ফার্ণিচার একটি বাসার প্রয়োজন আর সৌন্দর্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে৷ প্রয়োজনের বাইরেও শখের বশেও বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার কিনে থাকি আমরা। ফার্ণিচার কিনে এনে শুধু বাড়িতে রেখে সাজিয়ে দিলেই হয় না, নিয়মিত এসবের যত্নও নিতে হয়। যত্ন আর নিয়মিত দেখভালের অভাবে অল্পদিনেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে ফার্ণিচার। অন্যদিকে বাড়িতে যদি কোনো শিশু বা পোষা কোনো প্রাণী থাকে তাহলে তার দ্বারা ফার্ণিচারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। এরা নানা জিনিস ফেলে দিয়ে, নোংরা করে, খেলার মাধ্যমে ফার্ণিচারকে নষ্ট করে দিতে পারে অল্পদিনেই।
এই লেখায় তাই শিশু ও পোষা প্রাণীদের কাছ থেকে ফার্ণিচারকে রক্ষা করতে ছয়টি পরামর্শ দেওয়া হলো।
শিশু এবং পোষা প্রাণীদের থেকে ফার্ণিচার রক্ষা করার উপায়
১/ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিন
শিশু বা পোষা প্রাণীর হাত থেকে ফার্ণিচারকে বাঁচাতে আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই নিয়ে থাকি। কিন্তু তারপরও হয়তো শিশুরা নোংরা করে ফেলে ফার্ণিচার, পোষা প্রাণীটি ক্ষতিগ্রস্থ করে প্রয়োজনীয় ফার্ণিচারকে। এজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হাতের কাছে দাগ রিমুভার বা ক্লিনার রাখতে পারেন। এগুলোর তাৎক্ষণিক ব্যবহারে ফার্ণিচারের উপর দীর্ঘস্থায়ী দাগ হয় না৷ এছাড়া, শিশু বা পোষা প্রাণী ফার্ণিচারে মূত্র ত্যাগ করলেও সেখানে গন্ধ থাকতে পারে। এজন্য এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করতে পারেন। এয়ার ফ্রেশনার বাসার শিশু বা পোষা প্রাণীটির জন্য নিরাপদ কিনা তা আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।
২/ প্রতিরক্ষামূলক কভার কতটা দরকারি?
পোষা প্রাণী সাধারণত ফার্ণিচারের বিভিন্ন অংশে আঁচড় কাটে, মূত্র ত্যাগ করে কিংবা তাদের লোমের অংশ ফার্ণিচারের গায়ে লেগে থাকে তাহলে ফার্ণিচার নষ্ট হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। একইভাবে বাসায় শিশু থাকলে সেও ফার্ণিচারের গায়ে আঁকাআঁকি করে, নখের আচঁড় বসায় কিংবা পানি বা অন্য জিনিস দিয়ে ময়লা করে ফেলে ফার্ণিচার। এক্ষেত্রে সমাধান হয়ে আসতে পারে প্রটেক্টিভ বা প্রতিরক্ষামূলক কভার। প্রতিরক্ষামূলক কভারগুলো যে দেখতে অস্বস্তিকর বা অসুন্দর হয় এমন নয়, এগুলো নরম ফ্যাব্রিক এবং সাধারণ প্রিন্ট দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে যাতে আপনার বাড়ির নকশা থেকে দূরে না নিয়ে ফার্ণিচারের ক্ষতি রোধ করা যায়।
যদিও একটি প্রতিরক্ষামূলক কভার আপনার খাট, চেয়ার বা সোফার মতো ফার্ণিচারগুলোকে সমস্ত ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে না, তবে এটি একটি অতিরিক্ত স্তর হতে পারে যা আপনার ফার্ণিচারের মূল অংশে পৌঁছাতে বাধা দেবে। ফলে পোষা প্রাণী বা শিশুদের করা নোংরা পরিষ্কার করা সহজ হয়ে উঠতে পারে।
৩/ এমন রং নির্বাচন করুন যাতে ময়লা আড়াল করা যায়
আপনি হয়ত প্রচন্ড ব্যস্ত থাকেন সারাদিন। সপ্তাহে হয়ত একদিন সময় পান ফার্ণিচার পরিস্কার করার। কিন্তু দুই থেকে তিনদিনেই ধূলো বালি জমে যেতে পারে ফার্ণিচারে৷ এর মধ্যে কোনো অতিথির আগমন ঘটলে ধূলো জমা ফার্ণিচার দেখলে হয়ত নাক সিটকাবে। সেক্ষেত্রে সমাধান? ময়লা এবং ধুলো আড়াল করে এমন রঙের ফার্ণিচার বেছে নিতে পারেন। আপনার যদি ফার্ণিচার পরিস্কার করার সময় না থাকে তখন মাঝারি উষ্ণ ধূসর, উষ্ণ রং, বা নীল ধূসর রঙের ফার্ণিচার রঙের সাথে ধূলোর রঙ মিশে গিয়ে ময়লা আড়াল করতে আপনাকে সাহায্য করবে।
এই রঙের ফার্ণিচার বেছে নেওয়ার জন্য আপনাকে বাড়ির অভ্যন্তরীণ নকশায় কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়বে না। আপনি ধারাবাহিকভাবে যে ফার্ণিচারগুলো ব্যবহার করেন তা আপনার ঘরের বাকি অংশের বিপরীতে গাঢ় রঙের হতে পারে এবং হালকা রঙের ফার্ণিচারগুলো ঘরের এমন স্থানে রাখা যেতে পারে যেখানে আপনার শিশু এবং পোষা প্রাণীরা ঘন ঘন আসে না।
৪/ স্ক্র্যাচিং প্যাডেও রাখুন আস্থা
বাসায় পোষা প্রাণী বিশেষ করে বিড়াল জাতীয় প্রাণী থাকলে বাসার সোফা, পর্দা কিংবা শখ করে বানানো কাঠের ফার্ণিচার কোনোকিছুই বিড়ালের আঁচড় থেকে সহজে রক্ষা পায় না। বিড়ালের আঁচড় কাটা বন্ধ করার আসলে কার্যকর কোনো উপায়ও নেই। এর চেয়ে বরং বিড়ালকে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এক্ষেত্রে বিড়ালের আঁচড় থেকে ফার্ণিচার রক্ষা করতে হলে স্ক্র্যাচিং প্যাড বানিয়ে ফেলাটাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আপনার বাসার কোথাও হয়তো পুরাতন ফোম বা কার্ডবোর্ড পড়ে থাকতে পারে। এগুলো দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারেন স্ক্র্যাচিং প্যাড। বিড়ালের নজরে আনার জন্য রাবারের বল বা স্ট্রেস বলও ব্যবহার করা যায় এগুলোতে। বিড়াল লম্বা বা আড়াআড়িভাবে আঁচড় কাটে বলে তার অভ্যাস বুঝে স্ক্র্যাচিং প্যাড তৈরি করতে হবে। তাছাড়া, আঁচড় কাটার অভ্যাস কিছুটা হলেও কমানোতে সহায়ক হয় বিড়ালের নখ কেটে দিয়ে। নিয়মিত নখ ছোট করে রাখলে ফার্ণিচারেরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।
৫/ শিশু আর পোষা প্রাণীর জন্য আলাদা ফার্ণিচারের ভাবনা
বাসার প্রয়োজনীয় ফার্ণিচারের ক্ষতি করা থেকে শিশু এবং পোষা প্রাণীদের দূরে রাখার আরেকটি সমাধান হতে পারে তাদের জন্যই ফার্ণিচার কেনা। শিশুদের জন্য ফার্ণিচার ব্র্যান্ডগুলোতে বাঙ্ক বেড পাওয়া যায়। দুই সিটের এই বেডকে সহজেই শিশু এবং পোষা প্রাণী দুইয়ের জন্যই ব্যবহার করতে পারেন। শিশুদের জন্য আলাদা একটি রুমের ব্যবস্থা করে সেখানেই এই বাঙ্ক বেডের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
তাছাড়া, শিশু এবং পোষা প্রাণীদের খেলার জন্য কিছু কাস্টমাইজ ফার্ণিচারও বানিয়ে নিতে পারেন যাতে সে এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পারে। বানাতে পারেন আবদ্ধ প্লে গ্রাউন্ডও যেখানে সে আটকে থাকবে তার খেলনা নিয়ে। এতে বাসার অন্যান্য রুমের ফার্ণিচারের ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসবে।
৬/ সচেতনতা আর অভ্যাসের জয়গান
কেমন হয় বলুন তো যদি এতসব সতর্কতা আর ফার্ণিচার রক্ষার দুশ্চিন্তা না-ই থাকে? হ্যাঁ, এটিও সম্ভব তবে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বাসায় শিশু এবং পোষা প্রাণীদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে ফার্ণিচার কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা যদি শেখাতে পারেন তাহলে সব দুশ্চিন্তা দূর হতে সময় লাগবে না। কোন ফার্ণিচার কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে আর কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না সে বিষয়ে শেখানো শুরু করতে পারেন বাসার শিশুকে। শিশুরা যেমন অনুকরণপ্রিয়, পোষা প্রাণীরাও তেমনই মনিবকে দেখেই অনুকরণ করতে শেখে। তাই সেভাবেই শেখানো শুরু করতে পারেন বাসার পোষা প্রাণীকেও। খাবার খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করুন, সোফা বা খাট নয়। ফলে শিশুরাও উৎসাহিত হবে বিষয়টি অনুরকণে। এটি শুধু একটি উদাহরণ মাত্র।
এমন করে ফার্ণিচারের সঠিক ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলুন শিশু ও পোষা প্রাণীকে। হয়ত সময় লাগবে তবে এতে দীর্ঘস্থায়ী ফল পাবেন আপনি৷