অল্প খরচেই দেয়াল সাজানোর পাঁচটি হ্যাকস

ফারিয়া আর মিঠুন নতুন দম্পতি। বিয়ের পর নতুন বাসায় উঠেছে তারা। নতুন বাসায় কোথায় কী থাকবে, কীভাবে সাজাবে বাসাটা, তা নিয়েই দুজনের পরিকল্পনার শেষ নেই। কিন্তু আসবাব ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পর সাজসজ্জার খরচটা তাদের বাজেটের বাইরে চলে গেল। তাদের বাসার দেয়ালগুলোর কথাই ধরুন। নতুন বাসায় দেয়ালগুলোর সাজসজ্জার জন্য প্রচলিত ব্যবস্থাগুলো তাদের সামর্থ্যের বাইরে ছিল। দেয়ালে দামি রঙের ডিজাইন কিংবা ওয়ালশেলফ কেনার খরচ তাদের বাজেটের বাইরে। কিন্তু বাসার প্রতিটা খালি দেয়াল সাজানোর এত সব দারুণ উপায় ফারিয়া বের করেছে যে, এই ধরনের কোনো কিছুর আর প্রয়োজনই হয়নি। ফারিয়া বাসা সাজিয়েছে, আর স্ত্রীর প্রতি মিঠুনের মুগ্ধতা নতুন করে শুধু বেড়েছে। 

দেয়াল সাজানোর কী কী উপায় বের করেছিল ফারিয়া? চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

দেয়ালে স্মৃতির ছায়া

প্রিয় ছবিগুলো স্মৃতি হিসেবে ফ্রেম করে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন

ফারিয়ার মনে হয়েছিল, ছবি শুধু মোবাইলের গ্যালারিতে পড়ে থাকার জিনিস নয়। ঘরে ঢুকতেই যে ফাঁকা দেয়ালটি চোখে পড়ে সেখানে একটা ফটো গ্যালারি বানিয়ে ফেললে মন্দ হয় না। তাতে অভ্যাগতদের স্বাগত জানানোর ধরনেও বেশ নিজস্বতা আসবে, আবার ঘরের সাজেও আসবে ভিন্নতা। 

ফারিয়ার মতো আপনিও নিজের বাসাতেই দেয়ালবন্দী করতে পারেন প্রিয় মানুষের সাথে প্রিয় স্মৃতিগুলোকে। এতে আপনার বাসার সাজসজ্জায় পুরোনো স্মৃতি ও মায়ার ছায়া যেমন থাকবে, তেমনি ছবিতে আটকে থাকা সুখস্মৃতিগুলো আপনার খারাপ সময়েও হয়ে উঠবে প্রেরণার উৎস। 

দেয়ালে ছবির গ্যালারি সাজানোর নানা ধরনের পন্থা আছে। চাইলে ছবিগুলো ফ্রেম করিয়ে দেয়ালে ঝোলাতে পারেন। চাইলে মিনিমাল ধাঁচে ছবি শুধু প্রিন্ট করিয়েও ক্লিপ দিয়ে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। আবার, অনেকগুলো ছবির গ্যালারি না বানিয়ে পুরো দেয়ালজুড়ে একটি বড় ছবিও লাগিয়ে দিতে পারেন।

নকশিকাঁথায় রুচির ছোঁয়া

দেয়ালে নকশিকাঁথা পুরো ঘরের শৈলী পাল্টে দিতে পারে। এতে ঘরের সাজে আসবে দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া। সেই সাথে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশেও কিন্তু এটি দারুণ এক উপায়। যারা দেশি সংস্কৃতিকে অন্তরে ধারণ করেন, তাদের ঘরে এমন ভিন্নধর্মী সজ্জাশৈলী তো থাকতেই পারে। চাইলে নকশিকাঁথার জায়গায় নানা ধরনের দেশি মোটিফের কাঁথা অথবা বিছানার চাদরও কেটে ব্যবহার করতে পারেন। ইংরেজিতে এগুলোকে ‘Quilt’ বলা হয়। বাংলায় বলা হয় রজত কিংবা রেজাই। এগুলো সাধারণত নকশিকাঁথার চেয়ে কম দামেই পাওয়া যায়। রেজাই হোক অথবা নকশিকাঁথা, একটি বাঁশের সাহায্যে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিন দেয়ালে, চোখ জুড়িয়ে যাবে। 

আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন    

কিংবদন্তি শিল্পী মাহমুদুন্নবীর এই বিখ্যাত গান আপনার বাড়ির সজ্জার অংশ হয়ে উঠতে পারে। রকমারি আয়না দিয়ে ভরিয়ে তুলতে পারেন একটি পুরো দেয়ালকে। হোম ডেকরের দোকানগুলোতে নানা ডিজাইনের আয়না পাওয়া যায়। সেখান থেকে আপনার বাড়ির সজ্জার সাথে মানিয়ে যাবে, এমন যেকোনো আয়না পছন্দ করতে পারেন।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব বড় আয়নার দাম অনেক বেশি হয়। খরচ যদি আপনার বাজেটের বাইরে চলে যায়, তবে নিজস্ব পদ্ধতিতেই আয়না দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন বাসার যেকোনো একটি দেয়াল। অনেকগুলো পুরোনো আয়না দিয়ে নানা প্যাটার্নে দেয়াল সাজিয়ে তোলা যেতে পারে। এতে বাসা একেবারেই অন্য রকম একটি রূপে দেখা যাবে। এইভাবে দেয়াল সাজাতে একদমই খরচ হবে না। বরং, আপনার পরিবার কিংবা বন্ধু-পরিজনের বাসা থেকেও পুরোনো আয়না সংগ্রহ করে দেয়াল সাজাতে পারেন। 

ওয়াল হ্যাঙ্গারে সাশ্রয়

সাজসজ্জার দিকে মন না দিয়ে দেয়ালকে শুধু যদি প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার করতে চান, তবে ওয়াল হ্যাঙ্গার আপনার পছন্দ হতে পারে। বাসার একেক ঘরে ওয়াল হ্যাঙ্গারের একেক রকম ব্যবহার। যেমন, ডাইনিং রুম কিংবা বাসার লবির দেয়ালে হ্যাঙ্গার সাধারণত চাবি, ছাতা কিংবা বাইরে বের হওয়ার সময় প্রয়োজন পড়ে এমন সব বস্তু রাখা হয়। আবার, বেডরুমের ওয়াল হ্যাঙ্গার ব্যবহৃত জামাকাপড় গুছিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়াল হ্যাঙ্গার নানাভাবে ব্যবহার করতে পারেন। 

নিজ হাতেই অ্যাকসেন্ট ওয়াল

পুরো সাদা রঙের দেয়ালের ভিড়ে একটি দেয়ালকে ভিন্ন রং দিয়ে তৈরি করতে পারেন অ্যাকসেন্ট ওয়াল

ফারিয়ার স্বামী মিঠুনের শখ ছিল নতুন বাসায় একটা অ্যাকসেন্ট ওয়াল রাখবেন। কিন্তু ইন্টেরিয়র ডিজাইনার দিয়ে অ্যাকসেন্ট ওয়াল বানানোর খরচ বাজেটের বাইরে চলে যাবে বলে সেই চিন্তা বাদ দিয়েছিল। কিন্তু ফারিয়া দারুণ এক উপায় বের করল। কয়েকটা রঙের কৌটা কিনে তাদের পছন্দের ভ্যান গগের ‘স্টারি নাইট’ চিত্রকর্মটির আদলে একটি দেয়াল রং করে নিল।
ফারিয়ার মতো আপনিও ঘরের একটি দেয়ালকে রাঙিয়ে নিতে পারেন নিজের মতো করে। আঁকতে পারেন দেশি আলপনা অথবা জ্যামিতিক নকশা। কিংবা সমস্ত সাদা রঙের দেয়ালের ভিড়ে একটি দেয়ালকে করে ফেলতে পারেন টুকটুকে লাল, কমলা বা হলুদ রং। এ ছাড়া অ্যাকসেন্ট ওয়াল তৈরি করতে দারুণ একটি ওয়ালপেপারও ব্যবহার করতে পারেন। এটি সাশ্রয়ী ও ব্যবহারে সুবিধাজনক। 

 

অনেক ভেবে দেয়াল সাজানোর নানা উপায় বের করেছিল ফারিয়া। চাইলে আরো নানা সৃষ্টিশীল উপায়ে দেয়াল সাজানো যেতে পারে। অল্প খরচে দেয়াল সাজানোর আর কী কী পদ্ধতি আপনার মাথায় ঘুরছে, তা এখনই জানিয়ে দিন আমাদের। 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।