আমরা যে বাসাটায় আছি, সেটা খুব একটা পুরোনো না। বাসাটা তৈরি হওয়ার পর আমরাই প্রথম উঠেছিলাম। প্রায় ১৫ বছর হয়ে গেল এই বাসায় আছি। কিন্তু শুরুর দিকে নতুন বাসার যে চকচকে ভাবটা ছিল, সেটা এখন আর নেই। পুরোনো বাসায় চাকচিক্য না থাকাটাই স্বাভাবিক। বহুদিন ধরে ভাবছি বাসা বদলে ফেলব। কিন্তু তা আর হয়ে উঠছে না। ছোট ভাইয়ের স্কুল, বাবার অফিস সবই এখানে। আর দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় থাকায় প্রতিবেশী সবার সাথে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাই আমরা বাসা বদলের কথা তুললেই মা তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান। আমাদেরও এই বাসার প্রতি মায়া পড়ে গেছে। কয়েক দফা ভেবেও কাজ না হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিলাম এই বাসাকেই তাহলে নতুনের মতো করে ফেলি। যেই ৭টি উপায়ে আমি আমাদের বাসাকে একটি নতুন রূপ দিলাম, সেগুলোই বলছি আজ। এই উপায়ে আপনিও আপনার বাসাকে করে তুলতে পারেন নতুনের মতো।
দেয়ালে নতুন রং
দেয়ালে ভিন্নতা আনতে যোগ করতে পারেন নকশা বা প্যাটার্ন
আমাদের ঘরকে তুলনামূলক বেশি পুরোনো দেখানোর প্রধান কারণটাই হলো রংচটা দেয়াল। তাই প্রথমে দেয়ালটা নিজের পছন্দমতো রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারেন। দেয়ালে ভিন্নতা আনতে বিভিন্ন নকশা বা প্যাটার্ন যোগ করতে পারেন। যদি রং করার ঝামেলায় না যেতে চান তাহলে রঙের বদলে দেয়ালে লাগাতে পারেন নিজের পছন্দমতো ওয়ালপেপার। ঘরের নতুন দেয়াল ঘরকে অনেকাংশে বদলে দেবে। ওয়ালপেপার তুলনামূলক সাশ্রয়ী আর কদিন পর সহজেই বদলে ফেলার সুবিধা তো আছেই।
আকর্ষণীয় মেঝে
মেঝে নতুন দেখাতে ব্যবহার করা যেতে পারে কার্পেট
দেয়ালের পাশাপাশি মেঝেটাকেও নতুন করে ফেলা যায়। একদিকে চকচকে দেয়াল আরেক দিকে পুরাতন মেঝে দেখতে ভালো দেখায় না। কিন্তু মেঝেটা বদলে ফেলা তত সহজ নয়। তাই মেঝে নতুন দেখাতে ব্যবহার করা যেতে পারে কার্পেট। পুরো ঘরকেই কার্পেটে আগাগোড়া মুড়ে ফেলা যেতে পারে। আবার শুধু ঘরের মাঝখানে থাকতে পারে একটি আকর্ষণীয় কার্পেট। কার্পেট ঘরে অন্য রকম একটা ছোঁয়া দেয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঘরের দেয়াল, মেঝে, আসবাবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্পেট বাছাই করাটাও জরুরি। আধুনিক সাজের ঘরে থাকতে পারে জ্যামিতিক নকশাওয়ালা কার্পেট। আবার পুরো ঘরের আবহ যদি দেশীয় ধরনের হয়, তাহলে মেঝেতে শোভা পাবে পশমিনা বাহারি কার্পেট।
আসবাবও নতুন!
বার্নিশ করে নিলেই আসবাব দেখায় নতুনের মতো
আসবাব পুরোনো হলেই সহজে আসবাব বদল করা যায় না। উপায় হতে পারে আসবাবগুলো নতুন করে রং করে ফেলা। কাঠের আসবাব হলে তো কোনো কথাই নেই। বার্নিশ করে নিলেই আসবাব দেখায় নতুনের মতো। এ ছাড়া কোনো ভাঙা বা ক্ষয় হয়ে যাওয়া আসবাব থাকলে সেগুলো মেরামত করে নিলেই হয়। আবার চাইলে আমার মতো, পুরোনো ধাঁচের আসবাবকে দিতে পারেন নতুন রূপ। আমি আমার পুরোনো খাটের ভারী নকশাওয়ালা হেডবোর্ডটি বদলে নিয়েছি আধুনিক নকশায়। বিশাল বড় পুরোনো শোকেসটা কেটে ছোট করেছি, যেটা ঘরের অনেকটা জায়গা বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনিও চাইলে আপনার আসবাবগুলোকে ঘরের সুবিধা অনুযায়ী বদলে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নিতে হবে কাঠমিস্ত্রির সহায়তা।
জায়গা অদলবদল
আসবাব বদল করতে না পারলেও আসবাবের জায়গাটা পরিবর্তন করে দিলেই ঘরকে দেখাবে অন্য রকম। খাটটা যদি এক দেয়ালের পাশে থেকে থাকে তাহলে সেটাকে মাঝে এনে দুই পাশে জায়গা করা যেতে পারে। কিংবা পড়ার টেবিলটা নেওয়া যেতে পারে জানালার কাছে। সোফা, ডাইনিং টেবিল, আলমারির জায়গাগুলো বদলে দিলেই ঘরকে নতুন দেখাবে। মাঝে মাঝেই আমাদের ঘরের আসবাবগুলোর জায়গা বদল করে দেওয়া উচিত। এতে একঘেয়েমি দূর হয়। ঘরও দেখায় সুন্দর।
পর্দা, চাদর, বালিশ
পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, সোফার কভার ইত্যাদির বৈচিত্র্য ঘরকে নতুন দেখাতে সহায়তা করে। এগুলো তো বদল হয় নিয়মিতই। কিন্তু পুরো ঘরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এগুলোর ধরনটাই বদলে ফেলা যেতে পারে। পুরো ঘরকে যদি আধুনিক রূপ দেওয়া হয় তাহলে সবকিছুতেই আনতে হবে আধুনিকতার ছোঁয়া। একরঙা কিংবা হালকা ডিজাইনের পর্দা, বিছানার চাদর হবে উপযুক্ত। আবার ঘরে দেশীয় ঐতিহ্যের ছাপ রাখতে চাইলে নকশিকাঁথা, নকশি চাদর, কুশনের বিকল্প হয় না। দেয়ালের রং, আসবাব এসবের সাথে মিল রেখেও বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা ব্যবহার করা যায়।
সাজসজ্জার সরঞ্জাম
ঘরের সবকিছুই তো নতুন হলো। এবার ঘরকে একটু সাজানোর পালা। ঘর সাজানোর জন্য ঘরের আয়তন ও ধরন আগে বুঝতে হবে। ঘর ছোট হলে বড় আয়না হতে পারে সাজের সরঞ্জাম। এতে ঘর বড় দেখাবে। এ ছাড়া দেয়ালে ফ্লোটিং শেলফে ছোট ছোট শোপিস সাজিয়ে ঘরকে আকর্ষণীয় করা যায়। আধুনিকভাবে ঘর সাজালে মেটালিক শোপিসের সাথে ঝকমকে আলো ব্যবহার করা যেতে পারে। বাঙালি ভাবধারায় ঘর সাজালে ঘরের একপাশে শতরঞ্জি ও রংবেরঙের কুশন ব্যবহার করে সাজানো যেতে পারে।
ঘরে চাই পর্যাপ্ত আলো
ঘরে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের সুযোগ না থাকলে কৃত্রিম আলো বৃদ্ধি করতে হবে
ঘরে পর্যাপ্ত আলো না থাকলেও ঘরকে পুরোনো দেখায়। তাই ঘরের আসবাবগুলো এমনভাবে রাখতে হবে যেন পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো ঘরে প্রবেশ করতে পারে। আবার চাইলে জানালার ধরনও বদলে দেওয়া যেতে পারে। জানালা কাঠের হলে তার বদলে কাচের জানালা ব্যবহার করা যেতে পারে৷
ঘরে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের সুযোগ না থাকলে কৃত্রিম আলো বৃদ্ধি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ঘর বড় হলে সিলিংয়ে ঝোলানো যেতে পারে ঝাড়বাতি। ছোট ঘরে নান্দনিক টেবিলল্যাম্প, স্ট্যান্ডল্যাম্প ইত্যাদি হতে পারে সমাধান। এ ছাড়া নিজের রুমকে সাজানো যেতে পারে ফেইরি লাইটস দিয়ে।
ঘরকে নতুন দেখানোর এই উপায়গুলো আপনার জন্য কতটা কার্যকর, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।