন দেখবেন। 

বিস্তারিত জানতে পড়ুন আধুনিক অফিস ফার্নিচার

মডার্ন ফার্নিচারের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

মডার্ন ফার্নিচারের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। হয়তো সব ফার্নিচারে একইসাথে সব বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাবেন না, কিন্তু খেয়াল করলে পুরনো আমলের ফার্নিচারের সাথে বিস্তর তফাত দেখবেন। আমরা এরকম ১০টি প্রধান বৈশিষ্ট্যের তালিকা তৈরি করেছিঃ

১. প্রাথমিক গঠন ও আকার

Office Sofa

মডার্ন ফার্নিচারে বর্গাকার, আয়তাকার ও বৃত্তাকার ডিজাইনে সবকিছু বানানো হয়। দূর থেকে দেখলেই এগুলোর প্রত্যেকটা অংশ ‘মডুলার’ মনে হবে। ফার্নিচারগুলো খুবই অল্প জায়গাতে রাখা যায়। আপনি রুমের মধ্যে অনেকগুলো ফার্নিচার রেখে নিমিষেই দারুণ ‘ইনটেরিয়র ডিজাইন’ করে ফেলতে পারবেন। 

২. মডুলার ফাংশনাল ডিজাইন

 

মডার্ন ফার্নিচারের মডুলার ডিজাইন থাকার কারণে একের বেশি কাজে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ একটা খাটের সাথে ওয়ারড্রোবের মত কেবিনেট বা শেলফ থাকতে পারে অথবা একটা সোফার সাথে স্টাডির জন্য ছোট্ট ডেস্ক লাগানো থাকতে পারে। আবার কিছু রিভলভিং খাট আছে যা ভাজ করলে সোফা হয়ে যাবে। 

এ ধরনের ফার্নিচারের যেকোনো অংশ কাজে না লাগলে বন্ধ করে রাখা যায়। যারা অল্প জিনিসপত্র নিয়ে ‘মিনিমাল লাইফ’ কাটাতে পছন্দ করে তাদের জন্য মডুলার ডিজাইন বেশ উপকারী হয়।

৩. মিনিমাল স্টাইলEasy Chair- Bitsy-106

অনেক সময় বড় ফার্নিচারের হিজিবিজি ডিজাইন কাজের মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। বেশি রাজকীয় ডিজাইন থাকলে দামী ফার্নিচারও সবার সামনে হাসির বস্তুতে পরিণত হয়। সেক্ষেত্রে মডার্ন ফার্নিচারের ডিজাইন সোজা লাইনের মত হয়। তাই অন্যের কাছে কোনোরকম অস্বস্তিকর অনুভূতি হয় না। ফার্নিচারে ‘কার্ভেচার’ কম থাকার কারণে সরানোর সময় চাপ লেগে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। 

৪. প্রাকৃতিক রং ও নকশা

প্রাকৃতিকভাবে আমরা হালকা রঙ ও ছিমছাম জিনিস বেশি পছন্দ করি। মডার্ন ফার্নিচারেও খুব হালকা কালার ব্যবহার করা হয়। অনেক ফার্নিচারে আসল কাঠের মত প্রিন্ট থাকে। তাই আর্টিফিশিয়াল জিনিস দিয়ে তৈরি হলেও দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।

৫. কম ওজন

বাসা বাড়ি পরিবর্তনের সময় ফার্নিচারকে একটা অতিরিক্ত ঝামেলা মনে হয়। বড় বড় খাট, আলমারি ও ওয়ারড্রোব নামাতে অনেক মানুষের প্রয়োজন হয়। সেখানে মডার্ন ফার্নিচারের ওজন কম হবার জন্য একজন বা দুজন মিলে বয়ে নেওয়া যায়।

পুরো ফার্নিচার একসাথে নেওয়া গেলে বিভিন্ন অংশ খুলে বিল্ডিংয়ের নিচে নামানো যায়। এখনকার সোফা থেকে শুরু করে টেবিল সবকিছুই ‘অ্যালেন কী’ দিয়ে খুলতে পারবেন।

৬. আভিজাত্যের ছোঁয়া

কিভাবে ওয়্যারড্রোব এবং ড্রেসারের স্টোরেজ স্পেস বাড়ানো যায়?

একসময় শুধু কাঠ ডিজাইন করে ফার্নিচার বানানো হতো। কিন্তু এখনকার মডার্ন ফার্নিচারে টেম্পার্ড গ্লাস, ফাইবার গ্লাস, প্লাস্টিক, মেটাল সবকিছুর কম্বিনেশন থাকে। তাই দেখতে বেশ সুন্দর ও চকচকে মনে হয়। আবার বিভিন্ন রকম ‘ম্যাটেরিয়েল’ ব্যবহারের জন্য ছোট আকারের ফার্নিচারও বেশ শক্তপোক্ত হয়।

৭. উজ্জ্বল ও মসৃণ পৃষ্ঠ

মডার্ন ফার্নিচারের পৃষ্ঠ অনেক মসৃণ ও মোলায়েম হয় বলে কম ধুলো-ময়লা জমা হয়। কোনো স্টেইন না থাকায় এসব ফার্নিচার পরিষ্কার করাও বেশ সহজ। নিয়মিত মুছলে দীর্ঘদিন ধরে উজ্জ্বল-চকচকে অবস্থায় থাকে। অনেকে কেরোসিন বা স্পিরিটের মত মিনারেল দিয়ে বাসায় বসেই নতুনের মত পোলিশ করে নেয়।

৮. রুমের আকারের সাথে মিল

নির্মাতা কোম্পানিগুলো এমনভাবে মডার্ন ফার্নিচার ডিজাইন করে যেন সবরকম সাইজের ফ্ল্যাটে ব্যবহার করা যায়। ডিজাইন এমন হয় যে ছোট রুমে রাখলেও অন্য ফার্নিচার রাখার মত জায়গা অবশিষ্ট থাকে। আবার বড় রুমে রাখলেও রুম খালি মনে হবে না।

৯. স্থায়ীত্ব

সাধারণ কাঠের ফার্নিচার একটা নির্দিষ্ট সময় পর নষ্ট হওয়া শুরু করে। বিশেষ করে অল্প বয়সী গাছ থেকে বানানো জিনিস খুব দ্রুত পোঁকা-মাকড়ের আক্রমণের শিকার হয়। অপরদিকে মডার্ন ফার্নিচারকে কোনো পোঁকা-মাকড় আক্রমণ করতে পারে না।

শুকনো স্থানে নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে কাঠে কোনো ধরণের সমস্যা হয় না। শুধুমাত্র সরাসরি বাতাসের আর্দ্রতা ও বৃষ্টির পানি থেকে দূরে রাখতে হবে।

১০. প্রযুক্তির সমন্বয়

Modern furniture style

বর্তমান সময়ের ফার্নিচারগুলো স্মার্ট হোমের উপযোগী করে বানানো হয়। বিভিন্ন ফার্নিচারের নিচে ইলেক্ট্রিক সকেট, ক্যাবলস, ওয়ারলেস চার্জার, রুমবট ও ইন্টারনেটের ইকুইপমেন্ট রাখার কমপার্টমেন্ট থাকে।

তাই সহজেই স্মার্ট গ্যাজেট কানেক্ট করে রাখা যায়। অনেক ফার্নিচারে অটোমেটিক সিস্টেমে হাইট বাড়ানো কমানোর ব্যাবস্থা থাকে। কিছু ফার্নিচারে মোটোরাইজড চাকাও লাগানো থাকে।

কিভাবে মডার্ন ফার্নিচার কিনবেন?

হাতিল-এর স্টোরে নানারকম ডিজাইনের মডার্ন ফার্নিচার রয়েছে। এখানে কম বাজেটের ব্যাসিক জিনিসও পাবেন, বেশি বাজেটের প্রিমিয়াম জিনিসও পাবেন। দেখে পছন্দ হবার পর স্টোর থেকে ডেলিভারি নিতে পারবেন। আর স্টোরে না আসতে চাইলে বাসায় বসে অর্ডার করে হোম ডেলিভারি নিতে পারবেন।

প্রত্যেকটা প্রোডাক্টের পেইজে রুমের পরিবেশে কেমন দেখাবে তার থ্রিডি ইলাস্ট্রেশন দেওয়া আছে। তাই আপনার বাসায় মানাবে কিনা সেটা কেনার আগেই যাচাই করার সুযোগ রযেছে। আর সাথে ওয়ারেন্টি সুবিধা তো আছেই।

মডার্ন ফার্নিচার নিয়ে কিছু বহুল আলোচিত প্রশ্ন-উত্তরঃ

‘হাই কোয়ালিটি মডার্ন ফার্নিচার’ কি?

প্লাইউড-সহ মেহগনি, সেগণ, ব্লীচ, ওক, ওয়ালনাট ইত্যাদি কাঠের তৈরি ফার্নিচারগুলোকে হাই কোয়ালিটি ফার্নিচারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব কাঠের ফার্নিচার অনেকদিন স্থায়ী হয়। আবার এগুলোকে কেটে বিভিন্ন রকম শেপ দেওয়া যায়। তাই ছোট মডুলার ডিজাইন করার পরও ফার্নিচার শক্ত ও মজবুত থাকে।

মডার্ন ফার্নিচার কোথায় ব্যবহার করা যায়?

মডার্ন ফার্নিচারগুলো বাসা বাড়ি থেকে শুরু করে অফিস, রেস্টুরেন্ট-সহ সবখানেই ব্যবহার করতে পারবেন। ফাংশনাল, কমার্শিয়াল ও ট্রান্জিশনাল এই তিন ধরনের ফার্নিচার থেকে আপনাকে প্রয়োজন অনুযায়ী ফার্নিচার বাছাই করে নিতে হবে। ফার্নিচার স্টোরের সেলস পার্সন আপনাকে সকল ধরণের তথ্য জানিয়ে সহায়তা করবে। এছাড়া হাতিলের ওয়েবসাইটে গিয়েও বিভিন্ন প্রোডাক্টের ছবিসহ বর্ণনা পাবেন।

মডার্ন ফার্নিচারের সাথে ট্রাডিশনাল ফার্নিচারের পার্থক্য কি?

মডার্ন ফার্নিচারে মিনিমাল ডিজাইনের মধ্যে বিভিন্ন রকম ফাংশনালিটি থাকে। কিন্তু ট্রাডিশনাল ফার্নিচারে কাঠের কারুকার্য বেশি থাকে। আবার মডার্ন ফার্নিচারের বিভিন্ন অংশ সহজে পরিবর্তন করা গেলেও ট্রাডিশনাল ফার্নিচারে কিছু পাল্টানো কঠিন হয়। মডার্ন ও ট্রাডিশনাল ফার্নিচারের সবচেয়ে বড় পার্থক্য ‘এপিয়ারেন্সে’, কারণ মডার্ন ফার্নিচার সবধরনের বাসা বাড়িতে মানানসই হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।