আপনি কি আপনার অফিসকে নতুন ফার্নিচার দিয়ে সাজানোর কথা ভাবছেন? অথবা নতুন অফিস খুলতে যাচ্ছেন? তাহলে প্রথমে আপনার চিন্তায় এসেছে অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচারটি কিভাবে বাছাই করব? আজকে আমাদের এই লেখাটি আপনার জন্য। অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার কিভাবে বাছাই করবেন – জানতে পড়ুন এই আর্টিকেলটি।
অফিস ফার্নিচার (Office Furniture) বাছাই করতে একটি পূর্ব পরিকল্পনা অবশ্যই প্রয়োজন হয়। কারন এখানে আপনাকে অনেক গুলো বিষয় মাথায় রেখে আগাতে হবে।যেমন কী ধরনের ফার্নিচার কিনবেন?কোথা থেকে কিনবেন?
কষ্টের অর্থ ব্যয় করে কিনে আনা ফার্নিচার আপনার অফিসের জন্য মানানসই হবে তো? তাই বুঝতেই পারছেন অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার বাছাই করতে হলে একটু মাথা খাটাতেই হবে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া অফিসের জন্য ফার্নিচার বাছাই করতে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হবে।
চাকুরীজীবিদের অনেকটা সময় কিন্তু অফিসে কেটে যায়। অফিসের পরিবেশ যদি কাজের উপযুক্ত না হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন কর্মচারীরা৷ তাদের জন্য কাজ করার আরামদায়ক পরিবেশ তৈরী করা অফিস কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার বাছাই করার ১০টি উপায়
তাই অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার বাছাই করতে হলে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। চলুন জেনে নেই অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার কিভাবে বাছাই করবেন –
১। প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোর একটি তালিকা তৈরী করুন
আসবাব কেনার আগে অফিসে মূলত কি কি জিনিসের প্রয়োজন পড়বে তার তালিকা তৈরী করুন। এই লিস্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো তালিকাভুক্ত করুন। যেমন কম্পিউটার, প্রিন্টার,ফ্যাক্স মেশিন, ফাইল স্টোরেজ ইত্যাদি।
লিস্ট বানানোর সময় মাথায় রাখবেন অফিসটি মূলত কি কাজে ব্যবহার করছেন।
উদাহরণস্বরূপ – গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য কম্পিউটার, বড় টেবিলের দরকার পড়বে। কন্স্যালট্যান্টদের জন্য ফাইল রাখার বাড়তি ও সুরক্ষিত জয়গার প্রয়োজন হবে। ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং করতে আলাদা জায়গা ও ফার্নিচার লাগবে।
আপনার অফিসের ধরন অনুযায়ী আপনার প্রয়োজনীয় ফার্নিচারেও পরিবর্তন আসবে। তাই বুঝতেই পারছেন, অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার বাছাই করতে প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি তালিকা অবশ্যই দরকার।
আরো পড়ুন: অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার কিভাবে বাছাই করবেন
২। কেমন ফার্নিচার কিনবেন নিশ্চিত করুন
ভারী কাঠের ফার্নিচার কিনবেন নাকি হালকা অ্যালুমিনিয়াম এর মধ্যে কিনবেন নির্ধারণ করুন। অথবা স্টিলের ফার্নিচারের কথাও মাথায় রাখতে পারেন। কাঠের আসবাব কিন্তু আপনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারবেন।
আজকাল কাঠের ফার্নিচার ও অনেক ফ্যাশনাবল হয়ে থাকে। কাঠের মসৃন ফার্নিচার আপনার অফিসে একটি নান্দনিক রুপ নিয়ে আসবে।
আবার আধুনিক যুগে হালকা ও সহজে বহন করা যায় তেমন ফার্নিচারেরও অনেক ডিমান্ড। তাই অফিসে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরীর পাশাপাশি অফিসের সাজসজ্জার দিকেও লক্ষ রাখুন।
৩। বাজেট নির্ধারণ করুন
আপনি অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।তবে আপনি নিশ্চয়ই চান না তার সবটুকুই অফিসের সাজসজ্জার পেছনে ব্যয় করতে? তাই আপনি কতটুকু অর্থ আসবাবের পেছনে ব্যয় করবেন সেটিও নির্ধারণ করে নিতে হবে। এতে আপনার বাজেট মোতাবেক অফিসের জন্য উপযুক্ত ফার্নিচার নির্বাচন করা সহজ হবে।
অফিসের সাজসজ্জা ও শৃঙ্খলা অবশ্যই জরুরি বিষয়। তবে শুধু দামী ফার্নিচার দিয়েই আপনি আপনার অফিসের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে পারবেন না। অফিসের সাজসজ্জা ও সার্ভিসের সাথে সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
তাই আপনার বাজেট ও কাজের ধরন অনুযায়ী ফার্নিচার নির্বাচনও খুবই জরুরি। সুতরাং অবশ্যই নিজের বাজেট সাপেক্ষে ফার্নিচার বাছাই করুন।
আরো পড়ুন: কীভাবে একটি ছোট অফিসকে সুসজ্জিত করা যায়
৪। রুমের আকার অনুযায়ী ফার্নিচার কিনুন
আপনার অফিসের রুমগুলোর আকারের উপর ভিত্তি করে আসবাব কিনুন। রুম যদি ছোট হয় তাহলে সেখানে ছোট কিন্তু কার্যকরী ফার্নিচার বাছাই করুন। তবে ছোট কিনতে গিয়ে দৃষ্টিকটু কিংবা কাজের অনুপযোগী কোনো ফার্নিচার কিনবেন না।
তাহলে আপনার অর্থ ও জায়গা দুটিই নষ্ট হবে। ছোট রুমের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যবর্ধক ফার্নিচার কম ব্যবহার করুন। প্রয়োজনীয় ফার্নিচারের মধ্যেই সৌন্দর্য ও উপযোগীতা ম্যানেজ করুন।
বড় রুমের ক্ষেত্রে আবার সঠিকভাবে ফার্নিচার বিন্যাস করতে হবে। কেননা রুম বড় বলেই অতিরিক্ত কিছু দিয়ে রুমকে বিশৃঙ্খল করা যাবে না। বড় রুমের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ফার্নিচারের পাশাপাশি অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও ব্যবস্থা রাখতে পারেন।
প্রয়োজনীয় ব্যতীত কোনো ফার্নিচার জায়গা ও অর্থ অপচয় করবে। আবার অফিসের সাজসজ্জা একেবারে নিরামিষ হলেও অফিসের নিজস্বতা নষ্ট হবে।তাই আপনার অফিসের প্রতিটি জায়গায় সঠিক ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুন: হোম অফিস সাজাবেন? জেনে নিন ১০টি প্রয়োজনীয় টিপস
৫। ফার্নিচারগুলোর যথাযথ জায়গা নির্বাচন করুন
আপনি নিশ্চয়ই চান না আপনার অফিসে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরী হোক। বড় বড় ফার্নিচার এনে অফিসের জায়গা নষ্ট হোক। কিংবা খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্লাইন্টকে নিয়ে কোলাহলপূর্ন পরিবেশে নিয়ে বসিয়ে দেয়া হোক। তাই আপনার অফিসের ফার্নিচার গুলোর সুষ্ঠু বিন্যাস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অফিসের ফার্নিচার যত সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যাস করা হবে অফিসের ভাবমূর্তিও তত উজ্জ্বল হবে। তাই অফিসের ফার্নিচার গুলো কোনটি কোন জায়গা বসবে সেটি নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখবেন, অফিসের প্রতিটি ফার্নিচার যেন সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যাস করা হয়। কাজ করার জন্য ও অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপযুক্ত হয়। তাহলেই আপনি আপনার অর্থের সঠিক প্রয়োগ করতে পারবেন। এবং একটি পরিকল্পিত অফিসের পরিবেশ তৈরী করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: হাতিল এর অর্গনোমিক চেয়ার আপনার কেন প্রয়োজন
৬। অফিসের নিজস্বতা রক্ষা করুন
আপনার অফিসে কতটুকু জায়গা আছে কিংবা কত দামী ফার্নিচার আছে এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অফিসের নিজস্বতা। যেটি আর দশটা অফিস থেকে আলাদা করবে আপনার অফিসকে। অফিসের নিজস্বতা রক্ষা করতে কাজের ধরন অনুযায়ী ফার্নিচার বাছাই করুন। এবং তার ভিত্তিতে একটি থিম নির্বাচন করুন। কারন একই ধরনের কাজের হাজারটা অফিস তৈরী হয়। তাহলে আপনার অফিসের বিশেষত্ব টা কি?
অফিসের বিশেষত্ব বৃদ্ধি করতেই একে নান্দনিক সাজসজ্জা দিতে হবে। যেটি অফিসের সার্ভিসের সাথে সামঞ্জস্য রাখবে। পাশাপাশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
তাই নিজের অফিসের নিজস্বতা রক্ষা করতে অবশ্যই কাজের ধরনের ভিত্তিতে ফার্নিচার বাছাই করুন।
আরো পড়ুন: হোম অফিস সেটাপের প্রাথমিক ধারনা
৭। ব্যতিক্রমী ফার্নিচার কিনুন
গতানুগতিক ধারার ফার্নিচার না কিনে ব্যতিক্রমী কিছু কিনুন। যেটি আপনার অফিসকে নান্দনিক রুপ দেবে। আপনার নির্বাচিত ফার্নিচার কিন্তু আপনার রুচিকে রিপ্রেজেন্ট করবে।
ব্যতীক্রমী ফার্নিচার আপনার অফিসকে সাধারণ অফিসের থেকে আলাদা করবে। ব্যতীক্রমী মানেই যে দামী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। একটু মাথা খাটালেই কিন্তু অল্প খরচে সবচেয়ে ভিন্ন ও নান্দনিক সাজসজ্জা সম্ভব।
আরো পড়ুন: হোম অফিস সাজাবেন? জেনে নিন ১০টি প্রয়োজনীয় টিপস
৮। ডিজাইন নির্ধারণ করুন
ফার্নিচার কেনার আগে অফিসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খুব সচেতন হয়ে ডিজাইন পছন্দ করুন। কারন সামান্য ভুল সিদ্ধান্ত আপনার অফিসের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে। তাই এমন ডিজাইন পছন্দ করবেন যা ফ্যাশনেবল এবং অফিসের কাজের জন্যও উপযুক্ত ।
তবে ভিন্নভাবেও ঐতিহ্যপূর্ণভাবে ঘর সাজাতে আপনি প্রাচীনকালের ডিজাইনের আসবাবপত্র ব্যবহার করতে পারেন। খুব বেশি ভারী ডিজাইন অনেক সময় অফিসের পরিবেশ এর সাথে মানায় না। আবার সাদামাটা ডিজাইনও অফিসের সাজসজ্জাকে ফিকে করে দেয়। তাই খুবই সাবধানে প্রতিটি ফার্নিচারের ডিজাইন নির্ধারণ করুন।
আরো পড়ুন: আদর্শ ডিরেক্টর টেবিল কিভাবে বাছাই করবেন?
৯। সকল ফার্নিচার যাচাই করে কিনুন
ফার্নিচার কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করে কিনুন। ফার্নিচারের ফিনিশিং, ডিজাইনের ত্রুটি আছে কিনা খুজেঁ বের করুন। কেননা আপনার অনেক অর্থ ও শ্রম এই অফিসের সাথে যুক্ত। অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার বাছাই করতে মানের সাথে নো কম্প্রোমাইজ।
টাকা যখন ব্যয় করবেনই সঠিক ও মানসম্মত ফার্নিচারের পেছনে ব্যয় করুন। এতে শুধু ফার্নিচার নয় আপনার অফিসের পরিবেশ মানও বজায় থাকবে। তাই আপনার অফিসের জন্য সঠিক ও মানসম্মত ফার্নিচার বাছাই করুন।
আরো পড়ুন: অফিসে মাল্টিপারপোজ সেলফ এর প্রয়োজনীয়তা
১০। অফিসের সকল ফার্নিচারের যত্ন নিশ্চিত করুন
আপনি আপনার অফিসে মান ও ভাবমূর্তি ধরে রাখতে অনেক অর্থ ব্যয় করছেন। সেগুলো সঠিকভাবে সাজানোর পেছনে প্রচুর সময় ও শ্রম দিচ্ছেন। কিন্তু দিনশেষে যদি দেখেন আপনার শখের ফার্নিচার গুলো ধুলো ময়লায় জড়িয়ে গেছে।
কিংবা অযত্নে ভেঙে গেছে, মান নষ্ট হয়ে গেছে। তখন আপনি নিশ্চয়ই অনেক মনঃক্ষুণ্ন হবেন। তাই নিজের কষ্টের অর্থে কেনা ফার্নিচারের যত্ন নিশ্চিত করুন। এসবের দেখাশোনা করা জন্য আলাদা দক্ষ লোক রাখুন। অফিসের কর্মচারীদের ফার্নিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন করুন।
আরো পড়ুন: অফিস ডেকোরেশনের প্রাথমিক চিন্তাধারা
পরিশেষে, আপনার অফিসের সাজসজ্জা ও শৃঙ্খলা কিন্তু আপনার রুচিকে সমর্থন করবে। অফিসের কর্মচারীদের জন্য কাজের পরিবেশ তৈরী করতে যেমন ফার্নিচারের সঠিক নির্বাচন প্রয়োজন। তেমনি অফিসে আসা ভিজওটর কিংবা ক্লায়েন্টকে আকর্ষণ করতেও সঠিক ফার্নিচার ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই আপনার অফিসকে নান্দনিক সাজসজ্জা দিয়ে ব্যতীক্রমী করতে চাইলে সঠিক অফিস ফার্নিচার বাছাই করুন। আর পূর্ব পরিকল্পনা অবশ্যই রাখুন। কারন তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ করলে আপনার অর্থ, সময় ও শ্রম সবই নষ্ট হবে। তাই আমদের দেয়া নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করুন এবং কাজে লেগে পড়ুন।
আশা করি, অফিসের জন্য সঠিক ফার্নিচার কিভাবে বাছাই করবেন তার পরিপূর্ণ ধারনা দিতে পেরেছি। আমাদের নির্দেশনা আপনাকে সঠিক ফার্নিচার বাছাই করে অফিসের নিজস্বতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। শুভকামনা রইল আপনার সময়োপযোগী ও দৃষ্টিনন্দন অফিসের জন্য।
আমাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ।