১০ বছর বয়সী রেহান মায়ের সব কাজেই সাহায্য করার চেষ্টা করে। তবে একটা কাজে সে মাঝে মাঝেই গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলে। রেহানের গণ্ডগোলের গল্পটা আগে বলি।
ড্রয়িংরুমে বাবার বন্ধু এসেছে। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে বাবা। আর মা রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে, বাবার বন্ধুর জন্য। রেহান দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরের দরজার কাছে। মনোযোগ দিয়ে দেখছে মায়ের চা বানানো। চা বানানো শেষে রেহানকে ডেকে ড্রয়িংরুমে চা পাঠাবে মা। তাই অপেক্ষা চা বানানো শেষ হবার। চা বানানো শেষে রেহানকে দিয়ে ড্রয়িংরুমে চা পাঠাল মা। কাঁপা কাঁপা হাতে ছোট্ট রেহান ট্রে হাতে এগোচ্ছে ড্রয়িংরুমের দিকে।
রান্নাঘর থেকে ড্রয়িংরুমের দূরত্ব অল্প। তবে রেহানের মনে হচ্ছে অনেক দূর। অর্ধেক পথ পৌঁছাতেই কাপ থেকে একটু চা পড়ল ট্রেতে। থেমে আবার এগোতে থাকল রেহান। প্রায় চলে এসেছে ড্রয়িংরুমে। রেহানকে দেখে বাবা এগিয়ে এল। ঠিক তখনই ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে পা বেঁধে পড়ে গেল রেহান। ট্রে, কাপ ভেঙে একাকার। চা দিয়ে প্রায় গোসল করা অবস্থায় এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে রেহান। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি কান্না শুরু করবে সে।
টি-ট্রলির সাতকাহন
আমি অনেকটাই নিশ্চিত রেহানের গল্পের সঙ্গে সবাই কিছুটা হলেও নিজের ছোটবেলার এমন কোনো ঘটনাকে মেলাতে পারবেন। মায়ের হাত থেকে চায়ের কাপ ড্রয়িংরুম অব্দি পৌঁছানো ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। প্রায় দম বন্ধ করেই ছোট্ট দুই হাতে চা নিয়ে যেতে হতো মেহমানদের কাছে। দম ছাড়লেই পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
তবে এই ব্যাপারটার দারুণ সমাধান টি-ট্রলি কিন্তু সে সময়ও ছিল, এখনো আছে। শুধু এই সমস্যার সমাধান না, আরও অনেক কাজকেই সহজ করে দেয় টি-ট্রলি।
বদলেছে সময়, বদলেছে ফ্যাশন। পরিবর্তন এসেছে পুরো পৃথিবীতে। ঘরের ফার্নিচারের ধরনও গেছে পাল্টে। আমাদের দেশে একসময় টি-ট্রলি ছিল অভিজাত পরিবারের ফার্নিচার। বর্তমানে অনেক বাড়িতেই টি-ট্রলি নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। ক্লাসিক, কিন্তু ট্রেন্ডি এই আসবাব আপনার বাড়িতে প্রয়োজনের পাশাপাশি মেটায় সৌন্দর্যের চাহিদাটাও।
বেশির ভাগ সময়ই টি-ট্রলির ব্যবহার হয় বাসায় মেহমান এলে। তবে অনেক সদস্য আছে এমন পরিবারে ঘরে মানুষদের মধ্যেও টি-ট্রলি ব্যবহৃত হয়।
নাম টি-ট্রলি বলে এ ট্রলিতে করে শুধু চা পরিবেশন করা হয়, ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। চায়ের পাশাপাশি নাশতা পরিবেশনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় টি-ট্রলি। একাধিক তাক বিশিষ্ট টি-ট্রলিগুলোতে থাকে অনেক জায়গা। চা, কফি ও কোল্ড ড্রিংকস রাখার পরও সেখানে রাখতে পারবেন নাশতা। তবে খাবার পরিবেশনার বাইরেও কিন্তু আপনি কাজে লাগাতে পারবেন টি-ট্রলিকে।
যেকোনো ছোট কিছু রাখার জন্য স্ট্যান্ড হিসেবে কাজ করবে আপনার টি-ট্রলি। ছোট কিন্তু সংবেদনশীল কোনো কিছু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও আপনাকে সাহায্য করবে টি-ট্রলি। অনেকের আবার রাত জাগার অভ্যাস।
কারো আবার গভীর রাতে লাগে ব্যাপক ক্ষুধা। আপনি চাইলে টুকটাক নাশতা কাঁধে গভীর রাত অব্দি আপনার পড়ার টেবিল বা কাজের টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে আপনার টি-ট্রলি।
বাড়িতে ব্যবহারের জন্য তৈরি টি-ট্রলিগুলো সাধারণত দুই কিংবা তিন তাকবিশিষ্ট হয়। তাক বা শেলফের সংখ্যার ব্যাপার পুরোটাই আপনার প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে। বাড়িতে নিয়মিত প্রচুর মেহমান এলে কিংবা অনেক খাবার পরিবেশন করতে হলে বেশি তাকবিশিষ্ট, আর কম খাবার পরিবেশনার ক্ষেত্রে কম তাকবিশিষ্ট টি-ট্রলি ব্যবহারটাই যথাযথ।
বিভিন্ন রকম টি-ট্রলির মূল কাঠামোর ভিন্নতা নিয়ে আলোচনাটা বেশ জরুরি। কাঠ, প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিল–বাজারে এই তিন ধরনের ম্যাটারিয়ালে তৈরি টি-ট্রলি পাওয়া যায়। এ ম্যাটারিয়ালগুলো ব্যবহার হয় টি-ট্রলির মূল কাঠামোতে। তাকগুলোতে কিংবা ট্রলির ছোট্ট কোনো জায়গায় অন্য ম্যাটারিয়ালের ব্যবহারও থাকে অনেক সময়।
যেমন, কাঠের টি-ট্রলিতে অনেক সময় তাকগুলো হয় কাচের, হাতল তৈরি হয় স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহারে। নকশা ও মজবুত করতে এ ধরনের ভিন্নতা আনা হয়। বাড়িতে সাধারণত কাঠের টি-ট্রলিই ব্যবহার করা উচিত। কাঠের টি-ট্রলির সবচেয়ে দারুণ দিক নকশা। বাড়ির আভিজাত্য ও রুচিশীলতার প্রকাশ ঘটে কাঠের ট্রলিতে। এ ছাড়া মজবুত ও টেকসই হওয়ার গুণটি আছেই।
হাতিলের টি-ট্রলি
হাতিলের নানা রকম ফার্নিচারের তালিকায় বেশ কিছু দারুণ টি-ট্রলিও রয়েছে। নকশা ও মানের বিবেচনায় সেসব সেরা টি-ট্রলির কাতারে পড়ে। এই মুহূর্তে বাজারে হাতিলের পাঁচটি টি-ট্রলি পাওয়া যাচ্ছে। কাঠের তৈরি এই টি-ট্রলিগুলো আপনার বাড়িতে ব্যবহারের জন্য যথাযথ। সবগুলো কাঠের হলেও অন্যান্য উপকরণ ও নকশায় আছে ভিন্নতা। হাতিলের পাঁচ টি-ট্রলির নামসহ আরও একটু বিস্তারিত জানা যাক।
১. ইয়োর্ক-১০৬
HATIL Tea Trolley York-106
কাঠ, কাচ ও স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি ইয়োর্ক-১০৬-এর নকশা সাধারণ টি-ট্রলির তুলনায় একদমই আলাদা। তিন তাকবিশিষ্ট এ ট্রলির নিচের তাকটি কাঠের। সমান জায়গার পাশাপাশি গ্লাস বা কাপ রাখার আলাদা জায়গা আছে এই তাকে। এর ওপরের দুটি তাক কাচের তৈরি। আমদানিকৃত ৮ মিলিমিটার পুরুত্বের কাচ ব্যবহার করা হয়েছে তাক দুটিতে। হাতল ও স্ট্যান্ডে ব্যবহার করা হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল। ১৬ কেজি ওজনের এই ট্রলির নিচে আছে ছোট ছোট চারটি চাকা। ৮০০ মিলিমিটার উচ্চতা ও অ্যান্টিক কালারের দারুণ এই টি-ট্রলি বাড়িতে আনতে আপনাকে খরচ করতে হবে।
মূল্যঃ ১৬ হাজার ৪৫০ টাকা
২. ফরমোসা-১০৭
HATIL Tea Trolley Formosa-107
ইয়োর্ক-১০৬ ও এই টি-ট্রলির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। শুধু ইয়োর্ক-১০৬-এর কাচের জায়গায় ফরমোসা-১০৭-এ ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ। পুরো ট্রলিতে নেই কোনো কাচ। শুধু কাঠ ও স্টেইনলেস স্টিল।
মূল্যঃ ১৬ হাজার ৫৫০ টাকা।
৩. ফুজি-১০২
HATIL Tea Trolley Fuji-102
ইয়োর্ক-১০৬-এর কিছুটা ছোট ভার্সন ফুজি-১০২। ইয়োর্ক-১০৬-এর নিচের তাকের কাঠের সমান জায়গা পাওয়া যাবে না এই ট্রলিতে। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ইয়োর্ক-১০৬-এর তুলনায় কিছুটা কম। বাদবাকি সমস্ত কিছু ইয়োর্ক-১০৬-এর মতোই ফুজি-১০২।
মূল্যঃ ১৫ হাজার ৬৫০ টাকা।
৪. আসাম-১০১
HATIL Tea Trolley Assam-101
দুই তাকবিশিষ্ট এই টি-ট্রলি বেশ প্রিমিয়াম। নিচের তাকে কাঠ ও ওপরের তাকে কাচ। হাতল পুরোটাই স্টেইনলেস স্টিলের। দুই তাকের চারপাশেই স্টিলের ছোট রেলিং। নিচের তাকের গ্লাস রাখার জায়গা স্টিলের তৈরি। ওপরের তাকের মজবুত কাচটি ৮ মিলিমিটার পুরুত্বের। একদম নিচে থাকা ছোট্ট চারটি চাকা বেশ ভালোভাবে কাজ করে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এই ট্রলি নাড়াচাড়ার ক্ষেত্রে। অ্যান্টিক কালারের এই টি-ট্রলিটি ৮৮০ মিলিমিটার লম্বা।
মূল্যঃ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা।
৫. ইউনান-১০৪
HATIL Tea Trolley Yunnan-104
৮৫০ মিলিমিটার উচ্চতার ১৩ কেজি ওজনের এই ট্রলি পুরোটাই কাঠের তৈরি। দুই তাকের এই ট্রলির নকশা অন্য সব ট্রলির চেয়ে একদমই ভিন্ন। এর নিচেও পাওয়া যাবে চারটি চাকা। অ্যান্টিক কালারের এই টি-ট্রলি ড্রয়িংরুমে ফুটিয়ে তুলবে আপনার আভিজাত্য।
মূল্যঃ ১২ হাজার ২০০ টাকা।
টি-ট্রলির সাতকাহন তো শুনলেন। এবার একটু সময় নিয়ে ভাবুন কোন টি-ট্রলিটি আপনার ঘরে মানানসই হবে। তারপর চটজলদি বেছে নিন আপনার পছন্দের টি-ট্রলি!