আধুনিক জীবনে লিভিং রুম কিংবা বাসার যে কোনো রুমেরই শোভা বাড়ায় সোফা। নানা রঙ আর ডিজাইনের নিত্য নতুন ভিন্নতায় সোফা এখন বাসার প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনেও দারুণ ভূমিকা রাখছে। তবে শুধু সোফা কিনে সাজিয়ে রাখলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। নিয়মিত সোফার যত্ন নেয়া প্রয়োজন। সোফা যেহেতু নিয়মিত ব্যবহার হয়, এটি তাই প্রতিনিয়ত ধূলা-ময়লা এবং নোংরা হয়। এজন্য নিয়মিত সোফার যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া, হালকা রঙের সোফার ক্ষেত্রে দ্রুত ময়লা হয়ে সোফা দু-দিনেই পুরোনো ঠেকতে পারে। সোফার যত্নে তাই জরুরি কিছু পরামর্শ নিম্নে দেওয়া হলো
সোফার যত্নে কার্যকরী ৭টি টিপস
১/ সতর্ক হোন শুরুতেই
সোফা নোংরা হওয়ার আগেই এটি ব্যবহারে সতর্কতা জারি রাখতে হবে। সোফায় বসে কখনো খাবেন না। তরকারি বা পানি পড়লে সোফায় দাগ বসে যেতে পারে৷ এজন্য আগে থেকে সতর্ক হওয়াই উত্তম। যতটুকু সম্ভব- সোফায় বসে খাওয়া দাওয়া, মেকআপ করা থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।
সোফা ঠিকমতো যত্ন করে পরিষ্কার না করলে এর জৌলুস কমে যেতে পারে। উঠে যেতে পারে সোফার রঙও। অনেকে অবশ্য সোফা পরিষ্কার করতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করে থাকেন। তাতে ময়লা বা ধূলো ওঠে কিন্তু তেল চিটচিটে ভাব বা দাগ ওঠে না। অনেকের বাসাতেই এমন সোফা থাকে যার কাভার স্থায়ীভাবে আটকানো। এই ধরনের সোফা পরিস্কারও বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
হালকা রঙের একটি সোফা আপনার ঘরের অভ্যন্তরীণ সজ্জার জন্য হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ফার্ণিচার। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, হালকা রঙের যেকোনো ফার্ণিচারও সূক্ষ্ম রুচিশীলতার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম। তবে হালকা রঙের সোফার জৌলুস ধরে রাখতে সতর্ক থাকতে হবে সবসময়।
২/ দাগ তোলার নিয়ম
সোফায় ময়লা জমে বা অসতর্কার কারণে যদি দাগ পড়ে, তাহলে একেবারে প্রথমে ধুলো তুলতে একটা পরিষ্কার সাদা নরম কাপড় দিয়ে পুরো সোফা ধীরে ধীরে মুছে নিন। সোফার ময়লা বা ধূলো উড়ে আবার সোফাতেই যাতে না পড়ে এজন্যই ধীরে ধীরে মুছতে হবে।
চেষ্টা করতে হবে, সোফায় জমে থাকা ময়লা একেবারে পরিষ্কার করে ফেলার। সোফায় কোনো অংশে খাবার বা অন্যকিছুর দাগ লেগে থাকলে সেটাও ঘষে তুলে ফেলুন। বিভিন্ন খাঁজের ময়লা বের করার জন্য পুরোনো টুথব্রাশ বা অন্য নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। ময়লা ঝেড়ে আবার সোফা মুছে নিন।
৩/ পরিস্কারের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপে গুরুত্ব
যখন সোফার কোথাও কোনো দাগ পড়ে তখন দ্রুততার সাথে দাগ অপসারণে ব্যবস্থা নিন। সোফার কোনো দাগ পরিষ্কার করতে যত দেরি হবে, দাগটি তত বেশি স্থায়ী হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে। এজন্য সোফায় দাগ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার আগেই টিস্যু বা কাগজ দিয়ে যতটুকু সম্ভব মুছে ফেলতে হবে। এরপর একটি সাদা কাপড় নিন এবং হালকা গরম পানি আর মৃদু ক্ষারযুক্ত সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে দাগটি তোলার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে সোফায় দাগ পড়ার স্থানে আলতো ভাবে চাপ দিন, জোরে ঘষলে বা অতিরিক্ত মুছলে দাগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪/ কাজে লাগান ভ্যাকুয়াম ক্লিনার
বাসার হালকা রঙের সোফাগুলো নিয়মিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মাধ্যমে পরিষ্কার রাখায় অভ্যস্ত হতে হবে। সোফার উপর পড়ে থাকা ময়লা সরানোর জন্য সোফার ফ্রেম, বসার সিট এবং কুশনও নিয়মিত ভ্যাকুয়াম করতে হবে। সোফার উপরের কাপড় ও অন্যান্য টুকটাক জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং শুরু করে দিন।
যদি সোফায় কোনো কিছুর দাগ পরে থাকে তাহলে ক্লিনিং শুরু করার আধা ঘন্টা আগে সোফায় বেকিং সোডা ছিটিয়ে রাখতে হবে। পরবর্তীতে আধা ঘন্টার বিরতিতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং করতে শুরু করুন। এভাবে ধূলা পরিষ্কার করার ফলে সোফা যেমন যত্নে থাকবে, ঠিক তেমনি আপনার ঘরের পরিবেশও একই সাথে ভালো থাকবে।
৫/ নিজ এবং সোফার অবস্থান বদলান
আপনার সোফাটি বাসার এমন স্থানে রাখুন যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না। কারণ, সরাসরি অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে সোফার কাপড় বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে, সোফার রঙ ও ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে।
এছাড়া, লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমরা সোফার কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশেই সবসময় বসি, যেটাকে অনেকে সোফার প্রিয় স্থানও বলে থাকে। সবসময় একই স্থানে বসার কারণে সোফার ওই অংশটি বেশি ময়লা হতে পারে, নিচের দিকে দেবেও যেতে পারে। তাই সবসময় সোফায় একই জায়গায় বসা থেকে নিজেকে বিরত রাখাই ভালো। বসার জায়গাটি নিয়মিত পরিবর্তন করা দরকার, এতে করে আপনার প্রিয় জায়গাটি দেবে বা ঝুলে যাবে না এবং অন্য জায়গা থেকে বেশি ময়লাও দেখাবে না।
এছাড়াও সোফার কুশনগুলো নিয়মিত নেড়েচেড়ে দিন, কারণ গাঁঢ় রঙের চেয়ে হালকা রঙের সোফায় বেশি ভাঁজ দেখা যায়।
৬/ স্লিপ কভারে সহজ সমাধান
যে কোনো ফার্ণিচার এবং সোফাকে ধূলা জমে থাকা থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল স্লিপ কভার ব্যবহার করা। আপনার সোফাটি একটি স্লিপ কভার দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং যখন বাসায় অতিথি আসবে তখন সেটি সরিয়ে দিন, তাহলে সোফাটি আর ধূলা পরে ময়লা বা তেল চিট চিটে হবে না। তাছাড়া, স্লিপ কভার থাকায় সোফা ঘন ঘন ময়লাও হবে না। এক্ষেত্রে সোফা টেকসইও হবে।
৭/ বছরে একবার ড্রাই – ক্লিন
নিয়মমাফিক আপনার সোফা পরিষ্কার করার পাশাপাশি ব্যবহার ও সোফার কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে বছরে একবার বা দুইবার সোফাটি ড্রাই-ক্লিন করানো অত্যন্ত জরুরী। পেশাদার ব্যক্তি দিয়ে আপনার সোফা পরিষ্কার করিয়ে নিলে তা অনেক দিন ভালো ও পরিস্কার পরিছন্ন থাকবে। একইভাবে, রঙ বেশি ওঠে গেলে সোফা বার্ণিশও করিয়ে নিতে পারেন একই সময়ে।