নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের মাঝে দিন দিন বাড়ছে কো-ওয়ার্কিং স্পেস খোঁজার প্রবণতা। খুঁজবে না-ইবা কেন! নতুন কোম্পানি খুলে বসার মতো সাহস উদ্যোক্তাদের থাকলেও অনেক সময়েই শুরুতেই পুরোদস্তুর অফিস ভাড়া নেওয়ার মতো সামর্থ্য থাকে না। তবে ঘরে বসে তো আর কোম্পানি চালানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন একটি কার্যকরী কর্মক্ষেত্রের। একটি কো-ওয়ার্কিং স্পেস যার সহজ সমাধান। সে কারণেই কো-ওয়ার্কি স্পেস রীতিমতো সময়ের দাবি হয়ে উঠছে।
কো-ওয়ার্কিং স্পেসের চাহিদা ক্রমাগত বাড়লেও অনেকেই জানেন না কো-ওয়ার্কিং স্পেস কীভাবে সাজাতে হয়। আজ তাই এটা নিয়েই আমাদের ব্লগ।
কো-ওয়ার্কিং স্পেস আসলে কী?
কো-ওয়ার্কিং স্পেসের ধারণাটা খুব সহজ। আজকাল নিজের কোম্পানির জন্য পুরো অফিস না নিয়ে অন্য অনেকের সাথে একই অফিস ভাগ করে নেওয়ার একটি চল শুরু হয়েছে। এটিকেই মূলত কো-ওয়ার্কিং স্পেস বলে।
একটি কোম্পানির কর্মক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই থাকে গোছানো কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলোতে। কম্পিউটার, মিটিং রুম, এমনকি রান্নাঘরও।
এই অস্থায়ী অফিসগুলোকে স্থায়ী অফিসের সব সুবিধাই প্রদান করতে হয়। তা অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নব্য কোনো স্টার্টআপের মালিক, সবার জন্যই। নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে আছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও আরামদায়ক চেয়ার-টেবিল ব্যবস্থা। সাথে ক্লায়েন্টদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য থাকে পেশাদার মিটিং স্পেসও।
কো-ওয়ার্কি স্পেস হরেক রকম এবং শ্রেণির কর্মজীবী মানুষের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা না দিতে পারলে কেউ সেখানে অফিস করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। তাই অফিস ভাড়া নেওয়া মানুষের কাজের ধরন, সম্মিলিত পছন্দ-অপছন্দ সবকিছুর ওপর ভিত্তি করেই বানাতে হবে কো-ওয়ার্কিং স্পেস।
কো-ওয়ার্কিং স্পেস সাজাতে হবে কীভাবে, তা দেখে নেওয়া যাক:
১.মানানসই ফার্নিচার নির্বাচন করে
কাজে মন বসাতে আরামদায়ক কো-ওয়ার্কিং স্পেস খুবই কার্যকর
কর্মক্ষেত্রে কাজে মনোনিবেশ করতে আরামদায়ক পরিবেশ ছাড়া উপায় নেই। সাথে প্রয়োজন মানানসই ফার্নিচার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট, পানির ফিল্টার থেকে শুরু করে আরামদায়ক টেবিল-চেয়ার, উন্মুক্ত তাক, ব্যক্তিগত ড্রয়ার সবই। কার্যকরী ওয়ার্কিং স্পেস গড়ে তুলতে এগুলো আবশ্যক।
এ ছাড়া কাজের সুবিধার্থে বাড়তি চেয়ার, স্টেশনারিসামগ্রী শেয়ার করতে চাকায় চলবে এমন ড্রয়ার কিংবা স্টোরেজ ইউনিট, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতে ফাইল কেবিনেট౼ভাগ করে নেওয়া অফিসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় এই ধরনের আসবাবও। ব্যবহার করা যেতে পারে পোর্টেবল কম্পিউটার টেবিল, যাতে করে সহজেই তার স্থান পরিবর্তন করে করা যায় অফিস স্পেসের পুনর্বিন্যাস।
আপাতদৃষ্টে আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পেছনে খরচ বাড়তি মনে হতে পারে, তবে দিন শেষে তা স্পেসটিকে আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক তো করবেই, সাথে আপনার কর্মক্ষেত্রকে কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করে তুলতে রাখবে বিশেষ ভূমিকা।
কো-ওয়ার্কিং স্পেসের মালিকানা যদি অন্য কারো হয়, তবে অফিস ভাড়া নেওয়ার আগে এই সুযোগ-সুবিধাগুলো আছে কি না, সেটা দেখে নিন।
আরো পড়ুন: অফিসের কোথায় চাই কেমন চেয়ার
২.কাজের স্থান পরিপাটি রাখার মাধ্যমে
কাজের জায়গা পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি রাখার প্রয়োজনীয়তা না বললেই নয়। কর্তৃপক্ষকে তো সচেতন থাকতেই হবে, তবে একা একজনের পক্ষে অফিস পরিপাটি রাখা কখনোই সম্ভব নয়। তাই সচেতন থাকতে হবে সবাইকেই।
- ওয়ার্কিং স্পেস ব্যবহার করছেন এমন প্রত্যেকে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে যাতে জানেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকে শুধু নিজ দায়িত্বটুকু পালন করলে ওয়ার্ক স্পেসটি পরিপাটি রাখা তেমন কোনো ব্যাপারই না। যেমন, অফিসে কাজ করা প্রতিটি মানুষই যদি ঠিক জায়গায় ময়লা ফেলে, বা অফিসে কাজ শেষে যাওয়ার আগে জায়গাটি পরিপাটি করে রেখে যায়, তাহলে আর কর্তৃপক্ষকে আলাদা করে খুব একটা হ্যাপা পোহাতে হয় না।
- নানা বাজে অভ্যাস থেকে মানুষকে বিরত রাখতে, অথবা জানা বিষয়গুলোই আবার একটু মনে করিয়ে দিতে ব্যবহার করা যেতে পারে নানা সৃজনশীল ও শৈল্পিক সাইন। তাতে করে তা সহজেই চোখে পড়বে, কাজের কাজও হয়ে যাবে। ‘ধূমপান নিষিদ্ধ’, ‘যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলবেন না’, ডাস্টবিনের ওপর ‘আমাকে ব্যবহার করুন’౼এ ধরনের সাইনগুলো ব্যবহার করতে হবে।
এই টুকটাক পরিবর্তনগুলোই নিশ্চিত করবে কো-ওয়ার্কিং স্পেসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
আরো পড়ুন: অফিস ডেস্ক সাজানোর কৌশল
৩.কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে
কো-ওয়ার্কিং স্পেসের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে
যেকোনো বাসাবাড়ি বা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সব সময়েই চিন্তার কারণ। আমাদের সহকর্মীদের আমরা ভরসা করতে চাই ঠিকই। তবে একজন অসাধু ব্যক্তির জন্যই হয়ে যেতে পারে ভয়াবহ কিছু।
মনে রাখতে হবে, কো-ওয়ার্কিং স্পেস একটি ভাগ করে নেওয়া অফিস। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাই অফিসে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদেরও সচেতন করতে হবে।
যেহেতু নিজ কোম্পানির বাইরের লোকের সাথে থেকেই করতে হবে সারা দিনের কাজ, তাই সবাইকে ডেস্ক থেকে দূরে গেলে কম্পিউটার বন্ধ করা এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সুরক্ষিত থাকে।সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেকোনো ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা প্রোটোকল সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।
শুধু তথ্যের নিরাপত্তা নয়, কর্মরত সকলের নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। রাতের অন্ধকারেও কর্মক্ষেত্রের চারপাশ যথেষ্ট আলোকিত থাকা, নিরাপত্তাকর্মী বা গার্ডদের কার্যকর উপস্থিতি, ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা–এর সবই নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভব হলে প্রবেশপথে বসাতে হবে কোনো শনাক্তকরণ ব্যবস্থা।
আমাদের দেশে নতুন জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কো-ওয়ার্কিং স্পেস সম্পর্কে আপনার মতামত কী, তা এখনই জানিয়ে দিন আমাদের।