আধুনিক ফ্ল্যাটগুলোতে রান্নাঘরের আয়তন ক্রমশই ছোট হয়ে আসার কারনে অনেকেই রান্নাঘর গোছাতে গিয়ে হিমশিম খান। ছোট রান্নাঘরে প্রয়োজনীয় রান্না সামগ্রী রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। অগোছালো রান্নাঘর সহজেই নোংরা হয়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে রান্নাতেও, কারন এ ধরনের রান্নাঘর কাজে একঘেয়েমি নিয়ে আসে। বলা বাহুল্য যে, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যভাসের অন্যতম একটি উপাদান হলো একটি সুন্দর গোছানো রান্নাঘর। রান্নাঘর ছোট হলেও সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হলে একাধিক মানুষ একসাথে কাজ করতে পারে, ফলে কাজেও গতি এবং মানসিক প্রশান্তি আসে। অর্থাৎ একটু সচেতনতা এবং সামান্য চেস্টার মাধ্যমে আপনি যদি আপনার রান্নাঘরকে একটি মডার্ন কিচেনে রুপান্তর করতে পারেন, তাহলে তা আপনার জন্যই অনেকাংশে সুফল বয়ে আনবে। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে একটি আধুনিক রান্নাঘর কেমন হওয়া উচিত এবং ছোট জায়গার মধ্যে কিভাবে আধুনিক রান্নাঘর সাজাতে হয়।
কিচেন ক্যাবিনেট
রান্নাঘর গুছিয়ে রাখার জন্য কিচেন ক্যাবিনেট অনেক কাজের একটি জিনিস। এই কারনে আপনার রান্নাঘর ডেকোরেশনের সময় প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা বুঝে ক্যাবিনেট ডিজাইন করা উচিত, কারন এতে জায়গা কম অপচয় হবে। রান্নাঘরে ক্যাবিনেট ইউনিট করার সময় রান্নাঘরের কি কি ঘরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করবেন সেগুলো মাথায় রাখতে হবে। ছোট সাইজের রান্নাঘর ডিজাইনের জন্য মড্যিউলার ইউনিট সবচেয়ে কার্যকরি ভুমিকা পালন করে। কারন এই ধরনের ডিজাইনে অল্প স্থানের মধ্যে অনেক জিনিস রাখা যায়।
সাধারণত, আধুনিক ফ্ল্যাটগুলোতে এক দেয়াল বিশিষ্ট কিংবা এল (L) শেইপের কিচেন ডিজাইন বেশি দেখা যায়। যদিও বেশিরভাগ ফ্ল্যাট গুলোতে আজকাল ক্যাবিনেট করাই থাকে, তবে আপনি যদি কাস্টোমাইজড করিয়ে নিতে চান, তাহলে দেয়ালের মাপ অনুসারে ক্যাবিনেট বানিয়ে নিতে হবে। রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এই ক্যাবিনেটে তুলে রাখুন। এতে রান্নাঘরের পরিসর কম হলেও অনেকটা ফাঁকা লাগবে।
রান্নাঘর রাখুন আলোকিত ও ঠান্ডা
রান্নাঘরে লাইটিংয়ের জন্য হালকা হলুদ, সাদা কিংবা ক্রিম রঙের লাইট ব্যবহার করুন। রান্নাঘরে দেয়ালের এক পাশে লাইট না লাগিয়ে সম্ভব হলে চারপাশের দেয়ালে লাগিয়ে নিন। এক পাশে লাইট ব্যবহারে অন্য পাশে ছায়া পড়ে। ফলে রান্নায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে রান্নাঘরের ছাদের সঙ্গে একটি বড় লাইট লাগিয়েও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ছোট রান্নাঘরের গরমের হাঁসফাঁস থেকে মুক্তি পেতে বাতাস বের করে দেওয়ার জন্য ওপরে একটি এগজস্ট ফ্যান লাগিয়ে নিন। ধোঁয়া বের করে দেওয়ার জন্য রান্নাঘরে যাতে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে সে জন্য একটি জানালার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
ইনডোর প্ল্যান্ট রাখুন কিচেনে
রান্নার ক্লান্তি দূর করতে রান্নাঘরেও একটা ইনডোর প্লান্ট রাখুন। মানিপ্লান্ট (পুরবীলতা) ব্যবহার করতে পারেন। সজীবতা আসবে, মসলা বা আঁশটে গন্ধও দূর হবে। জানালায় কিংবা জানালার লাগোয়া দেয়ালে একটা লতাজাতীয় গাছ ঝুলিয়ে দিন। চাইলে সিঙ্কের পাশে ছোট একটা পাতাবাহার গাছও রাখতে পারেন। সপ্তাহে এক দিন গাছটি বারান্দায় রোদে রাখুন।
রান্নাঘরের দেয়াল
যে কোন ঘরের চেহারা বদলে দিতে সেই ঘরের রঙ উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে। তাই সর্বোপরি রান্নাঘরের রঙ বদলাতে হবে। রান্নাঘরের রঙের ক্ষেত্রে, রঙ যত হালকা হবে ততই ভাল, কারন হালকা রঙে যেকোন ঘর স্বাভাবিকের চেয়ে বড় দেখায়। তবে, যেহেতু রান্নাঘরে সারাদিন তেল এবং মশলা নিয়ে কাজ করা হয়, তাই এই ঘর স্বাভাবিকের চেয়ে নোংরাও হয় বেশি। তাই যে কোন মুল্য সাদা রঙ বাদ দিয়ে অন্য রঙ ব্যবহার করুন। চেস্টা করবেন কিচেন ক্যাবিনেটের সাথে মিলিয়ে কনট্রাস্ট কালারের রঙ ব্যবহার করার, এক্ষেত্রে রান্নাঘরের দেয়ালে অফ হোয়াইট কিংবা হালকা সবুজ রঙ ব্যাবহার করতে পারেন। কিচেন ক্যাবিনেট এবং রান্নাঘরের দেয়ালে নানা ধরনের কালার কম্বিনেশন ব্যবহার করতে পারেন যেমন – ক্রিম-লাল, সাদা-কালো, অফহোয়াইট-সবুজ ইত্যাদি।
কিচেন অর্গানাইজারের ব্যবহার
রান্নাঘর ছোট হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হাঁড়ি-পাতিল না কেনাই ভালো। এখন বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কিচেন অর্গানাইজার পাওয়া যায়। এগুলোর একটিতেই একাধিক কাজ করা যায় এবং অনেক জিনিস রাখার সুবিধা পাওয়া যায়। প্রয়োজন বুঝে আপনার রান্নাঘরের জন্য কিচেন অর্গানাইজার কিনে নিতে পারেন। রান্না শেষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখুন।
ইন্ডাকশন চুলা ব্যবহার
আজকাল বাজারে অনেক ধরনের স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্স এসেছে যা আমাদের রান্নাঘরের কাজকে সহজ করে তোলে। এটি ইন্ডাকশন এবং মাইক্রোওয়েভ এই ধরনের যন্ত্রপাতি। ইন্ডাকশন চুলায়, আপনি সাধারণ গ্যাসের মতো সরাসরি আগুনের তাপ অনুভব করেন না। এটি বৈদ্যুতিক কানেকশন-এর সাহায্যে চালিত, ফলে খাবার রান্না করতে কম তাপ লাগে।
এক্ষেত্রে সাধারণ চুলার পরিবর্তে ইন্ডাকশন গ্যাসের চুলা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি রান্নার জন্য মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহার করলে আপনি তাপ কম অনুভব করবেন এবং কোনও সমস্যা ছাড়াই খাবার রান্না হবে।
চিমনি ব্যবহার করুন
একটি মডার্ন কিচেনে রান্না থেকে নির্গত ধোয়া, গ্রিজ এবং দুর্ঘন্ধ দূর করার জন্য চিমনি ব্যবহার করা উচিত। কিচেনে থাকা চিমনি কিচেন এয়ার থেকে টিক্সিক এলিমেন্ট আলাদা করে শোষন করে নেয় রান্নাঘরের অভ্যন্তরিন বাতাসের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করে। যে সব রান্নাঘরে চিমনি থাকেনা, সেই সকল রান্নাঘরের দেয়াল দ্রুতই নোংরা হয়ে যায় এবং খুব ঘণ ঘণ পরিষ্কার করতে হয়। এছাড়াও, চিমনি না থাকলে অনেক সময় কিচেনে একটু তেল চিটচিটে ভাব থেকেই যায়। কিন্তু কিচেন হুড অর্থায় চিমনি ব্যবহার করলে এর সাক্সন পাওয়ারের মাধ্যমে আপনার রান্নাঘরকে অনেক খানি পরিষ্কার রাখবে।
কিচেন এপ্ল্যায়েন্স
একসময় রান্নাঘরের যন্ত্রপাতি বলতে শুধু পাটাপুতা আর হামনদিস্তা থাকলেও কালের বিবর্তনে এসব যন্ত্রের আবেদন ফুরিয়েছে। বর্তমানে শহরের প্রায় সব কিচেনেই দেখা পাওয়া যায় মডার্ন কিচেন এপ্ল্যায়েন্স যেমন – ব্লেন্ডার, রুটিমেকার, এয়ার ফ্রায়ার, ওভেন, রাইস কুকার ও কারি কুকার, চপিং মেশিন, ডিশওয়াশার ইত্যাদি।
অনেক পরিবারের জন্য এই সকল যন্ত্রপাতি নিত্যদিনের ব্যবহার্য। এছাড়াও, এগুলোর পাশাপাশি, জুসার, কফি মেকার, ওয়াটার হিটার, টোস্টার, স্যান্ডুইচ মেকার ইত্যাদিও অনেকে ব্যবহার করে থাকেন। এসকল আধুনিক কিচেন এপ্ল্যাইয়েন্স ব্যবহার করার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে কম সময়ে অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করা, যা ম্যানুয়ালি করতে গেলে বেশ খানিকটা বাড়তি সময় লেগে যায়।
আধুনিক রান্নাঘর সাজাতে হাতিলের মড্যুলার কেবিনেট
আধুনিক রান্নাঘর সাজাতে হাতিল নিয়ে এসেছে মড্যুলার ক্যাবিনেট কালেকশন। নানা রঙ এবং ম্যাটেরিয়ালের তৈরি মড্যুলার কিচেন ক্যাবিনেট। এই ক্যাবিনেট গুলোতে কিচেন সিংক, স্মার্ট চুলা, কিচেন হুড সহ নানা ডিজাইনের স্টোরেজ সলিউশ্যন যোগ করার সুবিধা রয়েছে।
আপনার রান্নাঘরের সাইজ যেমনই হোক না কেন, হাতিলের এই স্ট্যাডার্ন্ড এবং স্মার্ট কিচেন ক্যাবিনেটগুলো প্রতি স্কয়ারফুট হিসেব করা আপনি কিচেনে যোগ করতে পারেন। এতে করে আপনার কিচেনে বার বার পরিষ্কার করার ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং সর্বোপরি কিচেনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।