মিটিং আপনার দৈনন্দিন কর্পোরেট জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এগুলি যেকোনও সময়ে, যেকোনও জায়গাতে ঝটপট সেরে ফেলা যেতে পারে। অন্যদিকে, একটি কনফারেন্স সাধারণত আনুষ্ঠানিক হয়, এর একটি এজেন্ডা এবং অ্যাকশন ফ্লো থাকে। তবে মিটিং এলোমেলোভাবে করা গেলেও কিছুটা প্রস্তুতি নিতে দোষ কী? নিজেদের অফিসের মিটিং-এর জন্যই হোক আর আনুষ্ঠানিক কনফারেন্সের জন্যই হোক, আপনার অফিসে একটি পরিপাটি কনফারেন্স রুম বা মিটিং রুম থাকা উচিত।
আপনার অফিসের কনফারেন্স রুম একই সাথে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় ধরনের বৈঠকের পাশাপাশি টিম মেম্বারদের ভেতর আলোচনা এবং ব্রেইনস্টরম-এর জন্য সহজেই ব্যবহার করা যাবে।
আজকের আলোচনায় আমরা অফিসে কনফারেন্স রুম গোছানোর মূল বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলবো।
১. স্থান:
মিটিং মানেই কিছু মানুষ জমায়েত হবে। সুতরাং আপনার মনে রাখা উচিত যে, একটি কনফারেন্স রুমে কিছুটা বেশি জায়গা প্রয়োজন। একটি সাধারণ মিটিং রুমে কোনো ঝামেলা বা চেয়ার নিয়ে টানাহেঁচড়া ছাড়াই কমপক্ষে ৮ জনের বসার জায়গা থাকা উচিত। সুতরাং তাই কনফারেন্স রুমের জন্য আপনার অফিসে সবচেয়ে বড় কামরাটি আলাদা করুন। মনে রাখবেন, আমরা চাই যে অংশগ্রহণকারীরা কোনও সমস্যা ছাড়াই টেবিল এবং চেয়ারগুলির আশেপাশে যেন চলাচল করতে পারে। ঠিক সে কারণেই এই ঘরটি বড়সড় হলে ভালো।
২. লাইটিং:
আলোর ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাকৃতিক আলো পেলে সবচেয়ে ভালো। একটি দেয়াল বরাবর গোটা দুই জানালা থাকলেই প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা হয়ে যায়। যদি কোনও কারণে প্রাকৃতিক আলো ব্যবস্থাপনযোগ্য না হয়, তবে আমাদের কৃত্রিম আলোর কথা চিন্তা করতে হবে। ঘরটি উজ্জ্বলভাবে আলোকিত করার জন্য পর্যাপ্ত লাইটিং নিশ্চিত করুন। লাইটিং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য আপনি ওয়ালওয়াশার বা স্পটলাইটগুলি পরখ করে দেখতে পারেন তবে লাইটগুলির জন্য একটি সহজ কন্ট্রোল সিস্টেম যেন থাকে সেটি নিশ্চিত করে নিন ফলে আপনি সহজেই এগুলি ব্যবহার করতে পারবেন। প্রেজেন্টেশন চলাকালীন সময়েও এতে সুবিধা দেবে।
৩. শব্দ নিয়ন্ত্রণ:
একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন আর এমন সময় বাইরেরে শব্দ এসে বিরক্ত করছে! আমরা সবাই জানি যে, কথা বলার সময় কথার খেই হারিয়ে গেলে আবার সেটিকে প্রেজেন্টেশনে উপস্থাপন করা বা সেটির ছন্দ ফিরে পাওয়া বেশ শক্ত হতে পারে। অনেকসময় দেখা যায় এভাবে ডিস্ট্র্যাক্টেড হওয়ার কারণে প্রেজেন্টেশনের মাঝে অনেকেই তাদের মূল পয়েন্টগুলি ভুলে যায়। তাই আপনার কনফারেন্স রুমটিকে সাউন্ডপ্রুফ করে তৈরি করার পরামর্শ রইলো। গোপনীয় বৈঠকের ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাইভেসি পয়েন্ট হতে পারে।
৪. কনফারেন্স টেবিল:
একটি মিটিং রুমে একটি কনফারেন্স টেবিলের প্রয়োজন সবথেকে বেশি। প্রশ্ন সেখানে নয়, প্রশ্নটি হচ্ছে – আপনি কোন ধরণের টেবিল চান বা কোন টেবিলটি থাকা উচিত? কেবল ম্যানেজমেন্ট-এর জন্য মাঝখানে ফাঁকা জায়গাসহ কিছু টেবিল রয়েছে আবার কিছু টেবিল রয়েছে যেগুলির প্লেইন ডেস্কটপ রয়েছে। তাদের উভয়েরই সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে এবং আমরা সেগুলো ভবিষ্যতের ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করব। ততক্ষণ চাইলে আপনি আমাদের সুবিশাল কালেকশন দেখতে এখানে ব্রাউজ করুন।
৫.মুভেবল চেয়ার:
আমাদের কালেকশনের কনফারেন্স টেবিলের সেটগুলোতে টেবিলে এর সাথেই মুভেবল চেয়ার সেট হিসাবে সাজানো থাকে। কেন? কারণ আপনার কনফারেন্স রুমে সর্বদা মোবাইল চেয়ার থাকা উচিত। একটি পরিস্থিতি কল্পনা করুন – আপনি আপনার কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট নিয়ে একটি জটিল চার্ট প্রেজেন্ট করছেন। আপনার সহকর্মীদের একজনকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফোন কলের কারণে টেবিল থেকে উঠতে হবে। তিনি ওঠার সময় কর্কশ শব্দের সাথে চেয়ার ঠেলে সরিয়ে বের হবেন – এটি সত্যিই বিরক্তিকর। এটি কেবল আপনাকে বিরক্ত করে না, আপনার শ্রোতাদেরও বিভ্রান্ত করে। সেটি কখনোই কাম্য নয়। একটি মুভেবল চেয়ার আপনাকে চুপচাপ এবং শব্দ ছাড়াই চেয়ার সরানোর সুযোগ দেয়। এগুলো আরামদায়ক ও বটে। আর বারবার আমরা যে কথা বলি – ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের সময় আরাম এবং স্বাচ্ছন্দ সর্বদাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত।
৬. হোয়াইট বোর্ড এবং স্ক্রিন:
কনফারেন্স রুমে একটি হোয়াইট বোর্ড থাকা উচিৎ। এটি আলোচনার সময় আপনার আইডিয়াগুলোকে সতীর্থদের কাছে ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি রাফ আইডিয়াগুলো নিয়ে স্ক্রিবল করে প্ল্যান করার মত সুযোগ করে দেবে। বোর্ডের পাশাপাশি বা রুমের অপর প্রান্তে দেয়াল ঘেঁষে একটি স্ক্রিন স্থাপন করা যেতে পারে; অথবা অন্য কোনো স্থানে যেখানে এটি সহজেই দেখা যাবে এবং কাজ করার সুবিধা হবে। আজকাল একটি স্ক্রিন একটি কনফারেন্স রুমের জন্য একটি আবশ্যক বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আপনি নিজের স্লাইডগুলি প্রেজেন্ট করতে বা স্ক্রিনের মাধ্যমে আপনার ফোন থেকে একটি স্ন্যাপশট দেখাতে সহজেই একটি প্রজেক্টর ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে কী ধরণের স্ক্রিন থাকবে সেটি আপনার প্রয়োজনীয়তা এবং বাজেটের উপর নির্ভর করবে; তবে আপনার কনফারেন্স রুমের প্রথম জিনিসগুলির মধ্যে একটি হিসাবে একে বিবেচনা করা উচিত।
৭. স্টোরেজ স্পেস:
একটি কনফারেন্স রুমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো ফার্নিচার থাকা উচিত নয়, তবে একটি ছোট স্টোরেজ ইউনিট অবশ্যই অতিরিক্ত নয়; বরং আমাদের চোখে প্রয়োজনীয়ই বটে। আপনি ফাইল এবং হ্যান্ডআউটগুলি সুরক্ষিত এবং সাজিয়ে রাখার জন্য কোন জায়গা চান বা আপনার মিটিং-এর জন্য নোটপ্যাড এবং অন্যান্য অফিস সাপ্লাই হাতের কাছেই রাখতে চান? কনফারেন্স রুমে একটি ছোট স্টোরেজ স্পেস এক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। একটি বিশাল ক্যাবিনেট দিয়ে বেশি জায়গা দখল করার চেয়ে একটি মিনি ক্যাবিনেটই বেটার অপশন। মোবিলিটির জন্য, মোবাইল ড্রয়ার ইউনিটগুলিও ব্যবহার করতে পারেন।
৮. অন্যান্য:
বেসিক বিষয়গুলি যেহেতু আলোচনা করা হয়েছে, সেহেতু কিছু অ্যাড-অন নিয়েও ভেবে দেখা যেতে পারে। আপনার কাছে মনে হতে পারে আপনার দীর্ঘ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটি পোডিয়ামের প্রয়োজন, অথবা আপনি একটি সোফা বা কয়েকটি অতিরিক্ত চেয়ার স্থাপন করে অতিরিক্ত বসার ব্যবস্থা রাখতে চান। আপনার প্রয়োজনীয়তাগুলি কী তা আপনিই ভালো জানেন এবং আপনার কনফারেন্স রুমটি সেট-আপ করার সময় আপনার সেগুলির কথাই মাথায় রাখা উচিত। কনফারেন্স রুমে কোন গ্যাজেট রাখলে সেগুলোর এক্সেসরিজ এবং ব্যাকআপ রাখার চেষ্টা করুন।
আজকের ব্লগ পড়ে মনে হতে পারে যে, একটি কনফারেন্স রুম সাজানোর জন্য খুব কমই উপায় আছে তবে সত্যি কথা হলো – আপনি কনফারেন্স রুমের সেটআপেও নিজের স্বাদ এবং সৃজনশীলতা যোগ করতে পারেন। আমরা আগামী দিনগুলিতে সেগুলো নিয়ে আরও বিশদে আলোচনা করব। ততক্ষণ, HATIL এর সাথেই থাকুন এবং আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাদের অফিস ফার্নিচারের বিশাল কালেকশনটি একবার ব্রাউজ করে দেখুন।