শিশুদের কাছে নিজেদের ঘর মানে যেন একটি ভিন্ন জগৎ। এখান থেকেই শুরু হয় জীবনের রঙিন সব স্বপ্নের যাত্রা। তাই এই ঘরটি সবার কাছেই খানিকটা বিশেষ। আপনার বাসার ছোট্ট সোনামণির কথাই ভাবুন। ঘরের একটা কোণে কী যত্ন করে পুতুল আর রংপেন্সিল সাজিয়ে রাখে সে। সেই অংশটুকুকে ‘নিজের’ দাবি করতে তার বিপুল উৎসাহ। অথবা নিজের ছোটবেলার কথাই ভেবে দেখুন না! কখনো সোফার কুশন আবার কখনো মাথার বালিশ দিয়ে ঘর বানিয়ে সেখানটায় খেলায় মেতেই তো আমাদের সারা বেলা কেটে যেত!
শিশুর মানসিক বিকাশেও প্রভাব ফেলে তার ঘর। নিয়মিত ঘর গুছিয়ে রাখার অভ্যাস আমাদের ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। এমন অভ্যাস শিশুর মাঝেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। নিয়মিত ঘর গুছিয়ে রাখার মতো বিষয় শিশুকে পরিপাটি করে তুলতেও ভূমিকা রাখে। এত কিছু যখন একটি ঘরকে জুড়ে তখন সে ঘরের সাজসজ্জাও হওয়া চাই বিশেষ। এবার চলুন সেই বিশেষ সাজসজ্জার সহজ কিছু টিপস জেনে নিই :
রঙিন ভুবন
রং শিশুদের কাছে খুব প্রিয় বিষয়। তাই শিশুর ঘরের সজ্জায় প্রথমেই থাকতে হবে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার। হোক সেটা দেয়ালে কিংবা পর্দায় অথবা আসবাবে। সে ক্ষেত্রে ঘরে শিশুর পছন্দ অনুযায়ী উজ্জ্বল যেকোন রং যেমন লাল, নীল, কমলা, হলুদ ইত্যাদির ব্যবহার করা যেতে পারে। রঙিন এই আবহ ঘরকে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয়। রঙের এই ছড়াছড়ি শিশুকে দেবে অন্য মাত্রার আনন্দ। তার মানে বুঝতেই পারছেন, শিশুর ঘর সজ্জার প্রথম টিপসটি হচ্ছে, ব্যবহার করতে হবে হরেক রং। আবার ঘরের জন্য রং বাছাইয়ে শিশুর মতামত নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। এতে তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো যাবে তাদের ঘরটি।
শিশুর জন্য রঙিন ভুবন
ভিন্নধর্মী দেয়ালসজ্জা
শিশুর ঘরের দেয়াল সাদামাটা না রেখে কিংবা এক রঙে না রাঙিয়ে, নানা ধরনের ওয়াল পেইন্টিং দেয়ালসজ্জায় আনবে ভিন্ন মাত্রা। সেই ক্ষেত্রে আপনার সন্তানের পছন্দের কার্টুন চরিত্র কিংবা রূপকথার জনপ্রিয় কোনো চরিত্র অথবা প্রিয় জীবজন্তুর ছবি দিয়ে দেয়াল রাঙাতে পারেন। ছোটবেলায় দেয়ালে রংপেন্সিল দিয়ে আঁকাআঁকি করেনি, এমন মানুষের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সে কথা মাথায় রেখে দেয়ালে বড় চক বোর্ডও লাগিয়ে দিতে পারেন। শিশুর সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে শিশুর নিজের ঘর যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখা ভীষণ জরুরি।
সঠিক ফার্নিচার বাছাই
বিষয় যেহেতু শিশুর ঘরের সজ্জা, তাই নান্দনিকতার পাশাপাশি ‘আরামদায়ক’ শব্দটিকে গুরুত্ব দিতে হবে বিশেষভাবে। সে ক্ষেত্রে সঠিক ফার্নিচার বাছাইয়ে বাবা মায়েদের বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। শিশুর ঘরের জন্য প্রথমেই বেছে নিতে হবে কম উচ্চতার ফার্নিচার, যাতে প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিস শিশুর হাতের নাগালেই থাকে। ঘরে একগাদা ফার্নিচার মানেই অস্বস্তি, শিশুর মুক্ত অবাধ বিচরণে বাধা। তাই শিশুর ঘরে শুধু প্রয়োজনীয় ফার্নিচার থাকছে কি না সেদিকেও নজর দিতে হবে।
তা ছাড়া এমন সব ফার্নিচার বেছে নিতে হবে, যা বহুবিধ ব্যবহারযোগ্য, আবার কম জায়গা দখলকারী। এতে ঘরেই তৈরি হবে শিশুর খেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা। এ ক্ষেত্রে স্মার্টফিট ফার্নিচারগুলো শিশুদের ঘরের জন্য বেশ উপযোগী। Capsicum-127 ফোল্ডেবল বিছানা কিংবা Dennis-101 & Olivia-101-এর মতো টেবিল কাম কেবিনেটের সেটগুলো হতে পারে আপনার শিশুর ঘরের সজ্জার জন্য পারফেক্ট ফার্নিচার।
Capsicum-127
Dennis-101 & Olivia-101
আলাদা খেলার জগৎ
পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুর পূর্ণ মানসিক বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব আমাদের সবার জানা। তাই শিশুর ঘরে অবশ্যই খেলার আলাদা জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঘরের এক কোণে খেলার তাঁবু, ইনডোর প্লে গ্রাউন্ড ইত্যাদির ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আরো সহজ উপায়ে খেলার জগৎ তৈরি করতে পারেন আপনি। ঘরের এক কোণে শতরঞ্জি আর কুশন বিছিয়ে দিন। পেছনের দেয়ালে থাকল রঙিন কাগজের ঝালর, প্রিয় কার্টুন ক্যারেক্টারের ছবি। সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন কাগজ দিয়ে বানানো রাজহাঁস, অ্যারোপ্লেন বা প্রিয় যেকোনো কিছু। এরপর শতরঞ্জির ওপর সাজিয়ে দিন ছোট্ট সোনামণির প্রিয় সব পুতুল। দেখবেন পুতুলের টি-পার্টির আয়োজনে শতরঞ্জির সেই রঙিন ভেন্যুটিই শিশুকে কী দারুণ আনন্দ দিচ্ছে!
প্রকৃতির সান্নিধ্যে
অন্ধকার ঘর শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা আছে কি না সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ছাড়া ঘরকে প্রাণবন্ত করে তুলতে শিশুর ঘরসজ্জায় ছোট ইনডোর গাছপালার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে শিশু বেড়ে উঠবে প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
প্রকৃতির সান্নিধ্যেই বেড়ে উঠুক শিশু
স্টোরেজ ব্যবস্থা
শিশুদের ঘর যতই গুছিয়ে রাখা হোক না কেন, তাদের সারা দিনের দস্যিপনায় মুহূর্তের মধ্যেই যেন সব এলোমেলা হয়ে যায়। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে শিশুর জামাকাপড় এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস স্টোর করার জন্য মাল্টি পকেট অর্গানাইজারের ব্যবস্থা করুন। এতে করে শিশু পাবে প্রয়োজনীয় সবকিছু একসাথে হাতের নাগালে, আবার বারবার ঘর গোছানোর ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন আপনিও। হাতিলের Rhone-173+175 ও Euripides-181 ঠিক এমন কিছু স্টোরেজ ক্যাবিনেট।
Rhone-173+175
Euripides-181
বই হোক অবসরের সঙ্গী
ঘরের একপাশের দেয়ালে বুক শেলভ বা র্যাকের ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দেয়াল ক্যাবিনেটও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ছোটবেলা থেকেই শিশুর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
ঘরের কোণেই লাইব্রেরি
অন্যান্য টিপস
- ঘরে ভারী ও বেশি কারুকার্যময় ফার্নিচার রাখা থেকে বিরত থাকুন।
- পর্দার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব হালকা রঙের ব্যবহার করুন। সুতি বা কটন কাপড়ের পর্দা নির্বাচন করতে পারেন। এতে সহজেই ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারবে।
- আরামদায়ক কাপড়ের বিছানা চাদর ব্যবহার করুন।
- বড় আলমারির পরিবর্তে ঘরে দেয়াল আলমারির ব্যবহার করুন। এতে ঘরের জায়গা বাঁচবে।
- আসবাবে ধারালো কোনা আছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। এমন ফার্নিচার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- ময়লা জামাকাপড়ের জন্য একটা আলাদা লন্ড্রি ব্যাগ রাখুন।
- ঘরে ময়লা ফেলার জন্য ছোট ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করুন।
- দেয়ালে ওয়ালপেপার ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা ওয়াশেবল কি না সেদিকে লক্ষ রাখুন।
- শিশুর ঘরের কার্পেট, পর্দা ও বিছানার চাদর মাসে অন্তত একদিন পরিষ্কারের ব্যবস্থা করুন।
- শিশুকে নিজের ঘর গুছিয়ে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
শিশুর ঘরসজ্জার মতো বিষয়টি যে মোটেও কঠিন কোনো বিষয় নয়, তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন। এমন সহজ সব টিপসকে কাজে লাগিয়ে আজই আপনিও সাজিয়ে ফেলতে পারেন আপনার সোনামণিকে প্রিয় ঘরটিকে।