Office-workstation Office-workstation

আপনার কর্মক্ষেত্রকে আরও প্রোডাক্টিভ করার সেরা ছয় উপায়

চাকরি হোক কিংবা ব্যবসা, প্রাত্যহিক ব্যস্ততার এক বড় অংশজুড়েই থাকে আমাদের কর্মক্ষেত্র। কাজের জায়গায় সকলেই চায় কীভাবে উন্নতির পথ আরো প্রশস্ত করা যায়, কীভাবে আরও প্রোডাক্টিভ হওয়া যায়। এমন ভাবনায় চলুন আপনাকে ছয়টি পরামর্শ দেওয়া যাক। 

১. বসার জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যময়তা

কর্মক্ষেত্রে প্রায় সারাদিনই আমাদের বসে কাজ করতে হয়। বসার জায়গায় স্বাচ্ছদ্যবোধ না করলে প্রোডাক্টিভ তো পরের বিষয়, কাজে মনোযোগই তো আসবে না, তাই না? তাই বসার মাধ্যম হিসেবে চেয়ার কিংবা সোফার প্রতি দিতে হবে আলাদা গুরুত্ব।  

যারা চেয়ারে বসেই কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে ফার্ণিচার ব্র্যান্ডগুলোতে অনেক অপশনই দেখা যায়। সুইভেল চেয়ার, ফিক্সড চেয়ারসহ নানা ধরন আর ডিজাইনের এসব চেয়ারের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গায় ভিন্নতা রয়েছে। সুইভেল চেয়ার ফ্লেক্সিবল হওয়ায় এই চেয়ারেই অফিসের কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার হার বেশি। তাছাড়া, সুইভেল চেয়ারের অসংখ্য ডিজাইন রয়েছে যার মধ্যে থেকে আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রের জন্য সেরা চেয়ারটি বেছে নিতে পারেন। এই চেয়ার ব্যবহারে কর্মক্ষেত্রে যেমন স্বাচ্ছন্দ্য আসবে তেমনি কাজের প্রতি বাড়বে মনোযোগও। 

অফিস চেয়ার Graham-314
ছবি: সুইভেল চেয়ার

কর্মক্ষেত্রে আরেক প্রচলিত চেয়ার হচ্ছে ফিক্সড চেয়ার। এই চেয়ারগুলো সুইভেল এর মতো ফ্লেক্সিবল না হওয়ায় সটান হয়ে একই ভঙ্গিমায় বসে থাকতে হয়। তবে এই চেয়ারের চাহিদা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ এর সুপিরিয়র কোয়ালিটি। সুইভেল চেয়ার সকল কর্মক্ষেত্রে তেমন দেখা না গেলেও এই ফিক্সড চেয়ার দেখা যায় হার হামেশাই। ভিন্ন ভিন্ন কালার কম্বিনেশন এবং ডিজাইনের কারণেও অনেকেরই পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এই চেয়ার। 

Brantley-145

ছবি: ফিক্সড চেয়ার

চেয়ারে বসে তো আর সারাদিন কাজ করবেন না, করা উচিতও নয়। ওয়ার্কপ্লেসে তাই সোফার বন্দোবস্তও দেখা যায় আজকাল। বাসায় সচরাচর যেসব সোফা দেখা যায় তার সাথে অফিসের সোফার পার্থক্য নেই বললেই চলে। তবে অফিস বা কর্মক্ষেত্রে সাধারণত সাধারণ ডিজাইনের সোফার চলই বেশি দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে, প্রোডাক্টিভ কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে হালকা আলোচনার জন্য সোফাই হতে পারে সেরা সমাধান। তাছাড়া কাজের ফাঁকে কিছুটা রিফ্রেশমেন্টের জন্য সোফায় বসে বই পড়া বা গান শুনতে পারেন।

ছবি:  অফিস সোফা 

হালকা আলোচনা বা ক্যাজুয়াল মিটিংয়ের বাইরে অফিসিয়াল মিটিং একটি কর্মক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। প্রায় প্রতিদিনই নানা ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অফিস মিটিংয়ের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে সকল কর্মকর্তারা কনফারেন্স টেবিলকে মিটিংয়ের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন। কনফারেন্স টেবিল একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। একসাথে বসে আলোচনার প্রেক্ষিতে যেকোনো জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কনফারেন্স টেবিল অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে। এতে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য যেমন বিকশিত হয় তেমনি একে অপরের মতামত শোনার মাধ্যমে ব্যক্তিগত জ্ঞানও সমৃদ্ধ হয়। 

২. ফাইলপত্র অগোছালো নয়

যেকোনো কর্মক্ষেত্রেই ফাইলপত্র, কাগজ কিংবা নানা ধরনের ডকুমেন্ট এক অপরিহার্য অংশ। এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা ডকুমেন্ট নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে না রাখার কারণে প্রয়োজনের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে কাজের গতি কমে, আটকে থাকে অনেক কাজও। এক্ষেত্রে তাই নিয়মিত প্রয়োজনীয় কাগজ বা ফাইল নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখায় অভ্যস্ত হতে হবে। ফাইলপত্র নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখতে তিন ধরণের ফার্ণিচার ব্যবহার করা যেতে পারে। 

দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রাখতে হবে এমন ফাইল রেখে দেওয়ার জন্য আলমারি ব্যবহার করতে পারেন। গতানুতিক আলমারি নয় অবশ্য, কেবিনেট আলমারি। এই আলমারিগুলো বেশ টেকসই হওয়ায় ফাইলপত্র নষ্ট হওয়ারও ঝুঁকি নেই। 

Gobi-108

ছবি:  অফিস আলমারি 

ফাইলপত্র খুব বেশি না হলে কিংবা হাতের কাছে যখন তখন দরকার হয় এমন ফাইল নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখার জন্য ফাইল কেবিনেট ব্যবহার করতে পারেন। 

Louise-128

ছবি: ফাইল কেবিনেট 

এর বাইরে স্টোরেজ রেক পাওয়া যায় বাজারে, যেখানে অফিসের প্রয়োজনীয় মালামাল রাখা যায়। 

৩. ওয়ার্ক স্টেশনে গুরুত্ব দিন

কর্মক্ষেত্রে একই ছাঁদের নিচে অনেকে কাজ করার সুবিধার জন্য ওয়ার্ক স্টেশন বেশ কাজের জিনিসই বটে। যেখানে বসে কাজ করছেন, সে জায়গাটাই যদি কর্মীদের মনমতো না হয়, তাদের স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান না করতে পারে, তবে কাজ করার স্পৃহা ধরে রাখাটাই কঠিন হয়ে পড়তে পারে। রুমের দৈর্ঘ্য এবং কর্মী সংখ্যাভেদে কাস্টমাইজ ওয়ার্ক স্টেশন ব্যবহার করে যায়। এক্ষেত্রে কাজের সুবিধা ও গুরুত্ব অনুযায়ী মডিফাই করে নিতে পারবেন ওয়ার্ক স্টেশন। 

Fleming-307

ছবি: ওয়ার্ক স্টেশন

৪. প্রাকৃতিক আবহাওয়াটাও থাকুক 

বদ্ধ চার দেয়ালের মধ্যে কৃত্রিম আলোর ঝলকানিতে সারাদিন কাজ করতে গেলে মনের উপর আলাদা চাপ পড়তে পারে। এজন্য কৃত্রিমের চেয়ে প্রাকৃতিক আলোকেই গুরুত্ব দিয়ে কর্মক্ষেত্রের ইন্টারিওর ডিজাইন করা উচিত। এক্ষেত্রে অফিসের ভেতরে সূর্যের আলো ঢুকার ব্যবস্থা রাখা উচিত। মিষ্টি রোদে কাজের প্রতি আগ্রহও বাড়বে। কাজের ক্ষেত্রে প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে তুলতেও এটি বেশ কার্যকর উপায়। 

তাছাড়া, অফিসের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগাতে পারেন। গাছ লাগাতে ব্যবহার করতে পারেন টব কিংবা পট। গাছ যেমন মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে তেমনি কাজের স্পৃহাও বাড়িয়ে তুলবে। তাছাড়া, গাছের প্রাকৃতিক ছোঁয়া অফিসের গুমট ভাব দূর করবে। 

৫. একটু ব্রেক চাই

সকালে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকা উচিত নয়। কাজের ফাঁকে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিন। সে সময়টা গান শুনুন বা সহকর্মীদের সাথে অফিসের বাইরের বিষয় নিয়ে হালকা আলোচনা করুন। কোনো একটি টার্গেট পূরণ করেও এই ব্রেক আপনি নিতে পারেন। এতে করে কাজের গতিও বাড়বে। তাছাড়া টানা কাজ করে একঘেঁয়েমি ভাব চলে আসা থেকে বাঁচতেও কাজে দেবে এই ব্রেক। তবে ব্রেক টাইম খুব বেশি হওয়া উচিত নয়। তাতে কাজের সময়টাই নষ্ট হবে। ব্রেক কতটুকু নেবেন সে বিষয়টি নিজেই চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করুন। 

৬. বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ আছে তো?

আপনি কাজের খাতিরে অফিসের বসের সাথে কথা বলতে গিয়ে যদি কাঁচুমাচু ভাব নিয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিতভাবে কাজেরই ক্ষতি হবে। বসকে ভয় পেয়ে সিদ্ধান্ত বা মতামত নিয়ে খোলামেলা আলোচনার অভাবে অনেক জরুরি বিষয়েও স্বচ্ছতার জায়গায় প্রশ্ন থেকে যায়। তাই অফিসে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে অবশ্য উর্ধ্বতন কর্মকতাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। কর্মীদের খোলামেলা আলোচনার স্পেস দিতে হবে। এতে করে কাজের প্রতি কর্মীদের ডেডিকেশন বাড়বে। এতে করে কাজের গতিও যে বাড়বে তা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। 

কর্মক্ষেত্রকে নিজের আপন জায়গা ভেবে নিয়ে কাজ করলে যে কোনো কাজেই প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে নেওয়া এমন কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। চেষ্টার সবটা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি অফিসের পরিবেশটা তাই হওয়া চাই স্বাচ্ছন্দ্যময়। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।