গ্রীষ্মের উত্তাপ কি টের পাচ্ছেন? ছয় ঋতুর এই দেশে গ্রীষ্মে স্বাভাবিকভাবেই সূর্যের উত্তাপ অন্যান্য ঋতু থেকে বেশি থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই উত্তাপ যেন আরো বেড়েছে। বাইরে তো গরম পড়েছেই, গরমের কারণে ঘরেও টেকা দায় হয়ে পড়ছে। ফলে ঘর ঠান্ডা রাখার নানা উপায় খুঁজছি আমরা। আজকের এই লেখায় এই গ্রীষ্মে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘর ঠান্ডা রাখার ছয়টি উপায় জেনে নেওয়া যাক।
প্রাকৃতিক উপায়ে ঘর ঠান্ডা রাখার ৬টি উপায়ঃ
১/ দিনের বেলা পর্দা টানুন
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ডটগভ এর তথ্য বলছে, জানালার মাধ্যমে সূর্যালোকের তিন চতুর্থাংশের বেশি তাপ ঘরে প্রবেশ করে এবং জানালা ঢেকে রাখা তা কিছুটা কমাতে সহায়তা করে। তাই রোদের উত্তাপ থেকে বাঁচতে ঘরের জানালা ঢেকে রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে পর্দা হতে পারে সমাধান। কেউ কেউ জানালা ও দরজায় ব্ল্যাকআউট পর্দাও লাগিয়ে থাকেন। দিনের বেলায় ঘরে রোদ ঢোকা বন্ধ করা এবং রাতে যাতে ঘর ঠান্ডা থাকে, সে জন্য বাইরে কড়া রোদ উঠলে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘরের পর্দা টেনে রাখতে হবে। তাতে বাইরের কড়া রোদ ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে ঠান্ডা থাকবে ঘর।
এই কৌশলটি কার্যকর করার জন্য পর্দাগুলো দ্বারা অবশ্যই পুরো জানালা এবং দরজা ঢেকে রাখতে হবে এবং এমনকি ক্ষুদ্রতম পরিমাণে আলোও যাতে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জানালায় ছাউনি থাকলে প্রায় ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত তাপ কমাতে সহায়ক হয়।
এমন কৌশল হয়ত আপনার ঘরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারে, হয়ত ভালোও লাগবে না আপনার কৌশলটি। কিন্তু ঘর ঠান্ডা রাখতে কৌশলটি প্রয়োগ করে দেখুন।
২/ তীব্র আলো এড়িয়ে চলুন
সূর্যের উত্তাপ থেকে ঘরকে শীতল রাখতে জানালা ও দরজায় পর্দা টানার পর যদি ঘর অন্ধকার হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন সাপেক্ষে ঘরে আলো জ্বালতে হবে। কিন্তু এতে আবার হিতে বিপরীতও ঘটতে পারে। ঘরে তীব্র আলো জ্বালিয়ে রাখলে গরম বেড়ে যেতে পারে। তাই এই সময় খুব প্রয়োজন না হলে ঘরে তীব্র আলো জ্বালানো উচিত নয়। এক্ষেত্রে তাই ডিম লাইট বা টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন।
৩/ পানিতে শীতলতার পরশ
ঘর ঠান্ডা রাখার আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে, ঘরের ভেতর ফ্যানের নিচে পানি ভর্তি বালতি রেখে দেওয়া। এ ছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরের জানালাগুলোর পর্দায় পানি স্প্রে করে দিতে পারেন। এতে বাইরের গরম বাতাস ঘরে ঠান্ডা হয়ে ঢুকবে।
তাছাড়া সন্ধ্যায় বাড়ির ছাদে পানি ঢেলে দিয়েও উপকার পেতে পারেন। নিয়মিত সিলিং ফ্যানগুলো ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে দিতে পারেন। এতে ফ্যানের ময়লা দূর হওয়ায় ফ্যানের গতি বাড়ার সাথে সাথে ঠান্ডা বাতাসও পাওয়া যাবে৷
৪/ গাছ লাগান জানালা ঘেঁষে
গাছ আমাদের বিভিন্নভাবেই উপকার করে। সেই উপকারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, গাছ আমাদের শীতলতার পরশ বুলিয়ে দেয়। ঘর ঠান্ডা রাখার ভাবনায় তাই গাছের বিষয়টিও গুরুত্ব দিন।
বাড়ির পূর্ব এবং পশ্চিম দিকের জানালা ঘেঁষে গাছ লাগাতে পারেন। এতে গাছগুলো সূর্যের রশ্মিকে আটকে দিতে পারবে। বারান্দার গ্রিল এবং ইনডোর স্ক্রিন/ডিভাইডারে লতা ও লতাগুল্ম বাড়ানোও ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করতে পারে।
ঘরে ইনডোর প্লান্ট লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা, বস্টন ফার্ন, উইপিং ফিগ, অ্যারিকা পাম গাছ লাগাতে পারেন। কারণ এই গাছগুলোর বাতাসে ছড়িয়ে থাকা বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
তবে যাদের ঘরে গাছ রাখা সম্ভব নয়, তারা চাইলে মাটির পাত্রে পানি রেখে তাতে কিছু ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিতে পারেন। রাতের বেলায় সেই পাত্রেই রাখতে পারেন সুগন্ধি মোম। মোমের আলো ঘর ঠান্ডা রাখে।
৫/ বিছানায় সুতির চাদর ব্যবহার করুন
আমরা অনেকেই হয়ত জানি না, তুলার তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে। তাই বিছানা বানানোর সময় তুলা কম ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। একইসাথে বিছানায় সুতির চাদর ব্যবহার করতে পারেন। গরমের সময়ে বিছানায় সাদা বা হালকা রঙের সুতির চাদর ব্যবহার করলে বিছানা ঠাণ্ডা থাকবে। খুব গাঢ় রং কিংবা ভারী কাপড়রে বদলে প্যাস্টেল শেডের চাদর বেছে নিতে পারেন। এছাড়া, নিয়মিত বেডকভার এবং বেডশিট পরিবর্তন করুন।
৬/ ভোর এবং সন্ধ্যার পর দরজা জানালা খোলা রাখুন
দিনের বেলায় সূর্যের কড়া রোদে জানাল ও দরজায় পর্দা ব্যবহার করার কারণে ঘরে আলো বাতাস ঢুকতে পারে না৷ তবে দিনের দুই সময়ে এই ক্ষেত্রে শিথিলতা আনতে পারেন। ভোর এবং সন্ধ্যার পর যখন সূর্যের উত্তাপ থাকে না তখন দরজা ও জানালা খুলে দিতে পারেন।
ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা এবং সন্ধ্যার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত জানালা খোলা রাখার সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময়টায় বাতাস ঠান্ডা থাকে এবং বাতাসে ধূলার পরিমাণও অনেক কম থাকে।
তাছাড়া, এই সময়টায় তাপমাত্রাও কম থাকে। তবে এই সময়টায় দরজা ও জানালা খোলা রাখলেও মশা থেকে সাবধান থাকতে হবে। এজন্য মশারিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে হবে।
শুধু বাইরের দরজা ও জানালাই নয়, এই সময়টায় ঘরের ভেতরের দরজা ও জানালাও যথাসম্ভব খোলা রাখুন। খোলা রাখুন বাথরুমের দরজাও। এতে করে সবগুলো ঘরই ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ পাবে।