মানুষ তার সৃষ্টির আদিকাল থেকেই চামড়াকে তার সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে আসছে। এক্ষেত্রে চামড়া বা লেদারের ফার্ণিচার বহু বছর ধরেই মানুষের অন্যতম পছন্দের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য আর আধুনিক নানা ডিজাইনের মিশেলে তৈরি লেদার ফার্ণিচার এখন গ্রাহকদের পছন্দের শীর্ষে উঠে এসেছে। লেদারের ফার্ণিচার চামড়ার অনন্য গুণাবলী এবং প্রাকৃতিক তন্তুর কারণে সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। এটি সময়ের সাথে আরও নমনীয় এবং নরম হয়ে যায়।
কিন্তু যত্ন আর নিয়মিত দেখভালের অভাবে অল্পদিনেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে লেদার ফার্ণিচার। এই লেখায় তাই লেদার ফার্ণিচারের যত্নে পাঁচটি পরামর্শ দেওয়া হলো।
১. সূর্যের আলো এড়াতে হবে
সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে এমন স্থানে লেদার ফার্ণিচার না রাখাই ভালো। সূর্যের আলো ও তাপে কার্যত কোনো কিছুই বেশিক্ষণ নিরাপদ নয়। সূর্যের আলোয় কয়েক বছরেই নষ্ট হয়ে যায় লেদার ফর্ণিচারের সৌন্দর্য। তাই চরম তাপমাত্রার স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন যা লেদারকে শুকিয়ে এবং ফাটল তৈরি করে দিতে পারে। রান্নাঘরের আশপাশেও লেদারের ফার্ণিচার রাখা ঠিক নয়। অতিরিক্ত গরমে লেদারের ফার্ণিচারের স্থায়িত্ব কমে যায়।
শুধু অতিরিক্ত তাপই নয়, অতিরিক্ত ঠান্ডায়ও এ ধরনের ফার্ণিচার নষ্ট হয়ে যায়। এয়ার কন্ডিশনার বা রেডিয়েটারের পাশে লেদার ফার্ণিচার না রাখার চেষ্টা করুন। খুব বেশি তাপ থেকে কমপক্ষে ২ ফিট দূরে রাখতে হবে।
২. পরিস্কার করা যায় কীভাবে?
লেদার ফার্ণিচার বিশেষভাবে পরিষ্কারের জন্য ১ – ৪ কাপ সাদা ভিনেগারের সাথে ১ – ২ কাপ পানি মিশিয়ে পাতলা কাপড়ের সাহায্য নিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর চামড়ার জন্য বিশেষ সাবান দিয়ে আবার পরিষ্কার করা এবং শেষে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
তা ছাড়া বাজারে চামড়া পলিশ করার জন্য বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। গুণগত মানের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সেসব ব্যবহার করতে পারেন। যদি মনে করেন নিয়মিত পরিস্কার করা হয়ে উঠছে না সেক্ষেত্রে পলিশ করার জন্য লোকও ডাকা যেতে পারে।
বাজারে লেদার ফার্ণিচার পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন স্প্রেও পাওয়া যায়। সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেদারের ফার্ণিচারে যদি গ্রিজ বা তেল পড়ে তাহলে তার ওপরে ট্যালকম পাউডার বা বেকিং পাউডার ছড়িয়ে দিতে পারেন। এই পাউডার তেল ও গ্রিজ শুষে নেবে। এতে করে পরিষ্কার করতে সহজ হবে এবং স্থায়ী দাগ পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।
লেদার ফার্ণিচার ঘরের কোন অংশে রাখছেন তার উপর নির্ভর করে সেটি প্রতিদিন পরিস্কার করার প্রয়োজন পড়ে কিনা। জানালা বা আলো বাতাসপূর্ণ স্থানে ফার্ণিচারটি রাখলে এটি প্রায় প্রতিদিনই পরিস্কার করার প্রয়োজন পড়বে। এক্ষেত্রে সুতির পাতলা কাপড় দিয়ে লেদারের ফার্ণিচার প্রতিদিন একবার করে মুছে দিতে পারেন। রোজ না মুছলে ধুলোবালি পড়ে ফার্ণিচারের ওপরে ধূলির স্তর তৈরি হতে পারে। এতে করে ফার্ণিচারে স্থায়ী দাগ হয়ে যেতে পারে।
লেদারের সোফার ওপর পাতলা সুতির কাপড় দিয়ে কভার বানিয়ে নিতে পারেন। এতে করে নিয়মিত ব্যবহারে ফার্ণিচার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
৩. খাঁজের ভেতরে ময়লা জমেছে কিনা দেখুন
আধুনিক ফার্ণিচারগুলো মিনিমালিস্টিক ডিজাইনে করা হয়ে থাকে যেখানে বিভিন্ন আকার বা শেপ এর আধিক্য দেখা যায়, থাকে বিভিন্ন আকার আর ধরনের খাঁজযুক্ত নকশা। লেদার ফার্ণিচারে এই বিষয়টি বেশ সাধারণ। তাই এই ধরনের ফার্ণিচার পরিস্কার করার সময় খাঁজগুলোয় আটকে থাকা ময়লাও পরিস্কার করে নিতে হবে।
যদি আপনার ওয়াশক্লথগুলো খাজের ভেতরে পৌঁছতে না পারে তবে খাঁজগুলো পরিষ্কার করতে পেইন্ট ব্রাশ বা কটন সোয়াব ব্যবহার করুন।
৪. যা করবেন না
লেদার ফার্ণিচার পরিস্কারে ক্ষতিকারক ক্লিনার (যেমন তৈলাক্ত) সাবান ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো লেদারের উপর কালো প্রলেপ ফেলে দেয়। তাছাড়া, হালকা বা কোমল সাবানও দিয়ে লেদার পরিস্কার করা যাবে না কারণ এটি লেদারের রঙও পরিবর্তন করে ফেলতে পারে।
পিওর লেদার হলে অবশ্যই সরাসরি পানি লাগানো থেকে বিরত থাকুন। ভেজা কাপড় দিয়ে চামড়ার সোফা বা আসবাব মোছা উচিত নয়। এতে আসবাবের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫. জায়গা পরিবর্তনে সাবধান
বাসার ফার্ণিচার যেভাবে সাজানো থাকে আমরা হয়ত সবসময় চাই না সেভাবেই সাজানো থাকুক। তাই প্রায়ই ঘরের ফার্ণিচার এক কোণ থেকে অন্য কোণে সরাতে হয়। লেদার ফার্ণিচার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরাতে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ কাঠ এবং লেদারের সমন্বয়ে তৈরি এই ফার্ণিচার অসতর্কভাবে জায়গা পরিবর্তনে স্পট পড়ে যেতে পারে, অনেকক্ষেত্রে লেদারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই ধরনের ফার্ণিচারে অনেক সময় বিভিন্ন ভাবে বাঁকানো এবং ভিন্ন আকারের অংশ লক্ষ্য করা যায়। ফার্ণিচার সরানোর সময় সেগুলোর কথাও মাথায় রেখে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।