বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ যিনি, সেই জেফ বেজোস শুরুতে ছিলেন একটি অনলাইন বইয়ের দোকানের মালিক। বুকশপের নাম অ্যামাজন। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস কাজ শুরু করেছিলেন তার বন্ধুর গ্যারেজে। শোনা যায়, তারা নাকি অ্যাপেলের নামটাও কাজ করার সময় একটি আধখাওয়া আপেলের থেকে নিয়েছেন। সে কারণেই অ্যাপলের লোগোতে একটি আধখাওয়া আপেলের ছবি দেখা যায়। মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক ছিল নেহাতই তার হার্ভার্ডের সহপাঠীদের সাথে মজা করার উদ্দেশ্যে শুরু করা একটি প্রকল্প। এই গল্পগুলো আমাদের সবারই কম বেশি জানা। খুব অল্প থেকে শুরু করা এই কোম্পানিগুলোই এখন বিশ্ব শাসন করছে। করছে, কারণ কিছু অদ্ভুত পাগলাটে তরুণ নিজেদেরকে উদ্যোক্তা ডাকার সাহস পেয়েছিলেন।
স্টার্টআপ বলতেই আমাদের মাথায় কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের কথা চলে আসে। যেই তরুণেরা সারা পৃথিবী পাল্টে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন। স্টার্টআপ অফিসগুলোতেও সেই স্বপ্নের প্রতিফলন দেখা যায়। সফল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে এমন স্টার্টআপগুলোর অফিসে পা দিলেই যেন সব বাধা পেরিয়ে যাওয়ার মতো দুর্নিবার সাহস এবং সব নিয়ম নতুন করে লেখার মতো আত্মবিশ্বাস টের পাওয়া যায়।
নতুন উদ্যোক্তাদের অনেকেই অফিস সাজানোর খুটিনাটি সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানেন না। আজকের আমাদের ব্লগ তাই তাদের জন্যেই। একটি স্টার্টআপ অফিস সাজানোর সময় কী কী মাথায় রাখা উচিত, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
বদলের জন্য প্রস্তুত থাকুন
নতুন অফিস গোছানোর সময় মাথায় রাখতে হবে, এটি একটি স্টার্টআপ। খুবই অল্প সময়ে এটি বিশাল বড় কোনো কোম্পানি হয়ে যেতে পারে। আবার কোনো কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়। তাই অফিস স্পেস কিংবা অফিস ফার্নিচার পছন্দের সময়ে যেকোনো ধরণের বদলের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সে জন্যই, স্টার্টআপ অফিসে এমন সব ফার্নিচারই পছন্দ করা ভালো, যেগুলো প্রয়োজনের সময় খুব তাড়াতাড়ি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করা যায়। হাল্কা, স্মার্ট ফিট, মাল্টিপারপাস অফিস ফার্নিচার এ ক্ষেত্রে সমাধান হয়ে দেখা দিতে পারে। যেমন, বড় বড় ডেস্কের বদলে শুরুতে অফিসে সিঙ্গেল ডেস্ক ব্যবহার করতে পারেন। সুইভেল চেয়ার এবং পোর্টেবল স্টোরেজ ইউনিটগুলোও স্টার্টআপ অফিসের জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
অফিসের ফার্নিচার কেনার সময় যেকোনো ধরণের পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে
সহকর্মীদের প্রয়োজনের দিকে নজর দিতে হবে
স্টার্টআপ কোম্পানি অনান্য প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মতো নয়। তাই প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মতো বাধাধরা নিয়ম মেনে স্টার্টআপের অফিস বানানোর প্রয়োজন নেই। অফিসে যারা কাজ করেন, তাদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের উপর প্রাধান্য দিয়েই এই ধরণের কোম্পানির অফিস সাজাতে হবে। আপনার অফিসে বেশিরভাগ মানুষ যদি সারাক্ষণ আলাদা ডেস্কে না বসে বরং একসাথে কাজ করতে পছন্দ করে, তাহলে অফিসে ছোট ছোট মিটিং স্পেস বাড়ানোর দিকে মন দিলেই ভালো।
কমন স্পেস হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ
স্টার্টআপ অফিসে পর্যাপ্ত কমন স্পেস থাকতে হবে
স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোতে সাধারণত খুব বেশি মানুষ কাজ করে না। দলের সদস্যরা নিজেদের কাজ যতটা উপভোগ করবেন, ততটাই তারা কোম্পানির প্রতি আরো সমর্পিত থাকবেন। যে কারণে ছোট দলের প্রতিটি সদস্যের মাঝেই পরিপূর্ণ যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন। এতে তাদের মাঝে ঘনিষ্ট সম্পর্কও গড়ে উঠবে। আবার অফিসে দারুণ পরিবেশে তারা তাদের কাজও উপভোগ করতে পারবেন।
তাই স্টার্টআপ কোম্পানির অফিসে প্রচুর পরিমাণে কমন স্পেস থাকা গুরুত্বপূর্ণ। একসাথে কাজ করতে গিয়েই দলের সদস্যরা শুধুমাত্র কলিগ থেকে বন্ধু হয়ে উঠার সুযোগ পাবেন। ওয়ার্কস্টেশনেও খোলা জায়গা রাখার চেষ্টা করুন।
সম্ভব হলে অফিসে মিটিং স্পেস ছাড়াও এমন সব কমন স্পেসের ব্যবস্থা করুন, যেখানে অফিসের কর্মচারীরা কাজ ছাড়াও একসাথে আড্ডা মারতে পারবে। যেমন: ছোট ক্যাফে, কিংবা গেইমরুম। অফিস সাজানোর সময় কমন স্পেসে গুরুত্ব না দিলে দলের সদস্যদের মাঝে একটি সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ছোট ছোট মিটিং স্পেস তৈরি করতে হবে
বাধাধরা নিয়মের বাইরে চিন্তা করুন
স্টার্টআপ কোম্পানির ধারণার সাথেই সৃষ্টিশীলতা অতপ্রতভাবে জড়িত। অফিসের সজ্জাতেও সৃষ্টিশীলতা দেখা দিলে সেটা অফিসের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে। তাই অফিস সাজানোর বাধাধরা নিয়মের বাইরে চিন্তা করার চেষ্টা করুন। ইংরেজিতে যেটাকে বলে ‘আউট অফ দ্য বক্স থিংকিং’।
যেমন: অফিসে এক ডিপার্টমেন্টের সাথে আরেক ডিপার্টমেন্টের ডিভাইডার হিসেবে পর্দা কিংবা দেয়াল ব্যবহার না করে ঝুলন্ত টব ব্যবহার করতে পারেন। এতে অফিসে যেমন সবুজের ছোয়া আসবে, আবার একইসাথে অফিসের সজ্জা পাবে অনন্য মাত্রা। কিংবা, অফিসের দেয়ালে একই ধরণের রঙ ব্যবহার না করে বিভিন্ন দেয়ালে বিভিন্ন রকমের দেয়াল শিল্প কিংবা ডুডলের ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে পুরো অফিস শৈল্পিক ছোয়া পাবে।
অফিস সজ্জা কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালুর অংশ
ক্লায়েন্ট কিংবা ক্রেতা আপনার উদ্যোগকে বাহ্যিক সজ্জা দিয়েই বিচার করবে। যেই বাহ্যিক সজ্জার একটি অংশ আপনার অফিসও। অফিস সাজানোর আগে চিন্তা করে নিন, ঠিক কোন বিষয়টি আপনার কোম্পানি কে অন্য সব কোম্পানির থেকে আলাদা করে তোলে। অফিস সজ্জায় ঠিক সেই বিষয়টিই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন।
অনেক সময় শুরুতেই এতো কিছু করা সম্ভব হয় না। অর্থনৈতিক নানা বাধাবিপত্তি দেখা দেয়। তা হলেও, অন্তত অফিসে একটি সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অফিস যেন অগোছালো না হয়ে থাকে। সেই উদ্দেশ্যে নানা ধরণের ফাইল ক্যাবিনেট কিংবা মাল্টিপারপাস শেল্ফ ব্যবহার করতে পারেন।
স্টার্টআপ অফিস সাজানোর সময়টা দারুণ। এই সময় স্বপ্ন দেখার সময়। এই সময় নিজেকে বিশ্বাস করার সময়। সুতরাং, নিজের উদ্যোগের আদর্শগুলোকে সামনে রেখে সময়টা উপভোগ করুন। এবং আমাদের জানিয়ে দিন কীভাবে নিজের স্টার্টআপ অফিস সাজাচ্ছেন আপনি।