Hatil-Superbrands-2023 Hatil-Superbrands-2023

সুপারব্র্যান্ডসের স্বীকৃতিতে হাতিলের নাম

বাংলাদেশের অন্যতম ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিলের সাফল্যের গল্পে যোগ হয়েছে নতুন মুকুট। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ব্র্যান্ডিং বিষয়ক বৈশ্বিক স্বাধীন কর্তৃপক্ষ সুপারব্র্যান্ডস (Superbrands) আগামী দুই বছরের জন্য সুপারব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে। এই ৪০ প্রতিষ্ঠানের একটি হাতিল। ফার্নিচার ক্যাটাগরিতে একমাত্র ব্র্যান্ড হিসেবে এই স্বীকৃতি পেয়েছে হাতিল।। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাতিলসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশের সুপারব্র্যান্ডস ঘোষণা করা হয়।

হাতিলের পথচলা

হাতিলের গল্পটা শুরু হাতিল ডোরস দিয়ে, ১৯৮৮ সালে। সে সময় পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে বাবা হাবিবুর রহমানের কাঠের ব্যবসার দোকানে নিয়মিত বসতেন সেলিম এইচ রহমান। সেখানেই এক ক্রেতাকে কাঠের দরজা বানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এই পথচলা। বর্তমানে দেশে হাতিলের বিক্রয়কেন্দ্র আছে ৭০ টিরও বেশি। শুধু দেশেই নয়, আসবাব রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে পৌঁছে গিয়েছে হাতিল। দেশের বাইরে ১০ টি দেশে রপ্তানি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির তৈরিকৃত ফার্নিচার। তিন হাজারের অধিক কর্মীর তত্ত্বাবধানে প্রতি মাসে ৪৮ হাজার পিস ফার্নিচার তৈরি করছে হাতিল। সেলিম এইচ রহমানের হাত ধরে হাতিলের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তার আরও চার ভাই (মাহফুজুর রহমান, মিজানুর রহমান, মশিউর রহমান ও শফিকুর রহমান)।

সাভারে ৬৫ বিঘা জমির উপর নির্মিত কারখানায় এখন হাতিলের নানা ধরণ আর ডিজাইনের ফার্নিচার তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে এটিই দক্ষিণ এশিয়ায় কাঠের ফার্নিচার তৈরির সবচেয়ে আধুনিক কারখানাগুলোর একটি।

 

 

ফার্নিচার তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কাঠ। বাংলাদেশে ফার্নিচার তৈরির ক্ষেত্রে সেগুন কাঠের চল বেশি থাকায় দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো এই কাঠের প্রতিই বেশি নির্ভর করে থাকে। হাতিলও তার ব্যতিক্রম ছিল না। শুরুতে সেগুন কাঠ দিয়েই ফার্নিচার তৈরি করতো প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে দেশে বনভূমির স্বল্পতার কথা ভেবে সেগুনের প্রতি নির্ভরতা থেকে সরে আসে হাতিল। ২০০৯ সাল থেকে সেগুনের বদলে আমদানি করা ওক কাঠ দিয়ে ফার্নিচার তৈরি শুরু করে হাতিল। বর্তমানে জার্মানভিত্তিক দ্য ফরেস্ট স্টিওয়ার্ডশিপ কাউন্সিলের (এফএসসি) সনদপ্রাপ্ত ওক এবং বিচ ওক কাঠ দিয়ে ফার্নিচার উৎপাদন করছে হাতিল। এফএসসি সনদপ্রাপ্ত কাঠের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বোর্ড ও ইস্পাত ব্যবহার করছে হাতিল। এসব উপাদান পরিবেশবান্ধব হওয়ায় পরিবেশে কোনো বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে না।

 

Hatil furniture

 

হাতিল গ্রাহকের চাহিদাকে যথাযথ মূল্যায়ন ও পরিবেশের দিকটি বিশেষভাবে বিবেচনা করে নতুন ডিজাইনের ফার্নিচার তৈরির মাধ্যমে নিজেদের পথচলাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।

সুপারব্র্যান্ডস কী?

সুপারব্র্যান্ডস – ব্র্যান্ডিং বিষয়ক একটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, যারা বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিংয়ের প্রচার ও প্রসার করে এবং সারা বিশ্বে অনন্য ও ব্যতিক্রমধর্মী ব্র্যান্ডগুলোকে সম্মাননা এবং স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। সুপারব্র্যান্ডস ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বৈশ্বিক মধ্যস্থতাকারী, যেটি বিশ্বের ৯০ এর অধিক দেশে কাজ করছে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ২৮ বছরের পথচলায়, সুপারব্র্যান্ডস ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বৃহত্তম সফলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সুপারব্র্যান্ডস বেশ সফলতার সাথে মর্যাদাপূর্ণ বই ও ম্যাগাজিন প্রকাশ করে আসছে যেগুলো বিশ্বের শক্তিশালী ব্র্যান্ডগুলোকে চিহ্নিত করে এবং তাদের সম্মান জানায়।

 

Superbrands-2023

 

‘সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশ’ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত করা হয় যেখানে ব্র্যান্ড কাউন্সিল নামে পরিচিত বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের বিশেষজ্ঞদের একটি স্বাধীন ও স্বেচ্ছাসেবী প্যানেল জড়িত থাকে। সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশ এর উদ্দেশ্য হল এমন ব্র্যান্ড বাছাই করা যা বাংলাদেশে সফল হয়েছে গ্রাহকদের সাথে তাদের দৃঢ় সংযোগের কারণে। বাজারে আধিপত্য, দীর্ঘস্থায়ীত্ব, গ্রাহক সন্তুষ্টি, গুণগত মান, বিশ্বস্ততা, কর্পোরেট দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বেশ কিছু শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় এই সিলেকশনে। নির্বাচিত ব্র্যান্ডগুলোকে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে শ্রেষ্ঠ এবং গড় মান থেকে ব্যতিক্রম হিসেবে ভাবা হয়। সুপারব্র্যান্ডস টিম নির্বাচিত ব্র্যান্ডগুলো থেকে চূড়ান্ত ব্র্যান্ড বাছাইয়ের সাথে যুক্ত থাকে যারা পরবর্তীতে ‘সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশ’ এর স্বীকৃতি পায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে আগামী দুই বছরের জন্য সুপারব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

হাতিলের স্বীকৃতির নেপথ্যে

‘সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশ’ এর ২০২৩-২০২৪ সেশনে এই প্রথমবার হাতিল ফার্নিচার ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেল। স্বাভাবিকভাবেই হাতিলের জন্য এই অর্জন বিশেষ মর্যাদা বহন করছে।

সুপারব্র্যান্ডসের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত পূরণ করতে হয় সেসব অবধারিতভাবেই পূরণ করতে পেরেছে বৈশ্বিক এই ফার্নিচার ব্র্যান্ড। ফার্নিচারের গুনগত মান এবং সেরা গ্রাহক পরিষেবা হাতিলকে এই অর্জন এনে দিয়েছে মনে করা হচ্ছে।

 

hatil - receive superbrands awards

 

তবে হাতিলের সাফল্যের সবচেয়ে বড় মন্ত্র ফার্নিচার ব্র্যান্ডটির আধুনিক ও আর্গনোমিক ডিজাইন এবং সেরা ফিনিশিং। নিত্যনতুন ডিজাইনে সবসময় হাতিল সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।সেলিম এইচ রহমানের নেতৃত্বেই হাতিলের একটি ডিজাইনার টিম রয়েছে।

ফার্নিচার ডিজাইনের বিষয়ে সেলিম এইচ রহমান বলেছিলেন, মানুষের রুচি পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তা ছাড়া নগরকেন্দ্রিক মানুষের বসবাসের জায়গা ছোট হয়ে আসছে। ফলে অল্প জায়গা রুচিশীল আসবাব দেওয়ার জন্য ফার্নিচারের ডিজাইনের উপর  সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। আমরা এমন ডিজাইনের আসবাব করতে চাই, যাতে ১০-১৫ বছরের ব্যবধানে তা পুরোনো মনে না হয়। তার মানে হচ্ছে, সময়ের থেকে একটু এগিয়ে থাকার চেষ্টা।

হাতিল গ্রাহকের আস্থার জায়গাতেও রেখে চলেছে বিশ্বস্ততার ছাপ। সেলিম এইচ রহমান বলছিলেন, “আমরা ক্রেতাদের যেটা বলেছি, সব সময় সেটিই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কখনো এক কাঠ দিয়ে আসবাব বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য কাঠ দিইনি। পণ্য কেনার পর সমস্যা হলে সেটি সমাধানের চেষ্টা করেছি। বিক্রি করেই দায়িত্ব শেষ করিনি। একজন ক্রেতা যখন আমাদের পণ্য কিনে সন্তুষ্ট হয়েছেন কিংবা বিক্রয়–পরবর্তী সময়ে সেবা পেয়েছেন, তখনই তাঁরা আরেকজনের কাছে হাতিলের প্রশংসা করেছেন। এভাবেই আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছি আমরা।”

অর্থাৎ, হাতিল গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং সময়ের সাথে বাজারের চাহিদা বিবেচনায় মাথায় রেখে নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে এক অন্য উচ্চতায়। সাফল্য তাই অবধারিতভাবে দিচ্ছে ধরা।

 

supurbrands- hatil

কী বলছেন হাতিল সংশ্লিষ্টরা?

প্রথমবার ফার্নিচার ব্র্যান্ড হিসেবে সুপারব্র্যান্ডস স্বীকৃতি পাওয়াকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে সেলিম এইচ রহমান বলছেন, হাতিল পরিবার এই পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত। আমাদের যারা ক্রেতা, তারা হাতিলের উপর আস্থা রেখেছেন। ক্রেতাদের আস্থার কারণের আজকের এই অর্জন বলে আমি মনে করি।

ভবিষ্যতে হাতিল কোন পথে হাঁটবে এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম এইচ রহমান জানালেন, তারা স্বপ্ন দেখেন, সবার ঘরে ঘরে হাতিল থাকবে। তারা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই লক্ষ্যে তারা তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ও আধুনিক ফার্নিচার উৎপাদন করছেন বলে জানালেন তিনি।

সাফল্যের গল্পে এমন মুকুট যোগ হওয়াকে নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অনুপ্রেরণা বলে মনে করছে হাতিল কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।