নতুন একটা বছরের আগমণ ঘটেছে ইতোমধ্যে। একটা নতুন বছর যখন আসে তখন সবাই-ই কমবেশি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনতে চায়, গা ভাসাতে চায় সময়ের ট্রেন্ডে। মানুষ হিসেবে এটা আমাদের সহজাত স্বভাব। পরিবর্তনের হাওয়াটা শুরু হয় নিজ ঘর থেকেই। আমরা যেখানে থাকি, যে পরিবারের মধ্যে আমরা বেড়ে উঠি সেখানটায় প্রত্যেক সদস্য যেন স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে তার জন্যই আমাদের যত চেষ্টা। ফার্নিচার নিয়ে ভাবনা তাই এই চেষ্টার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই চেষ্টায় এ বছর সময় কিংবা যুগের সাথে মিলিয়ে কী ধরণের ফার্নিচার ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটানো যায় তা নিয়েই আজকের আয়োজন।
১. টেকসই ফার্নিচারে ঝুঁকছে সবাই
বাজারে অসংখ্য ফার্নিচার দোকান আছে, আছে ব্র্যান্ড শোরুমও। এসব দোকান ও শোরুমে পছন্দের ফার্নিচারটিও পেয়ে যেতে পারেন সাধ্যের মধ্যেই। ডিজাইন এবং গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে একটা সময় মানুষ ফার্নিচার বাজারে গিয়ে যেকোনো ফার্নিচারের দোকানেই ঢুঁ মারত, পছন্দ হলে কিনেও ফেলতো কাঙ্খিত ফার্নিচার। কিন্তু সময় বদলেছে, বদল এসেছে সচেতনতার জায়গায়ও। জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বাড়তে থাকায় মানুষ এখন আর যখন তখন ফার্নিচার কেনার অভ্যস্ততা থেকে সরে আসতে শুরু করেছে।
ক্রেতারা এখন এমন ফার্নিচার খুঁজছে যেগুলো গুণগত মান এবং ডিজাইনের সাথে আপোস না করে ঠিক থাকবে বহুদিন। অর্থাৎ, টেকসই ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে গ্রাহকদের।
সেই আগ্রহের জায়গায় বড় সমাধান হয়ে এসেছে হাতিল। আমদানি করা ওক কাঠ দিয়ে ফার্নিচার তৈরি করছে দেশীয় এই ফার্নিচার ব্র্যান্ড। বর্তমানে জার্মানভিত্তিক দ্য ফরেস্ট স্টিওয়ার্ডশিপ কাউন্সিলের (এফএসসি) সনদপ্রাপ্ত ওক এবং বিচ ওক কাঠ দিয়ে ফার্নিচার উৎপাদন করছে হাতিল। এই ধরণের কাঠগুলো একইসাথে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। ক্রেতারা তাই পরিবেশ সচেতনতার জায়গা থেকেই নিশ্চিন্তে আস্থা রাখতে পারছেন হাতিলের উপর। হাতিলের খাট থেকে শুরু করে ঘরের নানা ফার্নিচারেই (সোফা, সেন্টার টেবিল, ডিভান ইত্যাদি) ওক এবং বিচ ওক কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।
২. একের ভেতরে এত কিছু!
বাজারে গেলেই দেখবেন বিভিন্ন পণ্যে নানা অফার দেওয়া হয়। কেউ হয়ত এক পণ্য কিনে আরেক পণ্য উপহার হিসেবে পেয়ে যাচ্ছে। কেউ বা পাচ্ছে দামে ছাড়ের সুযোগ। তবে ফার্নিচার ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন পথে হেঁটে একের ভেতর একাধিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। আরও সহজ করে বললে, এক ফার্নিচার দিয়েই একাধিক সুবিধা গ্রহণ করা যাচ্ছে এখন।
যেমন, হাতিলের একটি ড্রয়ারসহ স্মার্ট টেবিল রয়েছে। এটিকে চাইলে খাট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
আবার হাতিলের কিছু সোফা রয়েছে যাকে একইসাথে খাট হিসেবেও সহজেই ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে জীবনযাত্রার খরচ বাড়লেও মানুষের আয় সে তুলনায় বাড়ে নি৷ এতে করে মানুষের চাহিদা এবং ইচ্ছে থাকলেও প্রয়োজনীয় সকল ফার্নিচার কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য মানুষ মাল্টিফাংশানাল ফার্নিচারে আগ্রহী হচ্ছে। আপনি যদি একটি ফার্নিচার কিনেই সেটির মাধ্যমে দুইটি ফার্নিচারের সুবিধা পেয়ে যান তাহলে মন্দ কী! এতে দুইটি ফার্নিচার কেনার খরচ যেমন বাঁচবে তেমনি ঘরে জায়গাও লাগবে কম।
হাতিলের এমন কিছু মাল্টিফাংশনাল ফার্নিচারের ডিজাইন দেখুন এখানে।
৩. কার্ভ ডিজাইনে নতুনত্বের ছোঁয়া
কার্ভ ডিজাইনের উদ্ভব গত শতাব্দীতে হলেও এটির চল আগে তেমন দেখা যায়নি। করোনা কালের পর কার্ভ ডিজাইনের ফার্নিচারের চাহিদা বেড়েছে সারাবিশ্বেই। কেউ কেউ সাম্প্রতিক সময়ে এই ডিজাইনকে ফার্নিচার ফিল্ডের টপ ডিজাইনেরও খেতাব দিয়েছে।
অনেকেই বলে থাকেন কার্ভ ডিজাইনে প্রকৃতির ছোঁয়া থাকে। তাই প্রকৃতির সাথে সখ্যতার মেলবন্ধন তৈরির পথ হিসেবে কার্ভ ডিজাইনের ফার্নিচারে ঝুঁকছেন ক্রেতারা।
তাছাড়া স্ট্রেইট লাইন ভিত্তিক ফার্নিচারের চেয়ে কার্ভ ডিজাইনের ফার্নিচারে বসে আরাম এবং ব্যবহার স্বস্তিদায়ক হওয়ার কারণে গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় ক্রমেই শীর্ষে উঠে আসছে এই ধরণের ফার্নিচারগুলো।
বাংলাদেশের বাজারে এখন কার্ভ ডিজাইনের সোফা, খাট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিলসহ নানা ধরণের ফার্নিচার পাওয়া যায়। এই ফার্নিচারগুলো প্রিমিয়াম ডিজাইনের পাশাপাশি ধরে রেখেছে গুনগত মান।
৪. বায়োফিলিক ডিজাইনও পিছিয়ে নেই
বায়োফিলিক হচ্ছে এমন এক ধরণের কনসেপ্ট যার মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে যুক্ত থাকা যায়। বায়োফিলিক কনসেপ্টে প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়, বোঝা যায় পরিবেশ ও প্রকৃতির মেলবন্ধন। ফার্নিচারের বাজারেও এখন বায়োফিলিক ডিজাইনের গুরুত্ব বাড়ছে। বায়োফিলিক ডিজাইনের কাঠের কারুকাজে নতুনত্ব আসে, প্রাকৃতিক আলো আর গাছের সবুজ ছোঁয়ায় বায়োফিলিক ডিজাইন পায় অন্য মাত্রা।
বায়োফিলিক ফার্নিচার ডিজাইনে স্টিলের ব্যবহার কমিয়ে কাঠ এবং ফেব্রিকের আধিক্য দেখা যায়। পরিবেশবান্ধব কাঠের ব্যবহারের কারণে উৎপন্ন ফার্নিচার পরিবেশের জন্য ক্ষতির কোনো কারণ হয় না।
বাজারে এখন বিভিন্ন ফার্নিচারই বায়োফিলিক ডিজাইনে তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে লিভিং রুমের বিভিন্ন ফার্নিচার যেমন রয়েছে তেমনি ছোটখাটো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফার্নিচারে ও (যেমন, মিনি কেবিনেট, সেন্টার টেবিল ইত্যাদি) জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বায়োফিলিক ডিজাইন।
৫. রংয়ের ভিন্নতায় ব্যক্তিগত পছন্দের আধিক্য থাকুক
ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারা এখন রং এবং বার্ণিশের দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছেন। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ফার্নিচারের ডিজাইন পছন্দ হলেও ফার্নিচারের রং বা কালার গ্রেডিং পছন্দ না হওয়ায় সেই ফার্নিচার কেনা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখন তাই একই ডিজাইনের ফার্নিচার ভিন্ন ভিন্ন রংয়ে বিক্রি করছে ফার্নিচার ব্র্যান্ডগুলো। এতে করে ক্রেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দের প্রতি আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে। পছন্দের রংয়ে ফার্নিচার পেয়ে সন্তুষ্টির ছাপও দেখা যাচ্ছে তাদের চোখে মুখে।
অন্যদিকে প্যাটার্ন ফার্ণিশিংয়ে নতুনত্ব এনেছে ফার্নিচার ব্র্যান্ডগুলো। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর ডায়নামিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার মিশেলে এখন প্যাটার্ন ফার্ণিশিংকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফার্নিচারে একটা সময় কালার কম্বিনেশনে ক্রেতাদের অতটা নজর না থাকায় প্যাটার্ণ ফার্ণিশিংয়ের বিষয়টিও ক্রেতাদের কাছে এক প্রকার অবহেলিত ছিল। তবে সময়ের সাথে মানুষের পছন্দের রীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন ফার্নিচার ডিজাইনের পাশাপাশি পছন্দের ফার্নিচারের কালার গ্রেডিং ও প্যাটার্ণ ফার্নিশিং পরখ করে নিচ্ছেন।
৬. ঐতিহ্যের সাথে সখ্যতা
যতই আমরা আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলি না কেন, পুরোনোকে কেউই ভুলি না, ভুলতে পারা যায় না। ফার্নিচারের সাথেও একই তথ্য বাস্তব এক সত্য। সময়ের সাথে ফার্নিচার ব্র্যান্ডগুলো নিত্য নতুন ডিজাইনের ফার্নিচার বাজারে আনলেও ভিনটেজ ডিজাইনের ফার্নিচার রেখে দিচ্ছে শোরুমে। এই ধরণের পুরোনো ডিজাইনের ফার্নিচারের চাহিদাও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরোনো ডিজাইনের এসব ফার্নিচারের সাথে দেশীয় ঐতিহ্যের বিষয়টি যুক্ত থাকায় ক্রেতাদের কাছে এসব ফার্নিচার আলাদা একটি গুরুত্ব বহন করে চলেছে।
হাতিলের মতো ফার্নিচার ব্র্যান্ডগুলো তাই ভিনটেজ ডিজাইনের এসব ফার্নিচারকে ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করছে। তবে ডিজাইন পুরোনো হলেও গুণগত মান এবং কালার গ্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ ক্রেতারা যতই পুরোনো ডিজাইনে আগ্রহী হোক, মানের দিক থেকে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই ফার্নিচার কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায় তারা। তাই ডিজাইন পুরোনো হলেও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া থাকে এসব ফার্নিচারে ।