সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেকেরই পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য, বয়সসহ বিভিন্ন মানদন্ড বিবেচনায় প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যে বিছানায় আপনি ঘুমাচ্ছেন, তার ম্যাট্রেসে যদি সমস্যা থাকে, তাহলে আরামের ঘুমটাই নষ্ট হয়ে যায়।
আগে এ দেশের মানুষ তুলার নরম তোশকে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করলেও আধুনিক সময়ে এসে মানুষের কাছে ম্যাট্রেস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আরামদায়ক বিছানা কেবল ভালো ঘুমেরই নিশ্চয়তা দেয় না, পাশাপাশি দিনের বেলা আপনাকে কাজ করতে উৎসাহিত এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যজনিত অসুস্থতা এড়াতেও সাহায্য করে। তাই, ম্যাট্রেসের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। ম্যাট্রেস কেনার আগে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন তা নিয়ে এই লেখায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
১. ব্যবহারভেদে পরিকল্পনা
ম্যাট্রেস কিনতে যাওয়ার আগে শুরুতেই যে বিষয়টি মাথায় রাখবেন তা হচ্ছে কে কে ব্যবহার করবেন সেটি। একই বিছানা যদি একাধিক বয়স, স্বাস্থ্য এবং বিপরীত লিঙ্গের মানুষ ব্যবহার করেন, তাহলে ম্যাট্রেস কেনার আগে দুইজনের সুবিধা অসুবিধাকেই বিবেচনায় নিতে হবে। একজন ভারী দেহের মানুষের সঙ্গে হালকা দেহের মানুষের ম্যাট্রেসের চাহিদা মিলবে না। আবার, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছুটা নরম ম্যাট্রেস প্রয়োজন হয়। বয়সের পার্থক্যও তাই ম্যাট্রেস কেনার আগে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।
ম্যাট্রেস কেনার আগে আপনার শরীরের মাপের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আপনাকে দেখতে হবে, কোনটি আপনার শরীরের জন্য আরামদায়ক হবে। একইসাথে আপনার সঙ্গীর কাছ থেকেও জেনে নিতে হবে তার কেমন ম্যাট্রেস প্রয়োজন।
তাছাড়া, ম্যাট্রেস কেনার আগে বাজেটের বিষয়েও ধারণা রাখুন। কোয়ালিটি ভেদে ম্যাট্রেসের দামেও তারতম্য দেখা যায়। কম দামে নিম্ন মানের ম্যাট্রেস না কিনে কোয়ালিটি যাচাই করে একটু বেশি দামে ভালো ম্যাট্রেসটাই কেনার পরিকল্পনা করুন।
২. সৌন্দর্য নয়, আস্থা রাখুন কোয়ালিটিতে
সাধারণত ফার্নিচার দোকানে গেলে আমরা কোয়ালিটির সাথে আউটলুকের বিষয়টিও বিবেচনা করি। ম্যাট্রেস যেহেতু বিছানায় চাদর এবং তোষকের নিচে থাকে, তাই এর বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে না ভাবাই উচিত। এজন্য ম্যাট্রেসের কোয়ালিটিতে মনোযোগ দিন।
বাজারে নানা ধরণের ম্যাট্রেস আছে, যার সবটায় ঘুমিয়ে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য নাও পেতে পারেন। এজন্য পরামর্শ থাকবে, কেনার আগে ম্যাট্রেসে অন্তত একবার শুয়ে দেখুন। এটা এজন্য বলছি কারণ, বাসায় কিনে নিয়ে গিয়ে দেখলেন সেটা খুব বেশি নরম বা শক্ত, যা আসলে আপনার উপযুক্ত নয়। তাই টাকা নষ্ট করার চেয়ে দোকানে শুয়েই একবার পরখ করে নিন। বারবার পরিবর্তন করাটাও তো ঝক্কির ব্যাপার, তাই না?
বিভিন্ন অসাধু বিক্রেতারা ম্যাট্রেস এর ভেতর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও ম্যাট্রেস এর উপর কিছু সুগন্ধি পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হয়, যা ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কোয়ালিটি দেখার সময় এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।
ম্যাট্রেস কেনার সময় বিক্রেতার কাছে জিজ্ঞাসা করুন, এর নির্মাণ উপাদান সম্পর্কে। হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসেছে, সুতির কাপড়ের তৈরি ম্যাট্রেস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
৩. কোন ম্যাট্রেস কিনবেন?
বাংলাদেশের বাজারে গত কয়েক বছরে রিবন্ডেড ফোমের ম্যাট্রেসের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটির পেছনে কারণ হতে পারে, সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে আপনি যখন বাড়ি ফেরেন, তখন বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আপনাকে শরীরের ক্লান্তি দূর করে দিতে এই ধরণের ম্যাট্রেস দারুণ সহায়তা করতে পারে৷
বাংলাদেশের ফার্নিচার ব্র্যান্ড ‘হাতিল’ ও রিবন্ডেড ফোমের ম্যাট্রেস তৈরি করে বেশ সফলতা পেয়েছে। হাতিলের সুপিরিয়র কোয়ালিটির ম্যাট্রেসগুলো নরম এবং টেকসই উপকরণ দিয়ে তৈরি হওয়ায় আপনাকে একটি সহজাত ঘরোয়া অনুভূতি দেবে। এই ম্যাট্রেস ব্যবহারে আপনার ঘুমও হবে দারুণ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাই রিবন্ডেড ফোমের ম্যাট্রেসের জনপ্রিয়তা আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
৪. রিটার্ন পলিসির বিষয়েও জানতে হবে
ম্যাট্রেস কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে রিটার্ন পলিসির বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিন। বাংলাদেশে কিছু ফার্নিচার ব্রান্ডের সাধারণত ২-৩ দিন পর ম্যাট্রেস রিটার্ন করার পলিসি রয়েছে। এক্ষেত্রে হাতিল এর রয়েছে তিন দিনের রিটার্ন পলিসি। এই বিষয়টি জরুরি কারণ, ম্যাট্রেস কিনে বাসার গিয়ে কয়েকদিন ব্যবহারের পর যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, তাহলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে বিক্রেতা এই সুবিধে দিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে অবগত হয়ে নিন ৷ তাছাড়া, ম্যাট্রেসের ওয়ারেন্টি নিয়েও ভালোভাবে জেনে নিন। হাতিল অবশ্য ম্যাট্রেসের ক্ষেত্রে এক বছরের আফটার সেল সার্ভিস দিয়ে আসছে।
৫. পরিচর্যায় টিকবে অনেকদিন
দেখেশুনে ভালো মানের ম্যাট্রেস কেনার পর যত্ন আর পরিচর্যার অভাবে সেটি অল্পদিনেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ম্যাট্রেস কেনার পর তাই এটি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি ছয় মাসে একবার ম্যাট্রেস পরিষ্কার করা উচিত। আর প্রতি ছয় থেকে ১০ বছরে ম্যাট্রেস বদলানো উচিত।
ম্যাট্রেসে থাকা শুকনো ধুলাবালি, শরীর থেকে ঝরে পড়া মৃত কোষ, খাবারের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। এর কোথাও দাগ লাগলে সেটার জন্য দরকার ‘স্পট ট্রিটমেন্ট’। পরিমাণমতো পানি ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে তাতে নরম কাপড় ভিজিয়ে ম্যাট্রেসের দাগ লেগে থাকা জায়গাটা মুছতে হবে, পরে তা শুকিয়ে নিতে হবে। সবশেষে পুরো ম্যাট্রেসয়ের ওপর বেইকিং সোডা ছিটিয়ে দিতে হবে হালকা করে, এক ঘণ্টা রাখতে হবে। এতে ম্যাট্রেসের দুর্গন্ধ ও ব্যাক্টেরিয়া দূর হবে।