একটি পরিচ্ছন্ন বাড়ি : ৫টি সহজ অভ্যাস

ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাড়ির সবার রান্নাবান্না করা থেকে সারা বাসা টিপটপ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাপুরোটাই একা করে যাচ্ছেন মা। যুগ বদলানোর সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে কত কিছুর। পরিবারের সব দায়িত্ব একজনের ওপর না ফেলে, সবাই মিলে যদি ভাগ করে নিতে পারি ঘরের সব কাজ, তবে কত ভালোই না হয়। আসছে নতুন বছর, নতুন উদ্যমে শুরু করতে চাই আমরা সবাই। এই বছরের লক্ষ্যটা রাখা যায়, পরিবারের সবার সমান সমান কাজ করা। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা থেকে দেখা যায়, পরিচ্ছন্ন ঘরের অধিকারী মানুষেরা অপরিচ্ছন্ন ঘরের বাসিন্দাদের থেকে বেশি সুস্থ ও সুখী থাকেন। একটু চিন্তা করলেই দেখা যায়, ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারটা সময়ের চেয়ে বেশি অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। ব্যস্ত জীবনের সাথে সংসার সামলানোর তাল মেলাতে, একা নয়, সাহায্য দরকার পরিবারের প্রতিটি মানুষের। ঘর গোছানোকে সহজ করতে আয়ত্ত করে নিতে পারেন এই ৫টি অভ্যাস। 

কাজের ভাগীদার হোক পরিবারের সবাই 

রুটিনমাফিক গোছগাছ 

ঘরের প্রতিটি মানুষ যদি আলাদা আলাদা দিনে কাজ ভাগ করে নেয়, তবে কারোর ওপরই বেশি চাপ পড়ে না। একটা রুটিনের মধ্যে ফেললে কাজটা বেশ সহজ হয়, আবার সময়ের কাজও সময়ে হয়ে যায়। কোন ঘর কবে গোছানো হবে, আবার তা কে গোছাবে, সেটা ঠিক করে ফেলতে পারবেন সহজভাবেই। প্রথমত যেই দিন যার ব্যস্ততা বেশি বা অফিসের কাজ থাকবে, সেই দিনগুলোতে তাকে কম কাজ অথবা সহজ কোনো কাজ দেওয়া যায়। আবার ছুটির দিনগুলোতে একটু বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া যায়, যেমন আলমারির সব কাপড়চোপড় গোছানো বা পুরোনো জিনিস বাতিল দেওয়া। এগুলো পরিবারের সবাই মিলেই করে ফেলতে পারবে। ছক করে সপ্তাহের সাত দিনেই কাজ ভাগ করে নিলে, ঘর গোছানোর কাজটা আর কষ্টকর মনে হবে না। আবার প্রতিদিন এলোমেলোভাবে অনেকগুলো কাজ করার থেকে, অল্প কাজ নিয়মমাফিকভাবে সেরে ফেলা যাবে সবার সাপ্তাহিক দায়িত্ব। 

 

বিশৃঙ্খলা বর্জন 

ঘর পরিচ্ছন্ন রাখার সবচেয়ে প্রথম শর্ত হলো বিশৃঙ্খলা কমিয়ে ফেলা। নিজেদের অজান্তেই ঘরের আনাচকানাচে জমে ওঠে নানান গোলমাল। প্রতিটা জিনিসকে নির্দিষ্ট কোথাও রাখা হলে, তালগোল পাকানোর সুযোগ বেশ কমে যায়। গোলমাল সরানোর একটি সহজ উপায় হলো সঠিক স্টোরেজ ব্যবস্থা। শহুরে ফ্ল্যাটবাড়ির বিভিন্ন স্টোরেজ সমস্যার সমাধান দিতে হাতিল নিয়ে এসেছে তাদের নতুন “স্মার্ট ফিট” কালেকশন। তাদের ডেনিস-১০১ ও অলিভিয়া-১০১ সেটটি একই সাথে করতে পারে বুকশেলফ ও পড়ার টেবিলের কাজ। তা ছাড়া এটিতে পাওয়া যাবে বেশ কিছুটা বাড়তি স্টোরেজ।

ডেনিস-১০১ ও অলিভিয়া-১০১

আরেকটি বহুমুখী ফার্নিচার হলো কিংস্পোর্ট -১০৬। ঘরের মধ্যে মোগল আমলের আয়েশি অটোমান রেখে, আভিজাত্যের পাশাপাশি বাড়িয়ে নিন স্টোরেজের জায়গাও। যদিও ব্যস্ততার মাঝে হঠাৎ করে পুরো বাড়ি গোছানো সম্ভব না।  বিশৃঙ্খলা বর্জন বা  ‘ডিক্লাটারিং’’ বেশ সময়সাপেক্ষ। তবে অভ্যাসটা ধীরে ধীরে গড়ে ফেলা যায়। ঘরটা ঠিকমতো সাজানো-গোছানো থাকলে, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজটা হয়ে যাবে বহুগুণ সহজ। 

কিংস্পোর্ট- ১০৬ অটোমান 

কাজের বদলে পুরস্কার 

কাজের অভ্যাস গড়তে পারে বাড়ির ছোট্ট সোনামণিরাও 

বাড়ির ছোট মানুষেরা বেশির ভাগ কাজেই অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে এ ক্ষেত্রে ঘর গোছানোর অভ্যাসটা তাদের মাঝে গড়ে তোলা প্রয়োজন। ছোট্ট সদস্যদের দিয়ে দিতে পারেন ছোট ছোট কাজ। যেমন বারান্দার গাছগুলোর যত্ন করা কিংবা ফিল্টারের পানি ভরে রাখাএইসব কাজের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে বাড়ির ছোট্ট সোনামণিদের। দুরন্ত বয়সটাতে ছোটখাটো দায়িত্ব নিতেও অনীহা দেখানোটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে ছোটখাটো পুরস্কার বা চকলেট দিয়ে বাচ্চাদের মন বসাতে পারেন কাজে। কাজের ইচ্ছা না থাকলেও চকলেটের লোভেই দেখা যাবে অনেক ক্ষেত্রে তারা উত্তেজিত হয়ে কাজটি করে ফেলবে। বয়সের জন্যও প্রয়োজনীয় এই অভ্যাসটি গড়ে ওঠা উচিত প্রতিটি শিশুর মাঝেই। 

 

দানেই সুখ 

প্রতিটি বাড়িতেই একটু খোঁজাখুঁজি করলে পাওয়া যাবে একগাদা অব্যবহৃত ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস। কিন্তু একজনের কাছে যা অপ্রয়োজনীয়, আরেকজনের কাছে তাই হতে পারে অতিদরকারি ও মূল্যবান। ঘরের বাড়তি কাপড়, পুরাতন আসবাব, অজানা কতশত টুকিটাকিসবকিছুই দান করে দিতে পারেন যাদের বেশি প্রয়োজন তাদের কাছে। দানশীলতার অভ্যাসটা শুধু ঘরের পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, মনের পরিচ্ছন্নতার জন্যও বটে। ডিক্লাটারের সময় জিনিসপত্র একেবারে বাতিলের খাতায় না দিয়ে, আরেকজনের সাহায্যে দান করে দেওয়া গেলে মন্দ কী? যেসব পুরাতন জিনিস স্মৃতি দিয়ে জড়ানো, সেগুলো থাকুক যত্নের জায়গায়। কিন্তু যেসব জিনিস একেবারেই ব্যবহার হয় না, সেগুলো ফেলে দেওয়া অথবা দরিদ্র মানুষকে দান করে দেওয়াই শ্রেয়। 

 

সময়ের কাজ সময়ে করা 

ঘরবাড়ি অগোছালো হওয়ার একটি বড় কারণ হলো সময়ের কাজ সময়ে না করে, ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখা। যে অনেক কষ্ট করে রান্না করল, তার পক্ষে হয়তো রান্না শেষ করেই আবার সব থালাবাসন গোছানো অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই জন্যই পরিবারের সবার জড়িত হওয়া দরকার ঘরের সব কাজে। একজন রান্না করলে আরেকজন করতে পারবে থালাবাটি ইত্যাদি পরিষ্কার করা ও গোছানোর কাজ। আবার রান্নার ব্যাপারটাও পরিবারের কয়েকজন একসাথে করলে একে অপরের সাথে সম্পর্ক আরও সুন্দর হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর একদমই শক্তি থাকে না জামাকাপড় সব গুছিয়ে রাখার। প্রায়ই দেখা যায় জামাকাপড় আলমারিতে নিজ নিজ জায়গায় না থেকে, জমা হয়ে আছে চেয়ার-টেবিলের ওপর। এইটাও যেন না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। বাইরে পড়া জামাকাপড় সাথে সাথে রেখে দেওয়ার জন্যও ঘরে রাখা যায় আলাদা কোনো ঝুড়ি। এভাবে পারিবারিক মেলবন্ধন বৃদ্ধির সাথে সাথে গহ্বরের কাজগুলোর ভাগাভাগি হবে সুন্দর ও সুষম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।