অফিসে স্বাগতম

অর্ক প্রথম যেদিন তার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যায়, সেদিনই অফিসটাকে খুব ভালো লেগে যায়। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। এত সুন্দর করে সাজানো অফিসে এর আগে শুধু টিভিতেই দেখেছে। আর এত যত্ন করে, সবকিছু মাথায় রেখে পুরো অফিসটা সাজানো হয়েছে যে, সবার কাজের আগ্রহ আপনাআপনি বেড়ে যায়। 

তার অফিসটা তার সব বন্ধুর কাছেও খুব পছন্দের। তবে তাদের কাছে নাকি অফিসের রিসিপশনের জায়গাটাই সব থেকে ভালো লাগে। কারণ তারা যখন অর্কর কাছে আসে, মাঝে মাঝে ও ব্যস্ত থাকলে বন্ধুদের এই জায়গাটাতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। আর এই রিসেপশনের জায়গাটা এমনভাবে সাজানো যে বসে থাকতে একদম খারাপ লাগে না। তাই অর্কর বন্ধু রাকিনের ঘাড়ে যখন তাদের অফিস নতুন করে সাজানোর দায়িত্ব পড়ল, তখন সে এসে পরামর্শ চাইল অর্কর কাছে। চলুন, তাহলে দেখে আসি অর্ক কী কী পরামর্শ দিয়েছিল রাকিনকে। 

ছবি : রিসেপশন ডেস্কে সবকিছু থাকতে হবে হাতের কাছে 

রিসেপশন ডেস্ক

রিসেপশন ডেস্কের কথা মাথায় এলেই আমাদের অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘অফিস’-এর চরিত্র প্যামের রিসিপশন ডেস্কটি। কাজের কাগজপত্র, স্টেশনারি সামগ্রী, ফোন, ফ্যাক্স মেশিন, এমনকি চকলেট, ক্যান্ডিকী ছিল না সেখানে। আর রিসেপশন ডেস্কের কাজটাও কিন্তু অনেকটা তাই। কাজের সবকিছু যেন একদম হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। কিন্তু রিসেপশন ডেস্কটি হতে হবে অফিসের সাথে মানানসই। অর্থাৎ বড় ঘরে ছোট একটি রিসেপশন ডেস্ক যেমন বেমানান লাগার সম্ভাবনা বেশি, তেমনি অপেক্ষাকৃত ছোট একটা ঘরে বিশাল কোনো ডেস্ক বসালে ঘরটি গুমোট এবং নীরন্ধ্র লাগবে। তা ছাড়া যেহেতু যিনি রিসেপশনে বসেন তাকে দিনের বেশ অনেকটা সময় ডেস্কে বসে কাজ করা লাগে, তাই তার চেয়ারটিও হওয়া চাই বেশ আরামদায়ক। 

রিসেপশনে বসার ব্যবস্থা

রিসেপশনে সারা দিন নানান রকম মানুষ আসেন নানান রকম দরকারে। আর তাই রিসেপশনে বসার ব্যবস্থাটি হতে হবে আরামদায়ক; সেটা চেয়ার হোক কিংবা সোফা। আগে বেশির ভাগ রিসেপশনে একরঙা প্লাস্টিক চেয়ার রাখা হতো বসার জন্য। এখন কিন্তু সেই দিন পাল্টেছে। বেশির ভাগ অফিসেই এখন নান্দনিকতা বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী বসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে বসার আসবাবটি যদি খুব ভারী ধরনের হয়, তাহলে তা পরিষ্কার করার ঝামেলা যেমন বেশি, সেই সাথে সচরাচর পরিষ্কার করা হয়ে ওঠে না। এতে করে রিসেপশন অগোছালো এবং নোংরা দেখতে লাগে, যা কখনোই কাম্য নয়। তবে বসার ব্যবস্থা যা-ই হোক না কেন, এটা মাথায় রাখতে হবে যে এই বসার ব্যবস্থাটি যেন সহজেই পরিষ্কার করা যায় এমন হয়। আর সাথে দিতে পারেন সামঞ্জস্যপূর্ণ ছোট কোনো টেবিল। তাতে বসার জায়গাটি দেখতে বেশ পরিপাটি লাগে। 

ছবি : রিসেপশনে বসার জায়গাটি হতে হবে আরামদায়ক এবং খোলামেলা 

রিসেপশনে রাখতে পারেন ম্যাগাজিন কিংবা ব্র্যান্ডবুক

বেশির ভাগ রিসেপশনেই দৈনিক পত্রিকা কিংবা বিভিন্ন রকম দেশি-বিদেশি ম্যাগাজিন রাখতে দেখা যায়। এর পাশাপাশি ছোট একটা বুকশেলফে বই-ও রাখা যেতে পারে। এতে ওই অফিসের রিসেপশন সম্পর্কে মানুষের মনে ভালো ধারণা জন্মায়। সেই সাথে কাউকে যদি অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়, সে নিজের পছন্দমতো বই নিয়ে পড়তে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে যে বই রাখা হচ্ছে তা যেন অফিসের বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন যদি শিল্পকলাবিষয়ক অফিস হয়, তাহলে রাখা যেতে পারে চিত্রকলাবিষয়ক বই কিংবা পত্রিকা। সাথে থাকতে পারে বিখ্যাত কোনো কবিতার বই। আবার যদি কোনো এড-টেক অর্গানাইজেশন হয়, তবে গল্প-উপন্যাসের বই না রেখে আত্মোন্নয়নমূলক কিংবা প্রেরণামূলক ধরনের বই রাখাটাই শ্রেয়। এর পাশাপাশি ব্র্যান্ডবুক রাখলে অফিসের বিভিন্ন ব্র্যান্ড সম্পর্কে অতিথি কিছুটা ধারণা করে নিতে পারবেন।  

ছবি : রিসেপশনে রাখতে পারেন বই কিংবা ম্যাগাজিন 

রাখতে পারেন টেলিভিশন

অনেক অফিসের রিসেপশনেই এখন টেলিভিশন রাখছে। এতে করে যদি কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন, তার সময়টা বেশ চলে যায়। তবে টেলিভিশনের শব্দ যেন কখনো মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আরও খেয়াল রাখতে হবে যেন তাতে বাংলা বা হিন্দি সিনেমা ছেড়ে রাখা না হয়। এতে অফিসের ভাবগাম্ভীর্য খর্ব হয়। টেলিভিশনে দেশ-বিদেশের খবর কিংবা খেলা চালিয়ে রাখা শ্রেয়। আর টেলিভিশনটি যদি স্ট্যান্ডে না রেখে দেয়ালের সাথে টাঙিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাতে করে জায়গার সাশ্রয়ের সাথে সাথে বসে থাকা ব্যক্তির স্ক্রিনে নজর রাখতেও সুবিধা হয়। 

দেয়াল রাঙিয়ে তুলুন ছবি দিয়ে

অনেক রিসেপশনের দেয়ালেই ছবি ঝুলতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের হাতে আঁকা কিংবা তোলা ছবির পাশাপাশি অনেকে প্রাধান্য দেন বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রেরণামূলক উক্তিকে। এর পাশাপাশি, কোনো অফিসকর্মী যদি ছবি আঁকতে কিংবা তুলতে পারদর্শী হন, তাহলে তার সেই ছবিও টাঙিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে সেই কর্মী যেমন অনুপ্রাণিত হবেন, তেমনি ওই অফিসের মানুষের সম্পর্কেও অন্যদের ভালো একটি ধারণা জন্মাবে। তবে যেই ছবিই টাঙানো হোক না কেন, অফিসের বিষয়বস্তু এবং ভাবমূর্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেন হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। 

সারা দিন কোনো অফিসে যত মানুষ আসেন, তাঁদের একটা সিংহভাগই কিন্তু এসে প্রথমে রিসেপশনে বসেন। এবং যদি বলা হয় যে পুরো অফিসের ভাবমূর্তির বিচারক এই রিসেপশন, তাহলে কিন্তু ভুল কিছু বলা হবে না। তাই রিসেপশনটি যেন সুন্দর এবং নান্দনিক হয়, এই বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি যেহেতু কোনো অফিসের রিসেপশন সে অফিসের ব্র্যান্ড থিমের প্রতিফলক, তাই রিসেপশন সাজানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যেন এমন কিছু উপাদান থাকে, যা ওই ব্র্যান্ডকে ফুটিয়ে তোলে। আর হ্যাঁ, আপনাদের রিসেপশনটি কীভাবে সাজানো, তা আমাদের অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।  

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।