Small office Small office

কীভাবে একটি ছোট অফিসকে সুসজ্জিত করা যায়

সময় বদলাচ্ছে, সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে চাহিদা ও যোগানের। একই সঙ্গে ভ্যালু বাড়ছে স্থান ও স্পেসের। কিন্তু থেমে নেই অগ্রগতি ও উন্নয়ন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সমগ্র বিশ্ব। এই সকল কিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরাও। আমাদের অনেক ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেক স্বপ্নই পূর্ণ করতে পারিনা। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে আমরা চাইলে আমাদের চাহিদাগুলোকে কাস্টমাইজেশনের মাধ্যমে পূর্ণ করতে পারি আমাদের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। তেমনই একই বিষয় নিয়ে আলোচনার দিকে এগুচ্ছি।

এই পেন্ডামিকের সময়ে অনেক বিকল্প ভাবনা নিয়ে আগাচ্ছেন অনেকেই। কেউ চাকরির পাশাপাশি উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ের। কেউবা চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করার কথা ভাবছেন। অনেকেই ব্যবসায়ের একটা অবস্থান তৈরির জন্য একটা ভালো প্লেস খুঁজছেন। প্লেস পেলেও স্পেসের রয়েছে স্বল্পতা। ফলে কীভাবে নিজের অফিসটাকে সাজাতে চান সে বিষয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। কারণ অফিস বা ওয়ার্ক প্লেস শুধু কর্ম সম্পাদনের জন্যই এমন নয়। যেহেতু এখানে অনেকটা সময় ব্যয় হয় এবং নান্দনিওক চিন্তার বিষয়ও জিড়িত। তাই এই জায়গাটি হওয়া চাই অপেক্ষাকৃত মনোরম ও নান্দনিক। যাতে কাজের পাশাপাশি মনের খোরাক জোগাবে অফিসের সময়টুকু। চলুন অপেক্ষাকৃত ছোট স্পেসে নিজের অফিসকে কীভাবে নান্দকিক ভাবে সাজানো যায় সে বিষয়ে কিছু ধারণা নেই।

একটি ছোট অফিসের জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন?

১২০০ স্কয়ারফিটের একটি অফিস স্পেস। আবাসিক স্পেস হিসেবে মোটামুটি মাঝামাঝি আকৃতির হলেও অফিস স্পেস হিসেবে খুবই স্বল্প পরিসর। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে স্পেস ডিভাইডেশন ও ডেকোরেশন করার ফলে এটি আপনার অফিস স্পেস হিসেবে হয়ে ওঠতে পারে পর্যাপ্ত। সে জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।

কতগুলো কক্ষ থাকবে, কোন কক্ষে কে বসবে, কোন কক্ষ কোন পার্শে হবে, দড়জা-জানালানার বা আলোর ব্যবহার দিকে লক্ষ্য রেখে প্ল্যান করা, ওয়াশরুম-ডাইনিংস্পেস পাশাপাশি রাখা প্রভৃতি। সেক্ষেত্রে প্রতিটি স্থানকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের অপশন রাখা যেতে পারে।

যেমন- ওয়ার্কার ডেক্স কাম মিটিং রুম, নেটওয়ার্কিং কাম ব্রডকাস্টিং রুম, এডিটিং কাম প্রিন্টিং রুম, রিসিপশন কাম ওয়েটিং রুম কাম প্রাইমারি ডেস্ক প্রভৃতি। যদিও অফিস ও কাজের ধরণ অনুযায়ী এর নামগুলো ভিন্ন হতে পারে কিন্তু চাইলে এভাবে ভাগ করা যায়। একটি অফিস স্পেসকে সুসজ্জিত করার জন্য অনেক রকম কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। তেমন কয়েকটি কৌশল তুলে ধরা হলো-

১। স্থান নির্বাচন

আপনার অফিসের জন্য একটি সুইটেবল স্থান নির্বাচন কতা অতি জরুরী। যে কাজের জন্য যেখানে যাওয়া প্রয়োজন সেটা সেখানে গিয়েই সাড়তে হয়। তাই আপনার নির্দিষ্ট অফিসটি অবশ্যই সেরকম প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগীতা অনুযায়ী করা দরকার। যাতে আপনার কাছে যে সেবা আছে তা গ্রহীতা অতি সহজেই পেতে পারে।

২। স্পেস বিভাজন

আপনার অফিসের ধরণ, কাজের পরিধি ও ইমল্পয়ে/Employeeসংখ্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গাটিকে বিভাজন করে পরিকল্পনা কার্যকর করা যেতে পারে। যেমন- একটি ১২০০ স্কয়ার ফিটের স্পেসে কয়েকটি চারটি কক্ষের সমন্বয়ে সাজানো যেতে পারে। প্রথমে ইন্ট্রি কক্ষে ফন্ট ডেস্ক কাম রিসিপশন, তার পাশের কক্ষে ইমল্পয়েজ রুম, ভেতরের একপাশে এমডি/ডিডি রুম, অন্যপাশে ডাইনিং/ওয়াশরুম ও নেটওয়ার্কিং রুম। এতে অফিসের প্রয়োজনীয় আরও অনেক বিষয় যুক্ত হতে পারে।

৩। দ্রব্যসামগ্রী কি কি থাকবে তা তালিকাভূক্ত করা

রুম বিভাজনের পর সজ্জিতকরণের জন্য কী কী দব্যসামগ্রী প্রয়োজন সে অনুযায়ী তা নির্বাচন করে স্থানের ব্যাপ্তি ও নান্দনিকতা ভেদে সকলকিছু নির্দিষ্ট স্থানে বসানো। অফিসের সব থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে দ্রব্যসামগ্রী। তাই এর সঠিক প্ল্যানিং থাকা আবশ্যক।

৪। ডেস্ক নির্দিষ্টকরণ

যেকোনো অফিসে কোন কক্ষে কে বসবে তা নির্দিষ্টকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর উপরে অনেক ক্ষেত্রে অফিসের রুচিবোধ ও সেবার মান ডিপেন্ড করে। তাই অফিস স্পেস সজ্জিত করার আগে প্ল্যান করে নেওয়া দরকার কোন পার্শে বা কোথায় কার ডেস্ক বা টেবিল কিংবা রুম হবে। সে অনুযায়ী ডেকোরেশন করতে হবে।

৫। রিসিপশন/ অভ্যর্থনা কক্ষ/স্পেস

কক্ষ এবং ডেস্ক নির্বাচনের সময় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অভ্যর্থনা কক্ষ বা রিসিপশন স্পেস। এটিকে অবশ্যই প্রথমদিকে রাখা উচিৎ। কারণ কোনো সেবা গ্রহীতা এসে প্রথমেই অভ্যর্থনা কক্ষে এসে ইনফরমেশন নেয়, কোথায় কী আছে এ ব্যপারে। অভ্যর্থনা কক্ষে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত থাকে। যেমন- অভ্যর্থনা, ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন প্রভৃতি। তাই একে গুরুত্বের সাথে নির্দিষ্টকরণ ও সজ্জিত করণ করা আবশ্যক।

৬। স্পেসকে একাধিক কাজের উপযোগী

যদি আপনার অফিস স্পেসটি অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির হয়, তাহলে অবশ্যই স্থানের সঠিক ও কোয়ালিটি ইউজের ক্ষেত্রে নজর রাখা আবশ্যক। যাতে এক ইঞ্চি জায়গাও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরে না থাকে। আর যেহেতু স্পেস ছোট তাই একাধিক কাজ যাতে এক জায়গায় সম্পাদন করা যায় সে দিকে দৃষ্টিপাতকরা যেতে পারে। যে জায়গাগুলো একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন এমডি/ডিডি/জিএম কক্ষ ছাড়া বাকি কক্ষগুলোকে একাধিক কাজে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা।

৭। কমন রুমের ব্যবস্থা রাখা

কমনরুম অফিসের যেকোনো ইম্পর্টেন্ট মিটিং বা প্রজেক্ট এক্সিকিউট কিংবা পিপিএম এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ছোট স্পেস হওয়ার কারণে যদি এক্সট্রা কমনরুমের ব্যবস্থা না করা যায়, সে ক্ষেত্রে ইমল্পয়ের রুম কিংবা অন্য যেকোনো রুমে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে যেকোনো সময় যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যায়।

৮। প্রয়োজনে দেয়ালের ব্যবহার

অফিসের এমন অনেক কাজ বা কাজের জিনিস থাকে যেগুলোর ক্ষেত্রে রুমের স্থানের অপচয় না করে দেয়ালের ব্যবহার করেও করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জায়গা অপচয় না করে দেয়াল বা বিল্ডিং এর আপার অপশন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- ওয়াটবোর্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে ইজেলেব দিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অনেকটা জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু একে দেয়ালের সঙ্গে সেট করে দিলে কাজও হয় আবার অতিরিক্ত জায়গাও অপচয় হয়না। একই ক্লাজ করা যায় প্রজেক্টর ও প্রজেক্টর স্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। এভাবে প্রয়োগের ফলে অফিসের অনেক স্পেস অপচয় রোধ হওয়ার পাশাপাশি স্বল্প স্পেলে একটি অফিস পুরোপুরি পরিচালন করা সম্ভব।

৯। পোর্টেবল ক্যাবিনেট ব্যবহার

অফিসের এমন অনেক দ্রব্যসামগ্রী থাকে যেগুলো রাখার জন্য আলমিরা বা কেবিবেট আবশ্য হয়ে পরে। কিন্তু যদি অফিসে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে সে ক্ষেত্রে ফাইল বা দ্রব্যসামগ্রী রাখার জন্য পোর্টেবল ফাইল কেবিনেট ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে যেকোনো সময় এসকল কেবিনেটকে স্থানান্তর করা যাবে। এতে চাইলেই যেমন ডেকোরেশন পরিবর্তন আনা সম্ভব তেমনই জায়গার অপচয় রোধও সম্ভব। আর আকর্ষণীয় কেবিনেট ব্যবহারে অফিসের সৌন্দর্যও তুলনামূলক বৃদ্ধি পাবে।

১০। ওয়াশরুম/ডাইনিং

ছোট অফিসের জায়গা সংকুলান এড়াতে ওয়াশরুম করা যেতে পারে এমন স্থানে, যাতে ইমল্পয়েজদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেমন সুবিধা হবে তেমনি স্থানেরও অপচয় হবে না। আবার অফিসে ডাইনিং স্পেস অনেকসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পরে। কিন্তু স্পেস না থাকলে সে ক্ষেত্রে কোনো একটি কক্ষের সঙ্গে এমনভাবে সট করে নিতে হবে যাতে চাইলে সে রুমটিকে অফিসের কাজের জায়গার পাশাপাশি ডাইনিং হিসেবেও ব্যবহাআর করা যায়।

 

আলোচ্য বিষয়গুলো তাছাড়া অফিস কক্ষগুলোকে সজ্জিত করার জন্যে আরও কিছু পরিকল্পনা করা যেতে পারে। যেমন- ওয়ার্ক ডেস্ক/টেবিল প্ল্যান, ওয়াল/দেয়াল প্ল্যানিং, দেয়াল বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের কৌশল, পেইন্টিং ও ওয়ালপেপার ব্যবহার, ফ্লাওয়ার বাস/ফুলের ব্যবহার,দেয়াল ঘড়ি, বিশেষ ছবি বা স্মৃতি সঙ্গরক্ষণ স্পেস, এন্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ও রিলাক্সেশন সিনারিও ব্যবহার প্রভৃতির মাধ্যমে একটি ছোট স্পেসের অফিসকে আরও বেশি নান্দনিক ও আকর্ষণীয় করে তোলা যেতে পারে।

একটি নান্দনিক অফিস আপনার কাজের গতিকে যেমন বাড়িয়ে তুলতে পারে, তেমনি আপনার অফিসের রুচিবোধেরও প্রকাশ করে থাকে। ফলে বাড়বে আপনার অফিসের সেবা গ্রহীতার পরিমাণ ও সেবা অনুযায়ী আপনার চাহিদাও। তাই স্পেস ছোট হলেও সেবার মানের দিকে কমপ্রোমাইজ না করার জন্য একটি নান্দনিক ও সুসজ্জিত অফিস গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিষয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।