উলফাত ও রাফিদের নতুন সংসার। সেই সঙ্গে সব নতুন আসবাবপত্র, একটা নতুন বাসা। নতুন বাসার জন্য সবকিছু নিজেরাই পছন্দ করে কিনেছে। কিন্তু আসবাবপত্র কিনতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। উলফাতের পছন্দ সব গাঢ় রঙের আসবাব। অন্যদিকে রাফিদের পছন্দ হালকা রঙের। ওর কথা হচ্ছে আসবাবপত্র গাঢ় রঙের হলে ঘর অন্ধকার আর অনুজ্জ্বল দেখায়। তাতে ঘরের জৌলুশ কমে যায়। এই নিয়ে কত মন-কষাকষি দুজনের। শেষ পর্যন্ত ওদের সাহায্য করতে এগিয়ে এল ওদের ইন্টেরিয়র ডিজাইন এক্সপার্ট বন্ধু জাবির। শেষ পর্যন্ত জাবিরের বাতলে দেওয়া উপায়ে ঘর সাজানোর পর রাফিদ আর উলফাতের সত্যিই কোনো অভিযোগ রইল না। কারণ, ঘরে উলফাতের পছন্দ করা গাঢ় রঙের ফার্নিচার এলেও ঘর দেখাতে লাগল বেশ উজ্জ্বল। চলুন, তাহলে দেখে আসি জাবির ওদের দুজনকে কী এমন বুদ্ধি দিয়েছিল।
উজ্জ্বল রঙের পর্দার ব্যবহার
ঘরের আসবাবপত্র যদি একটু গাঢ় রঙের হয়ে থাকে, তবে ঘরে হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার করে ঘর উজ্জ্বল করে তোলা সম্ভব। অর্থাৎ আসবাবপত্র যদি গাঢ় খয়েরি রঙের হয়, তবে ঘরের পর্দা হতে পারে অফ হোয়াইট কিংবা হালকা কমলা রঙের। এতে দিনের বেলা সূর্যের আলো পর্দা ভেদ করে ঘরজুড়ে সুন্দর একটা আভা ছড়িয়ে দেয়।
ছবি : ঘরের আসবাবপত্র গাঢ় রঙের হলে দেয়াল ও পর্দার রং হালকা রঙের হতে হবে
ঘরের দেয়ালে হালকা রং ব্যবহার করা
ঘরের দেয়াল আর আসবাবপত্র দুটোই গাঢ় রঙের হলে ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখায়। এই ক্ষেত্রে ঘরের দেয়াল একটু হালকা রঙের হলে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম আলো দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে ঘর করে তোলে উজ্জ্বল। আর সেই সাথে আসবাবপত্র আর দেয়ালের এই কন্ট্রাস্ট রঙের ব্যবহার ঘরের শোভাবর্ধন করে। তবে ঘরের দেয়ালের রঙের সাথে পর্দার রং মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ, ঘরের দেয়াল যদি বেবি ব্লু কিংবা মিন্ট রঙের হয়, তবে এর সাথে হালকা কমলা কিংবা গোলাপি রঙের পর্দা একেবারে বেমানান দেখাবে। তাই এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় রঙের প্যালেট মিলিয়ে নেওয়া ভালো।
উজ্জ্বল মেঝেতে দিন বাহারি রঙের কার্পেট
ঘরে গাঢ় রঙের আসবাবপত্র রাখতে চাইলে মেঝের রং সাদা, অফ হোয়াইট, হালকা বিস্কুট রং রাখা যেতে পারে। তাতে আলো মেঝেতে প্রতিফলিত হয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা ঘরে আর ঘর দেখাবে উজ্জ্বল। সেই সাথে মেঝেতে রাখা যেতে পারে একটু বাহারি রঙের কার্পেট। এতে ঘর রঙিন দেখাবে। তবে বাহারি রঙের কার্পেট ব্যবহার না করে মেঝের রঙের থেকে একটু গাঢ় কিংবা হালকা রঙের কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন মেঝে যদি লাইট ওক কিংবা লাইট বিচরঙা হয়, তবে কার্পেট রাখা যেতে পারে একটু লালচে খয়েরি কিংবা একেবারে সাদা রঙের।
ছবি : ঘরের আসবাবপত্রের মাঝে আনতে পারেন রঙের বৈচিত্র্য
দিনের বেলা ঘরে প্রাকৃতিক আলো আসতে দেওয়া
ঘর উজ্জ্বল দেখাতে প্রাকৃতিক আলোর কোনো বিকল্প নেই। আর সেই সাথে পরিমিত সূর্যের আলো আসবাবপত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই দিনের বেলা পর্দা এবং জানালা খুলে দিয়ে ঘরে প্রাকৃতিক আলো আসতে দিলে সেই আলোতে ঘর অন্য রকম সুন্দর দেখায়, বিশেষ করে ঘরে যদি গাঢ় রঙের আসবাবপত্র থাকে। তবে এর পাশাপাশি জানালার কাচ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। তাতে করে ঘরে আলো আসার ক্ষেত্রে কোনো বাধা পড়বে না।
আসবাবপত্রের আনুষঙ্গিক জিনিসে হালকা রঙের ব্যবহার
আসবাবপত্রের অনুষঙ্গ বলতে পর্দা ছাড়াও আরও অনেক কিছু বোঝায়। যেমন বিছানার চাদর, সোফার কভার, কুশন, ডাইনিং টেবিলের ম্যাট ইত্যাদি। আসবাবপত্রের রং গাঢ় হলে এই জিনিসগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে হালকা রং। আবার বাহারি রঙের আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র দেখতেও বেশ সুন্দর দেখায় এসব ক্ষেত্রে। যেমন, কালচে খয়েরি রঙের সোফায় একটু গাঢ় মেরুন সোফার কাভার ব্যবহার করে তাতে দেওয়া যেতে পারে উজ্জ্বল হলুদ, হালকা সবুজ কিংবা উজ্জ্বল কমলা রঙের কুশন। এতে ঘরের নান্দনিকতা বেড়ে যায় বহুগুণে। সেই সাথে ঘরে রাখা যেতে পারে একটু রংচঙে ধরনের কোনো ফুলদানি কিংবা ল্যাম্প। এ ছাড়া আসবাবপত্রে পরিপূরক রঙের ব্যবহারে ঘরের সাজসজ্জায় আসে বৈচিত্র্য। যেমন ঘরের খাট যদি একটু কালচে খয়েরি হয়, তবে ঘর রাখা যেতে পারে বাহারি রঙের কোনো চেয়ার কিংবা সোফা। আবার বসার ঘরের সোফা যদি বা হয় গাঢ় রঙের, তবে সেখানে রাখা যেতে পারে হালকা রঙের কোনো অটোম্যান।
ছবি : ঘরের আসবাবপত্রের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের রং একটু বাহারি হলে দেখতে চমৎকার দেখায়
দেয়াল রাঙিয়ে তুলুন ছবি দিয়ে
ঘর উজ্জ্বল করে তুলতে ছবি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে নিজেদের পারিবারিক কোনো মুহূর্তের ছবি যেমন টাঙানো যেতে পারে, তেমনি পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা কোনো চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবি টাঙানো যেতে পারে।
আসবাবপত্রে কাচের ব্যবহার
কাচ আলো প্রতিফলন ঘটানোর সবচেয়ে ভালো প্রভাবক। আর ঘরে যত আলোর প্রতিফলন ঘটানো যায়, ঘর দেখাবে ততটাই উজ্জ্বল। তাই বসার ঘরে কাচের তৈরি সেন্টার টেবিল যেমন ঘরের শোভাবর্ধন করবে, তেমনি শোবার ঘরে রাখা যেতে পারে বড় কোনো আয়নাসহ ড্রেসিং টেবিল।
ঝাড়বাতির তেলেসমাতি
ঝাড়বাতি শুনলেই আমাদের মনে একধরনের রাজপ্রাসাদীয় আভিজাত্যের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু এই ঝাড়বাতিই আমাদের ঘরকে করে তুলতে পারে উজ্জ্বল ও নান্দনিক। তবে ঝাড়বাতি দেওয়ার আগে ঘরের মাপ অবশ্যই বিবচনায় রাখতে হবে। কারণ, বড় একটি ঘরে খুব ছোট ঝাড়বাতি যেমন বেমানান, তেমনি ছোট কোনো ঘরে খুব বড় আকারের ঝাড়বাতি দিলে ঘর দেখতে আরও ছোট দেখাবে। তাই ঝাড়বাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মালিহা আর রাফিদকে জাবির এই ৮টি পরামর্শ দিয়েছিল ঘর উজ্জ্বলভাবে সাজানোর জন্য। আপনাদের যদি এর বাইরেরও কোনো উপায় জানা থাকে, তবে অবশ্যই কমেন্টে আমাদের জানাবেন।