একটি সুসজ্জিত মিটিং রুম থাকা সাফল্যের চাবিকাঠি
উজ্জ্বল মোস্তফা সাহেব একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রধান সম্পাদক। তাদের নতুন অফিসের মিটিং রুমের ডিজাইনটা ইদানিং বড্ড বেশি সমস্যা তৈরি করছে। সংবাদমাধ্যমের অফিস, তাই প্রতিদিন সকালে একদম কাজের শুরুতেই সারাদিনের সম্ভাব্য সব নিউজ নিয়ে সব রিপোর্টারদের সাথে সম্পাদকের একটা মিটিং করতেই হয়। নিউজরুমে এতো বড় বড় ডিভাইডার যে সেখানেও এতো বড় মিটিং করলে সবার কাছে কথা পৌছায় না, আবার মিটিং রুমেও বিশাল বড় কনফারেন্স টেবিলের কারণে এতো মানুষের বসার জায়গা তৈরি করা সম্ভব না। উজ্জ্বল সাহেব বুঝতে পারছেন, মিটিং রুমটা সাজানোর আগে অফিসের প্রয়োজনের কথাটি ভালোভাবে চিন্তা না করে তারা বেশ ভুল করেছেন।
উজ্জ্বল সাহেবের মতো সমস্যায় না পড়তে চাইলে তাই কাজের ধরন অনু্যায়ী কেমন ডিজাইনের মিটিং রুম প্রয়োজন, কিংবা সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের মনে ভালো ছাপ ফেলতে একটি মিটিং রুমে কী কী দরকার সেসব ভেবে নেয়া জরুরি।চলুন জেনে নেই কীভাবে সাজাতে পারেন আপনার অফিসের মিটিং রুম:
কাজের ধরণ মনে রাখুন
মিটিং রুমে ফার্নিচার কিভাবে সাজাবেন, সেটা ঠিক করার আগে মনে রাখতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানের কেমন বিন্যাসের মিটিং রুম প্রয়োজন। কিছু জনপ্রিয় মিটিং রুমের সেট আপের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক:
কনফারেন্স স্টাইল: ঘরের মাঝখানে একটি কনফারেন্স টেবিল আর টেবিল ঘিরে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার- ব্যাস! হয়ে গেলো কনফারেন্স স্টাইলে সাজানো মিটিং রুম। এ ধরনের বিন্যাস গুরুগম্ভীর মিটিং থেকে শুরু করে আইডিয়েশন সেশনেও বেশ উপযোগী।
হর্স স্যু মিটিং রুম: এই সজ্জার মিটিং রুমে সাধারণত তিনটি মাঝারি আকারের টেবিল একসাথে ইংরেজি U অক্ষরটির মতো করে জোড়া লাগানো থাকে, এবং তিনটি টেবিলের মাঝে থাকে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা। মিটিংরুমের এমন বিন্যাস সেমিনারে বেশ কাজে দেয়।
ক্লাসরুম স্টাইল: চেয়ার এবং টেবিলগুলো এমনভাবে সাজানো হয় যেন মিটিং রুমটি একটি শ্রেণিকক্ষ। এই ধরণের মিটিং রুমে অনেক মানুষ একইসাথে একটি বিষয় নিয়ে সহজেই লম্বা সময় ধরে আলাপ-আলোচনা করতে পারে। উজ্জ্বল মোস্তফা সাহেবদের ঠিক এমন মিটিং রুমই দরকার।
সঠিক আসবাবপত্র ঠিক করে দিবে মিটিংয়ের মেজাজ
উপযুক্ত ফার্নিচারে প্রয়োজন
মিটিং রুমে কেবল চেয়ার এবং টেবিল থাকলেই চলবে না। মিটিং রুমে ক্লায়েন্ট এবং কমর্চারীদের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে আরো অনেক ধরণের আসবাবপত্র প্রয়োজন। যেমন, চাকায় চলবে এমন একটি ড্রয়ার ইউনিট রাখা যাতে পারে, যেটা মিটিং রুমের স্টোরেজ ইউনিটের প্রয়োজন মেটাবে। এবং লম্বা মিটিংগুলোতে টানা অনেকক্ষন একই জায়গায় বসে থাকতে হয় বিধায় এই রকম একটি পোর্টেবল স্টোরেজ ইউনিট মিটিং রুমে কিছুটা প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। এরকম স্টোরেজ ইউনিটগুলো অবশ্য বেশি ভারী হলে চলবে না। তা ছাড়া, মিটিং রুমে নানা ধরণের ভিনটেজ শেল্ফ কিংবা সাইড র্যাকগুলো রাখা যেতে পারে, যেগুলো একদিকে যেমন মিটিং পরিচালনায় সুবিধা বাড়াবে, তেমনি এগুলো মিটিং রুমের নানন্দিকতাও প্রস্ফুটিত করতেও সাহায্য করবে।
প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ
আধুনিক অফিসের মিটিংয়ে সবার সামনে প্রেজেন্টেশন দেওয়া এবং ছোট ভিডিও দেখানোর মতো উপযুক্ত যন্ত্রপাতি রীতিমত নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান যুগে একটি মিটিং রুমে এই প্রযুক্তির সুবিধাগুলো না থাকলে তা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তাই, মিটিং রুমে ভালো কোয়ালিটির অডিও এবং ভিডিও প্রযুক্তি রাখার কোনো বিকল্প নেই। এই যন্ত্রগুলোকে আপ-টু-ডেট হতে হব, যাতে মিটিংয়ে কোনো ধরণের যান্ত্রিক গোলযোগ তৈরি না হয়।
আসবাবের সাথে মিলিয়ে ঠিক করুন দেয়ালের রং
সৃষ্টিশীলতা বাড়াবে রঙের ব্যবহার
মিটিং রুমের দেওয়ালের এবং আসবাবপত্রের রঙ কী হবে, সেটা মিটিং রুমের সজ্জার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ব্র্যান্ড রঙ থাকে। মিটিং রুম সাজানোর সময় সেই রঙের উপর প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। তাতে সহজেই কোম্পানির নিজস্ব ভ্যালুগুলো প্রকাশিত হবে। এছাড়াও, মিটিং রুমের নানা ধরণের আলাদা সাজ থাকতে পারে। যেমন, যদি মিটিং রুমের সাজ আধুনিক হয়, তবে কমলা, লাল কিংবা অনান্য উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ধরণের উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি মিটিং রুম স্লিক মর্ডান ধাঁচের হয়, তবে ছাই কিংবা সাদার নানা শেড ব্যবহার করা যেতে পারে।
মিটিং রুম কেমন হবে, সে ব্যাপারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই একটি আলাদা ধারণা আছে। তবে আজকের ব্লগে যেই টিপসগুলোর ব্যাপারে আমরা জানতে পারলাম, সেগুলো বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়। পনি কিভাবে সাজাচ্ছেন আপনার অফিসের মিটিং রুম, তা এখনই জানিয়ে দিন আমাদেরকে।
লেখক: রাহিন আমিন