ঘর পরিষ্কার রাখার ৫টি সহজ উপায় বা অভ্যাস

দিনের শেষে ক্লান্তি নিয়ে যখন বাসায় ঢোকা হয় তখন পরিপাটি, সাজানো-গোছানো সবকিছু চোখের সামনে দেখলে মানুষের ক্লান্তি অর্ধেক দূর হয়ে যায় তো বটেই, সাথে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার শক্তিও পাওয়া যায়। তবে এ কথাও সত্য যে অনেকের কাছেই ঘরবাড়ি গুছিয়ে-সাজিয়ে রাখাটা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার বলে মনে হয়। আদতে অনেক কাজ একসাথে করতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠাটা খুব স্বাভাবিক। তবে ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখাটা যেমন এক ধরনের মৌলিক কাজ, সেই সাথে কীভাবে তা করা উচিত সেসব নিয়েও মৌলিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।  

কিভাবে বাসা বাড়ি পরিষ্কার রাখার পরিকল্পনা করবেন?

আমরা অনেকেই মনে করি ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখাটা একটি দৈনিক রুটিনমাফিক কাজ। তবে সত্যিকার অর্থেই পরিপাটি রাখতে গেলে প্রয়োজন প্রতিমুহূর্তের নজরদারি। গুছিয়ে রাখার কাজটা অনেকের কাছেই বিরামহীন কাজ বলে মনে হয়। কারণ, এটি এমন একটি কাজ যেটা হয়তো একবার শেষ করে রেখে দেওয়া যায় না। একবার গুছিয়ে রাখা হলো সেটা হয়তো একটু পর আবার এলোমেলো হচ্ছে, সেটা আবার গোছাতে হচ্ছে। এভাবেই চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। সে ক্ষেত্রে ক্লান্তি আসাটা খুব স্বাভাবিক। 

অপর দিকে আমরা চাইলেও সব সময় সবকিছু একইভাবে সুন্দরমতো গুছিয়ে রাখতে পারি না। সে ক্ষেত্রে গোছানো শুরু করতেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন কখনো কোথায় থেকে শুরু করা যায় তা নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়া, সাহায্যের জন্য কাউকে না পাওয়া, জিনিসপত্র রাখার ঠিকঠাক জায়গা না পাওয়া এবং অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় জিনিসের সমাহার। এসব ব্যাপার যেন গুছিয়ে রাখার কাজকে আরো কষ্টকর করে তোলে। 

ব্যস্ততার জীবনযাপনে রোজ নিয়ম করে ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। এতে করে একটু একটু করে অনেক কাজ জমতে শুরু করে এবং বাড়ির ভেতরকার পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর, অপরিষ্কার হয়ে ওঠে এবং তা থেকে মানসিক অবসাদগ্রস্ততার জন্ম হয়। এই ভয়ংকর বিষয়টা থেকে বাঁচতে আমাদের রোজকার রুটিনেই কিছু অভ্যাস যুক্ত করা প্রয়োজন যেটা আমাদের সময়, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য এবং ঘরের পরিবেশ সবকিছুকেই বাঁচিয়ে ফেলতে পারে! এমন কিছু উপায় হলো :

ঘর পরিষ্কার রাখার সহজ কিছু উপায়

উপায় ১ঃ বিছানাপত্র গুছিয়ে রাখা

ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম যে কাজটি করা প্রয়োজন তা হলো নিজের বিছানা গুছিয়ে দিন শুরু করা। আমাদের ঘরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ যে আসবাবটি দখল করে তা হলো বিছানা এবং ঘরের মধ্যে বিছানা সুন্দর থাকলে পুরো ঘরকেই পরিপাটি মনে হয়। অনেক সময় অনেক ছোটখাটো জিনিস বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ছোটখাটো জিনিসগুলো গুছিয়ে হাতের নাগালে রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে বেডসাইড টেবিল। এ ক্ষেত্রে খাট এবং খাটের সাথে মিলিয়ে বিভিন্ন  ডিজাইনের বেডসাইড টেবিল যদি এক জায়গা থেকে কিনতে পারা যায় তাহলে অনেকটা কষ্ট কমে যায়। এর জন্য ঘুরে আসতে পারেন হাতিলের ওয়েবসাইট কিংবা আপনার কাছের যেকোনো হাতিলের শোরুমে। সেখানে পেয়ে যাবেন সিম্পল ডিজাইনের মধ্যে Bouquet-132  বা Cosmos-110-এর মতো বেডসাইড টেবিলগুলো। আবার যারা একটু ভিন্নধর্মী ডিজাইনের বেডসাইড টেবিল খুঁজে থাকেন তাদের জন্য মানানসই হবে হাতিলের Orchid-126 বা Aroma-129-এর মতো টেবিলগুলো। 

প্রয়োজনীয় ছোটখাটো জিনিসপত্র বিছানার ওপর ছড়িয়ে না রেখে হাতের কাছে রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে বেডসাইড টেবিল  

প্রয়োজনীয় ছোটখাটো জিনিসপত্র বিছানার ওপর ছড়িয়ে না রেখে হাতের কাছে রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে বেডসাইড টেবিল  

দিনের শুরুতেই বিছানা এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া উচিত। শুধু তা-ই নয়! ঘুম থেকে ওঠার পর নিজের বিছানা গুছিয়ে উঠলে আপনাআপনি দিনের শুরুতেই একধরনের সতেজতা অনুভূত হয়।  

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া যেতে পারে 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া যেতে পারে 

উপায় ২ঃ ছোট কোনো কাজ এড়িয়ে না চলা

এমন অনেক সময় হয় যেমন হয়তো আমরা ঘর থেকে বের হতে যাচ্ছি  এমন সময় মেঝেতে কিছু পড়ে থাকতে দেখছি বা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় জুতোর র‍্যাকে জুতোগুলো এলোমেলো হয়ে থাকতে দেখছি বা টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ বুকশেলফের ওপর ধুলো জমে আছে এমনটা চোখে পড়ল ইত্যাদি এসব ছোট ছোট কাজ হঠাৎ সামনে এসে পড়লে সাথে সাথেই তা ঠিক করে ফেলা উচিত। এতে কাজ জমা হওয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়। 

উপায় ৩ঃ সবকিছুর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার অভ্যাস আমাদের অনেকের থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ করে ছোট ছোট জিনিস যেগুলো দৈনিক আমাদের কাজে লাগে যেমন বাসার বা গাড়ির চাবি, চশমা বা খবরের কাগজ ইত্যাদি রাখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা প্রয়োজন। এতে করে প্রয়োজনের সময় খুঁজে যেমন পাওয়া যায় তেমনি অগোছালো কম হয়। 

উপায় ৪ঃ সহযোগিতা করার মনোভাব

একটা বাড়িতে যখন অনেকগুলো মানুষ একসাথে বাস করবে তখন সেখানে একেক মানুষের জীবনধারা একেক রকম হবে এবং তার ওপর ভিত্তি করে বাড়ির পরিবেশ সংগঠিত হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সে ক্ষেত্রে কেবল একজনের ওপর চাপিয়ে বসে থাকলে একা মানুষের পক্ষে সবটা করা প্রায় অসম্ভব এবং কষ্টকর। তাই কাজ ভাগাভাগি করে নিলে, নিজের কাজ নিজে করলে অথবা বাড়ির কাজে সার্বক্ষণিক সাহায্য করলে একজনের ওপর যেমন চাপ কমবে তেমনি ঘরবাড়ি পরিপাটি রাখাটাও সহজ মনে হবে। 

উপায় ৫ঃ একই ধরনের কাজে একবারই সময় ব্যয় করা

যেহেতু আমরা সবাইই কমবেশি কাজের ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাই সে ক্ষেত্রে এক ধরনের কাজে একবারেই করে ফেলতে পারার অভ্যাস করাটা জরুরি। এতে করে সময়ের অপচয় কম হয়। যেমন আপনি হয়তো কোনো কাজে ড্রয়িংরুম পরিষ্কার করছেন। আপনি যদি তার সাথে সাথে নিজের শোবার ঘরটাও পরিষ্কার করে ফেলেন তাহলে পরে আর কাজটি নতুন করে আপনাকে করতে হবে না। এ রকম অনেকগুলো কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারলে দিন শেষে নিজের সময় বাঁচবে এবং ঘরবাড়ি পরিপাটি রাখাও সহজ হবে।

ঘর পরিষ্কার রাখা নিয়ে কিছু বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তর

ঘর সবসময় পরিষ্কার ও গোছালো রাখার সহজ উপায় কী?

 

ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখতে প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সময় নিয়ে ঘর গুছিয়ে নিন। ব্যবহার শেষে জিনিসপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন। দরজা-জানালা খোলা রেখে ঘরের বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন। আর সপ্তাহে অন্তত একদিন গভীরভাবে ঘর পরিষ্কার করুন।

ঘরে ধুলাবালি কমানোর জন্য কী করা যায়?

প্রতিদিন মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে ধুলা মুছুন। জানালায় মশারি বা ধুলা প্রতিরোধী নেট ব্যবহার করুন। কার্পেট কম ব্যবহার করুন, কারণ এতে ধুলো বেশি জমে। এছাড়া নিয়মিত ফ্যান ও এসির ফিল্টার পরিষ্কার করুন।

ফ্লোর বা মেঝে পরিষ্কার রাখার কার্যকর উপায় কী?

ফ্লোর একেবারে চকচকে পরিষ্কার রাখতে প্রতিদিন ঝাড়ু ও মোছা করুন। বিশেষ করে জীবাণুমুক্ত রাখতে ভিনেগার ও গরম পানি মিশিয়ে মোছা ভালো উপায়। আর টাইলসের দাগ দূর করতে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন।

আসবাবপত্র দীর্ঘদিন পরিষ্কার ও ভালো রাখার উপায় কী?

কাঠের ফার্নিচারে নিয়মিত পলিশ করুন। সোফা ও গদি পরিষ্কার করতে বেকিং সোডা ব্যবহার করুন। ধুলা জমতে না দেওয়ার জন্য ওয়াইপ বা মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।