একটি সুন্দর সাজানো গোছানো বাসা কার না ভাল লাগে! সারাদিন পরিশ্রমের পর বাসায় ফিরে সবাই চায় পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে সুন্দর কিছু সময় কাটাতে যেমন বিকেলে বা সন্ধ্যায় বারান্দায় থাকা রকিং চেয়ারে বসে আলাপচারিতা বা পছন্দের বই পড়া, লিভিং রুমে সোফায় বসে পছন্দের টিভি সিরিজ দেখা এবং রাতে আরামদায়ক বিছানায় একটি কমপ্লিট সাউন্ড স্লিপ।
ঘরকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে ফার্নিচার এর প্রয়োজনীয়তা বলাবাহুল্য। তাই আজ আমরা আপনাদের সাথে ৯ টি বিষয় আলোচনা করব যা ফার্নিচার কেনার পূর্বে অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিৎ।
১. রুমের সাইজ
আপনার বাসার কোন রুমের জন্য ফার্নিচার কেনার পূর্বে যে জায়গায় ফার্নিচারটি সেট করতে চাচ্ছেন সে জায়গাটি মেজারমেন্ট টেপ দিয়ে ভালোভাবে মেপে নিন এবং পছন্দের ফার্নিচারটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যাচাই করে নিন। অন্যথায়, ফার্নিচার কেনার পর আপনার রুমে ভালোভাবে ফার্নিচারটি সেট করা না গেলে নানা ধরণের ঝামেলার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাছাড়া ফার্নিচারটি ঐ জায়গায় সেট করলে চলাফেরা করার জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকবে কিনা সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
২. ডিজাইন
রুমের সাইজের পাশাপাশি যে ফার্নিচারটি আপনি পছন্দ করছেন তা অনান্য ফার্নিচারের সাথে ডিজাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কি না সেটাও আপনার বিবেচনায় রাখা উচিৎ। অসামঞ্জস্যপূর্ণ ফার্নিচার ঘরের নান্দনিকতা যেমন নষ্ট করে ঠিক তেমনি দেখতেও দৃষ্টিকটু লাগে। এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে মিনিমালিস্টিক ডিজাইনের ফার্নিচার পছন্দ করতে পারেন আপনার রুমের জন্য যা অনান্য ফার্নিচারের সাথে সুন্দরভাবে ম্যাচ করবে। খুব নকশাবহুল এবং ভারী ফার্নিচার কেনা থেকে বিরত থাকুন।
৩. ম্যাটেরিয়ালস ও স্থায়িত্ব
সাধারণত সকলেই চায় ঘরে থাকা ফার্নিচার যেন অনেকদিন টেকসই হয়। তাই ফার্নিচার কেনার পূর্বে ফার্নিচারের ম্যাটেরিয়ালস যেমন কাঠ ও জয়েনারিজ এর উপর আপনার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
নিঃসন্দেহে কাঠের ক্ষেত্রে সেগুন কাঠই সবার পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে। তবে সেগুন কাঠের অপ্রতুলতা এবং এই কাঠ ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে জার্মান বিচ কাঠের ফার্নিচারও অনেকে পছন্দ করছে এবং গুণগত মানের দিক থেকে বিচ কাঠও কিন্তু প্রায় সেগুনের কাছাকাছি এবং সাশ্রয়ী। এখন অনেক ফার্নিচার ব্রান্ড জয়েনারিজ এর ক্ষেত্রে পেরেকের পরিবর্তে স্মার্ট জয়েনারিজ সলিউশন নিয়ে এসেছে যা ফার্নিচারের স্থায়িত্ব বাড়ায় বহুগুণ।
৪. কাঠের ফার্নিচার ও কালার
নিঃসন্দেহে ঘরের সৌন্দর্যে স্টিল বা প্লাস্টিকের ফার্নিচারের তুলনায় কাঠের তৈরী ফার্নিচারই অনেক বেশী মানানসই ও নান্দনিক দেখায়। তাই ফার্নিচার কেনার পূর্বে কাঠের তৈরী ফার্নিচার রাখতে পারেন আপনার পছন্দের তালিকায়। তাছাড়া ফার্নিচারের কালার আকর্ষণীয় না হলে ফার্নিচারের বিল্ড কোয়ালিটি যতই ভালো হোক না কেন তা আপনার রুমে ফুটে উঠবে না। কাঠের ফার্নিচারের ক্ষেত্রে এন্টিক অথবা ন্যাচরাল কালারের যেকোন ফার্নিচার আপনার রুমে খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। রুমের ফার্নিচার গুলো যেন একই বা প্রায় কাছাকাছি কালারের হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৫. ফেব্রিক
ফেব্রিক সম্বলিত যেকোন ফার্নিচার কেনার পূর্বে যে ফেব্রিক কালারটি আপনি পছন্দ করবেন তা যেন অবশ্যই আপনার রুমের ডেকোরেশন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে মানানসই হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। দেয়ালের রঙ এর কিছুটা কন্ট্রাস্ট কালারের ফেব্রিক পছন্দ করতে পারেন, এতে করে আপনার রুমে ফার্নিচারটি ভালোভাবে ফুটে উঠবে। অনেক ফার্নিচার ব্র্যান্ড এখন তাদের ফার্নিচারে স্টেইন প্রুফ ফেব্রিক ব্যবহার করে যা ফেব্রিককে অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ থেকে মুক্ত রাখে। তাই আপনার ফার্নিচারের জন্য স্টেইন প্রুফ ফেব্রিক সিলেক্ট করুন।
৬. ফিচার ও মাল্টি পারপাজ
যে ফার্নিচারটি আপনি আপনার বাসার জন্য কিনতে চাচ্ছেন, সে ফার্নিচারটির ফিচার ও বিল্ড কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারণা নিন। বর্তমান সময়ে ফ্লাটের আকার ছোট হয়ে আসছে। তাই অনেকেই মাল্টি পারপাজ ফার্নিচার রাখছে তাদের পছন্দের তালিকায়। মাল্টি পারপাজ ফার্নিচার যেমন সোফা কাম বেড, রিডিং টেবিল কাম বেড, স্পেস সেভিং রিডিং টেবিল, স্পেস সেভিং ডাইনিং টেবিল ইত্যাদি। মাল্টি পারপাজ ফার্নিচার যেমন প্রয়োজন মেটায়, এটির বহুব্যবহার আপনার বাসার আগত যেকোন অতিথির আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হতে পারে।
৭.ব্র্যান্ড শপ
ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড শপ গুলোকে প্রাধান্য দিন। লোকাল ফার্নিচার প্রস্তুতকারকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হ্যান্ড মেইড ফার্নিচার তৈরী করে থাকে। এতে ফার্নিচারের ফিনিশিং ও ডিজাইন সব সময় মনের মত হয় না। ব্র্যান্ড শপগুলো ফার্নিচারের গুণগত মান নিশ্চিতের পাশাপাশি বিক্রয়োত্তর সেবাও নিশ্চিত করে থাকে। তাছাড়া ব্র্যান্ডের ফার্নিচার ব্যবহার এখন অনেকের কাছেই প্রেস্টিজের একটি অংশ।
৮. অনলাইন ও অফলাইন রিসার্চ
শুধু ফার্নিচার নয়, মানুষ যেকোন কিছু কেনার আগেই তা আগে থেকে জেনে বুঝে কিনতে চায়। যেহেতু ফার্নিচার সচরাচর কেনা হয় না এবং কয়েকদিন ব্যবহারের জন্যই কেনা হয়ে থাকে না তাই ফার্নিচার কেনার পূর্বে যথাযথ অনলাইন ও অফলাইন রিসার্চ করে নিন। অনলাইনে ব্রান্ড শপ গুলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে ফার্নিচারের সাইজ, ফেব্রিক অপশন, কালার অপশন, দাম ইত্যাদি যাচাই করে নিন। প্রয়োজনে কয়েকটি ফার্নিচার শপে গিয়ে ফার্নিচারের মান যাচাই করে নিন। এর পাশাপাশি ফার্নিচার ব্রান্ড গুলোর ভেরিফাইড ফেইসবুক ও ইন্সটাগ্রাম পেইজে গিয়ে কাস্টমারের রিভিউ গুলোও দেখে নিন।
৯. আফটার সেলস সার্ভিস
ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে কোয়ালিটির সাথে কখনই কম্প্রমাইজ করা উচিৎ না। কারণ ফার্নিচার কেনার পর ফার্নিচারে কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে, বিক্রেতার আফটার সেলস সার্ভিস যথাযথ বা সন্তোষজনক না হলে, ফার্নিচার ব্যবহারকারীর প্রচুর বেগ পোহাতে হয়। তাই ফার্নিচার কেনার পূর্বে আফটার সেলস সার্ভিস, গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টির বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নিন।