বাড়িতে স্টোরেজ ফার্নিচার ব্যবহারের ৫ টি ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি বাড়িতে স্টোরেজ ফার্নিচার ব্যবহারের ৫ টি ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি

বাড়িতে স্টোরেজ ফার্নিচার ব্যবহারের ৫ টি ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি

বাসার জন্য ফার্নিচার কেনাকাটার সময় আমরা বেশিরভাগ সময়ই স্টাইলিশ এবং কমফোর্টেবল ফার্নিচার কেনার প্রতি বেশি মনযোগি থাকি। প্রায়ই যেই বিষয়টা অভারলুক করে যাই সেটা হলো স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি, যা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট একটা বিষয় কারন আমাদের ব্যবহার্য সকল আইটেমগুলো সংরক্ষন করার জন্য এই স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিই সহায়ক ভুমিকা পালন করে। স্টোরেজ ফার্নিচারগুলোর যেমন আলমারি, শেলফ, ওয়্যার ড্রোব, ড্রেসার ইত্যাদি কেনার সময় আমরা সাধারণত কালার এবং সাইজই বিবেচনা করি, তবে এগুলোর কারনে ঘরের অভারঅল সৌন্দর্য ব্যহত হবে নাকি, সেটা খতিয়ে কম মানুষই দেখে। প্রপার আন্যালাইসিস না করে কেনার কারনে বেশিরভাগ সময় স্টোরেজ ফার্নিচার ঘরের এস্থটিকের সাথে ম্যাচ হয়না, ফলাফলস্বরুপ – বাসার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। কিন্তু প্রথমবারেই যদি কেউ স্মার্টলি স্টোরেজ সিস্টেম নিজের বাসায় ইমপ্লিমেন্ট করে, তাহলেই এই সমস্যা থেকে অনেকাংশে পরিত্রান সম্ভব। 

বর্তমানে বাসার স্টোরেজ সিস্টেম ইম্প্রুভ করার জন্য অনেক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। আপনার এপার্টমেন্ট বড় কিংবা ছোট হোক, কিছু টিপস ফলো করলে আপনিও বাসার মধ্যে সব ফার্নিচার সুন্দর ভাবে সেট করতে পারবেন, যা আপনার বাসায় গুমোট পরিবেশের উদ্রেক করবেনা। আজকে আমরা ঘরের ভেতর এক্সট্রা স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি তৈরির কিছু ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি নিয়ে কথা বলব, যা ফলো করলে আপনার রুমের ডেকোরেশন এস্থেটিক বজায় থাকবে, আবার স্টোরেজ সমস্যা থেকেও পরিত্রান পাওয়া যাবে। 

স্টোরেজ ফার্নিচার ব্যবহারের ৫ টি ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি

স্টোরেজ ফার্নিচার শুধুমাত্র আপনার প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্রকে অর্গানাইজ রাখার জন্যই ব্যবহৃত হয়না, বরং এটি আপনার বাড়ির সাজসজ্জায় একটি ফাংশনাল এবং স্টাইলিশ ফার্নিচার হিসাবেও কাজ করতে পারে। একটু ক্রিয়েটভ ভাবে সেটাপ করতে পারলে, স্টোরেজ আসবাবপত্র শুধুমাত্র একটা প্র্যাকটিক্যাল পিস থেকে আপনার বাড়িতে একটি অনন্য এবং আই-ক্যাচিং ফার্নিচারে পরিনত হতে পারে।

স্টোরেজ ফার্নিচারকে রুম ডিভাইডার হিসেবে ব্যবহার

স্টোরেজ আসবাবপত্র ব্যবহার করার একটি ক্রিয়েটিভ উপায় হল একটি রুম ডিভাইডার হিসাবে। এটি শুধুমাত্র একটি রুমকে দুইভাগে বিভক্তই করেনা, তবে এটি আরো অতিরিক্ত স্টোরেজ স্পেসও প্রদান করে। রুম ডিভাইডার হিসেবে আপনি মিনিমালিস্টিক কোন স্টোরেজ ফার্নিচার ব্যবহার করতে পারেন, যেমন বুক শেলফ, কিংবা দুই দিক থেকেই অপারেট করা যায় এমন ক্যাবিনেট। লম্বা বুক শেলফ দিয়ে লিভিং রুম এবং ডাইনিং রুম ভাগ করা যেতে পারে, অথবা একটি শেলফ ইউনিট মাধ্যমে বেড রুম থেকে ওয়ার্কস্টেশনকে আলাদা করা যেতে পারে। 

যে কোন স্টোরেজকে রুম ডিভাইডার হিসাবে ব্যবহার করার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এটি আপনার বাড়ির পুরো এভেইলেবল স্পেসকে প্রপার ইউটিলাইজ করতে সাহায্য করে, কারণ আপনি একটি রুমকে সেপারেট এরিয়ায় ভাগ করে অতিরিক্ত স্টোরেজ স্পেস এলোকেট করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, এটি একটি বড় রুমকে পরিপুর্ন করে গড়ে তোলে, যেন রুমটি খালি অনুভূত না হয়। আবার, একটি রুম ডিভাইডার অনেকাংশে একটি রুমের ভিজ্যুয়াল ইন্টারেস্ট হিসেবেও কাজ করে। সুতরাং, কেবল মাত্র একটি রুম ডিভাইডার ব্যবহার করেই আপনি রুমের পুরো ডেকোরেশনই পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন, এবং রুমের স্টোরেজ ক্যাপাসিটিও বৃদ্ধি করতে পারেন।

স্টোরেজ ফার্নিচারকে রুম ডেকোরেশনের জন্য ব্যবহার করা

স্টোরেজ ফার্নিচার যেহেতু ঘরের সৌন্দর্যের একটি অংশ, তাই এটাকে রুম ডেকোরেশনের সাথে প্রপারলি ইন্টিগ্রেট করা যেতে পারে। ইতোমধ্যেই বলেছি যে, সাধারণত ক্যাপাসিটি এবং কালার দেখেই মানুষ স্টোরেজ ফার্নিচার কিনে থাকে, কিন্তু সেটা রুমের ডেকোরেশন কিভাবে ইমপ্লিমেন্ট হবে সেটা অনেকেই চিন্তা করেন না। এ ধরনের ফার্নিচারকে রুমের সাথে ম্যাচ করাতে হলে কালার এবং ডিজাইন প্যাটার্নের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর পর নানা ধরনের এডিশনাল আইটেম, যেমন প্ল্যান্ট, শোপিস, ল্যাম্প ইত্যাদি প্লেসমেন্টের মাধ্যমেও স্টোরেজ ফার্নিচারকে রুমের ডিজাইন প্যাটার্নের সাথে ম্যাচ করানো সম্ভব।

আবার কিচেনে, আলাদা করে শেলফ না কিনে ঝুলন্ত শেলফ ব্যবহার করা যেতে পারে। বলা বাহুল্য যে, সঠিকভাবে ফার্নিচার প্লেসমেন্ট করতে পারলে, যে কোন স্টোরেজ ফার্নিচারই রুমের এস্থেটিকের সাথে মানানসই হবে।

স্টোরেজ ফার্নিচারকে রুম ডেকোরেশনের জন্য ব্যবহার করা

স্টোরেজ ফার্নিচারে নতুনত্ব নিয়ে আসা 

আমরা আমাদের বাড়িতে ব্যবহৃত স্টোরেজ ফার্নিচারগুলোকে সাধারণত খুব একটা পরিবর্তন করিনা। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে আমাদের ফার্নিচারগুলোর উজ্জ্বল রং ফিকে হয়ে আসে এবং অনেকাংশে ড্যামেজ ও হয়ে থাকে। তাই পুরাতন স্টোরেজ ফার্নিচারগুলোকে নতুন রং চড়িয়ে পোলিশ করা হলে সেটা রুমের বাকি ফার্নিচারের সাথে সহজে ব্লেন্ড করতে পারবে এবং রুমের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। শুধু স্টোরেজ ফার্নিচার নয়, আপনি চাইলে পুরো রুমের ফার্নিচারই নতুন করে পোলিশ এবং ডিজাইন করাতে পারেন। এতে করে একদিকে যেমন ফার্নিচারগুলো নতুন প্রান ফিরে পাবে, অন্যদিকে আপনিও নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও, আপনি চাইলে ফার্নিচারের ট্রান্সফর্মেশনও করতে পারেন, উদাহারস্বরুপঃ আপনার পুরাতন ড্রেসারকে স্টাইলিশ বাথরুম ভ্যানিটি বানাতে পারেন। পুরাতন মাউন্টেড শোকেসকে বুক শেলফে পরিনত করতে পারেন। আবার পুরাতন কোন চেয়ারকে টুল বানিয়ে সেখানে ল্যাম্প রাখতে পারেন। মোটকথা, পুরোনো ফার্নিচার রি-পারপোজ করার অনেক পদ্ধতি আছে, আপনি কিভাবে ইউজ করে রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবেন সেটা আপনার ক্রিয়েটিভিটির প্রতিফলন হিসেবে কাজ করবে। 

স্টোরেজ ফার্নিচারকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা

ফোকাল পয়েন্ট হলো এমন একটি স্থান যেখানে সবার নজর প্রথমে যায়। সাধারনত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ রুমের রুমের ফোকাল পয়েন্ট হয় বিছানা। কিন্তু স্টোরেজ ফার্নিচারকেও ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং এটি রুমের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে। উপরন্তু রুমের মাঝখানে কিংবা দরজা থেকে দেখলে প্রথম যেখানে মানুষের চোখ যায়, সেখানে স্টোরেজ ফার্নিচার প্লেস করা বেশ ইউনিক এবং ক্রিয়েটিভ একটি এপ্রোচ। এর অনেক উপরকারিতাও আছে, যেমন – স্টোরেজ ফার্নিচারকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করলে সেটা যে কোন রুমের ক্ষেত্রে একটি ভিজ্যুয়ালি আকর্ষনীয় এপ্রোচ এনে দেয়। আবার এতে করে এভেলএবল স্পেসের পুর্ন ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়াও, এই নতুন স্টাইলের মাধ্যমে আপনার সৃজনশীলতার স্বকীয়তাও প্রকাশ পায়, আপনার রুচিকবোধকে মানুষের সামনে নতুন করে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে। রুমের ফোকাল পয়েন্টে আপনি নানাধরনের স্টোরেজ ফার্নিচার ব্যবহার করতে পারেন , যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – মাঝারি সাইজের ক্যাবিনেট, এস্থেটিক ড্রেসিং টেবিল, বুক শেলফ, ইত্যাদি।

মাল্টি ফাংশনাল স্টোরেজ ফার্নিচার ব্যবহার করা

আপনি চাইলেই খুব সহজে একটি স্টোরেজ ফার্নিচারকে বহুবিধ কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এমন মাল্টি ফাংশনাল স্টোরেজ ফার্নিচার, একদিকে যেমন আপনার ঘরে অনেক স্থান বাড়তি ফার্নিচারে পুরন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনি একসাথে অনেকগুলো আইটেম এক্সেসের সুবিধাও প্রদান করে। উপরন্তু, আপনি যদি এক্সক্লুসিভ ডিজাইনার মাল্টিফাংশনার ফার্নিচার ইউজ করেন, তাহলে এটি আপনার ঘরের নান্দনিকতা এবং সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি করবে। স্টোরেজ সংবলিত অটোম্যান বা ছোট বসার টুল রুমে থাকলে সেখানে চাদর এবং লেপ রাখতে পারেন, ড্রয়ার সংবলিত কফি টেবিলে আপনি ম্যাগাজিন রাখতে পারেন যা কফি পান করার সময় পড়তে পারেন, আবার বিল্ট ইন ডেস্ক সহ বুক শেলফ থাকলে একটি পুর্নাংগ ওয়ার্কস্পেসের ফীল পাবেন – এমন আরো নানা ফার্নিচার আছে যা একই সাথে মাল্টিফাংশনাল পারপজ সার্ভ করে। 

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, স্টোরেজ ফার্নিচার আপনার গৃহের জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ন একটি অংশ। এটা শুরুমাত্র প্রাকটিক্যাল ইউজের বস্তু না, বরং এটা ঘরের সৌন্দর্য এবং এম্বিয়েন্স ফুটিয়ে তুলতেও গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি স্টোরেজ ফার্নিচারকে মাল্টিপারপজ কাজে ব্যবহার করে ঘরের নান্দনিকতা বৃদ্ধি করতে পারেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।