কাজ হোক বা ব্যক্তিগত জীবন౼সব ক্ষেত্রেই আশপাশের পরিবেশ আমাদের ব্যবহারের ওপর প্রভাব ফেলে। অফিস এমন এক জায়গা যেখানে ইচ্ছা-অনিচ্ছানির্বিশেষে দিনের বড় একটা অংশ কাটিয়ে দিতে হয়। ৮-৯ ঘণ্টা যেখানে কাটাচ্ছি প্রতিদিন, সেখানের পরিবেশটা অবশ্যই ভালো হওয়া চাই। শুধু মনের শান্তিই নয়, গবেষণা করে দেখা গেছে কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা ও কাজ করার ইচ্ছা অনেকটাই প্রভাবিত হয় অফিস স্পেসের পরিবেশ থেকে। তাই অফিস বড় হোক বা ছোট, ঘরে বা বাইরে౼এই অফিসের আবহাওয়াই হতে পারে আপনার কর্মস্পৃহা বাড়ানোর সবচেয়ে বড় উপাদান । একটা সুস্থ সুন্দর অফিস পরিবেশ না পেলে, সেটা হয়ে উঠবে বাড়তি উদ্বেগের কারণ । চিন্তাশীল ডিজাইন, সঠিক ফার্নিচার যাচাই এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে স্বস্তি ও অনুপ্রেরণার কথা মাথায় রাখলে, অবশ্যই অফিসের পরিবেশ হতে পারে আপনার লক্ষ্য অর্জনের অনন্য প্রেরণা। কিছু সহজ-সরল ঘর সাজানোর কৌশল অবলম্বন করেই অফিস স্পেসটাকে বানিয়ে নেওয়া যায় মনের মতো। ডিজাইনটা অবশ্যই এমন হওয়া উচিত, যা আপনাকে করবে উদ্যমী, পরিশ্রমী এবং সৃজনশীল। সব ধরনের অফিসের কথা মাথায় রেখে আমরা খুঁজে এনেছি এমন কয়েকটি কৌশল, যা নিমেষেই বদলে দেবে আপনার অফিসের আবহাওয়া। হাসিখুশি সুস্থ জীবনের দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এই কয়টি কৌশল অবলম্বনেই পেয়ে যাবেন উপযুক্ত কাজ করার জায়গা।
অফিসের সাজসজ্জায় ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন এনে কর্মস্পৃহা বাড়ানো যেতে পারে
যথাযথ আলোর সুব্যবস্থা
অফিসের জায়গাটা হওয়া উচিত খোলামেলা। শহরের অফিসগুলোতে প্রায়ই বেশি বড় জায়গা পাওয়া সম্ভব হয় না, সেই ক্ষেত্রে বড় জানালা বা বারান্দা, যাতে কর্মচারীদের হাতের নাগালে থাকে এটা নিশ্চিত করলে ভালো হয়। অধিক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অফিসের জায়গাটায় সারা দিন এসি চলে, যার ফলে বাইরের বাতাস আসা-যাওয়া সম্ভব হয় না। এর কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি, দিনটা অনেকটা মলিন হয়ে যায়। তাই খোলামেলা, আলো-বাতাসে ভরপুর অফিস সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এটা সম্ভব না হলেও, অফিসের ভেতরেই যাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। প্রাকৃতিক সূর্যের আলো না পাওয়া গেলেও শক্তিশালী বাল্বের উজ্জ্বল সাদা আলো একটি ভালো বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। অল্প আলোতে কম্পিউটার স্ক্রিন দেখা কিংবা ফাইলপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করা, কোনোটাই খুব একটা সুবিধাজনক নয়। অফিসঘরে জানালা থাকলে সেটা বন্ধ না রেখে মাঝে মাঝে খোলা রাখা উচিত, এবং আলো যাতে ঠিকমতো ঘরের ভেতরে পর্যন্ত আসতে পারে সেটা খেয়াল রাখা উচিত। অফিসের সবার কর্মশক্তি বাড়ানোর জন্য ঠিকঠাক আলোর ব্যবস্থাটা একেবারেই অপরিহার্য।
মিনিমালিজমের আওতায় আসুন
বর্তমানে ঘর সাজানোর নতুন ট্রেন্ড মিনিমালিজম। মিনিমালিজম ঘর সাজানোর এমন একটা পদ্ধতিকে বোঝায়, যেখানে সর্বনিম্ন পরিমাণের আসবাব ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা হয়। এই পদ্ধতির মতে, সরলতাই সৌন্দর্য। অফিসের সাজের জন্য মিনিমালিজম একদম উপযুক্ত স্টাইল। কাজের জায়গায় বিশৃঙ্খলা এবং বাড়তি আসবাব যত কম থাকে, তত ভালো। ছিমছাম সুন্দর অফিসে কাজ করাও বেশ সহজ হয়ে ওঠে। অফিসের চাপ এমনিতেই সামলানো কঠিন, তার ওপরে যদি ডেস্ক এবং অফিস স্পেসের গোলমাল যোগ হয়, তাহলে অভিভূত অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। তাই মিনিমালিজমের মূলনীতি অনুসরণ করে অফিসের জায়গাটা করে নেওয়া দরকার বিশৃঙ্খলামুক্ত। একটু খেয়াল করে দেখলেই পাওয়া যায় অসংখ্য প্রয়োজনীয় জিনিস, যা মাসের পর মাস অব্যবহৃত পড়ে আছে। এই সমস্যার সমাধান মিনিমালিজম। এই কাজটি শুরু করতে হবে সবকিছু সহজ-সরল করার মাধ্যমে। অতিরিক্ত আসবাব অনেক সময়ই অন্যমনস্কতার কারণ হয়ে ওঠে, তাই অতিরিক্ত জিনিসগুলো প্রথমেই বাতিলের খাতায় ফেলতে হবে। বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী ফার্নিচার ব্যবহার করা মিনিমালিজমের মধ্যেই পড়ে। কারণ, এর মাধ্যমে আসবাবের সংখ্যা কমে এবং কার্যকারিতা বাড়ে।
অফিস স্পেসে রঙের ছোঁয়া
অফিস মানেই একঘেয়ে, বিরক্তিকর এবং ধূসর౼এই চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে আসা সময়ের প্রয়োজন। সামান্য রঙের ছোঁয়াই গোটা অফিসের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট । তাই রঙের ব্যবহার করা উচিত বাধাবন্ধহীন উচ্ছ্বাসে । বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা থেকেই পাওয়া যায়, উজ্জ্বল রং মানুষের মেজাজ এবং ব্যবহারের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে নীলাভ রং মস্তিষ্ককে উদ্দীপনা জোগায়, হলুদ বাড়ায় কল্পনাশক্তি এবং সবুজের কল্যাণে মনের ভার হালকা হয়। তবে অবশ্যই মানুষে মানুষে এই অনুভূতির পরিবর্তন হতে পারে। তাই ব্যক্তিগতভাবে যেসব রং পছন্দ সেগুলো দিয়েও রাঙিয়ে তোলা যায় অফিসের জায়গাটি। শুধু ওয়ালের ক্ষেত্রেই রং প্রযোজ্য নয়, রঙিন ক্যানভাস, পোস্টের, শখের ছবি, আসবাবপত্র ইত্যাদি দিয়ে অফিস সাজানো উচিত। ফার্নিচারের ক্ষেত্রে হাতিলের accent চেয়ার লোপেজ -১১৯ কিংবা ফিক্সড চেয়ার সোপ্রানো-১৫০ রঙিন হলেও, যেকোনো অফিসের মাঝে খাপ খেয়ে যাবে অনায়াসে। তাই গতানুগতিক অফিসের ফার্নিচারের থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী ডিজাইনে বিনিয়োগ করলে তা অফিসের মনোবল বাড়াতে সহযোগী হবে বলেই মেনে নেওয়া যায়।
সবুজে সবুজে প্রাণবন্ত
মানুষ প্রাকৃতিক জীব, তাই প্রকৃতি থেকে বেশিক্ষণ বিচ্ছিন্ন থাকলে জীবনে বিভিন্ন ভোগান্তির সূত্রপাত দেখা দেয়। অফিস স্পেসে এই সমস্যার সমাধান করা অবশ্য বেশ সহজ। অফিস রুমের কোনায় কোনায়, ডেস্কে বা টেবিলে, ছোট ওয়াল শেলফের ওপর౼যেকোনো জায়গায়ই যোগ করে দেওয়া যায় ছোট-বড়-মাঝারি আকারের গাছ। অফিস রুমের ভেতরে গাছের ব্যবহার শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রেই উপযোগী না। বদ্ধ পরিসরের মাঝে গাছপালা থাকলে তা আশপাশের বাতাসকে শুদ্ধ করার কাজটাও করে। তা ছাড়া অফিস ডেকর নিজের মতো করে ওলট-পালট করার বেশ কিছু অপশন পাওয়া যায় গাছের টব যোগ করে। আগেই বলা হয়েছে, গবেষণা থেকে জানা যায় সবুজ রং মনে প্রশান্তির উদ্রেক ঘটায়। সেই হিসাবে কয়েকটা সুন্দর সবুজে ভরা গাছ যদি পাওয়া যায় অফিসের ভেতরেই, তবে মন ভালো না থেকে উপায় নেই। শুধু গাছই নয়, গাছের টব এবং ভেস বিভিন্ন সুন্দর ও অভিজাত ডিজাইনে পাওয়া যায় আজকাল। এগুলো অফিসের একরকমের অলংকার হিসেবে কাজ করতে পারে।
কার্যকর ও নান্দনিক স্টোরেজ ব্যবস্থা
কাজ করার সবচেয়ে বড় শত্রু সম্ভবত বিশৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের জায়গা। অগোছালো ডেস্ক, ছড়ানো-ছিটানো ফাইলপত্র౼এগুলো দেখলেই কাজ করার ইচ্ছেটা মাঠে মরে যায়। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, ছিমছাম একটা ডেস্ক, ফাইলগুলো ফাইলের জায়গায়, রং-বেরঙের কলমগুলো কলমদানিতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দাগহীন একটা ঘর౼চিন্তা করলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়। অফিসের সাজসজ্জার মাঝে ছোট ছোট ফ্যাশনেবল স্টোরেজ বাক্সগুলো কাজ করতে পারে একরকমের আসবাবপত্র হিসেবে। লেখালেখির জিনিস, প্রসেসিংয়ের আগের এবং পরের দাপ্তরিক কাগজপত্র, প্রয়োজনীয় অফিস স্টেশনারি ইত্যাদি সব আলাদা বাক্সে থাকলে খুঁজে বের করাটা হয়ে যায় একেবারেই সহজ। আলাদা আলাদা স্টোরেজ বক্স ব্যবহারের থেকে, যদি এমন ফার্নিচারই পাওয়া যায় যেটায় পর্যাপ্ত স্টোরেজ ব্যবস্থা আছে, তাহলে তো আর কথাই নেই। এ ক্ষেত্রে হাতিলের মাল্টিপারপাস শেলফ সুজান-১১৩ একটি চমৎকার আসবাব। অফিসের সমন্বিত ফার্নিচারগুলোর মধ্যে এমন একটি আসবাব আসলেই দরকার, যাতে সব রকমের ফাইল, কাগজপত্র ও যাবতীয় স্টেশনারি রেখে দেওয়া যায়। অফিসের সামগ্রিক চেহারা বদলানোর পাশাপাশি সুজান-১১৩-এর ব্যবহার বহুমুখী। এটি পুরো অফিসকেই আরও পূর্ণাঙ্গ একটা ভাব দেবে, যা আগে সম্ভব হতো না।
এই সহজ কৌশলগুলোর বৈশিষ্ট্য এখানেই যে, ছোট হোক বা বড়౼যেকোনো অফিসেকেই এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে পুনরায় সাজানো সম্ভব। দেরি না করে নিজের অফিস স্পেসটিকে প্রাণবন্ত ও কর্মশক্তিতে উজ্জীবিত করে ফেলুন আজই।