অফিস ডেস্ক সাজানোর কৌশল

গেটিসবার্গ কলেজের একটি গবেষণায় দেখা যায় , আমাদের জীবনের এক-তৃতীয়াংশই  কাটে কর্মক্ষেত্রে। সপ্তাহের ৫ দিন , ৭-৮ ঘণ্টা  খুব সহজেই চলে যায় অফিসের পেছনে। কাজের চাপে অনেকেরই হয়তো সারা দিন কাটাতে হয় নিজের ডেস্কেতাই মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে আর গুছিয়ে কাজ করার সুবিধার্থে  অফিস ডেস্কটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা ভীষণ জরুরি। তবে অফিস ডেস্কের ছোট্ট জায়গাটা সুন্দরভাবে সাজানোও বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। তাই আজকের ব্লগের বিষয় অফিস ডেস্ক সাজানোর এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি সহজে করে ফেলার কিছু উপায়। 

অফিস ডেস্কে যোগ করে নিতে পারেন  ঘরোয়া কিছু ছোঁয়া 

কেন সাজাবেন আপনার অফিস ডেস্কটি?

অফিসের ডেস্ক শুধুমাত্র আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র এবং মেশিনারি রাখার জায়গা নয়। এটি আপনার উৎপাদনশীলতা বজায় রেখে নিরন্তর কাজ করে যাবার সহায়ক। তবে নিরন্তর কাজের মাঝেও দরকার বুকভরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু খানি স্বস্তি দেবার ফুরসত। আর এ সময়টাতে আপনার মানসিক চাপ কমিয়ে আপনাকে নিমিষেই স্বতঃস্ফূর্ত করে তুলতে পারে একটি সুন্দর করে সাজানো অফিস ডেস্ক।

একরাশ কাজ শেষে একটি অগোছালো ডেস্কের প্রতি দৃষ্টি ফেরানো বিরক্তিকর। পেশাদারি মনোভাবের কারো জন্যে এমন অবস্থাতে পূর্ণ মনোযোগে কাজে ফেরা কষ্টসাধ্য। বাকি কাজ ফেলে রেখে তাকে ডেস্ক গোছানোতে মনোনিবেশ করতে হয়।

অথচ একটি পরিষ্কার টেবিল, যার সাথে আছে প্রয়োজনীয় ফাইল ব্যবস্থাপনার জন্যে স্টোরেজ সুবিধা, এবং মনকে চাংগা করে তোলার জন্যে বিভিন্ন উপকরণ, আপনার মনকে সতেজ করে তোলে। আপনাকে সাহায্য করে কাজের স্পৃহা ফিরে পেতে।

চলুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক একটি মনোরম, সজ্জিত টেবিল এর সুবিধাগুলিঃ

স্বস্তির পরশঃ কেমন হয় যদি আপনার সংক্ষিপ্ত বিশ্রামের সময়টি কাটে আপনার প্রিয়জনের ছবিতে চোখ রেখে? অগোছালো এবং নেতিবাচক ভাবনায় নিজেকে হারিয়ে না ফেলে আপনি উপলব্ধি করেন বেঁচে থাকার আনন্দ। একটি পরিচ্ছন্ন গোছালো ডেস্কে আপনি জায়গা করে দিতে পারেন আপনার একটি প্রিয় মুখের প্রতিচ্ছবি। অভাবনীয় স্বস্তিতে আপনার ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমিষেই। 

মনোযোগ বৃদ্ধিঃ  মনোযোগ বৃদ্ধিতে শৃংখলাপূর্ণ পরিবেশের বিকল্প নেই। ডেস্কটপে অতিরিক্ত ফাইলপত্র আপনাকে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারে। এতে আপনার হাতের কাজে ব্যঘাত সৃষ্টি হয় এবং পুনরায় মনোযোগ ফিরে পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়। পরিচ্ছন্ন, সুন্দর অফিস ডেস্ক অযাচিত হুলস্থূলে আপনার মস্তিষ্ককে বিপর্যস্ত হতে না দিয়ে, আপনাকে দেয় নিরবচ্ছিন্ন মনযোগ ধরে রাখার সুযোগ।

উৎপাদনশীলতাঃ বিশৃংখল পরিবেশ অস্থিরতার অনুঘটক। মাত্রাহীন অস্থিরতা থেকে আসে অবসাদ। একটি সুশৃংখল অফিস ডেস্ক যেখানে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলি সাজিয়ে রাখা হাতের কাছেই, আপনাকে অতিরিক্ত ভাবনা থেকে বিরত রাখে। আপনি পান পূর্ণ মানসিক শক্তিতে কাজে ঝাপিয়ে পড়ার প্রেরণা।

ব্যক্তিগত সৌন্দর্যবোধের বহিঃপ্রকাশঃ সুচারুরূপে সুবিন্যস্ত অফিস ডেস্ক আপনার অভিজাত রুচির পরিচায়ক।  ঝকঝকে টেবিলটপে ছিমছাম সাজানো উপকরণ ভাবপূর্ণ শোভনতার জন্ম দেয়। নিজস্ব সৃজনশীলতার আলোকে আপনি সূক্ষসৌন্দর্যবোধের বহিঃপ্রকাশ করতে পারেন।

পেশাদারিত্বঃ সুসজ্জিত অফিস ডেস্ক সচেতনতা, সুশৃংখলা, নিষ্ঠা, এবং দায়িত্বশীল মনোভাবকে প্রস্ফুটিত করে। পেশাদারিত্বের ভিত্তি এসব গুণাবলির পূর্ণ প্রতিফলনে আপনি পান পরিকল্পিত কাজ করার শক্তি। 

প্রিয়জনের ছবি কিংবা ঘরোয়া আসবাব

দিনের এতটা সময় আপনজনদের থেকে দূরে থাকাটা খুব আনন্দদায়ক নয়। তাই কর্মক্ষেত্রেও প্রিয় মানুষদের ছোঁয়া সঙ্গে রাখতে অফিস ডেস্কে তাদের ছবি রাখতে পারেন। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, প্রিয়জনের ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটি একঘেয়ে কাজের মধ্যে হয়ে উঠতে পারে প্রেরণার উৎস। এ ছাড়া প্রিয় কোনো শোপিসও সাজিয়ে রাখতে পারেন অফিস ডেস্কে। হয়তো বাড়িতে অযত্নে পড়ে আছে ইউরোপ ট্যুরের ছোট্ট কোনো স্যুভেনির। সেটিই না হয় সাজিয়ে রাখুন অফিস ডেস্কে। ছোট্ট সেই স্মৃতিই হয়তো কাজের চাপে আপনার মন ভালো করে দেবে

ডেস্ক প্লান্ট

ইট-কাঠ-পাথরের এই শহরেও সবুজের সান্নিধ্য দিতে ডেস্ক প্ল্যান্টের জুড়ি নেই। অনেক প্রজাতির গাছই এখন বাজারে পাওয়া যায় যেগুলো ঘরের ভেতরে স্বাচ্ছন্দ্যে বড় হতে পারে, আবার তাদের আকারটাও ইনডোর স্পেসে রাখার  জন্য বেশ উপযোগী। পাথরের মধ্যে শিকড় গেঁথেই কিছু ডেস্ক প্ল্যান্ট বেঁচে থাকতে পারে, তাই ধুলাবালি নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হবে না। শহরের বড় অফিসগুলোতে বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় দিন-রাত এসি চলছে। তাই ভেতরের  পরিবেশটা হয়ে যায় গুমোট ও ভ্যাপসা। ছোটখাটো আকারের গাছও এই ক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করবে, ফলে আপনার ডেস্কের আবহ হবে সজীব ও প্রাণবন্ত। এ ক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন মানিপ্লান্ট, অ্যালোভেরা, ক্যাকটাস কিংবা স্নেক প্লান্ট

অর্গানাইজার ও শেলফ

কাজের চাপে নিজের ডেস্কটি হয়তো ঠিকভাবে সব সময় গুছিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। বারবার অগোছালো হয়ে যায় নতুন ফাইলপত্রের ভিড়ে। আর অগোছালো হলে যে শুধু দেখতে অসুন্দর লাগবে, তা কিন্তু না। অগোছালো ডেস্ক আপনার কাজের গতিও ব্যাহত করে; কেননা খোঁজাখুঁজিতে প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় হয়।

আর এই সমস্যাটির সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো অর্গানাইজার। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের অর্গানাইজার পাওয়া যায়। কোনোটি কাপড়ের তৈরি, কোনোটি প্লাস্টিকের। কী ধরনের জিনিস গুছিয়ে রাখতে চান, সেটি মাথায় রেখে অর্গানাইজার কিনে ফেলতে পারেন অফিস ডেস্কের জন্য।

তবে সব জরুরি জিনিস তো আর ডেস্কে সাজিয়ে রাখা যায় না। তাই দেখতে পারেন অফিসের উপযোগী বেশ কিছু শেলফ ও কেবিনেটও। অফিস স্টোরেজের উপযোগী এসব আসবাব নিয়ে না হয় একবার আলোচনা করে দেখুন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে। স্টোরেজের জায়গা নিশ্চিত হয়ে গেলে ডেস্ক পরিচ্ছন্ন রাখা আপনার জন্য হবে আরো সহজ।

গোছানো ডেস্ক সময় ও কর্মশক্তি উভয়ই বাঁচাবে 

ডেস্কের নিচের জায়গার যথাযথ ব্যবহার

অফিস ডেস্কের নিচে বেশ খানিকটা জায়গা থাকে, যা বেশির ভাগ সময়ই অব্যবহৃত থাকে। এই জায়গাটা একটু পরিকল্পনা করে ব্যবহার করলে আপনি আপনার ডেস্কের বিশৃঙ্খলা কমাতে পারেন। ডেস্কের নিচে  আলাদা ঝুড়ি বা ড্রয়ার যোগ করলে বেশ কিছুটা জায়গা পাওয়া যায়  অল্প ব্যবহৃত  জিনিসগুলো রাখার জন্য। ডেস্কের যেই জিনিসগুলো প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে না, বা অন্য জিনিসের তুলনায়  কম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো রেখে দিতে পারেন ডেস্কের নিচের জায়গাটিতে।  স্টোরেজ ব্যবস্থার সমাধান পেতে দেখতে পারেন এই লেখাটিও। 


কাজ অনুযায়ী ডেস্ক ভাগ

কাজ অনুযায়ী ব্যবহারের জিনিসগুলোকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করলে খুঁজে পাওয়া যেমন সহজ হবে, তেমন ডেস্কে জায়গাও কিছুটা খালি হবে। এ ক্ষেত্রে অনলাইন কাজ  আর  অফলাইন কাজ হিসেবে দুই ভাগে ভাগ করতে পারেন, অথবা কাজের ধরন অনুযায়ীও ভাগ করে নিতে পারেন। এক পাশে ডেস্কটপ, কি-বোর্ড, মাউস, চার্জার ও বিভিন্ন তার থাকলে অন্য পাশে থাকতে পারে ফাইল- ফোল্ডার, কাগজ, কলম, কলমদানি, স্ট্যাপলার  ইত্যাদি। 

বিশৃঙ্খল অফিস ডেস্ক হতে পারে বাড়তি চিন্তার উৎস 

কন্টেইনার  ও লেবেল

রং-বেরঙের ফোল্ডার, কন্টেইনারের  ভেতরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখলে, সেটা পুরো ডেস্ককেই দিতে পারে নতুন সাজ। এখানে কন্টেইনার হিসেবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন প্লাস্টিক বা বেতের ঝুড়ি, যা বাজারে অহরহ পাওয়া যায়। একই রং বা বিপরীত কন্ট্রাস্টের রঙের ফোল্ডার ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ সুন্দরভাবেই অফিস পরিবেশে ও আপনার রুচিশীলতার পরিচয় দিতে পারবেন।  এখানে অবশ্যই আরেকটা অপরিহার্য কাজ হবে ঠিকমতো  লেবেলিং করা। এটা আপনার ডেস্কটিকে দেবে বেশ পেশাদার একটা চেহারা। অফিস স্পেসটাকে দেখাবে একদম টিপটপ, সাজানো-গোছানো। 

দেরি না করে জীবনটাকে আরও সহজ করে তোলার জন্য আজই শুরু  করে দিন অফিস ডেস্কটা সুন্দর করে সাজানোর প্রক্রিয়া। কর্মক্ষেত্রে দিনের যে বড় অংশটা কাটাবেন, সেখানেও স্বাচ্ছন্দ্য হোক আপনার সঙ্গী।

সারকথা

দেরি না করে জীবনটাকে আরও সহজ করে তোলার জন্য আজই শুরু করে দিন অফিস ডেস্কটা সুন্দর করে সাজানোর প্রক্রিয়া। কর্মক্ষেত্রে দিনের যে বড় অংশটা কাটাবেন, সেখানেও স্বাচ্ছন্দ্য হোক আপনার সঙ্গী।

অফিস ডেস্ক সাজানো সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর

হাতিলের অফিস ডেস্ক কেন আলাদা?

অভিনব নকশা, দক্ষ কারিগর এবং বিশেষজ্ঞ দলের পরিকল্পনা এবং ছক এর উপর ভিত্তি করে প্রস্ততকৃত হাতিলের প্রতিটি আসবাব আধুনিক নান্দনিকতা এবং উচ্চমানের উপকরণের এক অভূতপূর্ব মিশেল। পরীক্ষিত মান, নিখুঁত ফিনিশের সমন্বয়ে আপনি পান দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের প্রতিশ্রুতিপূর্ণ দৃষ্টিনন্দন গৃহ এবং অফিস সজ্জার সামগ্রি।

অফিস ডেস্ক সাজানোর সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?

অফিস ডেস্ক সাজাতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন কাজের ধরণ অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণ করা। এরপর প্রয়োজনীয় আসবাব, আলো, এবং সংরক্ষণের উপকরণ যেমন ড্রয়ার বা ফাইল কেবিনেট বেছে নিতে হবে। ডেস্ক যেন সহজে পরিষ্কার রাখা যায় এবং অনায়াসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়া যায়—সে দিকেও নজর দিতে হবে।

একটি ভালো অফিস ডেস্কের বৈশিষ্ট্য কী কী?

একটি মানসম্মত অফিস ডেস্ক হবে মজবুত, আরামদায়ক উচ্চতায় তৈরি, এবং যথেষ্ট জায়গাসম্পন্ন। এতে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা যেমন ড্রয়ার থাকতে পারে এবং এক বা একাধিক তারপথ সুবিধাও থাকতে পারে যাতে অগোছালো তার না থাকে।

কীভাবে অফিস ডেস্ককে উৎসাহব্যঞ্জক করে তোলা যায়?

নিজের কাজের পরিবেশকে উৎসাহব্যঞ্জক করে তুলতে ডেস্কের ওপর কয়েকটি প্রিয় বই, ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবি, ছোট গাছ বা মিনিমালিস্ট ডেকোরেশন রাখতে পারেন। সেই সঙ্গে নিজের প্রাত্যহিক ব্যবহারের জিনিসগুলোকে সুচারুভাবে সাজিয়ে রাখা আপনার ডেস্ককে কার্যকর ও মানসিকভাবে আরামদায়ক করে তোলে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।